সিজারের পর গরুর মাংস খাওয়া যাবে কি না বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক আপনি কি সিজারের পর গরুর মাংস খাওয়া যাবে কি সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এ পোষ্টের মধ্যে সিজারের পর গরুর মাংস খাওয়া যাবে এবং সিজারের পর কি কি ফল খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
সিজারের পর কি কি ফল খাওয়া যাবে
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন সিজারের পর পেট ব্যথা কতদিন থাকে এবং সিজারের পর খাবার তালিকা ও সিজারের পর কাশি হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

যখন প্রাকৃতিক উপায়ে বাচ্চা না হয় তখন সিজার করার মাধ্যমে বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনা হয়। সিজার করার সময় অনেক বড় স্থান কাটা এবং সেলাই করার প্রয়োজন হয় যার জন্য সিজার হওয়ার পর পরে সব রকমের খাবার এবং আরো যা রয়েছে সেগুলো খাওয়া যায় আবার যায় না। বর্তমান সময়ে নরমাল ভাবে বাচ্চা হওয়ার যে সিজারে বাচ্চা হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি।

সিজারের পর কি কি ফল খাওয়া যাবে

সিজার হওয়ার পরে ফলমূল খাওয়ার পরিমান বেশি হওয়া উচিত কারণ ফলমূলের ভিটামিন সি ভিটামিন এ আরও পুষ্টিগুণ থাকে যেগুলো একজন গর্ভবতী মহিলার শরীরের পুষ্টিগুণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি যুক্ত ফল খাওয়ার কারণে সিজারের ক্ষত খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়। এছাড়াও সিজারের সময় যে পরিমাণ রক্ত বের হয় সেই পরিমাণ রক্ত শরীরে বৃদ্ধি করতে ফলমূল খাওয়া অতি জরুরী।

সিজারের পরে সবচেয়ে ভালো হয়
  • কমলালেবু
  • পেপে
  • তরমুজ
  • স্ট্রবেরি
  • আঙ্গুর
  • আপেল
  • শসা
  • গাজর
  • টমেটো
  • পেয়ারা
এসব ফল খাইলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারবেন। বিশেষ করে প্রতিবেলা ভাত খাবার সময় লেবু রাখবেন কারণ লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। নিয়মিত লেবুর রস খেলে বা ভাতের সাথে লেবু মাখিয়ে খেলে ক্ষতস্থান খুব দ্রুত শুকাবে। এজন্য সিজার হওয়ার পর থেকে চেষ্টা করবেন এইসব ফলগুলো খাওয়ার।

বিশেষ করে যে ফলগুলোতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলো খাবেন তাহলে আপনার শরীরের জন্য আরো বেশি উপকারী হবে।

সিজারের পর পেটে ব্যথা কতদিন থাকে

সিজারের পর ব্যথা ভালো হতে কত দিন সময় লাগবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে যার সিজার হবে তার উপরে কারণ প্রত্যেকের শরীরের গঠন এবং শরীরের এনার্জি সম্পূর্ণ ভিন্ন যার কারণে একেকজনের একেক রকমের সময় লাগে ব্যথা ভালো হওয়া এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্পন্ন নির্ভর করে যার সিজার করা হয়েছে সেই ব্যক্তির নিয়ম মত চলা এবং খাবারের তালিকার উপরে।

যদি সে ঠিকমতো নিয়মকানুন মেনে চলাফেরা করে এবং খাবার খায় তাহলে খুব দ্রুতই এ ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবে ব্যথা ভালো হতে ২ / ৩ সপ্তাহ মতো সময় লাগে। কারো কারো ক্ষেত্রে তা এক মাসের বেশিও হয়ে যায়। যদি সিজারের স্থানে ইনফেকশন বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দেয় যেমন পূজ বের হওয়া বা রক্ত বের হওয়া তাহলে ব্যথা ভালো হতে বেশ কিছুদিন সময়ের প্রয়োজন হয়।


এ অবস্থায় আপনার উচিত হবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার। সিজার হওয়ার পর থেকে যদি আপনি ঠিকভাবে নিয়ম-কানুন মেনে এবং খাবার খান তাহলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ১০-১২ দিনের মধ্যেও ব্যথা ৯০% কমে যায়। ব্যথা কমানো এবং সুস্থ হওয়ার জন্য আপনার উচিত হবে নিয়ম অনুযায়ী চলাফেরা করা

এবং নিয়ম অনুযায়ী খাবার খাওয়া তাহলে আপনার শরীরের জন্য উপকারী হবে। আপনার ক্ষত খুব দ্রুত শুকাবে ও ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা না থাকার পাশাপাশি খুব দ্রুত ব্যথা ভালো হবে এবং আপনি স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন।

