কবুতরের ডিম পাড়ার ওষুধ- কবুতর ডিম না পারার কারণ

প্রিয় পাঠক আপনি কি কবুতরের ডিম পাড়ার ওষুধ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে কবুতরের ডিম পাড়ার ওষুধ এবং কবুতর ডিম না পারার কারণ ও কবুতরকে রসুন খাওয়ালে কি হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
কবুতরের ডিম পাড়ার ওষুধ
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন কবুতরের খাবার রেজা এবং কবুতরের খাবারের দাম কত সে সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোষ্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

কবুতর অনেক সৌখিন একটা প্রাণী। গ্রাম অঞ্চলের পাশাপাশি শহরেও অনেক বাসার ছাদে কবুতর লালন পালন করা হয়। কবুতর হচ্ছে জনপ্রিয় একটি গৃহপালিত প্রাণী। পৃথিবীতে প্রায় ৬০০ জাতেরও বেশি জাতের কবুতর রয়েছে। কবুতর লালন পালন করতে পুজি কম লাগে এবং সেই পুঁজি খুব দ্রুত লাভ সহ ফেরত পাওয়া যায়।


কবুতরের সবচেয়ে বড় একটি গুণ হচ্ছে তাদের রোগ অসুখ খুব কম হয়।

কবুতরকে রসুন খাওয়ালে কি হয় - কবুতরকে রসুন খাওয়ানোর নিয়ম

অনেকে আছেন যারা কবুতরকে রসুন খাওয়ায়। কবুতরকে রসুন খাওয়ানো অনেক বেশি উপকার।কবুতরকে অনেক রকমের খাবার খাওয়ানো হয় সে খাবার গুলোর মধ্যে রসুন কেউ যুক্ত করা উচিত কারণ রসুনের প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আমিষ ভিটামিন ফসফরাস সেলেনিয়াম জিংক থাকে।কবুতরকে রসুন খাওয়ালে এইসব ভিটামিন গুলো পাওয়া যায়

যার কারণে কবুতরের শরীরে যদি কোন রকমের ভিটামিনের বা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে তাহলে রসুন খাওয়ার ফলে সেসব ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। এছাড়াও রসুন খাওয়ার ফলে কবুতরের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় যার কারণে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আরো কমে যায়। কবুতরের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে যার কারণে কবুতর আচমকা মরে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে না।

কবুতরকে রসুন খাওয়ালে কবুতরের হজম শক্তি স্বাভাবিক থাকে যার কারণে কোন খবর খেলে বদহজম হওয়ার চিন্তা থাকে না। তাড়াতাড়ি ডিম উৎপাদন করতে সহায়তা করে এই রসুন। এই সবগুলো উপকারিতা পাওয়ার জন্য আপনার উচিত হবে কবুতরকে রসুন খাওয়ানো। এখন মূল বিষয় হচ্ছে কবুতরকে কোন পদ্ধতিতে রসুন খাওয়ালে কবুতর সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারবে।

কবুতরকে রসুন খাওয়ালে অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াতে হবে তাহলে কবুতর উপকৃত হতে পারবে অন্যথায় নিয়মের বিপরীতে খাওয়ালে কবুতরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কবুতরকে রসুন খাওয়ানোর পদ্ধতি গুলো হচ্ছে প্রথমে রসুন থেকে খোসা ছাড়িয়ে নিবেন এরপরে ভালোভাবে সেসব থেতলি নিয়ে একটা চামচ পরিমাণ রসুন বাটা পানির সাথে মিক্স করবেন।

এরপর সেই পানি ছাকনা সাহায্যে ভালোভাবে সেকে নিয়ে তারপরে সেই পানি খেতে দেবেন। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে রসুনের শরীর থেকে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে রসুনকে কুচি কুচি করে কাটবেন। এরপর কবুতরকে ধরে খাওয়াই দিবেন তাহলেই হয়ে যাবে। কবুতরকে এই দুই নিয়মের যেকোনো এক নিয়মের ওষুধ খাওয়ালে হবে।

