চিরতা খাওয়ার অপকারিতা- চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে

প্রিয় পাঠক আপনি কি চিরতা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোস্টের মধ্যে চিরতা খাওয়ার অপকারিতা এবং চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
চিরতা খাওয়ার অপকারিতা
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন গর্ভাবস্থায় চিরতা খেলে কি হয় এবং চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও চিরতা গাছের ছবি। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

চিরতা একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা ওষুধ হিসেবে খাওয়া হয়। বাংলাদেশ-ভারতসহ আশেপাশের দেশে প্রচুর পরিমাণে এই চিরতা জন্মে। চিরতা কাঁচা অবস্থায় সবুজ আকৃতির হয়ে থাকে এবং যখন তা শুকিয়ে যায় তখন সে গাছের ডাল শুকনো রঙ ধারণ করে। আদিকাল থেকে মানুষ চিরতার সাহায্যে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করে আসছে।


চিরতার মধ্যে এমন কিছু গুণ রয়েছে যা কমপক্ষে ১৫ টি বড় বড় রোগ ভালো করতে পারে। আমাদের আশেপাশেই অনেক চিরতা গাছ জন্মে।

চিরতা খাওয়ার অপকারিতা

চিরতা খাওয়ার যেমন কিছু উপকারিতা রয়েছে তেমনিভাবে কিছু অপকারী দিক রয়েছে। সে অপকারি দিকগুলো সম্পর্কে আমাদের জানা জরুরী কারণ যদি আমরা সেই অপকারী দিকগুলো সম্পর্কে না জানি তাহলে সেসব অপকারিতা আমাদের ভিতরে প্রবেশ করা সম্ভাবনা রয়েছে এজন্য অবশ্যই আমাদেরকে অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে।

যাতে আমরা সেসব অপকারিতা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
  • যেসব ডাইবেটিসের রোগী রয়েছেন তারা চিরতা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন কারণ চিরতা খাওয়ার ফলে আপনার ডায়াবেটিসের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • চিরতা খাওয়ার পরে বমি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি থাকে কারণ চিরতার স্বাদ অনেকটা তিক্ত যার কারণে সবাই সেটা গিলতে পারে না এতে করে বমি করে দেয়।
  • গর্ভবতী অবস্থায় কেউ যদি চিরতা খাওয়ার ইচ্ছা করে তাহলে তার উচিত হবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা। ডাক্তার যদি চিরতা খাওয়ার অনুমতি দেয় তাহলে তার জন্য খাওয়া উচিত হবে অন্যথায় গর্ভবতী অবস্থায় সে চিরতা খাওয়ার কারণে বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
  • চিরতা ব্লাড সুগারের লেভেলকে কমিয়ে দিতে পারে এজন্য চিরতা খাওয়ার ক্ষেত্রে কখনো অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবে না।
  • কেউ অতিরিক্ত মাত্রায় চিরতা ভেজানো পানি পান করলে পেটে সমস্যা হতে পারে যেমন পাতলা পায়খানা হওয়া, পেটের মধ্যে ব্যথা করা ইত্যাদি।
  • ১০ থেকে ১২ দিনের বেশি চিরতা খাওয়া উচিত নয়। যদি কেউ রোগের কারণে এই চিরতার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে তাহলে তার উচিত হবে সর্বোচ্চ 10 থেকে 12 দিন সে চিরতা ভেজানো পানি খাবে।
  • শিশুদেরকে চিরতা খাওয়ানো থেকে বিরত রাখতে হবে। যদি কোন কারণে খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবে। চিকিৎসক অনুমতি দিলে তবে শিশুদেরকে চিরতা খাওয়াবে।
  • একটানা দীর্ঘদিন ধরে কেউ যদি চিরতার পানি খেতে থাকে তাহলে তার কিডনির উপরে প্রভাব পড়বে এজন্য কখনোই ১০ থেকে ১২ দিনের বেশি চিরতার পানি খাওয়া যাবে না।
চিরতা খাওয়ার ফলে আপনি এসব অপকারিতা সম্মুখীন হতে পারেন এজন্য চিরতা খাওয়া ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

