বিড়ালের খাবার তালিকা- বিড়াল পালনের নিয়ম- বিড়াল পালনের উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আপনি কি বিড়াল পালনের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন,তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোস্টের মধ্যে বিড়াল পালনের নিয়ম এবং বিড়াল পালনের উপকারিতা ও বিড়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন তাহলে সবকিছু জানতে পারবেন।বিড়াল পালনের নিয়মএছাড়াও আপনি পোস্টের মধ্যে পাবেন বিড়ালের খাবার তালিকা, বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর খাবার, বিড়াল পালনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

বিড়াল একটি গৃহপালিত এবং খুব আদরের প্রাণী। অনেকে বাড়িতে বিড়াল পুষে, অনেকে ব্যবসা করার পালন করে। বিড়াল খুব লাজুক স্বভাবের। বিড়াল গ্রাম অঞ্চলের বাসা বাড়িতে অনেক উপকারের কাজে ব্যবহার হয়। বিড়াল পালনের যেসব নিয়ম রয়েছে সেসব নিয়ম অনুযায়ী বিড়াল পালন করলে আপনি বিড়ালকে খুব সুন্দর ভাবে পালন করতে পারবেন। এই পোষ্টের মধ্যে কিভাবে বিড়াল পালন করবেন সেই সম্পর্কে বলার চেষ্টা করা হয়েছে।


যাতে করে যারা বাসায় বিড়াল পুষতে চায় তারা যেন খুব সহজে বাসায় পৌঁছতে পারে।

বিড়াল পালনের নিয়ম

গৃহপালিত প্রাণী পোষার ক্ষেত্রে বিড়াল পালনের যেসব পদ্ধতি রয়েছে আপনি সেই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনার বিড়াল খুব শান্ত স্বভাবের হবে এবং সুস্থ থাকবে। এবার সেই নিয়ম গুলো জানুন-
  • বিড়াল স্বভাবের দিক দিয়ে স্বাধীন স্বভাবের হলেও বিড়ালের অনেক যত্নের প্রয়োজন হয়। এজন্য আপনি যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন সারাদিনের মধ্যে আপনার কিছু সময় বিড়ালের পিছনে ব্যয় করতে হবে। আপনি যদি বিড়ালের পিছনে সময় ব্যয় করে যত্ন না করেন তাহলে বিড়াল পালন করা আপনার জন্য উচিত হবে না।
  • বিড়ালকে নির্দিষ্ট একটি স্থানে টয়লেট করানোর অভ্যাস করুন এতে করে আপনার জন্য সুবিধা হবে। তাছাড়া সে আপনার ঘরে বা বাড়ির যে কোন জায়গায় টয়লেট করে দিবে।
  • আপনি বাড়ির জন্য বিড়াল পুষতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে কথা বলে টিকা নিতে হবে।
  • বিড়ালকে প্রতিদিন খাবার পানি এগুলো নিয়ম করে দিতে হবে এবং ঠিকমতো খেয়াল রাখতে হবে যে তাদের কাছে খাবার খাবার পৌছাচ্ছে কিনা।
  • বিড়ালের যাতে কোন রকমের অসুখ বা কোন রকমের সমস্যা না হয় সেদিকে আপনার নজর রাখা জরুরী।
  • বিড়াল যদি আপনার বাসায় নতুন নিয়ে আসেন সে ক্ষেত্রে তারা একটু লাফালাফি করবে, রাতে ঘুমাবে না, এই বিষয়গুলোর সাথে মানিয়ে নিতে হবে। তাদেরকে কাছে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে।
  • আপনি বাসায় বিড়াল পোষলে সেক্ষেত্রে ইঁদুর এবং পোকামাকড় মারার বিষ ব্যবহার করবেন না। তারা সেখানে মুখ দিতে পারে তখন সেটা মৃত্যুর কারণ হবে।
  • বিড়ালকে আপনি বাহিরে নিয়ে গেলে আপনার হাতের সাথে একটি বেল দিয়ে পেচিয়ে রাখুন। তাছাড়া দুর্ঘটনা শিকার হতে পারে।
  • বিড়ালের নখ ৬ মাস বয়সের পর থেকে কেটে দিবেন না। নক কাটার ক্ষেত্রে অনেক যত্নশীল থাকবেন।
  • আপনি বিড়ালকে অযত্নে রেখে কোথাও যাবেন না। আপনি যদি কোথাও বেড়াতে যান সে ক্ষেত্রে বিড়ালকে পরিচিত কারো বাসায় রেখে যাবেন। আর বাসার বাহিরে কিছুক্ষণের জন্য গেলে বাসার কাউকে বলে যাবেন যেন তার দিকে খেয়াল রাখে।
বিড়াল পালনের পদ্ধতি যেসব বললাম সেসব ফলো করলে আপনার জন্য বিড়াল পালন করা খুব সহজ হবে।

