টাইগার মুরগির ঔষধের তালিকা এবং ভ্যাকসিন সিডিউল ও কোথায় পাওয়া যায়

প্রিয় পাঠক আপনি কি টাইগার মুরগির ঔষধের তালিকা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে টাইগার মুরগির ঔষধের তালিকা এবং টাইগার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল ও টাইগার মুরগির বাচ্চা কোথায় পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
টাইগার মুরগির ঔষধের তালিকা
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন টাইগার মুরগি পালনের নিয়ম এবং টাইগার মুরগির ওজন ও টাইগার মুরগি কত দিনে ডিম পাড়ে সে সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোষ্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক রকমের মুরগির চাষ হয়। মুরগির ভিতরে অনেক প্রজাতির মুরগি রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে টাইগার মুরগি। বর্তমানে টাইগার মুরগি চাষ করে মানুষ অনেক লাভবান হচ্ছে এবং এ মুরগির মাংস খেতে অন্য মুরগির তুলনায় সুস্বাদু। এই মুরগি ওজনের দিক দিয়েও অন্য মুরগিদের তুলনায় বেশি হয়।


শরীরের গঠনের পাশাপাশি এই মুরগির পা অন্য মুরগির তুলনায় মোটা হয়।

টাইগার মুরগি কত দিনে ডিম পাড়ে

ডিম থেকে একটি মুরগির জন্ম হয় এবং কেউ যদি মুরগির খামার করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে হবে। মানুষ বর্তমানে যেহেতু টাইগার মুরগির চাষ খামার করে সেহেতু টাইগার মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো জরুরী। তাছাড়া আপনি এ ব্যবসা থেকে লাভবান হতে পারবেন না।

একটি বাচ্চা জায়গার মুরগি বড় হয়ে ডিম পারার সময় হতে হতে প্রায় ৫-৬ মাস হয়ে যায়। যখন তাদের বয়স ৫-৬ মাসের মধ্যম অবস্থায় চলে সেই সময় তারা ডিম পাড়ে। টাইগার মুরগির বয়স যেসময় ২ আড়াই বছর হয় এর আগ পর্যন্ত টাইগার মুরগি বছরে ১৬০ টি থেকে ১৯০ টি ডিম পাড়ে। যখন তাদের বয়স আড়াই বছরের উপরে চলে যায় তখন আস্তে আস্তে ডিম পাড়ার পরিমাণ কমতে থাকে।

অর্থাৎ টাইগার মুরগি যদি ৫-৬ মাস পর পর বা ডিম পাড়ে তাহলে এক বছরে তারা দুইবার ডিম পারতে সক্ষম হয়। আশা করা যায় আপনি যদি টাইগার মুরগির খামার করেন এবং তাদের ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটান তাহলে আপনি অবশ্যই লাভবান হবেন কারণ তারা এক বছরে যথেষ্ট পরিমাণে ডিম দেয়।

টাইগার মুরগির ওজন

টাইগার মুরগির ওজন দেশি মুরগির তুলনায় অনেক বেশি হয়। টাইগার মুরগি ওজনের দিক দিয়ে বৃদ্ধি হওয়ার ক্ষেত্রে আর সব মুরগির চেয়ে খুব দ্রুত বাড়ে। অনেক মুরগি দেখা যায় ৩৫ দিনে ঠিকভাবে বড় হয় না সেখানে টাইগার মুরগি ৩৫ দিনে এক কেজি সমপরিমাণ হয়ে যায়। টাইগার মুরগির সর্বোচ্চ 8 থেকে ৯ কেজি হতে পারে।


গড় অনুপাতে টাইগার মুরগি তিন থেকে চার কেজি বা চার থেকে পাঁচ কেজি ওজনের হয়। যদি কেউ চায় যে আরো বড় করে খাবে সেক্ষেত্রে সে ৮ থেকে ৯ কেজি সমপরিমাণ বড় করতে পারবে। এর বেশি বড় করলে দেখা যায় মুরগি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আপনি যদি টাইগার মুরগি দোকান থেকে কিনেন তাহলে অবশ্যই ওজনের দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখবেন

কারণ অনেকে আছে যারা ১ ২ কেজির মুরগির বিক্রি করে সেটাকে টাইগার মুরগী বলে চালিয়ে দেয়।

