কফি বানানোর নিয়ম- কফি খাওয়ার অপকারিতা- কফি পাউডার দিয়ে রূপচর্চা

প্রিয় পাঠক আপনি কি কফি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন, তাহলে এ পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোস্টে কফি খাওয়ার উপকারিতা, কফি বানানোর নিয়ম সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আলোচনা করব। তাই চলুন আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন তাহলে কফি সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন।
কফি খাওয়ার উপকারিতা

এছাড়াও আপনি এই পোস্টের মধ্যে কফি খাওয়ার অপকারিতা, কফি পাউডার দিয়ে রূপচর্চা,কফি দিয়ে চুলের যত্ন নেই কিভাবে সেসব সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে এবার পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

চা পান করার মত কফিও আমাদের অনেক প্রিয়। আমরা সকালে,দুপুরে খাবারের পরে বা বিকালে অলস সময়ে আমরা কফি পান করে থাকি। কফির ক্ষেত্রে কারো কারো নরমাল কফি পছন্দ, কারো কাারো হট কফি পছন্দ, কারো কারো কোল্ড কফি। চায়ের যেমন বিভিন্ন প্রকার রয়েছে তেমনিভাবে কফিরও বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। আমরা কেউ কপি পছন্দ করি আবার কেউ চা পছন্দ করি। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কফি বিড়ালের বিষ্ঠা থেকে তৈরি হয়।


কফি খাওয়ার যেসব উপকারিতা রয়েছে সেই উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য আপনি কিভাবে কফি খাবেন সে সম্পর্কে জানতে হবে চলুন এবার কফি সম্পর্কে বিস্তারিত পদ্ধতি জেনে নিন।

কফি বানানোর নিয়ম

কফি সাধারণত তিন ধরনের হয়
  1. নরমাল কফি।
  2. হট কফি।
  3. কোল্ড কফি।
সিরিয়াল অনুযায়ী তিন ধরনের কফি বানানোর নিয়ম বলবো। যাতে করে আপনার যখন যে ধরনের কফি খেতে মন চায় আপনি সে ধরনের কফি বাসায় নিজেই বানিয়ে খেতে পারেন।

নরমাল কফি বানানোর নিয়ম

আপনি গরম পানি নিয়ে সেখানে কিছু পরিমাণ চিনি দিয়ে আর কফি পাউডার মিশিয়ে হালকা করে নাড়া দিলে আপনার নরমাল কপি হয়ে যাবে। এটাকে ব্ল্যাক কফিও বলা হয়। আপনি যদি নরমাল কফিতে দুধ দিয়ে খেতে চান তাহলে পানির স্থানে দুধ ব্যবহার করবেন। এতে করে আপনার নরমাল দুধ কফি হয়ে যাবে।এই ব্ল্যাক কফি খাওয়ার ফলে বৃষ্টি উপকৃত হওয়া যায়।

হট কফি বানানোর নিয়ম

আপনি যদি হট কফি বানাতে চান সেক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়বে কফি পাউডার,গরম দুধ এবং হালকা চিনি। আপনি একটি গ্লাসে বা কাপে গরম দুধ নিবেন সেখানে আপনার মন মত কফি পাউডার মিশাবেন এরপরে আপনি হালকা চিনি দিবেন আবার মন চাইলে না দিতে পারেন। তারপর আপনি সেটা ভালোভাবে নাড়া দিলেই আপনার হট কফি হয়ে যাবে।

