গুল খেলে কি হয়- গুল ছাড়ার উপায়- গুল এর ক্ষতিকর দিক

প্রিয় আপনি কি গুল খেলে কি হয় সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টে আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে গুল খেলে কি হয় এবং গুল এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করব।
গুল খেলে কি হয়
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন গুল খাওয়ার উপকারিতা এবং গুল ছাড়ার উপায় ও গুলের নেশা সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

বাংলাদেশে নেশা জাতীয় অনেক দ্রব্য রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে গুল। গ্রাম অঞ্চলের দিকে মানুষ এ নেশা বেশি করে থাকে। আসলে মানুষ এটাকে নেশা হিসেবে ধরে না। যেকোনো মুদিখানার দোকানে এর দ্রব্য পাওয়া যায় যার কারণে মানুষ খুব সহজে কিনে তা ব্যবহার করে। এটা যে একটা মানুষের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর


তা কল্পনার বাহিরে। একটি মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ছোট গুল যথেষ্ট।

গুলের নেশা

পৃথিবীতে অনেক রকমের নেশা দ্রব্য রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বহুল জনপ্রিয় একটি নেশা হচ্ছে গুল। বৃদ্ধ মানুষ বা ৪০ বছর পার হয়েছে এমন মানুষেরা গুল বেশি খায়। গুল মূলত তামাক পাতা গুঁড়ো করে বানানো হয়। গুল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। গুল দাঁতের নিচে লাগানো হয় যার কারণে তা আস্তে আস্তে সেই জায়গা পুড়ে যেতে থাকে

এবং একটা সময় গিয়ে সেখানে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। যারা প্রথম প্রথম গুল খায় তাদের মাথার মধ্যে একটি চক্কর তৈরি হতে থাকে যার ফলে মাথা অনেক বেশি ঘুরে। যখন তা একটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় তখন সেটা খাওয়া ছাড়া কোনভাবেই ভালো লাগেনা। গুলের দাম কম হওয়ার কারণে মানুষ খুব সহজেই তা কিনে ব্যবহার করতে পারে।

অন্য যেসব নেশা জাতীয় দ্রব্য রয়েছে সেগুলোর তুলনায় গুলের দাম অনেক কম কিন্তু ক্ষতির দিক দিয়ে অন্য নেশারদের তুলনায় গুলের ক্ষতি অনেক বেশি। বাংলাদেশে ৩০ লাখেরও বেশি পুরুষ এবং নারী এই গুল সেবনে আসক্ত। গুলের প্রতি মানুষ কখনোই একদিনে আসক্ত হয় না। শুরুতে অল্প অল্প করে ব্যবহার করতে থাকে।

একটা সময় গিয়ে দেখা যায় তা নেশাতে পরিণত হয়ে গেছে। তারা এই গুল খাওয়াতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যায় যে গুল তারা বাথরুমে গেলে ঠিকমতো বাথরুম করতেও পারে না। এজন্য আপনার আশেপাশে বা পরিচিত কেউ যদি গুলে অভ্যস্ত হয় তাহলে তাকে গুল ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করবেন কারণ এটি একটি ভয়ানক নেশা দ্রব্য।

গুল খাওয়ার উপকারিতা

গুল এমন একটি দ্রব্য যেখানে বিন্দুমাত্র পরিমান উপকারিতা নেই। ক্ষতিকর দ্রব্য দিয়ে এটা বানানো হয় যার কারণে এটার আগা থেকে গোরা পর্যন্ত পুরাটাই ক্ষতিতে পরিপূর্ণ। যারা গুল খান তারা মনে মনে হয়তো শান্তি পেতে পারেন বা যারা গুল খাওয়া শুরু করে তাদের মানসিক চাপ অনেকটা হলেও কমে কিন্তু তারা এর দ্বারা যতটুকু উপকৃত হয় তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


কেউ যদি মনে করেন নেশা দ্রব্য বা গুল উপকারী তাহলে তার এ ধারণা একেবারেই ভুল। নেশা জাতীয় কোন দ্রব্য কখনো একটি মানুষের শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে না। হয়তো আপনি মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভ করলে তা আপনার শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি ঘটাবে। তাই যারা ভাবেন যে গুল বা যে কোন নেশাদ্রব্য খাওয়া উপকারে তারা

এ ধারণা থেকে বের হয়ে এখন থেকে গুলকে না বলুন। আপনি এই গুল দীর্ঘদিন ধরে খেতে থাকলে একটা সময় গিয়ে আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন। তাই আগে থেকেই সতর্ক হোন।

গুল খেলে কি হয়

গুল মানব দেহের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। যখন আপনি নিয়মিত গুল খেতে থাকবেন তখন আপনার চামড়া আস্তে আস্তে পুড়ে যাবে। মুখের ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে গুল সেবন করা। দাঁতের যে স্থানে গুল ব্যবহার করা হয় তা আস্তে আস্তে পড়ে যেতে থাকে। একটা সময় গিয়ে সেই জায়গায় ক্যান্সারে বাসা বাধে।

গুল ব্যবহার করার ফলে আস্তে আস্তে দাঁত কালো হয়ে যায়। গুল সেবল করান কারণে ঘুমেরও ক্ষতি হয় ঠিকমতো ঘুম হবেনা এবং মাথা ব্যথা হবে ও মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকবে যা আপনাকে আপনার নিত্য প্রতিদিন কাজের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করবে। গুল সেবনের ফলে খাবারের প্রতি রুচি হারিয়ে যায় এতে করে স্বাস্থ্য দিন দিন অবনতির দিকে যেতে থাকে।

