তন্দ্রা আসলে কি ওযু ভেঙে যায় - পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়

প্রিয় পাঠক আপনি কি মাথায় কাপড় না দিলে কি ওযু ভেঙে যায় সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে মাথায় কাপড় না দিলে কি ওযু ভেঙে যায় এবং পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায় ও তন্দ্রা আসলে কি ওযু ভেঙে যায়,প্রস্রাব করলে কি ওযু ভেঙে যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
তন্দ্রা আসলে কি ওযু ভেঙে যায়
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন শুলে কি ওযু ভেঙে যায় এবং ঝিমালে কি ওযু ভেঙে যায় ও জোরে হাসলে কি ওযু ভেঙে যায়,বমি করলে কি ওযু ভাঙ্গে সেই সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোষ্টের আগানো যাক।

ভূমিকা

ওযু অবস্থায় নিজের অজান্তে অনেক সময় অনেক রকমের কাজ করা হয়ে যায়। এতে করে অনেকে চিন্তিত হয়ে যায় যে তার অজু ভেঙ্গে গেল কিনা। কারো মাথা থেকে ওড়না সরে যায়,কেউ জোরে হাসে, কেউ ঝিমায় অথবা কেউ তন্দ্রা আসে বা শুয়ে পড়ে যার কারণে অনেকে ভেবে থাকেন তাদের অজু ভেঙ্গে গেছে।


এই ধারণাগুলো কতটুকু সত্য আমরা এই পোস্টের মধ্যে জানব।

শুলে কি ওযু ভেঙে যায়

অনেকে চিন্তা করেন অজু করার পরে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে বা বিছানায় গড়াগড়ি করলে তাদের অজু ভেঙ্গে যায়। এই ধারণা একেবারেই ভুল। কেউ যদি অজু করার পরে বিছানায় সারাদিনও শুয়ে থাকে তারপরও তার অজু ভাঙবে না। সেই সময় ভাঙবে যখন সে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যাবে। তার আগ পর্যন্ত তার ওযু ভাঙবে না।

শুধু বিছানা হোক বা পৃথিবীর যে স্থানে সে শুয়ে ঘুমাবে সেখানেই তার অজু ভেঙে যাবে কিন্তু সে যদি শুধু শুয়ে থাকে না ঘুমায় তাহলে তার কোন রকমের ওযু ভাঙবেন না। শোয়ার ক্ষেত্রে সে যদি জিত বা কাত বা উপর হয়ে শুতে তারপরও তার অজু ভেঙ্গে যাবে না অর্থাৎ সে যেকোন ভাবে শুয়ে থাকতে পারে শুধু না ঘুমালেই হবে।

জোরে হাসলে কি ওযু ভেঙে যায়

কোন ব্যক্তি যতই জোরে হাসুক না কেন তার অজু কোন অবস্থাতে ভাঙবে না। অজু ভঙ্গের যেসব কারণ রয়েছে সে কারণগুলোর মধ্যে কোথাও লেখা নেই যে সে হাসলে অজু ভেঙ্গে যাবে। হাসি কোনভাবেই অজু ভঙ্গের কারণ নয়। কোন ব্যক্তি যদি অজু করার পরে মন মত অট্টহাসি দেয় অথবা মুচকি আসে চাই যে ধরনের হাসি হোক কোন অবস্থাতে তার অজু ভাঙবে না।

নামাজ ভঙ্গের কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নামাজে অট্টহাসি দেওয়া। কেউ যদি নামাজে অট্ট হাসি দেয় তাহলে তার নামাজ ভেঙ্গে যাবে কিন্তু ওযু ভাঙবে না কারণ নামাজে অট্টহাসি এটি নামাজ ভঙ্গের কারণ। অজু ভঙ্গের কারণ নয়।

মাথায় কাপড় না দিলে কি ওযু ভেঙে যায়

কোন মেয়ে মানুষ যদি ওযু করার পরে তার মাথায় এক সেকেন্ডের জন্যও কাপড় না রাখে তারপরও তার ওযু ভঙ্গ হবে না। অনেকে ভাবেন অজু করার সময় যদি মাথায় কাপড় না থাকে তাহলে অজু ভেঙে যায়। এ ধারণা ভুল বরং অজু করার সময় যখন মাথা মাসাহ করা হয় তখন উচিত হবে মাথা থেকে কাপড় সরানো কারণ তখন ক্ষেত্রে কাপড় ভিজে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


তাই কোন মেয়ে মানুষ অথবা মহিলা যদি ওযু করার সময় মাথায় কাপড় না রাখে অথবা ওযু করার পরেও মাথায় কাপড় না রাখে তারপরও তার ওযু কখনো ভঙ্গ হবে না।

পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়

পাদ দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে আস্তে পাদ আরেকটি জোরে। কোন ব্যক্তি যদি অজু থাকা অবস্থায় আস্তে অথবা জোরে যে কোন একভাবে পাদ মারে তাহলে তার অজু ভেঙ্গে যাবে। অজু ভঙ্গের কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পায়খানা বা পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া। পাদ যেহেতু পায়খানা রাস্তা দিয়ে বের হয় তাহলে তার অজু ভেঙে যাবে।

এমনকি অনেক সময় অসুস্থতার কারণে মেয়েদের সামনে রাস্তা দিয়ে পোকা বের হয়। যদি অসুস্থতার কারণে কোন মহিলার সামনে রাস্তা দিয়ে পোকা বের হয় তারপরও তার অজু ভেঙে যাবে। সামনে বা পিছনে রাস্তা দিয়ে যে কোন কিছুই যদি বের হয় তাহলেই তার অজু ভেঙ্গে যাবে। পাদ যেহেতু দুই রাস্তার যেকোন একটি রাস্তা দিয়ে বের হচ্ছে সুতরাং পাদ মারার কারণে অজু ভেঙ্গে যাবে।