বিড়াল পালনের উপকারিতা

বিড়াল গৃহপালিত প্রাণী হওয়ার জন্য সেটা আপনার অনেক উপকারে লাগে। এজন্য এবার বিড়াল পালনের উপকারিতা জানুন-
  • আপনি যদি বিড়াল বাসায় পুষেন সেক্ষেত্রে বিড়াল আপনার বাসার ইঁদুর ধরতে সাহায্য করবে। ইদুর যেসব ক্ষতি করে আপনাদের সেসব ক্ষতি থেকে বিড়াল রক্ষা করবে।
  • বিড়াল পালন করলে কোন এক গবেষণায় দেখা গেছে যে মানসিক চাপ অনেকটা কমে যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও কম হয়।
  • বিড়াল আপনার পাশে থাকলে ঘুমানোর ক্ষেত্রে আপনার ঘুম খুব ভালো হবে।
  • আপনি বিড়ালের সাথে অনেক ভালো সময় কাটাতে পারবেন। বিড়াল আপনার মনকে ভালো রাখবে।
  • যেসব ব্যক্তি বিড়াল পুষে তাদের ক্ষেত্রে লাভজনক হচ্ছে তারা নিজেরাও বিড়ালের পাশাপাশি নিজের যত্ন নেয়। তারা অনেক স্মার্ট হয়।
  • বিড়াল আপনার অবসর সময়ে আপনার বন্ধুর মত কাজ করবে। আপনি তার সাথে খুব ভালো সময় কাটাতে পারবেন।
  • আপনি বিরাল পুষলে আপনার প্রতি নারীরা আকৃষ্ট হবে। ডক্টর জুম নেক নিকোলাসের গবেষণায় দেখা গেছে যে তার মতে ৯০ শতাংশ নারী ওইসব পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং পছন্দ করে যারা বাসায় বিড়াল পোষ।

আপনি বিড়াল পোষার চেষ্টা করুন। যাতে করে আপনি বিড়ালের এসব উপকারিতা পেতে অবশ্যই বিড়াল পালনের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

বিড়ালের খাবার তালিকা

বিড়ালকে খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক থাকতে হয়। তাদেরকে সব রকমের খাবার দেয়া উচিত নয় এতে করে তাদের জন্য ক্ষতিকর হবে। বিড়াল পালনের যেসব নিয়ম রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে তাদের খাবারের প্রতি যত্নশীল হওয়া। এবার তাদেরকে কি কি খাবার দেবেন সে সম্পর্কে জানুন-
  • বিড়াল কে কখনো কাঁচা খাবার দিবেন না। কাঁচা খাবারে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা তাদের জন্য ক্ষতিকর হবে।
  • মাংস খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কখনোই কাঁচা মাংস দিবেন না।
  • তাদেরকে মাছ খেতে দিলে কাটা বেছে দিবেন। কাঁটাযুক্ত মাছ কখনো তাদেরকে দিবেন না।
  • বিড়ালকে প্রতিদিন চেষ্টা করবেন কিছু পরিমাণে মাংস খাওয়ানোর তবে সেক্ষেত্রে সিদ্ধ করে দেবেন।
  • গরুর মাংস কম খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন, মুরগির মাংস এবং অন্য প্রাণীর মাংস বেশি খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
  • তাদের মাছ অনেক প্রিয়। চেষ্টা করবেন মাছ খাওয়ানোর তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মাছ সিদ্ধ করে কাটা বেছে দিবেন। কখনো কাঁচা মাছ দিবেন না।
  • সব সময় তাদের আশেপাশে পানি রাখবেন যাতে তারা খাবারের সাথে পানিও খেতে পারে।
  • দিনের মধ্যে তিনবার খাবার দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তিন বারের বেশি খাবার দিবেন না। তাদের অভ্যাস করে নিবেন একই সময় খাবার দেয়ার।
  • বিড়ালের যেগুলো ড্রাই ফুট রয়েছে সেগুলো অল্প পরিমানে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।বেশি খাওয়ালে তাদের জন্য সুবিধা হবে অসুবিধা হবে।
  • তাদেরকে আলু মিষ্টি কুমড়া এজাতীয় খাবার সিদ্ধ করে দিবেন কখনো কাচা দিবেন না।

খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে আপনি তাদেরকে এগুলো খাবার দিলে তারা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে এবং পুষ্টি সম্পন্ন হবে। বিড়ালের খাবারের দিকেও যত্ন রাখা জরুরি তাছাড়া তারা দুর্বল হয়ে যাবে এবং রোগে আক্রান্ত হবে।

বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর খাবার

অনেক রকমের খাবার রয়েছে যেগুলো বিড়ালের জন্য অনেক ক্ষতিকর হবে। সেগুলো খাওয়ালে আপনার বিড়াল অসুস্থ হয়ে পরতে পারে। তাই সেগুলো নাম জেনে নিন-
  • বিড়াল কে কখনো আঙ্গুর কিসমিস এ জাতীয় খাবার দিবেন না। এগুলো তাদের কিডনির সমস্যা করে।
  • পেঁয়াজ,রসুন,আদা কখনো এই মসলা জাতীয় জিনিস তাদেরকে খেতে দিবেন না। এসব বেশি খেলে তাদের মৃত্যু হতে পারে।
  • চিনি, লবণ এগুলো তাদের থেকে দূরে রাখবেন যাতে করে এগুলো খেতে না পারে। তারা এগুলো খাওয়ার পরে ডায়রিয়া এবং বমি সমস্যা হতে পারে।
  • তাদেরকে কখনো চকলেট কফি এ জাতীয় খাবার পানীয় থেকে দূরে রাখবেন। এগুলো তাদের হৃদপিণ্ডের কম্পন বাড়িয়ে দেয় এতে করে তাদের মৃত্যু হতে পারে।
  • তাদের কখনো মদ বা নেশা জাতীয় কোন পানীয় পান করাবেন না। এগুলো পান করলে তাদের মৃত্যু অনিবার্য।
  • কাঁচা খাবার কখনো খাওয়াবেন না। তাদের কাছে খাবার খাওয়ালে হজম শক্তিতে সমস্যা হবে।
আপনি এই খাবারগুলো থেকে তাদেরকে বিরত রাখবেন তাতে আপনার বিড়াল সুস্থ থাকবে।

বিড়াল পালনের ক্ষতিকর দিক

বিড়াল পালনের যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমন কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। চলুন সেগুলো জানুন তাহলে আপনি সে ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন। 
  • অনেকের বিড়ালের এলার্জি রয়েছে তাই বাসায় বিড়াল নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন।
  • বিড়াল আপনার খাবার নষ্ট করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় বিড়াল খাবারে মুখ দিয়ে দেয় সেগুলো থেকে সাবধান থাকবেন।
  • বিড়াল যেহেতু ইঁদুর ধরে সেক্ষেত্রে আপনি যদি বাসায় মুরগী পালন করে থাকেন সে ক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন। অনেক ক্ষেত্রে বিড়াল সেই মুরগির উপরে হামলা করতে পারে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে যারা শৈশবকালে বাসায় বিড়াল পালন করছে তারা পরবর্তীতে অন্য মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়।
  • বিড়াল আপনার ঘুমের সমস্যা করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় রাত আসলে জ্বালাতন করে সেক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যা হয়।

আপনি বিড়াল পালনের যেসব নিয়ম রয়েছে সেসব অনুসরণ করলে তারা রাত্রে ঘুমানোর ক্ষেত্রে সমস্যা করবে না।বিড়ালের এগুলো হচ্ছে ক্ষতিকর। বাকি ক্ষতিকর দিকগুলো বাঁচার জন্য বিড়াল পোষা ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে পারেন।

শেষ কথা

বিড়াল খুব কমল স্বভাবের হয়ে থাকে এজন্য আপনি বিড়াল পোষার আগে চিন্তা করবেন যে বিড়াল যেভাবে পালন করতে হয় সেভাবে পালন করতে পারবেন কি না। তাছাড়া বিড়াল বাসায় নিয়ে আসলে ওদের জন্য অসুবিধা হবে এবং বাসার জন্য অসুবিধা হবে। বিড়াল পালনেরও কিছু সমস্যা থাকে সে সমস্যাগুলো দেখে নিবেন যাতে পরবর্তীতে আপনার সেই সমস্যাগুলো না হয়।

আমার এই পোস্ট যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও বিড়াল-পোষার প্রতি আগ্রহ হয় এবং বিড়াল পোষার ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url