কোল্ড কফি বানানোর নিয়ম

কোল্ড কফি বানানোর ক্ষেত্রে কয়েক ভাবে বানানো যায়।
  • প্রথমে আপনি গরুর দুধ ঘন ভাবে গরম করে নিবেন। এরপরে সেই দুধ ঠান্ডা করতে দেবেন। দুধ ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনি একটি কাপে কফি পাউডার নিবেন। তারপর আপনি সেখানে বরফের টুকরা দিয়ে দিবেন। এরপর আপনি দুধ মিশালে আপনার কোল্ড কফি তৈরি হয়ে যাবে।
  • আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে আপনি প্রথমে কফি পাউডার, চিনি আর হালকা পানি দিয়ে তা ভালোভাবে বিট করে নিবেন বা বোতলে ভরে ঝাকিয়ে নিবেন। এতে করে এক ধরনের ক্রিম ভাব চলে আসবে। তখন আপনি একটি গ্লাসে সেই ক্রিম নিচে হালকা ভাবে রাখবেন তারপর সেখানে কয়েক টুকরা বরফ দিবেন। এরপর আপনি ঠান্ডা ঘন দুধ দিয়ে দেবেন তারপরে আপনি আবার সেই ক্রিম করা কফিগুলো দিয়ে হালকাভাবে নাড়া দিবেন। এতে করে আপনার ক্রিম কফি হয়ে যাবে। এটি খেতে অনেক সুস্বাদু।
আপনি এই তিন পদ্ধতিতে কফি বানিয়ে খেতে পারেন। আপনার হাতে যদি সময় কম থাকে তাহলে থ্রি ইন ওয়ান একটি প্যাকেট পাওয়া যায় সেখানে সবকিছুই মিশানো থাকে শুধু গরম পানি দিয়ে মিশালেই খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যায় খাওয়ার জন্য।

কফি খাওয়ার উপকারিতা

কফিতে অনেক প্রয়োজনীয় উপকার রয়েছে। যেগুলো আমাদের জন্য অনেক জরুরী। কফি খাওয়ার ফলে কি কি উপকার হয় সেসব জানে নিন।
  • কফি খাওয়ার ফলে আপনার ক্লান্তি ভাব শরীরের দূর হবে এবং কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
  • কফিতে ক্যাফেইন থাকে যেটা আপনার চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।
  • স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। আমাদের দেশের সাধারণত দেখা যায় ৬০ থেকে ৬৫ বছরের পরে মানুষরা ভুলে যাওয়ার রোগে আক্রান্ত হয়। সে ক্ষেত্রে আপনি তাদের কফি খাওয়ালে তাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
  • কফি খাওয়ার ফলে আপনার হৃদরোগে ও স্টকের ঝুঁকি কমে যাবে। এজন্য আপনি নিয়মিত দুই থেকে তিন কাপ কফি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • কফি আপনার বিষন্নতা ভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
  • কফি আপনার শরীরের ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
  • আপনার বমি বমি ভাব দূর করতে কফি ভীষণ কার্যকারি। যদি আপনি কখনো এই সমস্যায় পরেন সে ক্ষেত্রে আপনি কফি খেয়ে চেষ্টা করতে পারেন।

কফি আমাদের জন্য অনেক উপকারিতা বয়ে নিয়ে আনে। এসব উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন প্রতিদিন এক কাপ করে হলেও কফি খাওয়ার।

কফি খাওয়ার অপকারিতা

কফি খাইলে যেমন উপকার হয় তেমনি ভাবে উপকারিতার পাশাপাশি কফির কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যেগুলো জানা জরুরী যাতে করে আপনি সেই ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারেন। চলুন এবার সেই অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানুন।
  • অতিরিক্ত কফি খাওয়ার ফলে ঘুমের সমস্যা হবে।
  • যাদের ডায়রিয়ার সমস্যা হয় তারা কফি খাওয়া থেকে দূরে থাকুন কারণ কফি আপনার ডায়রিয়া আরো বৃদ্ধি করে দিবে।
  • সকালে খালি পেটে কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এটি আপনার হজম শক্তির সমস্যা করে।
  • অতিরিক্ত কফি খাওয়ার ফলে আপনার কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাবে।
  • যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • আপনি অতিরিক্ত কফি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়ে আপনার মেজাজ অধিকাংশ সময় খারাপ থাকবে এজন্য অতিরিক্ত কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • কোন মহিলা দিনে পাঁচ কাপের বেশি কফি খাইলে তার গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যায়। তাই দিনে স্বাভাবিক মাত্রায় কফি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

উপরে কফির উপকারিতা এবং অপকারিতা দুইটাই সম্পর্কে বলা হয়েছে। আপনি কফির উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য আপনার জন্য জরুরি হচ্ছে আপনি নিয়ম অনুযায়ী কফি খাবেন এতে করে আপনার কোন রকমের কোন সমস্যা হবে না।