চোখের দৃষ্টিশক্তি অনেকটাই কমে যায়। এজন্য যারা গুল খান বা আপনার পরিচিত যারা গুল সেবন করে তাদের গুল সেবন থেকে বাধা প্রদান করার চেষ্টা করবেন যাতে করে তারা এসব ক্ষতি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে।

গুল এর ক্ষতিকর দিক

গুলে অসংখ্য ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আপনি যে সময় থেকে গুল সেবন করতে শুরু করবেন সেই সময় থেকে আপনি ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবেন। গুল একটি সময়ের জন্য আপনাকে ক্ষতি থেকে বিরত রাখবে না। গুল সেবনের কয়েক বছরের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে থাকে। আপনি দূরের জিনিস কোনভাবেই দেখতে পাবেন না।

এতে করে আপনার জীবন যাপন করা অনেকটাই কষ্টকর হয়ে যাবে। খাবারের প্রতি রুচি উঠে যাবে এবং ক্ষুধা কম লাগবে যার কারণে আপনি কোন খাবার চাইলেও খেতে পারবেন না। বাচ্চা প্রজননের ক্ষমতা অনেকটা কমে যাবে এবং গর্ভে শিশু থাকলে তা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। নিয়মিত গুল সেবন করতে থাকলে দাঁত কালো হয়ে যায়

যার জন্য মানুষের সামনে দেখতে অনেক বেশি খারাপ লাগে। দীর্ঘদিন ধরে গুল সেবনের ফলে ঠোঁটের চামড়া আস্তে আস্তে পুড়ে যায় এবং সেই জায়গায় ক্যান্সার বাসা বাঁধে। ক্যান্সার হচ্ছে মরণবিধির রোগ যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে তিলে তিলে ঠেলে দেয়। যারা গুল খান তারা এসব ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকতে অবশ্যই এই মুহূর্ত থেকে গুল ছেড়ে দিন।

তাছাড়া তা আপনাকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে। নিজে সুস্থ থাকতে এবং নিজের শরীর ভালো রাখতে গুল খাওয়া থেকে সব সময় বিরত থাকবেন।

গুল ছাড়ার উপায়

গুল ছাড়া আর কিছু উপায় রয়েছে আপনি সেই উপায়গুলো অবলম্বন করলে খুব সহজে গুল ছেড়ে দিতে পারবেন। সর্বপ্রথম আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি যে জিনিস সে অভ্যস্ত হবেন তা কখনো একদিনে ছাড়া সম্ভব নয়। আপনি দীর্ঘদিন ধরে গুল খেতে থাকলে একদিনে ছেড়ে দিতে চাইলে তা কোনভাবে সম্ভব হবে না।

প্রথমত আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে গুল খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। আপনি আস্তে আস্তে গুল খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে থাকলে একটা সময় গিয়ে আপনি তা বাদ দিয়ে দিতে পারবেন কিন্তু যদি একবার চেষ্টা করেন বাদ দিয়ে দিবেন তাহলে আপনি তা পারবেন না। যখন গুল খাওয়ার প্রতি মন হবে তখন কোন কাজে লিপ্ত হয়ে যাবেন

যাতে করে আপনার মনোযোগ ওই দিকে চলে যায়। সব সময় নিজের থেকে গুলকে দূরে রাখবেন। গুল ছোট হওয়ার কারণে নিজের সাথে নিয়ে বেড়ানো যায়। কখনোই গুলকে নিজের সাথে রাখবেন না। এতে করে আপনার জন্য খাওয়া কঠিন হবে। যখন আপনি তার নিজের সাথে রাখবেন তখন খুব সহজেই খেতে পারবেন।


গুল হাতে নিয়ে চিন্তা করবেন যে এই জিনিস সেবন করার কারণে আমার মৃত্যু হতে পারে। যখন আপনি এই চিন্তা করবেন তখন আপনার জন্য গুল ছেড়ে দেওয়া অনেকটা সহজ হবে। যখন গুল সেবন করতে মন চাইবে তখন চকলেট বা চুইংগাম চিবাতে বা চুষছে শুরু করবেন এতে করে আপনার গুল সেবনের নেশা অনেকটাই কেটে যাবে।

এমন মানুষের সাথে মিশা থেকে বিরত থাকবেন যারা গুল সেবন করে কারণ আপনি তাদের সাথে মিশার কারণে আপনার গুল সেবনের প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যাবে। আপনি এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে গুল খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন। আসলে যে কোন নেশা দ্রব্য ছাড়ার জন্য মনোবল শক্তি দৃঢ় হওয়া জরুরী।

যখন আপনার মনোবল শক্তি প্রবল হবে তখন আপনি খুব সহজেই তা ছেড়ে দিতে পারবেন।

শেষ কথা

গুল মানুষের শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর এজন্য কখনোই নিজেকে গুল সেবনের প্রতি ধাপিত করবেন না। যতটুকু সম্ভব হয় আপনার আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ গুল সেবন করলে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন এতে করে সে নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবে।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও গুলের যাবতীয় ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url