গালি দিলে কি ওযু ভাঙ্গে- উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে
প্রিয় পাঠক আপনি গালি দিলে কি ওযু ভাঙ্গে সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোস্টের মধ্যে উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে এবং গালি দিলে কি ওযু ভাঙ্গে সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন কাপড় পরিবর্তন করলে কি ওযু ভেঙে যায় এবং লজ্জাস্থানে দেখলে কি অযু ভেঙে যায় ও পরপুরুষ দেখলে কি ওযু ভেঙে যায় সে সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
নামাজ অথবা কোরআন শরীফ পড়ার জন্য অজু করা ফরজ। যদি কেউ অজু না করে তাহলে সে কোনভাবেই নামাজ পড়তে পারবে না এবং কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করতে পারবে না। অজু ভঙ্গের পেছনে অনেক কারণ থাকে। আবার অনেক কারণ আছে যেগুলো সম্পর্কে ওযু ভাঙ্গে না। তারপরও মানুষ সেগুলোকে অজু ভঙ্গের কারণের মধ্যে ধরে ফেলে।
অজু হচ্ছে পবিত্রতার একটি মাধ্যম।
লজ্জাস্থানে দেখলে কি অযু ভেঙে যায়
অনেক সময় অজু থাকা অবস্থাতেও নিজের লজ্জাস্থান দেখা হয়ে যায়। বিশেষ করে লুঙ্গি বাদার ক্ষেত্রে বা প্যান্ট পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে লজ্জাস্থান আমাদের চোখের সামনে চলে আসে। অজু ভঙ্গের অনেকগুলো কারণ রয়েছে সেই কারণগুলোর মধ্যে কোথাও উল্লেখ করা নেই লজ্জাস্থান দেখলে ওযু ভঙ্গ হবে।
ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহির মতে কেউ যদি তার লজ্জাস্থান দেখে বা স্পর্শ করে তাতেও অজুভঙ্গ হবে না। যদি সে যৌন উত্তেজনা সহ জে স্থান স্পর্শ করে এবং সেখান থেকে কোন প্রকারের রস বের হয় তাহলেই অজু ভঙ্গ হবে। অন্যথায় সে নিজের লজ্জাস্থান দেখলে কোনভাবেই অজুভঙ্গ হবে না।
ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি এর মতে কেউ যদি কোন আড়াল ছাড়াই নিজের লজ্জাস্থান দেখে বা স্পর্শ করে তাহলে তার অজু ভেঙে যাবে। এজন্য যারা হানাফী মাযহাবের অনুসারে আছেন বিশেষ করে বাংলাদেশসহ এশিয়া মহাদেশের অধিকাংশ দেশেই হানাফী মাযহাবের অনুসারী। সুতরাং কেউ যদি নিজের লজ্জাস্থান দেখে তাহলে
হানাফি মাজহাবের মতে ওযু ভঙ্গ হবে না এবং ইমাম শাফরের রহমাতুল্লাহ এর মতে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
গালি দিলে কি ওযু ভাঙ্গে
অজু অবস্থায় থাকার পরও অনেক সময় মুখ দিয়ে গালাগালি বা খারাপ শব্দ চলে আসে অনেকের মনে প্রশ্ন আসে ওযু অবস্থায় গালি দিলে কি অজু ভেঙে যায় বা অনেকে মনে করেন ওযু অবস্থায় গালি দিলে ওযু ভেঙে যায়। যারা মনে করেন ওযু অবস্থায় গালি দিলে ওযু ভেঙে যায় তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল আর যারা চিন্তিত থাকেন যে
অজু অবস্থায় গালি দিলে আসলেও তো ভাঙ্গে কিনা তাদের প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে না। অজু ভঙ্গের কারণ গুলোর মধ্যে কোথাও উল্লেখ নেই গালি দিলে বা খারাপ কথা বললে অজু ভাঙে। আপনি যখন গালি দিবেন বা খারাপ কথা বলবেন এতে করে আপনার তাকওয়া ভঙ্গ হবে এবং আপনার গুনা হবে কিন্তু ওযু ভঙ্গ হবে না।
কাপড় পরিবর্তন করলে কি ওযু ভেঙে যায়
