সততার উদাহরণ- সততা মানে কি- সততা আরবি কি

প্রিয় পাঠক আপনি কি সততার উদাহরণ জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে সততার উদাহরণ এবং সততা মানে কি সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
সততা মানে কি
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন সততা আরবি কি এবং সততা সম্পর্কে দশটি বাক্য। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

মানুষের অনেকগুলো গুণ রয়েছে সেই গুণগুলোর মধ্যে উত্তম সারিতে যে সব গুনকে রাখা যায় সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সততা। সততা একটি মানুষকে সম্মানের এবং সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। সৎ থাকা এবং সততার সাথে জীবন পার করা এটা অনেক বড় একটি গর্বের বিষয়। সবাই সততার সাথে জীবন যাপন করতে পারে না।


আপনি যখন সততার সাথে জীবন পার করতে চাইবেন আপনার অবশ্যই তখন সাহস বেশি হতে হবে। ভীত মানুষেরা কখনো সততার সাথে জীবন পার করতে পারে না।

সততা আরবি কি

সততা শব্দ আরবি ভাষায় বেশি ব্যবহার হয় কারণ সততা শব্দ তার উৎপত্তি আরবি থেকে। আমাদেরকে যিনি ন্যায়পরায়ণ সত্যতা সততা শিখিয়েছেন তিনি হচ্ছেন আমাদের নবী এবং তার ভাষা ছিল আরবি। সততা শব্দের আরবি হচ্ছে عدل ( আদলুন )। আদলুন মানে হচ্ছে সৎ সততা। যারা সততাবান তাদেরকে আরবিতে বলা হয় আদেল ( عادل )

আরবিতে আদেল শব্দ বা আদলুন এই দুইটি শব্দ সততা এবং ন্যায়পরায়ন এই দুইটি অর্থে ব্যবহার হয়।

সততা মানে কি

সততা শব্দের শাব্দিক অর্থ সাধুতা ন্যায়পরায়ণ। সততা শব্দের ব্যাখ্যা হচ্ছে একটি মৌলিক নীতি কাজ যার দ্বারা মানুষ সবসময় সত্য কথা বলে। কখনো কাউকে প্রতারণা করে না। কখনো মিথ্যার আশ্রয় নেয় না। জীবনের সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছ থাকে কোন রকমের ঝামেলায় জড়ায় না। একজন মানুষ তখনই সততাবান হবে যখন সে নিজের কাজ সম্পূর্ণরূপে পালন করবে

এবং মানুষের সাথে ভালো আচরণ করার সাথে সাথে যখন কোন কথা বলবে সর্বদাই সত্য কথা বলবে। কারো আড়ালে তাকে নিয়ে সমালোচনা করবে না। সততা একটি মানুষকে অনেক উপরে নিয়ে যায়। এর পিছনে প্রধান কারণ হচ্ছে আপনি যখন সততাবান হবেন তখন অবশ্যই আপনাকে সর্বদা সত্য কথা বলতে হবে আর সত্য সবসময় সুন্দর।


সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় আর এই মুক্তি মানুষকে সম্মান এনে দেয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সততার সাথে চলা উচিত। পরিস্থিতি যেমনদিকে যাক না কেন চোখ তুলে সততার সাথে কথা বলতে পারাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। সততা মানে এসবই বোঝায় যে একজন মানুষ সত্য কথা বলবে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। কখনো মিথ্যা বলবে না এবং কখনো কাউকে প্রতারিত করবে না।

সততার উদাহরণ

সততার উদাহরণ সততা নিজেই। পৃথিবীর কোন কিছুর সাথে সততার উদাহরণ যায় না। আপনি যে পরিমাণ সৎ থাকবেন এবং সততার সাথে কাজ করবেন সেই পরিমাণ প্রতিদান ফেরত পাবেন। যারা সততার সাথে কাজ করে তারা কখনোই প্রতারিত হয় না। কোন না কোন ভাবে তাদের কাছে সততার মূল্য ফেরত আসে।