চিরতা একজন মানুষের জন্য অনেক বেশি উপকারী। চিরতা খাওয়ার ফলে মানুষ যেসব উপকারিতা পাবেন হয় তা হচ্ছে-
  • চিরতা ওজন কমাতে সাহায্য করে
  • রক্ত পরিশোধন করতে পারে
  • লিভারের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয়
  • কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে
  • ত্বকে কোনরকমের রোগ থাকলে সে রোগগুলো দূর করতে পারে।
  • সোরিয়াসিস সারিয়া তুলতে পারে।
  • সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
  • পেট ফাঁপা পেটের মধ্যে বদ হজম হওয়া এ সমস্যাগুলো দূর করতে পারে।
  • জ্বর অবস্থায় জ্বর ভালো করতে পারে।
  • পেটের যেকোনো অসুখ দূর করতে পারে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং খাবারকে খুব দ্রুত হজম করে।
  • কাঁটা স্থানের ক্ষত শুকাতে পারে।
  • হাঁপানি সমস্যা থাকলে হাঁপানি দূর করতে পারে।
  • চুল পড়া কমায়।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • চুলকানি ভালো করে।

এসব উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য আপনি নিয়ম করে চিরতা খেতে পারেন।

চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে

চিরতা আদিকাল থেকে ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে আসছে। চিরতা ভেজানো পানি পান করলে বা চিরতা ডাল চিবিয়ে খেলে অনেক রকমের অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়া যায়। চিরতার মধ্যে এমন কিছু ঔষধি গুনাগুন রয়েছে যা একজন মানুষের ১২ থেকে ১৫ টি রোগ ভালো করতে পারে। অনেক সময় চিরতা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কেউ যদি একাধারে দীর্ঘ একটি সময় ধরে চিরতা ভেজানো পানি খেতে থাকে তাহলে তার কিডনির উপরে যথেষ্ট পরিমাণ প্রভাব পড়বে যা কিডনির জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। চিরতা খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৫ দিন। যখন এর চেয়ে বেশি চিরতা খাওয়া হবে তখন তা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হবে।

যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন তারা কোন অবস্থাতেই চিরতা খাবেন না এবং চিরতা ভেজানো যে পানি রয়েছে সেটা খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে কারণ চিরতা দীর্ঘ সময় খাওয়ার কারণে একটি সুস্থ কিডনিতে প্রভাব ফেলে আর অসুস্থ কিডনিতে সেই পানি খাওয়ার সাথে সাথে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

এজন্য যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই চিরতা এবং চিরতা ভেজানো পানি থেকে দূরে থাকতে হবে এটাই তার জন্য মঙ্গল হবে। আপনার যদি আপনার কিডনিকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে কখনোই দীর্ঘদিন ধরে চিরতা বা চিরতা ভেজানো পানি খাবেন না। যখন অসুস্থ হবেন সেই সময় অসুস্থতা ভালো হওয়া পর্যন্ত

বা অসুস্থতা ভালো না হলেও নির্দিষ্ট যে একটি সময়সীমা রয়েছে সেই সময়সীমা পর্যন্ত খাবেন। তাহলে আপনি সুস্থ হতে পারবেন এবং আপনার কিডনিও সুস্থ থাকবে।

গর্ভাবস্থায় চিরতা খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় একটা মহিলা অনেক রকমের সমস্যার সম্মুখীন হয়। চিরতাতে এমন কিছু গুণাগুণ থাকে যা সে সমস্যাগুলো দূর করতে সক্ষম হয়ে থাকে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় বমি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। চিরতা পাতার গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে খাওয়ার কারণে বমি বমি ভাব অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি যদি বমি হতে থাকে তাহলে সেই বমি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।


আরেকটা বিষয় জরুরী তা হচ্ছে গর্ভাবস্থায় চিরতা ভেজানো পানি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ ব্যতীত কোনোভাবেই নিজে থেকে চিরতা ভেজানো পানি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে না। গর্ভাবস্থায় চিরতা ভেজানো পানি নিজে থেকে খাওয়ার কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

