ইমামতির শর্ত কয়টি- ইমামের পিছনে কেরাত পড়ার বিধান

প্রিয় পাঠক আপনি কি কোন ইমামের পিছনে নামাজ হবে না সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহল এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে কোন ইমামের পিছনে নামাজ হবে না এবং ইমামের পিছনে কেরাত পড়ার বিধান ও ইমামের পিছনে মুক্তাদের করণীয় কি সেই সম্পর্কে আলোচনা করব।
ইমামতির শর্ত কয়টি ও কি কি
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন ইমামতির শর্ত কয়টি - ইমামতির শর্ত কয়টি ও কি কি এবং বিদাতি ইমামের পিছনে সালাত,দাড়ি কাটা ইমামের পিছনে নামাজ ও একজন ইমামের বৈশিষ্ট্য কি কি সেই সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

আল্লাহ তায়ালা মুসলমানের উপরে অনেক বিধান ফরজ করেছে সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নামাজ। জামাতে নামাজ পড়ার সাওয়াব সবচেয়ে বেশি। জামাতে নামাজ পড়ার জন্য অবশ্যই একটি ইমামের প্রয়োজন হয়। ইমামকে একটি জামাতের কান্ডারী হিসেবে ধরা হয়। কেউ ইমাম হওয়ার জন্য তার অনেকগুলো যোগ্যতার প্রয়োজন হয়।

কোন ইমামের পিছনে নামাজ হবে না

একজন ইমাম হওয়ার জন্য তার কিছু যোগ্যতা থাকার প্রয়োজন। যে কেউ ইমাম হওয়ার জন্য যোগ্য না। যখন আপনি কাউকে ইমাম বানাবেন তখন অবশ্যই তার মধ্যে কিছু শর্ত এবং যোগ্যতা দেখে নিতে হবে। চলুন এবার আমরা জানি কোন ইমামের পিছনে নামাজ সহিহ হবে না
  • যদি কোন ইমামের কেরাত শুদ্ধ না হয় তাহলে তার পিছনে নামাজ কোনভাবেই হবে না। নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে তাকে সহীহ শুদ্ধ ভাবে সূরা পড়তে জানতে হবে। যদি তার পড়ার মধ্যে কোন রকমের ভুল উচ্চারণ পাওয়া যায় তাহলে নামাজ কোনোভাবেই হবে না।
  • নাবালক ইমামের পিছনে নামাজ পড়া উচিত না। ইমাম হওয়ার জন্য একটি শর্ত হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। যখন আপনি অপ্রাপ্তবয়স্কর পেছনে ফরজ নামাজ জামাতের সাথে আদায় করবেন তখন সে নামাজ হবে না। অনেকে আছেন যারা ১৮ বছরকে প্রাপ্ত বয়স হিসেবে ধরে থাকেন। বর্তমানে এসে অনেকে ১৮ বছরের আগেও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়।
  • শিয়া ইমামের পিছনে নামাজ কোনভাবেই শুদ্ধ হবে না কারণ শিয়ারা মহানবী সাঃ কে ইসলামের শত্রু ভাবেন। শিয়ারা এ কথাও অস্বীকার করেন যে আল্লাহ তাআলা মহানবী সাঃ এর কাছে ওহী পাঠিয়েছে। তারা এ কথার উপরে বিশ্বাস রাখে যে জিব্রাইল আলাই সালাম ভুলে মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর কাছে ওহী পাঠিয়েছে। তারা আসলে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে নবী হিসেবে দাবি করে।
  • কেউ ইমাম হওয়ার জন্য অবশ্যই তার পিতার পরিচয় থাকতে হবে। কোন জারজ সন্তানের পিছনে নামাজ সহি হবে না। এজন্য আপনি কাউকে ইমাম নিয়োগ করার পূর্বে অবশ্যই তার পিতার পরিচয় সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে।
  • ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান হচ্ছে পর্দা করা। কেউ যদি পর্দার বিধানকে অমান্য করে তাহলে সে আল্লাহ তায়ালার বিধানকে অমান্য করল। পর্দা অমান্য করে এমন কোন ব্যক্তির পিছনে নামাজ হবে না। মহিলাদের যেমন পর্দা রয়েছে তেমনি ভাবে পুরুষেরও পদ্মার বিধান রয়েছে।
  • ইসলামে সমকামিতা একেবারে অবৈধ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট গুনাহ হচ্ছে সমকামিতার। কোন ইমাম যদি সমকামিতায় লিপ্ত থাকে তাহলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। সমকামিতার শাস্তি হচ্ছে আগুনে পুড়িয়ে মারা অর্থাৎ কোন ইমাম যদি সমকামী হয় তাহলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং তার পিছনে কোন ভাবে নামাজ পড়া যাবে না।
  • অনেক ইমাম রয়েছে যারা বিদআতি। বিদআতে ইমামের পিছনেও নামাজ শুদ্ধ হবে না কারণ তারা এমন কিছু কাজ করে থাকে যেগুলোর আদেশ মহানবী সাল্লাম দেননি এবং ইসলামে সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে নিশ্চয়ই বেদাতীরা পথভ্রষ্ট এবং গোমরা।
  • যদি এমন অসুস্থ হয় যে তার দাঁড়ানোর শক্তি নাই তাহলে এমন ইমামের পিছনে নামাজ হবে না অর্থাৎ মুক্তাদির দাঁড়িয়ে থাকা শক্তি রাখে এবং ইমাম চেয়ারে বসে নামাজ পড়ে তাহলে এমন ইমামের পিছনে নামাজ হবে না। অবশ্যই ইমামকে সুস্থ হতে হবে এবং দাঁড়ানোর মত শক্তি থাকতে হবে।
  • অনেকে থাকে যাদের সাধারণত তুলনায় আক্কেল বুদ্ধি কম এমন ইমামের পিছনেও নামাজ হবে না। কারণ ইমাম হওয়ার জন্য তাকে সম্পূর্ণ বুদ্ধিমান হতে হবে। সম্পূর্ণ বুদ্ধিমান বলতে বলা এ জীবন চলার জন্য যতটুকু বুদ্ধি থাকা প্রয়োজন ততটুকু বুদ্ধি থাকতে হবে।
  • পাগলের উপরে ইসলামের কোন বিধান থাকে না। আপনি যদি কোন পাগলকে ইনাম বানান তাহলে তার পেছনে নামাজ হবে না কারণ পাগলের নিজেরই হুশ বুদ্ধি জ্ঞান নেই যার কারণে সে কিভাবে নামাজ পড়াবে সে সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা না থাকার কারণে তার পিছনে নামাজ হবে না।
  • মাতাল ব্যক্তির পিছনেও নামাজ শুদ্ধ হবে না। কেউ নেশা করার কারণে তার বুদ্ধি লোপ পায় এবং সে নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণে থাকে না যার কারণে তার পেছনেও নামাজ হবে না।
  • কোথাও সফরে গিয়ে মুসাফির ব্যক্তির পিছনে মুকিম ব্যক্তির নামাজ শুদ্ধ হবে না। মুকিম ব্যক্তির সংজ্ঞা হচ্ছে স্থানীয় ব্যক্তি আর মুসাফির ব্যক্তির সংজ্ঞা হচ্ছে যারা তিন দিনের কম থাকার জন্য ইসলামের যে সফরের বিধান রয়েছে সেটার বাহিরে গিয়েছে।
  • ধুমপান করার পরে যদি কেউ নামাজ পড়াতে যায় তাহলে তার পিছনে নামাজ শুদ্ধ হবে না কারণ তার মুখে দুর্গন্ধ থাকবে এবং সে নেশা অবস্থায় থাকবে যার কারণে আপনি যদি তার পেছনে নামাজ পড়েন তাহলে ধারণা করা যায় সে সঠিকভাবে নামাজ পড়তে পারবে না এজন্য তার পিছনেও নামাজ শুদ্ধ হবে না।
  • অমুসলিম ইমামের পিছনে নামাজ হবে না। বর্তমানে অনেকে আছে যারা মুসলমানদের রূপ নিয়ে অনেক মসজিদে ইমামতি করে এজন্য আপনি কাউকে ইমাম নিয়োগ করার পূর্বে অবশ্যই তার বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে নেবেন।
যদি কোন ইমামের মধ্যে এসব বিষয়গুলো দেখতে পান তাহলে সেই ইমামের পিছনে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকুন কারণ এমন ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে আপনার নামাজ কখনোই হবে না। আপনি কষ্ট করে যেসব নামাজ পড়বেন সবগুলো বৃথা যাবে এজন্য ইমাম নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে সব বিষয়গুলো যাচাই করে নিবেন।

