শামুক তাড়ানোর উপায় এবং বিষ- শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক আপনি কি শামুক তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এ পোষ্টের মধ্যে শামুক তাড়ানোর উপায় এবং শামুক মারার বিষ সম্পর্কে আলোচনা করব।
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন শামুকের ডিম এবং শামুকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোষ্টের দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
শামুক একটি প্রাণী এটা পুকুরে নদীতে এবং বিলে দেখা যায়। শামুক অনেকে চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করে এবং বাংলাদেশের শামুক খাওয়ার চাহিদা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। আমাদের আশেপাশে কমবেশি প্রায় সময়ে শামুক দেখা যায়। শামুক আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। যদিও খেতে তা অরুচিকর একটি বিষয়।
তারপরও তা শরীরের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ উপকারী। শামুকের মাধ্যমে অনেক খাবার তৈরি করা হয়। শামুক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাতেও ভূমিকা রাখে।
শামুকের ডিম
শামুক ডিমের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশের খাল বিল পুকুর আরো বিভিন্ন স্থানের প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ প্রজাতের শামুক পাওয়া যায়। এরা খাল-বিল যে কোন জায়গায় ডিম পাড়ে। বিশেষ করে তারা বর্ষার মৌসুমে মাটি বেঁধে উপরে উঠে আসে এবং উঁচু স্থান দেখে সেখানে ডিম পারে। ডিম থেকে শামুকের বাচ্চা ফুটতে প্রায় এক মাসের মত সময় লাগে।
শামুকেরা মাছের বেঁচে যাওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে নিজের জীবন ধারণ করে। শামুকের ডিম দেখতে সাদা হয় এবং একসাথে তারা অনেক ডিম পারে। সেসব ডিমগুলো একসাথে সমষ্টি ভাবে থাকে যার কারণে দেখতে অনেক বেশি সুন্দর লাগে। কখনো আপনি শামুকের ডিম দেখলে তা ভাঙ্গা থেকে বিরত থাকুন।
কারণ তারা এই ডিমের মাধ্যমে নিজের বাচ্চা ফুটাই। শামুক একটি প্রাকৃতিক সম্পদ এজন্য এদের ডিম ভাঙা থেকে বিরত থাকুন।
শামুকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
শামুক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাতে যথেষ্ট পরিমাণে ভূমিকা রাখে। বেশ কিছুকাল ধরে বাংলাদেশের শামুকের চাষ হয়। বর্তমানে এই চাষ করার পরিমাণ আরো বেশি বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের শামুক খাওয়ার চাহিদা কম হলেও বিদেশের শামুক খাওয়ার পর চাহিদা অনেক বেশি যার কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে শামুক
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রপ্তানি করা হয় এবং সেখান থেকে মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ উপার্জন করে। শামুক চাষ করায় সহজ হওয়ায় চাষীরা দিন দিন শামুক চাষ করার প্রতি আগ্রহ হচ্ছে। এই চাষ খুব সহজে করা যায় এবং এখান থেকে যথেষ্ট পরিমাণ লাভবান হওয়া যায়। শামুক চাষের মাধ্যমে একজন চাষীয় লাভবান হতে পারে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও উন্নতি হয়।
২০১৬ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগেও অনেক জায়গায় শামুক চাষ করা হয়। চাঁদপুর সাতক্ষীরা এসব অঞ্চলে শামুক চাষের পরিমাণ আরো বেশি। এ দুটি জেলা বাদেও বাংলাদেশের আরও বিভিন্ন জেলায় শামুক চাষ হয়। মিঠা পানি এবং লোনা পানি উভয় পানিতে শামুক চাষ করা যায় তারা। দাঙ্গাতে বসবাস করে।