সফল হওয়ার জন্য সৎ থাকা এবং সততার সাথে কাজ করা জরুরি। আপনার যত বেশি সততার সাথে এবং নিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে কাজ করবেন আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।চলুন এবার আমরা সততার দুইটি উদাহরণ জানি।

উদাহরণ ১

ইসলামের চার খলিফার মধ্যে একজন খলিফার নাম হচ্ছে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। উনার খিলাফত কালে সবাই অনেক সৎ ন্যায়পরায়ণ ছিল। একদিন রাত্রে তিনি তার শহর পরিদর্শন করার জন্য বের হয়। তার উদ্দেশ্য ছিল এই যে তার রাজ্যের মানুষ কতটা সুখী আছে সেটা সে আড়াল থেকে দেখবে।

দিনে রাতের অন্ধকারে বের হয়ে হাঁটতে থাকলেন। একটা সময় একটা বাড়ির দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। তিনি দরজার ওপাশ থেকে একজন মা ও তার মেয়ের কথা শুনতে পাচ্ছিলেন। তারা ছিল দুধ ব্যবসায়ী। দুধ বিক্রি করে তাদের নিজের জীবিকা উপার্জন করত। সেদিন পরিমাণে দুধ কম হওয়ার কারণে ওই মেয়ের মা ওই মেয়েকে বলছি

যে দুধের সাথে কিছু পানি মিশিয়ে দাও তাহলে দুধ পরিমাণে বেশি হয়ে যাবে। তখন মেয়েটি তার মাকে উত্তর দেয় যদি বাদশা ওমর জানতে পারে তাহলে আমাদেরকে হত্যা করবে। তখন তার মা উত্তর দেয় এখন তো অন্ধকার কেউ নেই কোন ভাবে দেখতে পাবে না। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে সবকিছু শুনছিলেন।

তখন ওই মেয়েটি উত্তর দেয় অন্ধকারে ওমর দেখতে না পেলেও একজন আছেন যিনি সবকিছু দেখতে পান তিনি হচ্ছেন আল্লাহ। আমি কোন ভাবেই মানুষকে প্রতারিত করতে পারবো না কারণ আমি আল্লাহকে ভয় করি। ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এই কথা শুনে খুশি হয়ে যায় এবং সেখান থেকে চলে যায়।


পরের দিনে খলিফা ওমর আবার আসেন এবং ওই মেয়েকে তার ছেলের সাথে বিয়ে দেন। যখন কারণ জিজ্ঞেস করা হয় তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন এই মেয়ের সততা এবং আল্লাহকে ভয় করা আমাকে মুগ্ধ করেছে। পুরস্কার স্বরূপ আমি এই মেয়েকে আমার ছেলের সাথে বিবাহ দিচ্ছি।

উদাহরণ ২

একজন রাজা আর কোন সন্তান ছিল না। সে চাচ্ছিল এমন একজনকে সে পরবর্তী রাজা হিসেবে তৈরি করবে এবং তাকে নিজের সন্তানের মত করে মানুষ করবে এজন্য সে একজন সৎ এবং সততাবান ছেলের খোঁজ করছিল। রাজা একদিন রাজ্যের অনেক ছেলেকে ডাকলেন এবং তাদেরকে একটি গাছের বীজ দিলেন

এবং বললেন তোমরা ছয় মাস পরে আমার কাছে এই বীজ থেকে গাছ উৎপন্ন করে দেখা করবা। এরপর সবাই যার যার মত নিজ বাড়িতে চলে যায় ও গাছের যত্ন শুরু করে। দুই মাস তিন মাস পার হয়ে যাওয়ার পরও একটি ছেলে লক্ষ্য হলো তার বীজ থেকে কোনো রকমের গাছ বের হচ্ছে না। সে এই বিষয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে গেল।