নিয়মিত রসুন খাওয়ানো থেকে কবুতরকে বিরত রাখুন অন্যথায় আপনার কবুতর ক্ষতির মুখে পড়বে। সপ্তাহে একদিন এবং মাসের সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ দিন তাদেরকে রসুন খাওয়াতে পারবেন। এর বেশি কখনোই খাওয়ানো যাবে না। কবুতরের বয়স যে সময় ৪০ দিনের উপরে হবে তখনই তাদেরকে রসুন খাওয়ানো যায়।

৪০ দিন বয়স হবার পূর্বে কখনোই তাদেরকে রসুন খাওয়াবেন না। কবুতরের অসুস্থ থাকা অবস্থায় বা পাতলা পায়খানা থাকা অবস্থায় তাদেরকে রসুন খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। বাচ্চা আছে এমন কবুতরকে পানির সাথে মিক্স করে সে পানি ছেকে তাদেরকে খাওয়াবেন। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন কবুতরকে রসুন খাওয়ানোর উপকারিতা কেমন এবং খাওয়ানোর নিয়ম ও পদ্ধতি কেমন হবে।

কবুতর ডিম না পারার কারণ

কবুতর যত বেশি ডিম দিবে তত বেশি বাচ্চা উঠবে এবং সেখান থেকে লাভবান বেশি হওয়া যাবে। অনেক সময় দেখা যায় অনেক কবুতর ডিম পারে না। কবুতর যদি ঠিকভাবে ডিম না পারে তাহলে সেই কবুতর থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কম। কবুতর ডিম না পাড়ার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে।

কোন কবুতর যদি একেবারেই ডিম না দেয় তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে কবুতর বাজা। হয়তো কবুতরের ক্ষেত্রে এমন হয় যে একবার ডিম দিল কিন্তু অনেক দিন ধরে আবার ডিম দিচ্ছে না তাহলে কবুতরের অন্য সমস্যা থাকতে পারে কিন্তু যদি দেখেন কবুতর শুরু থেকে একেবারে ডিম দিচ্ছে না তাহলে আপনার বুঝতে হবে এই কবুতর বাজা।

এ কবুতর কখনোই ডিম দিতে পারবে না কারণ এই কবুতর ডিম দিতে অক্ষম। কবুতরের শরীলে যদি সুষম খাদ্যের অভাব হয় তাহলে কবুতর ডিম দেওয়া বন্ধ করে দেয় এজন্য কবুতরকে সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। কবুতর অনেকবার ডিম পাড়ার কারণে কবুতরের শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয় যার কারণে কবুতর পরবর্তীতে ডিম পাড়া অনেক সময় বন্ধ করে দেয়

এজন্য কবুতর একবার ডিম পাড়ার পরে তাকে ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে তাহলে তার পরবর্তীতে ডিম পাড়া সহজ হবে। কবুতরকে মাত্রাতিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ানোর ফলেও তারা ডিম পাড়ার ক্ষমতা আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলে এজন্য কবুতর অসুস্থ হলে কখনোই তাদেরকে অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়াবেন না।


কবুতরের শরীরে চর্বি বেশি হয়ে গেলেও কবুতর ডিম দেওয়া কমায় দেয়। যখন আপনি খেয়াল করবেন কবুতরের শরীরে চর্বি বেশি হয়ে গেছে তখন তাদেরকে ধান খাওয়াবেন এতে করে তাদের শরীর থেকে চর্বি কেটে যাবে এবং তারা ডিম পারতে শুরু করবে। অনেক সময় কবুতর ইচ্ছা করে ডিম দেয় না এক্ষেত্রে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে

