হাঁসের কৃমির ঔষধ- হাঁসের চোখের রোগ- হাঁসের খাবারের দাম

প্রিয় পাঠক আপনি কি হাঁসের কৃমির ঔষধ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোস্টের মধ্যে হাঁসের কৃমির ঔষধ এবং হাঁসের চোখের রোগ সম্পর্কে আলোচনা করব।
হাঁসের কৃমির ঔষধ
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন হাঁসের বাচ্চার খাবারের তালিকা ও হাঁসের সস্তা খাবার এবং হাঁসের খাবারের দাম সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোষ্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

গ্রামাঞ্চলের দিকে অধিকাংশ বাড়িতেই হাঁস লালন পালন করা হয়। হাঁস একটি গ্রহ-পালিত প্রাণী। কয়েক বছর আগে থেকে গ্রামাঞ্চলের দিকে হাঁস চাষের চাহিদা শুরু হয়েছে। বর্তমান সময়ে আস্তে আস্তে হাঁস চাষের চাহিদা আস্তে আস্তে আরো বৃদ্ধি হচ্ছে। হাঁস চাষের ফলে মানুষ খুব তাড়াতাড়ি ভালো পরিমাণে লাভবান হচ্ছে।


হাঁস পালনের ক্ষেত্রে অনেক রকমের রোগ হয় সেগুলোর মধ্যে কৃমির ও চোখের রোগ অধিকাংশ সময় হয়

হাঁসের বাচ্চার খাবারের তালিকা

হাঁসের বাচ্চা ছোট থাকার জন্য হাঁসের বাচ্চাকে কোন কিছু খেতে দিলে অবশ্যই তা নিয়ম অনুযায়ী খেতে দিতে হবে এবং হাঁসের বাচ্চাকে সব রকমের খাবার দেওয়া যায় না কারণ তারা ছোট হওয়ার কারণে সব রকমের খাবার খেতে পারে না। আপনি হাঁসের বাচ্চাকে খামারে বা নিজের বাসা বাড়িতে নিয়ে আসার পরে প্রথমে যে কাজ করবেন তা হচ্ছে

স্যালাইন বা গ্লুকোজ পানির সাথে মিক্স করে সেগুলো খেতে দেবেন। এভাবে খাওয়ার পরে কিছু সময় রেখে তারপরে তাদেরকে অন্য খাবার খেতে দিতে হবে। এরপর মুড়ি চিড়া পানিতে ভিজিয়ে নরম করে কোন একটি পাত্রে বা মেঝেতে ছিটিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে খেতে দিতে হবে। আপনি চাইলে ফিড ভিজিয়ে নরম করেও খেতে দিতে পারেন।

যেসব ছোট ছোট ক্ষুদ রয়েছে সেগুলো পানিতে ভিজিয়েও তাদেরকে খেতে দেওয়া যায়। খাবার ভিজিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবার বেশি ভিজে না যায়। বেশি ভিজে যাওয়ার কারণে তাদের খেতে অনেক অসুবিধা হবে। বাচ্চাকে ১৫ দিন হওয়ার আগ পর্যন্ত তেমনভাবে পানি পান করতে দেয়া যাবে না। একেবারে অল্প করে তাদেরকে পানি পান করতে দিবেন।

অধিকাংশ বাচ্চা মারা যাওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হচ্ছে তারা যে সময় ২-৪ দিন থেকে ১০-১৫ দিনের বাচ্চা থাকে এ অবস্থায় তাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে দেওয়া হয় যার কারণে ঠান্ডা লেগে যায় এবং মারা যায়। এজন্য অবশ্যই এদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। তাদেরকে আপনি এই নিয়মে খাবার খেতে দিলে তারা খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবে।

বড় হওয়ার পরে তাদেরকে খাবার খাওয়ানোর পদ্ধতিও ভিন্ন হবে।

হাঁসের চোখের রোগ

অনেক সময় দেখা যায় হাঁসের চোখে বিভিন্ন রকমের রোগ হয়ে থাকে যেমন চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া বা চোখ দিয়ে পানি পড়া,চোখ ঘোলা হয়ে যাওয়া,চোখের আশেপাশে কোন কিছু বের হওয়া। হাঁসের চোখের রোগ হওয়ার পেছনে কিছু কারণ থাকে প্রথম কারণ হচ্ছে হাঁসের যদি ভিটামিন এ এর অভাব হয় তাহলে চোখে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিবে।

হাঁস যদি নিয়মিত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার না পায় তাহলে তার চোখে বিভিন্ন রকম সমস্যা আস্তে আস্তে তৈরি হবে। হাঁসের শরীরে এমনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বেশি থাকলেও চোখের সমস্যা হয়। হাঁসের চোখে সমস্যা হলে বুঝার উপায় হচ্ছে প্রথমত চোখ ঘোলাতে থাকবে। হাঁসের চোখের যে স্বাভাবিক রং থাকে সেই তুলনায় চোখ অনেক বেশি ঘোলাটে হয়ে যাবে।