পরবর্তীতে তার মা বলল তুমি অপেক্ষা করো এখান থেকে হয়তো গাছ বের হবে। এভাবে ছয় মাস পার হয়ে গেল তারপরও সে বীজ থেকে কোন গাছ বের হয়নি। ছেলেতে যে গামলায় বীজ বপন করেছিল সে গামলা নিয়ে রাজার দরবারে গেল আরো যেসব বাচ্চাদেরকে বীজ দেয়া হয়েছিল তারা সবাই গাছ নিয়ে রাজার দরবারে আসে।

রাজা এক এক করে সবাইকে দেখতে থাকে। একটা সময় গিয়ে চোখ পড়ে সেই ছেলেটির হাতে এবং দেখে তার গামলায় কোন রকমের গাছ নেই। রাজা তাকে সামনে ডাকে। ছেলে রাজার ডাক শুনে ভয় পেয়ে যায়। বাচ্চাটি রাজাকে বলে রাজা সাহেব আমি ৬ মাস এই বীজের যত্ন করেছি তারপরও সেখান থেকে কোন গাছ বের হয়নি। ছেলেটি অনেক সৎ ও সততাবান ছিল।

এরপর যখন ছেলেটি সামনে গেল তখন সকলে তাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করলো। রাজা সবাইকে বললেন সবাই চুপ করো এখানে হাসাহাসি করার কিছু নেই। আমি তোমাদেরকে যেই বীজ দিয়েছিলাম সেটা ছিল মরা বীজ। সে বীজ থেকে কখনোই গাছ বের হতো না। তোমরা সবাই মিথ্যা কথা বলেছ। এই বাচ্চাটা একমাত্র সততাবান যার কারণে সে সেই বীজ নিয়ে হাজির হয়েছে

সুতরাং এ বাচ্চাকে আমি পরবর্তী রাজা হিসেবে বড় করে তুলবো। এখানেও একটি বিষয় লক্ষ্য করুন সে বাচ্চাটি সততাবান ছিল এজন্যেই সে এত মহৎ পুরস্কার পেল। আপনিও যদি আপনার জীবনে সৎ থাকেন এবং সততার সাথে চলাফেরা করেন অবশ্যই আপনিও ভাল পুরস্কারে পুরস্কৃত হবে।আল্লাহ এবং প্রকৃতি কখনোই সততাবানের সাথে অন্যায় করেন না।

সততা সম্পর্কে ১০টি বাক্য

সততা সম্পর্কে অনেক বাক্য রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে অথবা অনেক সময় শত প্রাণে কথা বলতে গেলে বাক্যের প্রয়োজন হয়। এতে করে কথা বলা সহজ হয় চলুন এবার আমরা সততা সম্পর্কে কয়েকটি বাক্য জানি।
  1. সততা মানুষের সম্মানকে বৃদ্ধি করে দেয়।
  2. যে ব্যক্তি সততার সাথে চলাফেরা করে সকল মানুষ তাকে পছন্দ করে।
  3. সফল হবার অনেকগুলো উপায় এর মধ্যে একটি হচ্ছে সততাবান হওয়া।
  4. যে ব্যক্তি সততা নিয়ে জীবন যাপন করে সকলেই তার প্রশংসা করে।
  5. ন্যায়পরায়ন এবং সততাবান ব্যক্তিকে আল্লাহও ভালোবাসেন এবং মানুষও অনেক বেশি ভালোবাসে।
  6. যেসব মানুষ সততার সাথে কাজ করে তারা কখনো প্রতারিত হয় না।
  7. যে যত বেশি সততার সাথে কাজ করবে এবং সৎ থাকবে সে তত বেশি উত্তম প্রতিদান পাবে।
  8. সততা বান মানুষ সবার কাছে বিশ্বস্ত এবং সবার ঊর্ধ্বে থাকে।
  9. সততা মানুষের চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ও সততা মানুষের চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
  10. সততা মানুষকে উদার এবং দয়ালু হতে শেখায়।

শেষ কথা

সৎ ভাবে চলা এবং সততাবান হওয়া একজন মানুষের জন্য অনেক বেশি জরুরী। সততার সাথে না চললে মানুষ কখনো নিজেকে ভালো হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে না। আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও সততা সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url