কারণ তারা সেই সময় আরাম করে। কিছুদিন পরে তারা নিজেরাই আবার ডিম দিবে। কবুতরের পেটে কৃমি সমস্যা হলে কবুতর ডিম দেয়া বন্ধ করে দেয় এজন্য দুই মাস পর পর বা তিন মাস পরে তাদেরকে কৃমির ওষুধ খাওয়াবেন। কবুতর অনেক দিন যাবত কোন রোগে আক্রান্ত থাকলে ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয় এজন্য আপনি যদি কোন কবুতরকে অসুস্থ দেখতে পান

তাহলে দ্রুত তার চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করতে হবে। হঠাৎ যদি কবুতর কোন কারনে ভয় পেয়ে যায় তাহলেও তারা ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয় কারন তারা সেই সময় নিজেকে এবং তাদের ডিমগুলোকে সুরক্ষিত মনে করে না যার কারণে তারা ডিম পাড়া থেকে নিজেকে বিরত রাখে। আপনার কবুতরের খাঁচার আশেপাশে ইদুর বিড়াল কখনোই আনাগোনা করতে দেবেন না

এবং যদি কোন অপরিচিত লোক আসে তাহলেও তাকে আচমকা কবুতর দেখতে নিয়ে যাবেন না এতে করে আপনার কবুতর ভয় পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় কবুতরের বয়স বেশি হওয়ার কারণেও তারা ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়। অনেক কবুতর আছে যেগুলো তিন থেকে চার মাস এমনকি এক বছর সময়ও ডিম পাড়ার জন্য নিয়ে থাকে।

কবুতর মূলত এসব কারণেই ডিম দেওয়া বন্ধ করে দেয় বা ডিম দেয় না। আপনার কবুতর যদি ডিম না দেয় তাহলে আপনি কবুতরের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করবেন যে তাদের ভিতরে এইসব সমস্যাগুলো আছে নাকি। যদি এসব সমস্যা দেখতে পান তাহলে ভালোভাবে চিকিৎসা করবেন তাহলে আপনার কবুতর ডিম পাড়ার জন্য সুস্থ হয়ে যাবে।

কবুতরের ডিম পাড়ার ওষুধ

কবুতর যদি ঠিকভাবে ডিম না পারে তাহলে তাদেরকে ডিম পাড়ানোর জন্য ওষুধ রয়েছে। তাদেরকে সেই ওষুধ খাওয়ালে তারা ডিম পাড়ে। অনেক খামারি আছেন যারা দ্রুত ডিম পাওয়ার জন্য কবুতরকে এই ওষুধ খাওয়ায় থাকে।
  • Caltate 300 mg {ক্যালটেট} এই ওষুধ প্রতি পিসের দাম দশ টাকা করে।
  • আরেকটা ওষুধের নাম হচ্ছে Cod Liver Oil Capsul.
এই দুইটি ওষুধ সেসব কবুতরের জন্য যারা একটা ডিম দেওয়ার পরে মাঝখানে যে একদিন ফাঁকা দেয় সেই সময় তাদেরকে এই দুইটি ওষুধ খাওয়ায় দিবেন তাহলে তাদের পরবর্তী ডিমগুলো ভালো হবে এবং তারা ডিম অন্য সময় তুলনায় বেশি দিবে। যেসব কবুতর একেবারেই ডিম দেয় না সেই কবুতরকে ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে

এবং আমিষ জাতীয় খাবার ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। সাথে ভিটামিন ওষুধও খাওয়াতে হবে তাহলে কবুতর খুব তাড়াতাড়ি ডিম দিতে শুরু করবে। গম,রেজা,ভুট্টা এসব খাবার বেশি করে খেতে দেবেন তাহলে কবুতরের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এবং সুষম প্রবেশ করবে এতে করে কবুতর তাড়াতাড়ি ডিম পারবে।

লিভার টনিক এই ওষুধ খাওয়ালেও কবুতরের ডিম দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আপনি চাইলে তাদেরকে লিভা ভিট এই ওষুধও খাওয়াতে পারেন। এই ওষুধ খাওয়ালেও তাদের ডিম পাড়ার সময় তাড়াতাড়ি চলে আসে। সর্বপ্রথম আপনার উচিত হবে চেষ্টা করা তাদেরকে প্রাকৃতিক উপায়ে ডিম পাড়ানোর।