বিশেষ করে পেটের ব্যথা বা পেটের মধ্যে এক ধরনের সমস্যা তৈরি হবে এতে করে আপনি নিজের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এবং পেতে থাকা বাচ্চাও এতে করে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই গর্ভাবস্থায় চিরতা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন ডাক্তার যদি খাওয়ার পরামর্শ দেয় তাহলে খাবেন অন্যথায় ভিন্ন কোন উপায়ে নিজের অসুস্থতা ভালো করার চেষ্টা করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় সাবধান থাকা জরুরী তাছাড়া কোন সময় কোন কারনে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

চিরতা খাওয়ার নিয়ম

চিরতা কয়েকভাবে খাওয়া যায়। চিরতা খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে এবং চিরতা খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে চিরতা মূলত কতদিন পর্যন্ত খাওয়া যায়। আপনি যদি কোন অসুস্থতার কারণে বা শরীরকে ভালো রাখার জন্য চিরতা অথবা চিরতা ভেজানো পানি খান তাহলে ১০ থেকে ১৫ দিন খেতে পারবেন। এর বেশি খাওয়া কখনো আপনার জন্য উচিত হবে না।

চিরতা আপনি শুধু ডাল চিবিয়ে খাওয়ার মাধ্যমেও উপকৃত হতে পারবেন। চিরতা ডাল ছোট্ট করে কেটে নিয়ে চিবিয়ে সে রস খেয়ে নিয়ে ডাল ফেলে দিবেন। যদি এভাবে খেতে তিতো লাগে তাহলে চিরতার সাথে মধু মিক্স করে নেবেন তাহলে তিতো ভাব অনেকটাই কমে যাবে। আরেকটি পদ্ধতি রয়েছে যে পদ্ধতিতে মানুষ বেশি খায়।

সে পদ্ধতি চিরতার ডাল কয়েক টুকরো করে কেটে নিয়ে একটি গ্লাসে পরিমাণ মতো পানি নিয়ে সেখানে ভিজিয়ে রাখবে। সারারাত ভেজার পরে সকালবেলা উঠে খালি পেটে সেই পানি পান করবে এভাবে খাওয়ার কারণে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। এই পানি অনেক তিক্ত হয় যার কারণে আপনি মধু মিশিয়ে খাইলে খুব সহজে খেয়ে নিতে পারবেন।

পানি নেয়ার ক্ষেত্রে ১৫০ থেকে ২০০ মিলি এর বেশি কখনোই পানি নিবেন না। চিরতা ডাল গুঁড়ো করে তা ত্বকের ব্যবহার করলে ত্বক থেকে বিভিন্ন রকমের সমস্যা ভালো হয়ে যায়। বিশেষ করে কাটা ছেড়া জাতীয় যেসব স্থান রয়েছে সেইসব স্থানে চিরতার গুঁড়ো লাগালে খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। আপনি চিরতা খাওয়ার ইচ্ছা করলে এই নিয়মে খাবেন।


কখনোই নিয়মের বাহিরে খাবেন না। যখন নিয়মের বাইরে খাবেন তখন আপনার ভিতরে উপকারের পরিবর্তে অপকারিতা দেখা দিবে। তাই অবশ্যই আপনাকে নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে।

চিরতা গাছের ছবি

অনেকে আছেন যারা চিরতা গাছ চিনে না। চিরতা গাছ গ্রাম অঞ্চলের দিকে বেশি পাওয়া যায়। শহরের দিকে যারা থাকে তারা চিরতা গুড় ব্যবহার করে। চলুন এবার আমরা চিরতার গাছ দেখি।
চিরতা গাছের ছবি

চিরতা গাছের ছবি

চিরতা গাছের ছবি

চিরতা গাছের ছবি

চিরতা গাছের ছবি

শেষ কথা

চিরতা গাছের উপকারিতা পেতে অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী খাবেন। কখনই অতিরিক্ত মাত্রায় খাবেন না। যখন রোগ হবে তখনই খাবেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারবেন।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবী এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারা চিরতা সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url