টাইগার মুরগির বাচ্চা কোথায় পাওয়া যাবে

যারা টাইগার মুরগি কিনে খামার করতে যাচ্ছেন অথবা বাসা বাড়িতে পালার জন্য ভাবছেন তারা টাইগার মুরগি কিনতে চাইলে যেসব খামার রয়েছে সেই খামারগুলোতে যোগাযোগ করবেন কারণ তারা সেখানে বাচ্চা ফুটায় আপনি তাদের থেকে এসে বাচ্চাগুলো কিনলে অরজিনাল টাইগার মুরগি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এছাড়াও ফেসবুকে অথবা আরো বিভিন্ন রকম পেজ রয়েছে আপনি চাইলে সে পেজগুলোতে নক করেও তাদের থেকে কিনতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় সরাসরি দাঁড়িয়ে কোন খামার থেকে কিনলে তাহলে আপনি প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।

টাইগার মুরগি পালনের নিয়ম

টাইগার মুরগি কেউ যদি পালন করতে চায় অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী পালন করতে হবে। আপনি চাইলে খামার আকারে লালন পালন করতে পারবেন অথবা তাদেরকে মুক্ত বাতাসে ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমেও লালন পালন করতে পারবেন। এদেরকে যে স্থানে রাখবেন সেই স্থান ভালোভাবে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে এবং সকালে এবং রাত্রে ঠিকভাবে খাবার দিতে হবে।

অন্য মুরগির তুলনায় টাইগার মুরগি ওজনের দিক দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি হয় এবং ডিমও খুব তাড়াতাড়ি পারে যার কারণে এদের প্রতি যত্নশীল একটু বেশি হতে হয়। টাইগার মুরগি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য মুরগির তুলনায় বেশি থাকে যার কারণে এসব মুরগী অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম।


টাইগার মুরগীকে নিয়মিত ভুট্টা গুঁড়ো করে বা ভুট্টা ভেঙে খেতে দিতে হবে এবং ভুট্টার সাথে আরো মিক্স করবেন লবণ বিলিচিং পাউডার, খুদ তারপরে হালকা করে সয়াবিন তেল দিয়ে এই খাবারগুলো সব একসাথে মাখিয়ে নেবেন এবং এই খাবার টাইগার মুরগীকে খেতে দেবেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি টাইগার মুরগী বৃদ্ধি হবে।

টাইগার মুরগি বড় হওয়ার পর থেকে ডিম পাড়তে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগে এবং এরা ওজনের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ সাত থেকে আট কেজি হয় এবং স্বাভাবিকভাবে তারা তিন থেকে চার কেজি সম পরিমাণে হয়ে থাকে। সবচেয়ে ভালো হয় তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে পালন করার মাধ্যমে এতে করে তারা আরও বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে পারবে এবং মাংসের স্বাদ আরো বেশি হবে।

আপনি যদি খামারে তাদেরকে বেঁধে পালন করতে চান তাহলে তারা শুধু সেসব খাবারই খেতে পারবে যে খাবারগুলো আপনি খেতে দিবেন আর আপনি যদি তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে লালন পালন করতে চান তাহলে আপনার খাবারের পরিমাণও কম লাগবে। অবশ্যই তাদেরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখবেন এবং সময়মতো ওষুধ খাওয়াবেন

ও ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হলে ভ্যাকসিন দিবেন তাহলে আপনার মুরগি একেবারে নিরাপদ ভাবে বেড়ে উঠবে।

টাইগার মুরগির ঔষধের তালিকা

টাইগার মুরগি বাদেও যে কোন মুরগিকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই তাদেরকে ওষুধ খাওয়াতে হবে কারণ তাদের শরীরে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যার কারণে আপনি যদি তাদেরকে নিয়মিত ওষুধ না খাওয়ান তাহলে আপনার মুরগি অসুস্থ হয়ে মারা যাবে এজন্য চেষ্টা করতে হবে তাদেরকে সময় মত সব ওষুধ খাওয়ানোর।

বাচ্চার বয়স যখন প্রথম দিন চলবে তখন তাদেরকে লাইসোফিট বা গ্লুকোজ খাওয়াতে হবে। দ্বিতীয় দিন থেকে চতুর্থ দিন পর্যন্ত বয়সের বাচ্চাদেরকে এমক্সাসিলিন খাওয়াতে হবে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম দিনের বয়সের বাচ্চাদেরকে আইবি+এনডি লাইভ ভ্যাক্সিন খাওয়াবেন। ১০ থেকে ১২ দিন বয়স যে সময় বাচ্চার হবে তখন তাদেরকে গামবোরো লাইভ ভ্যাকসিন দিবেন।