প্রস্রাব করলে কি ওযু ভেঙে যায়

পায়খানা বা প্রেসারের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলেই অজু ভেঙে যায় সুতরাং কেউ যদি পেশাব করে তাহলে তার অজু ভেঙ্গে যাবে। কেউ যদি ঘুমের মধ্যে পেশাব করে তাহলে তো ঘুমানোর কারণে অজু ভেঙ্গে যাবে আর কেউ যদি স্বয়ং অবস্থাতে ইচ্ছাই বা অনিচ্ছায় পেশাব করে তাহলেও তার অজু ভেঙ্গে যাবে।

সেই প্রসাব কোন কাপড়ের লাগে তাহলে সে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে। এজন্য পেশাব করার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে পেশাব করবেন।

তন্দ্রা আসলে কি ওযু ভেঙে যায়

কেউ যদি বসে বসে তন্দ্রাই তাহলেও তার অজু ভঙ্গ হবে না। ওযু ভঙ্গের কারণের মধ্যে হচ্ছে চিত বা কাত হয়ে অথবা হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া। অর্থাৎ কেউ যদি আসন গেড়ে বসে অথবা বাসের সিতে বা চেয়ারে বসে তন্দ্রাই তাহলেও তার ওযু ভঙ্গ হবে না। যদি তার তন্দ্রা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে তার স্বাভাবিক কোন জ্ঞান থাকে না।


সে একেবারে তন্দ্রার মধ্যে মগ্ন হয়ে যায় এবং তন্দ্রাড়ানোর সময় সামনে সামনের দিকে ঝকার কারণে তার নিতম্ব মাটি থেকে উপরে উঠে যায় তাহলে তার অজু ভেঙে যাবে। কেউ যদি আত্তাহিয়াতু অবস্থায় বসে তন্দ্রায় তাহলে তার ওযু ভেঙ্গে যাবে না।

ঝিমালে কি ওযু ভেঙে যায়

কোন ব্যক্তি যদি বসে ঝিমায় তাহলে তার ওজন ভঙ্গ হবে না। বসার ধরন যে কোন হতে পারে চাই বাসে বা টেন অথবা প্রাইভেট কারে বা এমনিতেই মাটিতে বসে ঝিম আচ্ছে তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হবে না। কোন ঝিমানো ব্যক্তির ওযু সেই সময়ে ভঙ্গ হবে যখন সে ঝিমানোর কারণে সামনের দিকে ঢুকে যায় এবং পিছন থেকে নিতম্ব সামান্য পরিমাণ উঁচু হয়ে যায়

অর্থাৎ সে ঝিমানোর মধ্যে এতটাই মগ্ন হয়ে গেছে যে সে সামনের দিকে পড়ে যেতে লাগছে অথবা ঝুকে গেছে এমন সময় তার কোমর কিছু উঁচু হয়ে নিতম্ব সামনের দিকে ছেড়ে গেছে তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। এই অবস্থা না হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ যদি ঝিমায় তাহলে তার ওজন ভঙ্গ হবে না।

বমি করলে কি ওযু ভাঙ্গে

বমি দ্বারা ওযু ভঙ্গ হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হচ্ছে বমি মুখ ভরে হতে হবে। কারো বমি যদি মুখ ভরে না হয়ে সামান্য পরিমাণ হয় তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হবে না। ওযু নষ্ট করার জন্য শর্ত হচ্ছে মুখ ভর্তি বমি হওয়া। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যদি কিছু সময়ের মধ্যে কয়েকবার অল্প অল্প করে বমি হয় তাহলে কি অজু ভেঙ্গে যাবে।

এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে ইমাম মোঃ রহঃ এর মতে যদি বমির কারণ অর্থাৎ সে যে কারণে বমি করছে যদি একই কারণে কয়েকবার বমি করে আর সে বমি গুলা একত্রিত করা হয় তাহলে মুখ ভর্তি বমি সমান হবে তাহলে তার অজু ভেঙ্গে যাবে। ইমাম আবু ইউসুফ রহমতউল্লাহ এর মতে যদি বমির স্থান এক হয় অর্থাৎ সে একই জায়গায় বা তার আশেপাশের স্থানে হাঁটাচলা করার মাধ্যমে


কয়েকবার বমি করছে তাহলে বমি সবগুলোকে একত্রিত করা হবে। একত্রিত করার পর যদি মুখ ভর্তি হয় তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হবে অন্যথায় ভঙ্গ হবে না। মোটকথা হচ্ছে কেউ যদি একাধারে কয়েকবার বমি করে এবং বমির পরিমাণ গুলো মুখ ভর্তি হয়ে যায় তাহলে তার অজু ভেঙ্গে যাবে।

শেষ কথা

ওযু অবস্থায় সব সময় চেষ্টা করতে হবে এমন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকা যেগুলো অজুকে ভেঙে দেয়। আর আরেকটি বিষয় উচিত হবে তা হচ্ছে অজু ভাঙ্গা সম্পর্কে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে সে ভুল ধারণা থেকে নিজেকে বের করে নেওয়া।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবী এবং আত্মীয়-স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও ওযু ভঙ্গের অনেকগুলো কারণ এবং ভুল ধারণা সম্পর্কে জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url