সিজারের পর গরুর মাংস খাওয়া যাবে

গরুর মাংস অধিকাংশ মানুষেরই পছন্দের একটি খাবার। সিজার করার পরে অনেক সময় ডাক্তাররা অনেক খাবার খেতে মানা করেন। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে গরুর গোশত সিজার করার পরে খাওয়া যাবে বা খাওয়া গেলে কতদিন পরে তা খাওয়া যেতে পারে। সিজার হওয়ার পরে কয়েকদিন গরুর গোস্ত না খাওয়ায় ভালো

কারণ হচ্ছে সিজার হওয়ার পরে অনেক রকমের মেডিসিন খাওয়া হয় এবং পানি খাওয়ার পরিমান অনেক কমে যায় যার কারণে সিজারের পরে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা দেয়। সে সময় আপনি যদি গরুর গোস্ত খান তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এতে করে আপনার জন্য এটা ক্ষতিকর।


সিজারের পরে গরুর গোস্ত খেলে বাথরুম করার সময় মল শক্ত হয়ে যায় যার জন্য আপনি যখন মলত্যাগ করবেন তখন তার প্রভাব আপনার সেলাইয়ের উপরে পড়বে এবং সেই জায়গায় আস্তে আস্তে সমস্যা শুরু হবে। এছাড়াও যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা ভুলেও গরুর গোস্ত খাবেন না। সিজারের স্থানে চুলকানোর সম্ভাবনা বেড়ে যাবে

এবং আপনি যদি সেই জায়গা বারবার চুলকান তাহলে আপনার ক্ষত ঠিক হতে অনেক বেশি সময় লাগবে। এমনকি সেই স্থানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এজন্য সিজার হওয়ার পরে কিছুদিন যাবত গরুর গোস্ত না খাওয়াই ভালো। যদি সিজার হওয়ার পরে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা না হয় বা আপনার অ্যালার্জি জাতীয় কোন সমস্যা নেই তাহলে আপনি অল্প অল্প করে খেতে পারেন


তবে কখনো অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন না। সর্বোচ্চ হলে এক থেকে দুই পিস খাবেন। এর বেশি খেলে তা আপনার শরীরের জন্যই ক্ষতিকর হবে। আপনার যদি সিজারের পরে কিছুদিন গরুর গোস্ত না খান সেক্ষেত্রে আপনি খুব দ্রুত ভালো হবেন এবং এরপরে আপনার মন মত খেতে পারবেন। আপনার উচিত হবে সিজার হওয়ার পরে কমপক্ষে সাত থেকে আট দিন বা তারও বেশি সময় গরুর গোশত না খাওয়া।

সিজারের পর কাশি হলে করণীয়

কাশি একজন সাধারন মানুষের জন্য এমনিতেই কষ্টকর। যদি সিজারের রোগীর কাশি হয় তাহলে তা তার জন্য আরো বেশি কষ্টকর কারণ সিজার অবস্থায় কাশি হলে ক্ষতস্থানে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কাশি হওয়ার পিছে পিছনে কিছু কারণ থাকে। অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কাশি হয়। আবার অনেক সময় ভিন্ন কারণেও কাশি হয়।

সিজার করার পরে অনেকের কাশির সমস্যা হয়ে থাকে। সিজার করার পরে যে সেটা সিজার জনিত কাশি এটা বোঝার জন্য সর্বপ্রথম লক্ষণ হচ্ছে সিজারের কাছে বেশিদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় না এবং বুকের মধ্যে কোন রকমের শব্দ হয় না। এই দুইটা লক্ষণ ছাড়াও সে যার জনিত কাশি হলে মাথাব্যথা শরীর ব্যথা এসব লক্ষণগুলো দেখা দেবে।

সিজারের পরে যদি কাশি হয় তাহলে আপনার উচিত হবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা কারণ রক্ত জমাট সংক্রান্ত জটিল রোগের লক্ষণ হিসেবে সিজারের রোগীর কাশি হয়। আপনার জন্য উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ডাক্তার যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয় সেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলার।

যদি আপনি সিজারের পরে কাশির সমস্যার কারণে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করেন বা ডাক্তার না দেখান তাহলে আপনার বড় কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সিজারের পরে কাশি হওয়া এটা একটি মারাত্মক সমস্যা এজন্য আপনার উচিত হবে যতদ্রুত সম্ভব হয় সিজারের পরে কাশি হলে ডাক্তার দেখাবেন তাহলে যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা

করার পরে সাধারণ কাশি হয় তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকলেন আর যদি বড় কোন সমস্যা ধরা পড়ে তাহলে ডাক্তার যে মোতাবেক বলে সেই মোতাবেক চলবেন তাহলে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।