১২ থেকে ১৪ দিন বয়সের বাচ্চাদেরকে লিভারতনিক ও ভিটামিন খাওয়াতে হবে। ১৮ থেকে ২২ দিন বয়সের বাচ্চাদেরকে আবার গামবোরো লাইভ ভ্যাকসিন দিতে হবে। ২৪ থেকে ২৬ দিন বয়সের বাচ্চাদেরকে এন্ডি লাইফ ভ্যাকসিন দিতে হবে। ২৪ থেকে ২৬ দিন বয়সের বাচ্চাদেরকে এম্প্রোলিয়াম ও সিপ্রো খাওয়াতে হবে।

৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সের টাইগার মুরগিকে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। ৪৫ থেকে ৪৮ দিনের বাচ্চাদেরকে রানীক্ষেত লাইভ ভ্যাকসিন দিতে হবে। মুরগির বয়স ৫০ দিন হলে সেই সময় থেকে তাদেরকে মাঝেমধ্যে ভিটামিন লিভারতনিক ও প্রবায়োটিক খাওয়াবেন। এ নিয়ম অনুপাতে তাদেরকে ওষুধ খাওয়ালে আপনার মুরগির সুস্থ সবল থাকবে

এবং খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে ডিম দিবে। মানুষকে যেভাবে সুস্থ রাখার জন্য ওষুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় তেমনভাবে মুরগি ও পশুর প্রাণীকেও সুস্থ রাখতে অবশ্যই তাদেরকে ওষুধ খাওয়াতে হবে। যখন দেখবেন তারা ঝিমুচ্ছে বা তাদের অবস্থা স্বাভাবিক নেই তখন সে অবস্থা বুঝে তাদেরকে ওষুধ খাওয়াবেন তাহলে আপনার মুরগির সুস্থ হয়ে যাবে।

টাইগার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

টাইগার মুরগিকে সুস্থ রাখতে ওষুধের পাশাপাশি নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাকসিনো দিতে হবে। ভ্যাকসিন শরীর থেকে রোগ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যার কারণে মুরগি অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং তারা অসুস্থ হলেও সে অসুস্থতা ভালো হয়ে যায়।
  • এক থেকে তিন দিনের মুরগিকে রাণীক্ষেত + ব্রংকাইটিস রোগের জন্য আইবি এবং এনডি এই দুইটি ভ্যাকসিন তাদের চোখে ফোটা আকারে দিবেন।
  • ৭ থেকে ৯ দিন বয়সের বাচ্চা মুরগীদের গামবোরো নামক অসুখ হলে আইবিডি ভ্যাকসিন মুখে ফোটা কারে দিবেন
  • ১৬ থেকে ১৭ দিন বয়সের তারকার মুরগিদেরকে রানীক্ষেত নামক অশোকের জন্য ল্যাসোটা নামক ভ্যাকসিন তাদের চোখে ছোট আকারে দিবেন।
  • ১৮ থেকে ২৪ দিন বয়সের বাচ্চাদের গামবোরো নামক অসুখ হলে আইবিডি ভ্যাকসিন খাবার পানির সাথে মিশিয়ে দিবেন।
  • ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সের টাইগার মুরগির ফাউল পক্স হলে ফাউল পক্স নামক ভ্যাকসিন তাদের শরীরে প্রয়োগ করে দেবেন।
  • টাইগার মুরগির বয়স ৮ সপ্তাহ হলে এই সময় তাদের ফাউল কলেরা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ফাউল করার জন্য ফাউল কলেরা নামক ভ্যাকসিন দিতে হবে।
  • বারো সপ্তাতে গিয়েও টাইগার মুরগির ফাউল করে না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যদি সেই সময় তাদের ফাউল-কলে না হয় তাহলে তখনও তাদেরকে ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন দিতে হবে।
  • ১৬ সপ্তাহে গিয়ে বার্ড ফ্লু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এ সময় তাদেরকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ভ্যাকসিন ইঞ্জেকশন হিসেবে দিতে হবে।

আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন বাচ্চার বয়স কোন সময় কি রোগ হলে তাদেরকে কোন ভ্যাকসিন দিতে হবে। যদি আপনি তাদেরকে অসুস্থতার দিকে লক্ষ্য করে এবং বয়সের সাথে সাথে ভ্যাকসিন না দেন তাহলে আপনার বাচ্চা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

শেষ কথা

টাইগার মুরগি পালন করা অবশ্যই লাভবান তবে আপনাকে সতর্কতার সাথে পালন করতে হবে যাতে কোনভাবে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা না যায়। যদি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাহলে আপনার ব্যবসাতে লস হবে। মুরগিদেরকে ঠিকভাবে খেতে দেবেন এবং নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাকসিন দিবেন তাহলেই আপনার মুরগি অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও টাইগার মুরগি পালন করতে চাইলে পালন করার নিয়ম জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url