রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম বাংলাদেশে- রেবিস ভ্যাকসিন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

প্রিয় পাঠক আপনি কি রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম বাংলাদেশে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম বাংলাদেশে এবং রেবিস ভ্যাকসিন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করব।
রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম বাংলাদেশে
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম এবং রেবিস ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা কতদিন থাকে সেই সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

একটি রোগের নাম হচ্ছে জলাতঙ্ক রোগ। যে রোগ হলে প্রাণী বা মানুষ কেউই পানি পান করতে পারে না। অনেক সময় এ রোগ বিড়ালের মধ্যেও দেখা দেয়। বিড়ালকে জলাতঙ্ক রোগ থেকে রক্ষা করতে এবং জলাতঙ্ক রোগ হলে তাদেরকে রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এ ভ্যাকসিন এর মেয়াদ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

 
কোন কোন ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা তিন বছর পর্যন্ত আবার কোন কোন সময় এক বছর ও মাঝে মধ্যে ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম

কোন প্রাণী যদি রেবিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং সেই প্রাণী যদি কোন মানুষকে কামড় মারে সে ক্ষেত্রে সেই রেবিস ভাইরাস মানুষের শরীরেও প্রবেশ হয়ে যাবে। এই ভাইরাস এতটাই শক্তিশালী যে মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। এই ভাইরাস একজন মানুষের শরীরে প্রবেশ করার পরে সম্পূর্ণরূপে শরীরে আক্রমণ করতে দুই থেকে চার মাস

আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত সময়ের আগে। কোন মানুষের জলাতঙ্ক রোগ হলে তা মানুষের শরীরে প্রকাশ হতে ২৮ দিনের মতো সময় লাগে। যদি কোন প্রাণী আপনাকে কামড় দেয় এবং সেখান থেকে ভাইরাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে নিজেকে রক্ষা করতে 24 থেকে 25 দিনের মধ্যে এ ভ্যাকসিন দিতে হবে।

যে স্থানে আক্রমণ করার কারণে ভাইরাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেই স্থান প্রথমে ভালোভাবে সাবান অথবা কোন কিছু দিয়ে 15 থেকে 20 মিনিট ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। এরপরেই সেখানে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। কোন প্রাণী আক্রমণ করলে এবং সেখান থেকে ভাইরাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে রেবিস ভ্যাকসিন এর পাঁচটি ডোজ গ্রহণ করতে হবে।

প্রথম ডোজ হবে শূন্য দিন অর্থাৎ যেদিন প্রথম আঘাতপ্রাপ্ত হবে সেই দিনই ভ্যাকসিন দিতে হবে। দ্বিতীয় ভ্যাকসিনের ডোজ হচ্ছে তৃতীয়তম দিনে অর্থাৎ কোন প্রাণীতে আচর মারা বা কামড় দেওয়ার তিন নাম্বার দিনে তাকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। তৃতীয় ডোজ দিতে হবে সপ্তম দিনে। চতুর্থ ডোজ দিতে হবে ১৪তম দিনে এবং

পঞ্চম ডোজ দিতে হবে ২৮ তম দিনে অর্থাৎ শূন্য থেকে 28 দিনের মধ্যে পাঁচটি ডোজ গ্রহন করতে হবে তাহলেই জলাতঙ্ক রোগ হওয়া থেকে বা কোনরকম ভাইরাস হওয়ার সম্ভাবনা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে। ভাইরাসে আক্রান্ত প্রাণী যদি মানুষকে কামড় দেয় বা কামড় দিয়ে গোস্ত তুলে দেয় অথবা সেখানে কামড় দেয়ার মাধ্যমে সেই প্রাণীর দাঁতের দাগ বসিয়ে দেয়

তাহলে তাকে অতি দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে কারণ এরকম ভাবে আক্রান্ত হওয়ার কারণে জলাতঙ্কের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি হয়ে যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যু আসে। এরকমভাবে আক্রমণের শিকার হলেও উপরে যেই পদ্ধতিতে রেবিস ভ্যাকসিন দেয়ার কথা বলা হলো সেভাবে দিতে হবে অর্থাৎ শূন্য থেকে 28 দিনের মধ্যে পাঁচটি ডোজ কমপ্লিট করতে হবে।


এই নিয়মেই রেবিস ভ্যাকসিন দিতে হয়। কোন প্রাণী কামড় দিলে বা আঁচড় দিলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন এবং অন্তত 24 ঘন্টার মধ্যে ভ্যাকসিন বা টিকা দিয়ে নিবেন তাহলে আপনি ভাইরাসে বা কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যাবে। কোন ব্যক্তি যদি তিনটি ডোজ দেওয়ার পরে

অর্থাৎ সাত নাম্বার দিনে ডোজ দেয়ার পরে ভালো হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে ১৪ তম এবং 28 তম দিন ভ্যাকসিন না দিলেও হবে তবে দেয়াটা ভালো এতে করে একেবারে আশঙ্কা মুক্ত হওয়া যায়।

রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম বাংলাদেশে

এই ভ্যাকসিন এর দাম সম্পূর্ণ নির্ভর করে কোম্পানির উপরে। কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে যারা এ ভ্যাকসিন তৈরি করে। প্রতিটি কোম্পানির ভ্যাকসিনের দাম ভিন্ন ভিন্ন। যত ভাল কোম্পানি হয় সে কোম্পানির ভ্যাকসিনের দাম কত বেশি হয়ে থাকে।
  • ACI Limited কোম্পানির 2.5 IU/ ml ভ্যাকসিন এর দাম ৯৮০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।
  • Incepta Pharmaceuticals Ltd. এর 2.5 IU/ ml ভ্যাকসিন এর দাম ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে।
  • Popular Pharmaceuticals Ltd. এর 2.5 IU/ ml ভ্যাকসিন এর দাম ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে।
  • Synovia Pharma PLC এর 2.5 IU/ ml ভ্যাকসিন এর দাম ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকার মধ্যে।
কেনার আগে অবশ্যই ভালোভাবে মেয়াদ যাচাই-বাছাই করে নিবেন এবং দামও দেখে নেবেন কারণ অনেকে আছে যারা বেশি দাম নিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে। ভ্যাকসিনটি সরকার অনুমোদিত কি না সেদিকেও লক্ষ্য রাখবেন।

রেবিস ভ্যাকসিন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

যেকোনো কারণে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে অনেক ক্ষেত্রেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শরীরের মধ্যে দেখা দেয়। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো অনেক রকমের হতে পারে। করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার পরও মানুষের ভিতরে কয়েক ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ ভ্যাকসিন অর্থাৎ রেবিস ভ্যাকসিন দেয়ার পরও মানুষের শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো হচ্ছে
  • জ্বর।
  • শরীর ব্যথা।
  • শরীলে লাল লাল ভাব হওয়া।
  • যে স্থানে ভ্যাকসিন দিবে সেই স্থান ফুলে যাওয়া।
  • মাথাব্যথা হওয়া।
  • শরীরে ক্লান্তি আসা।
  • বমি বমি ভাব হওয়া।
  • শরীরের চুলকানি বের হওয়া।
  • মাথা ঘোরা।
  • ঘুমের সমস্যা তৈরি হওয়া।
  • এলার্জির প্রবণতা বেড়ে যাওয়া।
  • শরীর স্বাভাবিকের তুলনায় দুর্বল অনুভব হওয়া।
  • খাবার খেতে অনীহা সৃষ্টি হওয়া।
আপনি ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পরে যদি এইসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো দেখতে পান তাহলে আপনার জন্য উচিত হবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা এবং ডাক্তার যে মোতাবেক পরামর্শ দেয় অথবা ওষুধ খেতে বলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন অথবা ওষুধ খাবেন তাহলে আপনি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে একেবারে মুক্ত থাকবেন।


ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে পার্শ্বপ্রতিক্রি দেখলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো অত্যন্ত স্বাভাবিক। তাই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো আপনার ভিতরে লক্ষ্য করলে চিন্তিত না হয়ে ডাক্তারকে দেখান তাহলে আপনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।

রেবিস ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা কতদিন থাকে

প্রত্যেকটি ভ্যাকসিন এর নির্দিষ্ট একটি সময়সীমা পর্যন্ত কার্যকারিতা থাকে। রেবিস ভ্যাকসিন এর ক্ষেত্রেও সে রকমই কিছু নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত কার্যকারিতা রয়েছে। ২৮ তম দিনে যখন পঞ্চম ডোজ অর্থাৎ বুস্টার ডোজ দেয়া হয়ে যাবে সেই সময় থেকে রেবিস ভ্যাকসিন এর কার্যক্ষমতা কারো কারো ক্ষেত্রে এক বছর আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দুই বছর।

অনেক সময় কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বিপরীত দিকে কিছু মানুষের শরীরে তা ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। একবার সুস্থ হওয়ার পরে যদি আপনি আর কোন প্রাণীর দ্বারা আক্রমণের শিকার না হন সেক্ষেত্রে আর কখনো এই ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজন হবে না আর যদি আপনি নিয়মিত কোন প্রাণীর দ্বারা আক্রমণের শিকার হন

তাহলে আপনাকে নিয়মিত এ ভ্যাকসিন দিতে হবে। এ ভ্যাকসিন দেয়ার সময়সীমা যত বেশি বৃদ্ধি হয় এ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ক্ষমতা তত কমতে থাকে। খুব কম মানুষের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে পাঁচ বছর পর্যন্ত এ ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা তার শরীরে রয়েছে। ভ্যাকসিন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন


এবং ভ্যাকসিনের মেয়াদ পার হয়ে গেলেও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন। ডাক্তার যে পরামর্শ দেয় সে পরামর্শ মেনে চলবেন তাহলে আপনার জন্য ভালো হবে।

শেষ কথা

বাসায় কুকুর বিড়াল লালন পালন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন। অনেক সময় দেখা যায় তাদের হাচর বা কামড় থেকে অনেক বড় আকারের রোগ সৃষ্টি হয় এজন্য অবশ্যই আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও রাবিস ভ্যাকসিন সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url