এরপর আস্তে আস্তে ঘোলাতে থেকে চোখ অন্ধের দিকে চলে যাবে। একটা সময় গিয়ে হাঁসের চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যায়। এ লক্ষণ ছাড়াও আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে হাঁসের চোখের উপরের লোমগুলো আস্তে আস্তে লাল হয়ে যেতে থাকবে। এটা মূলত হয় ইমানিয়া গ্যাসের কারণে। হাঁসের এরকম সমস্যা হওয়ার কারণে হাঁস খাবার থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নেয়।

কোন রকমের খাবার খাওয়ার প্রতি তাদের রুচি থাকে না। আস্তে আস্তে হাঁস শুকিয়ে যেতে থাকে এবং একটা সময় গিয়ে মারা যায়। হাঁসের এসব রোগ হলে এ ভিটামিন এ জাতীয় যেসব সাপ্লিমেন্ট রয়েছে সেগুলো কিনে এনে পানির সাথে মিশিয়ে তাদেরকে খেতে দিতে হবে। এভাবে কিছুদিন খাওয়ালে তাদের ভিটামিন এর পূরণ হয়ে যাবে এবং আস্তে আস্তে সুস্থ হতে শুরু করবে।

হাঁসকে নিয়মিত শাকসবজি খেতে দিলেও ভিটামিন এর অভাব আস্তে আস্তে কেটে যেতে থাকে এবং সুস্থ থাকা অবস্থায় নিয়মিত শাকসবজি খেলে হাঁসের চোখে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে যার কারণে চোখের রোগ বাদেও অন্য সমস্ত রোগ থেকে হাঁসকে নিরাপদ রাখে।

যদি এমোনিয়া গ্যাসের কারণে এই সমস্যা হয় তাহলে অ্যামোনিয়া গ্যাস কমানোর উপায় হচ্ছে হাঁস যেখানে থাকে সেই জায়গা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে যাতে সেখানে হাঁসের কোন রকমের বিষ্ঠা না থাকে। হাঁসের বিষটা থাকার কারণে সেখানে এমোনিয়া গ্যাস তৈরি হয় এবং হাঁসের শরীরে রোগ তৈরি হতে থাকে।

হাঁসের চোখের সমস্যা থেকে হাঁসকে নিরাপদ রাখতে নিয়মিত শাকসবজি খেতে দেবেন এবং মাঝেমধ্যে ভিটামিন এ জাতীয় সাপ্লিমেন্ট পানির সাথে মিশিয়ে পান করাবেন। সাথে সাথে হাঁস যেখানে থাকবে সেই জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করবেন তাহলে আপনার হাঁস সুস্থ থাকবে।

হাঁসের কৃমির ঔষধ - হাঁসের কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম

মানুষের যেভাবে কৃমির সমস্যা হয় তেমনিভাবে হাঁসেরও মাঝেমধ্যে কৃমির সমস্যা হয়। হাঁসের কৃমি হলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যদি আপনি সে লক্ষণগুলো হাঁসের মধ্যে দেখতে পান তাহলে বুঝবেন সে হাঁসর কৃমির সমস্যা হয়েছে। প্রথমত হাঁস আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাবে এবং খাবার খাওয়া কমিয়ে দিবে। যদি হাঁসের ডিম পাড়ার সময় চলে তাহলে হাঁস ডিম পাড়াও কমিয়ে দিবে।

হাঁস স্বাভাবিকের তুলনায় চলাফেরা কম করবে এবং ঝিম ধরে এক জায়গায় বসে থাকবে। যদি আপনি হাঁসের মধ্যে এই লক্ষণ গুলো দেখতে পান তাহলে বুঝবেন হাঁসের কৃমি সমস্যা হয়েছে। হাঁসের কৃমি হলে দুইটা ওষুধ রয়েছে সে ওষুধগুলো পানির সাথে মিক্স করে খাওয়ালেই তাদের কৃমি ভালো হয়ে যাবে।


avinex এ ওষুধে বারোটি হাঁসের জন্য হাফ গ্রামের বেশি হাফ লিটার পানির সাথে মিক্স করবেন। এরপর একটি বড় হাঁসের জন্য এক সিরিজ এবং হাফ সিরিজ অর্থাৎ দের সিরিজ খাওয়াবেন। খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই সকালে খালি পেটে খাওয়াতে হবে। খাওয়ানোর পরে তাদেরকে তারা যেখানে থাকে সেই জায়গায় 30 থেকে 35 মিনিট বন্ধ করে রাখবেন।

এরপর সকালের খাবার খেতে দিবেন। কখনোই সকালে খাবার খাওয়ানোর পরে তাদেরকে কৃমির ওষুধ খাওয়াবেন না এতে করে কোন কাজ হবে না। এই ওষুধ দুই থেকে তিন মাস পর পর তাদেরকে খাওয়াতে হয়। যখন তাদেরকে এই ওষুধ তিনবার খাওয়ানো হয়ে যাবে তখন আর তাদেরকে এই ওষুধ খাওয়াবেন না। তখন ওষুধ পরিবর্তন করতে হবে।

কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর একদিন পরে তাদেরকে লিভারটনিক খাওয়াতে হবে। লিভারটনিক তাদেরকে দুই থেকে তিন দিন খাওয়ালেই হয়ে যাবে। যদি কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর পরে তাদেরকে লিভারটনিক না খাওয়ানো হয় তাহলে হাঁসের শরীরে কার্যক্রম কম করবে।

akemex এই ওষুধও অনেক ভালো এটি একটি ব্র্যান্ডের ওষুধ। এ ওষুধের দাম পূর্বের ওষুধের তুলনায় বেশি। আপনি যদি এই ওষুধ খাওয়াতে চান তাহলে একই পদ্ধতিতে একই নিয়মে খাওয়াবেন তাহলে হয়ে যাবে।

হাঁসের খাবারের দাম

আপনি হাঁসকে বিভিন্ন রকমের খাবার খাওয়াতে পারেন হাঁসকে চাইলে শাকসবজিও খাওয়ানো যায়। শাক সবজির দাম আপনার জানা। শাকসবজির ক্ষেত্রে পুঁইশাক লাল শাক যেই শাকগুলো রয়েছে সেগুলো খাওয়ালেই হবে। আপনি যদি তাদেরকে চালের ছোট ছোট খুদ খাওয়াতে চান তাহলে আপনার খরচ হবে ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম ১৮০০ টাকা।

আপনি যদি খুচরা কিনতে যান তাহলে আপনার থেকে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা প্রতি কেজি দাম নিবে। আপনি যদি হাঁসের বাচ্চাদের জন্য ফিড কিনতে চান তাহলে আপনাকে কিনতে হবে লেয়ার এক ফিড। এই ফিড এর দাম 50 কেজি ওজনের বস্তা দাম নিয়ে থাকে ২৯০০ থেকে ৩০০০ টাকা। আপনি যদি খুচরা কিনতে যান তাহলে আপনার কাছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দাম নেবে।

আর আপনি যদি বড় হাঁসকে ফিড খাওয়াতে চান তাহলে 50 কেজি ওজনের ফিড বস্তার দাম নিবে ৩৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকা। এ বস্তা ২৫ কেজি ওজনেও পাওয়া যায়। এসব প্রতিদিন খাবারই ভালো এগুলো খাবার হাঁসকে খাওয়ালে হাঁস খুব দ্রুত বড় হবে এবং ডিম পারবে এতে করে আপনি খুব তাড়াতাড়ি লাভবান হবেন। যেসব খামারিরা রয়েছে তারা তাদের হাঁসকে এসব খাবারই দিয়ে থাকে।

হাঁসের সস্তা খাবার

আপনি যদি আপনার হাঁসকে একেবারে সস্তা খাবার খাওয়াতে চান তাহলে প্রধান খাবার হচ্ছে ধানের তুষ। আপনার ধানের তুষ-পানি দিয়ে মাখিয়ে দিলেই তারা খেয়ে নেবে। গ্রামাঞ্চলের দিকে বাসা বাড়িতে যারা হাঁস পালন করে তারা হাঁসকে এ খাবার দিয়ে থাকে। এই খাবার দামের দিক দিয়েও অনেক কম। অনেক দিকে এই তুষকে ধানের গুড়ো বলে থাকে

অর্থাৎ ধানের শরীরে যে চিলকা থাকে সেটা গুঁড়ো করে খাওয়ানো হয়। হাঁসকে শামুক খাওয়ালেও হাঁস খুব দ্রুত বড় হয়। শামুকের দাম কম যার কারণে আপনি খুব সহজে তাদেরকে শামুক কিনে খাওয়াতে পারবেন এতে করে আপনার খরচ কম হবে। লতা পাতা ও সবুজ যেসব শাক রয়েছে সেগুলো খেতে দিলেও আপনার খরচ কম হবে।


হাঁসকে শাক খাওয়ানোর ফলে হাঁসের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন প্রবেশ করে এতে করে হাঁস সুস্থ থাকে এবং দ্রুত বড় হয়। আপনি হাঁসকে এসব খাবার খাওয়ালে আপনার খরচ কম হবে এবং আপনি লাভবান বেশি হতে পারবেন। ফিড চালের খুদ এই দুইটা একসাথে মিক্স করে খেতে দিলেও খরচ কম হয় এবং এই দুইটা খাবার একসাথে হওয়ার কারণে হাঁস দ্রুত বৃদ্ধি হয়।

শেষ কথা

হাঁসের রোগ হলে অবশ্যই ভালোভাবে দেখাশোনা করতে হবে যাতে করে হাঁসকে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা যায় এবং তাদেরকে খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও সতর্কতার সাথে নিয়মমাফিক খাওয়াতে হবে তাহলে খুব দ্রুত বড় হবে এবং ডিম পারবে।

আমার এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও হাঁস পালনে উপকারী হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url