বাসা থেকে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় আগে অজু করা হয়। এরপর অনেকে আছেন যারা কাপড় পরিবর্তন করে ভিন্ন কাপড় পড়ে। অনেকে মনে করে থাকেন কাপড় পরিবর্তন করলে অজু ভেঙে যায়। আসলে যারা এই কথা মনে করেন তাদের ধারণা একেবারেই ভুল। কাপড় পরিবর্তন করলে কখনো অজু ভঙ্গ হয় না।
ওযু ভঙ্গের যেসব কারণ রয়েছে সেসব কারণের মধ্যে কোথাও লেখা নেই বা হাদিস কোরআনের কোথাও এমন প্রমাণ নেই যে কাপড় পরিবর্তন করলে অজু ভাঙবে। মানুষ প্রয়োজনের খাতিরে কাপড় পরিবর্তন করতেই পারে এতে করে ওযু ভঙ্গের কোন সম্ভাবনা নেই। ওযু করার পরে কেউ কাপড় পরিবর্তন করলেও তার ওযু একেবারে সহি শুদ্ধ এবং পিওর থাকবে।
উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে
উলঙ্গ হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে সতর দেখা বা সতর খুলে ফেলা। নামাজের জন্য শর্ত হচ্ছে সতর ঢেকে রাখা। নামাজ পড়া অবস্থায় যদি কারো সতর খুলে যায় সেক্ষেত্রে তার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে কিন্তু অজু করার পরে কেউ যদি উলঙ্গ হয় বা তার সতর কোন কারণে খুলে যায় তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হবে না। অজু আগের অবস্থাতেই থাকবে।
অজু ভঙ্গের যেসব কারণ রয়েছে সেসব কারণের কোথাও লেখা নেই সতর খুলে ফেললে বা উলঙ্গ হয়ে গেলে অজু ভেঙ্গে যায়। কাপড় পরিবর্তন করার জন্য বা বিভিন্ন কারণে অনেক সময় উলঙ্গ হওয়ার প্রয়োজন হতেই পারে। এমন অবস্থায় ওই ব্যক্তি ওযু অবস্থায় থাকলে তার ওযু কোনভাবে ভঙ্গ হবে না। তার অজু একেবারে আগের মতই থাকবে
এবং সেই অজু দ্বারা নামাজ আদায় করতে পারবে। কোরআন শরীফ পড়তে পারবে এবং ওযু সহজে সকল কাজ করা যায় সেসব করতে পারবে।
পরপুরুষ দেখলে কি ওযু ভেঙে যায়
পরপুরুষ বলতে এমন পুরুষকে বোঝায় যাদের সাথে ইসলামে দেখা করা নিষেধ। বাড়িতে মহিলারা ওযু অবস্থায় থাকার সময় অনেক পর পুরুষ বাসায় মধ্যে ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে যাদের বাসায় দেবর রয়েছে তাদের সম্মুখীন হয়ে যেতে হয়। এমন অবস্থায় কি মহিলাদের ওযু ভাঙবে নাকি সে নিয়ে অনেকে চিন্তিত থাকেন।
পর পুরুষের সম্মুখীন হওয়া একজন মহিলার জন্য এটা অনেক বড় গুনাহের ব্যাপার। কেউ যদি কোন পর পুরুষের সম্মুখীন হয় তাহলে তার গুনাহ হবে কিন্তু অজু ভঙ্গ হবে না। পর পুরুষের সামনে গেলে ওযু ভঙ্গ হবে এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। আপনি যদি ওজু অবস্থায় বা যে কোন অবস্থাতে পরপুরুষের সামনে যান তাহলে আপনার গুনাহ হবে
কিন্তু আপনার ওযু ভঙ্গ হবে না। আপনার অজু আগের মত নিশ্চয়ই শুদ্ধ থাকবে।
শেষ কথা
অজু ভাঙা নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক মনগড়া কথা রয়েছে। সেসব কথায় কান না দিয়ে আগে সঠিক টা জানতে হবে কোন কারণে আসলে ওযু ভাঙ্গে আর কোন কারণে ভাঙ্গে না। অন্যথায় আপনি ভুল ধারণার মধ্যে থেকে অকারনে বিভ্রান্ত হবেন।
আমার এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও ওযু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে সতর্ক হয়।
সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url