সিজারের পর খাবার তালিকা

সিজারের পরে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী ও রুটিন মাপে খাবার খেতে হবে। একজন সিজারের রোগী সব রকমের খাবার খেতে পারে না এবং ডাক্তাররা অনেক রকমের খাবার খেতে মানা করে। সিজারের রোগের এমন খাবার খাওয়া উচিত যে খাবার খাওয়ার কারণে খুব দ্রুত সে সুস্থ হয়ে উঠবে এবং ক্ষতস্থান খুব দ্রুত সেরে যাবে।
  • মসলাযুক্ত খাবার কম খেতে হবে মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে নিজের পেটে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং বাচ্চারও সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
  • কার্বনেটের যেসব পানীয় রয়েছে অর্থাৎ পেপসি সেভেন আপ কোকাকোলা এরকম যত ড্রিংস রয়েছে সে ড্রিংস খাওয়া থেকে নিজেকে বিরক্ত রাখতে হবে।
  • ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে অর্থাৎ চা-কফি এ জাতীয় পানীয় পান করবেন না।
  • সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি খাওয়ার কারণে শরীরে পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি হবে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সহযোগিতা করবে।
  • ঠান্ডা খাবার একেবারে খাওয়া যাবে না। ঠান্ডা খাবার খাওয়ার কারণে রক্ত প্রবাহ ব্যাহত হতে পারে এবং ঠান্ডা কাশি জ্বর সর্দির মতো সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে আইসক্রিম চকলেট ঠান্ডা দই এগুলোকে একেবারেই না বলুন
  • খাবার রান্না করার সময় অতিরিক্ত রান্না করবেন না। যতটুকু প্রয়োজন হয় ততটুকুই রান্না করবেন।অতিরিক্ত রান্না করার কারণে খাবারের পুষ্টিগুণ অনেকটা নষ্ট হয়ে যাবে।
  • দুধ এবং ডিম নিয়মিত খাবেন। দুধ এবং ডিমের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ উপাদান থাকে।
  • ভিটামিন খনিজ পদার্থ আয়রন থাকে এমন শাকসবজি ফলমূল খেতে হবে।
  • ব্রাউন চালের ভাত খেতে হবে এ ভাতের মধ্যে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে।
  • মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে গরুর মাংস কে কয়েকদিন যাবত এড়িয়ে চলবেন।
  • মসুরের ডাল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। মুসরের ডালের প্রোটিন ফাইবার এবং খনিজ উপাদান থাকে। যদি সিজারের রোগের এলার্জি সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে মুসরের ডালকে এড়িয়ে চলবেন।
  • পালং শাক,লাল শাক,সবুজ শাক,কলমি শাক,ব্রকলি এইসব শাক বেশি করে খেতে হবে কারণ এসব শাকে ভিটামিন এ ভিটামিন সি ক্যালসিয়াম থাকে।
  • কমলালেবু এবং বাতাবি লেবু খেতে হবে। প্রতিবার ভাত খাওয়ার সময় ভাতের সাথে লেবুর রস খেতে হবে।
  • যদি আপনার পেটের সমস্যা না থাকে তাহলে গমের আটার রুটি খাবেন। গমের আটার রুটিতে আয়রন এবং ফাইবার থাকে।
  • খাবারের সম্ভব হলে কাঁচা হলুদ দিয়ে রান্না করবেন কারণ কাঁচা হলুদ খুব তাড়াতাড়ি ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে।
  • আদা চুষে বা চিবিয়ে খাবেন। আদাতে রয়েছে ভিটামিন বি ভিটামিন ই ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম এগুলো একজন সিজারের রোগীর জন্য অনেক উপকারী।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
  • সিজার হওয়ার পরে ৪/৫ দিন ভাতের সাথে ঘি খাবেন না। অনেকে বলে থাকেন সিজারের পর থেকে ঘি খেতে তাহলে ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকাবে। একথা একেবারেই ভুল। সিজার হওয়ার চার-পাঁচ দিন পর থেকে খাবেন এর আগে কখনোই খাবেন না।
  • সিজারের পরে কখনো একবারে ভারে খাবার খাবেন না। অল্প অল্প করে কয়েকবারে খাবে এতে করে আপনার পেটে হজম হওয়া সহজ হবে।
  • ফাস্টফুড জাতীয় খাবার একেবারে খাবেন না। যেমন বার্গার স্যান্ডউইচ শর্মা পিৎজা চিকেন নাগের চিকেন উইন্স ইত্যাদি।

একজন সিজারের রোগী খাবারের এই তালিকা অনুসরণ করলেই তার শরীরে পুষ্টিগুণের মাত্রা উন্নত হবে এবং সে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে ও তার যে ক্ষত রয়েছে সে ক্ষত খুব দ্রুত শুকিয়ে যাবে। তাই একজন সিজারের রোগের উচিত এই খাবারের রুটিন অনুযায়ী খাবার খাওয়া।

শেষ কথা

সিজার হওয়ার পর থেকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত একজন মহিলার উচিত স্বাভাবিক এর চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক হয়ে চলাফেরা করা এবং খাবার খাওয়া। তাছাড়া এখান থেকে বড় কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও সিজার হওয়ার পরে কি কি করণীয় সেসব সম্পর্কে জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url