যদি সেই ভাবে কোনরকম সম্ভব না হয় তাহলে যেসব ওষুধের নাম বলা হলো সেসব ওষুধগুলো খাওয়াবেন তাহলেই কবুতর ডিম পারতে শুরু করবে।

কবুতরের খাবারের দাম

কবুতরকে সবসময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো প্রায় কবুতরকে খাওয়ানো হয় এবং তাদেরকে এই খাবার খাওয়ানোর উচিত। কবুতরের প্রধান খাবার হচ্ছে ধান,গম,ভুট্টা,রেজা।
  • এক কেজি ধানের দাম বর্তমানে ৪০ টাকা নিয়ে থাকে। আপনি যদি পাইকারি কিনতে যান সেক্ষেত্রে আপনার থেকে আরো কম নেবে। খুচরা ধান প্রতি কেজি ৪০ টাকা করে।
  • কবুতরের আরেকটি প্রধান খাবার হচ্ছে ভুট্টা। ভুট্টা প্রতি কেজির দাম ৪০ টাকা নিয়ে থাকে। এটা খুচরা মূল্য। পাইকারি কিনতে গেলে আপনার থেকে আরও কম নিবে।
  • রেজা প্রতি কেজির দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হয়ে থাকে। আপনি যদি বস্তা হিসেবে কিনেন বা একসাথে  কয়েক কেজি কিনেন তাহলে আপনার থেকে কয়েকটা কম নিতে পারে।
  • গম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি করে। এটা খুচরা দাম। পাইকারি কিনতে গেলে গমের দাম আপনার থেকে কিছুটা কম নেবে।

এসবই হচ্ছে কবুতরের প্রধান খাবার। কবুতরের খাবার কেনার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে দেখে নেবেন যেন সে খাবারগুলো ভালো হয় এবং সে খাবারগুলোতে কোন রকমের পোকা লাগা না থাকে। যদি নষ্ট খাবার কিনেন তাহলে কবুতর খেতে চাইবে না এতে করে কবুতর আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাবে এবং আপনার টাকাও নষ্ট হবে।

কবুতরের খাবার রেজা

কবুতরের অনেক রকমের খাবার হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এক ধরনের খাবারের নাম হচ্ছে রেজা। কবুতররা এ খাবার খেতে অনেক বেশি ভালোবাসে। এ খাবারকে কবুতরের প্রথম খাবার গুলো যেসব রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হয়। রেজা খাবার কবুতরের শরীরের জন্য অনেক উপকারী কারণ এই খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন থাকে।

একটি কবুতরের সুস্থ থাকার জন্য অনেক বেশি জরুরী। ১ কেজি রেজা খাবারের দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হয়ে থাকে। আপনি যদি একসাথে কয়েক কেজি কিনেন তাহলে আপনার থেকে দাম আরো কম নেবে। কবুতরকে ধান গম ভুট্টা এসব খাওয়ানোর পাশাপাশি চেষ্টা করবেন তাদেরকে রেজা খাবার খাওয়ানোর

তাহলে আপনার কবুতর আরও তাড়াতাড়ি ডিম পারবে এবং কবুতরের স্বাস্থ্য ভালো হবে।

শেষ কথা

কবুতরকে লালন পালন করলে অবশ্যই ভালোভাবে লালন পালন করা উচিত এবং আপনাকে চেষ্টা করতে হবে সব সময় কবুতরকে দেখাশুনা করা তাহলে আপনার কবুতর সুস্থ থাকবে। কখনো কবুতরকে অযত্নে রাখবেন না কারণ তারা কথা বলতে পারে না। আপনি তাদেরকে অযত্নে রাখলে তারা আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাবে।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও কবুতর সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url