আপনার যদি সম্ভব হয় তাহলে আপনি শামুক চাষ করতে পারেন। শামুক চাষ করার মাধ্যমে মানুষ অনেক লাভবান হচ্ছে।
শামুক তাড়ানোর উপায়
শামুক বাগানের এবং গাছের অনেক ক্ষতি করে থাকে। তারা যে গাছে লাগে সে গাছের পাতার কিছু অংশ খেয়ে নেয় যার কারণে দেখা যায় সেই পাতা বা সেই গাছের ডাল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এই উপদ্রব থেকে বাঁচার কিছু উপায় রয়েছে। আপনি সেই উপায়গুলো অনুসরণ করলে খুব সহজে আপনার বাগান থেকে শামুক তাড়াতে পারবে এবং আপনার গাছকে নিরাপদ রাখতে পারবেন।
সর্বপ্রথম যে উপায় হচ্ছে তা হচ্ছে গাছের গোড়ায় মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে রাখবেন। মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে রাখার কারণে তারা যখন গাছের গোড়ায় আসবে মরিচের ঝাঁঝালোভাবে চলে যাবে। ডিমের খোসা ভেঙ্গে রাখার মাধ্যমেও আপনি সেখান থেকে শামুক দূর করতে পারবেন। বালি এবং ছাই একসাথে মিক্স করে গাছের গোড়ায় দিয়ে রাখলে
এতে করে গাছ শামুকের আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকবে। দারচিনি গাছের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটে রাখলে দারচিনির গন্ধে শামুক সেখানে ফিরতে পারবে না। আরেকটি উপায় আছে সে উপায়টি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। উপায়টি হচ্ছে একটি মগে পানি নিবেন তারপর সেখানে এক প্যাকেট লবণ ঢেলে দিয়ে তা ভালোভাবে গুলিয়ে নিবেন।
এরপর একটি কাপড়ের অংশ সেই পানির মধ্যে চুবিয়ে নিবেন। তারপরে গাছের গোড়ায় আশেপাশে সে কাপড় ভালোভাবে পেচিয়ে রাখবেন। যদি আপনি টপ এর গাছকে নিরাপদ রাখতে চান তাহলে টপের নিচে সে কাপড় পেচিয়ে দিবেন আর যদি আপনার জমির গাছ কেন নিরাপদ রাখতে চান তাহলে গাছ থেকে সামান্য পরিমাণ দূরে সেই কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখবেন।
লবণাক্ত হওয়ার কারণে শামুক কখনোই সে কাপড়ের আশেপাশে যেতে পারবে না এবং গাছ এটার মাধ্যমে হেফাজত থাকবে। আপনি এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই আপনার জমি থেকে বা টপের আশেপাশে থেকে শামুক দূর করতে পারবেন ও আপনার গাছকে সবসময় এর জন্য নিরাপদ রাখতে পারবে।
শামুক মারার বিষ
শামুক তাড়ানোর উপায় অবলম্বন করার পরও যদি আপনি আপনার জমি বা টপ থেকে শামুক দূর করতে না পারেন সেক্ষেত্রে শামুক মারার বিষ রয়েছে। আপনি সেই বিষ ব্যবহার করেও আপনার গাছকে শামুকের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারবেন।
- Snail killer. বর্ষাকালে সন্ধ্যার দিকে গাছের গোড়ায় কয়েক দানা এই বিষ ছিটিয়ে দিন দেখবেন আপনার গাছে কোনোভাবেই শামুক লাগবে না।
গাছের আশেপাশে বিষের পরিবর্তে লবণ ব্যবহার করার মাধ্যমেও আপনি শামুক তাড়াতে পারবেন। বিষ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতার সাথে বিষ ব্যবহার করতে হবে কারণ অতিরিক্ত বিষ প্রয়োগ করার ফলে আপনার গাছ মারা যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।
শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা
বাংলাদেশের শামুক খাওয়ার চাহিদা কম হলেও বিদেশের শামুক খাওয়া চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বেশি।পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেগুলোতে মানুষ শামুক প্রচুর পরিমাণে খেয়ে থাকে কারণ শামুকের মধ্যে এমন কিছু উপকারিতা রয়েছে যেগুলো একটি মানুষের জন্য অনেক বেশি জরুরী। শামুকের মধ্যে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলে মুরগির মাংস ও গরুর মাংসের চেয়ে শামুকের মাংসে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। শামুকে পটাশিয়াম থাকে যা মানব দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যাদের চোখের সমস্যায় ভুগেন বা চোখের জ্যোতি কম শামুকের মাংস খাওয়ার কারণে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি হয়। আমাদের মানবদেহে অনেক কোষ রয়েছে। কোষের সাহায্যে একটি মানবদেহে গঠিত হয়।
শামুকের মাংস খেলে শরীরের কোষ বৃদ্ধি হয়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে যার কারণে মানুষ প্রেসারের সমস্যা থেকে বেঁচে যায়। হৃদরোগ ও কিডনির রোগের ঝুঁকে অনেকটা কমাতে পারে। যাদের স্মৃতি শক্তি কম তারা শামুক খাওয়ার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি হয়। শামুক খুব সহজে পেতে হজম হয় যার কারণে হজমশক্তির কোন সমস্যা হয় না।
শামুকের মাংসের চর্বির পরিমাণ কম থাকে যার কারণে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এছাড়াও শামুকের ভিটামিন এ আয়রন ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিস পদার্থ থাকে যেগুলো একটি মানব শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে। শামুকের যথেষ্ট পরিমাণে পানি থাকে যার কারণে শরীরে পানি স্বল্পতা দূর করে দেয় এবং শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকে।
যারা ওজন কমানোর চিন্তা করেছেন তারা ডায়েটের খাবার হিসেবে শামুককে রাখতে পারেন কারণ শামুক খাওয়ার ফলে পেট ভরে এবং ওজন বৃদ্ধি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এসব উপকারিতা আপনি শামুক খেলে পাবেন। আপনার রুটি যদি শামুক খেতে সক্ষম হয় তাহলে আপনি শামুক খেতে পারেন।এসব উপকারিতা বাদেও শামুকের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।
শামুক জমিনকে উর্বর করতে পারে যার কারণে জমিতে ফসল বেশি হয়। শামুক পুকুরের ময়লা আবর্জনা খেয়ে থাকে যার ফলে পুকুরকে খুব সহজে পরিষ্কার করে ফেলে। শামুকের মধ্যে এক ধরনের ফিল্টার রয়েছে যা ময়লা পানিকে পরিষ্কার করতে পারে। যদি শামুকের অপকারিতা দেখে লক্ষ্য করা হয় তাহলে শামুকের তেমন কোন অপকারিতা নেই।
যখন আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় খেতে থাকবেন তখনই আপনার পেটের জন্য এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে। নিয়ম অনুযায়ী খেলে কখনোই আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না বরং নিয়ম অনুপাতে খেলে আপনার শরীরের জন্য শামুক উপকারী হবে। শামুক খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার প্রথমবার খেতে সমস্যা হতে পারে কারণ শামুকে এক ধরনের দুর্গন্ধ থাকে
যার কারণে আপনার বমি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে রেস্টুরেন্টগুলোতে অনেক সুন্দরভাবে শামুক রান্না করা হয় যার কারণে বোঝা কষ্ট হয় যে এটা শামুকের মাংস এবং তা খুব সহজে খেয়ে নেয়া যায়।
শেষ কথা
শামুক মানুষের শরীরের জন্য উপকারী এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করতেও সহায়তা করে। এজন্য কখনোই শামুককে মেরে ফেলবেন না। চেষ্টা করবেন শামুককে বাঁচিয়ে রাখার তাহলে আপনি উপকৃত হতে পারবেন এবং আপনার মাধ্যমে দেশও উপকৃত হতে পারবে।
আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারা শামুক সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারে।
সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url