কফি পাউডার দিয়ে রূপচর্চা

কফির অনেক উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে কপি রূপচর্চার ক্ষেত্রেও কাজে লাগে। চলুন এবার কিভাবে কফি দিয়ে রূপচর্চা করতে হয় সেসব সম্পর্কে জানি।
  • কফি আপনার ত্বক নরম রাখতে সাহায্য করে। এই নরম ভাব পাওয়ার জন্য ব্যবহার করার নিয়ম হলো কিছু পরিমাণ কফি কিছু,কিছু পরিমাণ চিনি, অলিভ অয়েল বা নারিকেলের তেল নিয়ে একসাথে মিশিয়ে তা মুখে দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলবেন এতে করে আপনার ত্বক নরম থাকবে।
  • আপনি কফি ফেসমাস্ক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার চেহারা উজ্জ্বল হবে এবং গোলাপি আকার ধারণ করবে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে কফি গোলাপজল আর হালকা চিনি বা মধু। মধু হলে সবচেয়ে ভালো হয়। একসাথে মিশিয়ে মুখের উপর দিয়ে রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলবেন এতে করে আপনার চেহারা উজ্জ্বল হবে।
  • আপনার চেহারা বা চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে কফি সাহায্য করে। ব্যবহারের নিয়ম হচ্ছে কিছু কফি এবং গোলাপ জল নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে চোখের নিচে এবং যেসব জায়গায় কালো দাগ রয়েছে সেই সে সব জায়গায় মাখিয়ে দিন। এতে করে আপনার কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
  • কফি ঠোট গোলাপি করতে এবং ঠোঁট নরম রাখতে সাহায্য করে। ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে এক চামচ কফি এবং মধু নিয়ে তা ভালোভাবে মিশিয়ে ঠোঁটের উপর কিছুক্ষণের জন্য দিয়ে রাখুন। এভাবে আপনি প্রতিদিন ব্যবহার করলে আপনার ঠোট নরম এবং গোলাপি হবে।

কফি দিয়ে চুলের যত্ন

কফি যেমন আপনার ত্বকের রূপচর্চার ক্ষেত্রে কার্যকারী তেমনি ভাবে চুলের যত্নের ক্ষেত্রেও কার্যকারী। কফি শুধু শরীরের জন্য নয় বরং চেহারায় এবং চুল উভয়ের জন্য উপকারী। এবার কিভাবে চুলের যত্ন নিতে কফি ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জানুন।
  • কফি আপনার চুল সিল্কি করতে সাহায্য করবে। ব্যবহার করার নিয়ম হচ্ছে আপনি প্রথমে মাথা চুল শ্যাম্পু করে নেবেন। এরপরে ভালোমতো মুছবেন। তারপর কফি ভালোভাবে পানিতে মিশাবেন এবং সেখানে কিছু পরিমাণ নারিকেলের তেল দিবেন এরপর আপনার তুলে দিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এরপর ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন এতে করে আপনার চুল সিল্কি হবে।
  • কন্ডিশনার ব্যবহার করার সময় আপনি কিছু পরিমাণ কফি একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার চুল সুন্দর হবে।
  • কফি আপনার চুলের গুড়া পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে। ব্যবহার করার নিয়ম হলো কিছু পরিমাণ কফি, পানি এবং চিনি আর নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে চুলের প্রতিটি গোড়ায় মাসাজ করুন। চুলের শ্যাম্পু করার আগে ব্যবহার করুন। এরপরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নেন। এতে করে আপনার চুলের গোড়ার ময়লা দূর হয়ে যাবে।

শেষ কথা

কফির উপকারিতা অনেক এজন্য আপনি অতিরিক্ত খাবেন না।নিয়মের মধ্যে খাবেন তাছাড়া আপনার সমস্যা হবে। আপনি কফি খাবার পাশাপাশি চাইলে রূপচর্চা এবং চুলের যত্নেও ব্যবহার করতে পারবেন। আশা করি আপনি কফি সম্পর্কে সবকিছু জানতে পেরেছেন।

আমার এই পোস্ট আপনার ভালো লাগলে আপনি আপনার বন্ধু মহল এবং আত্মীয় স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও কফি দ্বারা উপকৃত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url