ইমামের পিছনে কেরাত পড়ার বিধান

আমাদের মধ্যে একটা বিষয় নিয়ে অধিকাংশ সময়ে তর্কবিতর্ক হয়ে থাকে তা হচ্ছে কোন ব্যক্তি যখন ইমামের পিছনে নামাজ পড়বে তখন সে কি ইমামের সাথে কেরাত পড়বে? কেরাত বলতে এখানে সুরা ফাতেহার কথা বোঝানো হয়েছে। হানাফী মাযহাবে ইমামের পিছনে মুক্তাদির কেরাত পড়া যাবে না। ইমাম যখন সামনে দাঁড়িয়ে কেরাত পড়বে তখন মুক্তাদী চুপচাপ শুনবে

এবং ইমামের কেরাত পড়া শেষ হলে সে আমীন বলবে। হানাফি মাজহাবের আলেমরা ইমামের পিছনে চুপ থাকার পক্ষে কোরআন শরীফের সূরা আরাফ থেকে 204 নাম্বার আয়াত এর দলিল দিয়ে থাকে। সে আয়াতের অর্থ হচ্ছে যখন তোমাদের সামনে কোরআন শরীফ পড়া হয় তখন তোমরা তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো এবং নীরব থাকো হয়তো তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করা হবে।

অর্থাৎ এই আয়াতের দ্বারা বুঝা যায় যখন নামাজে ইমাম সামনে দাঁড়িয়ে কেরাত পড়বে তখন মুক্তাদির ইমামের পিছনে চুপচাপ থাকবে। কোনভাবেই সেও ইমামের সাথে কেরাত পড়বে না। হানাফি মাজহাবের আলেমরা হাদিস থেকে যে দলিল দেয় সেই হাদিসের অর্থ হচ্ছে যে ব্যক্তির ইমাম আছে তার ইমামের কেরাতে তার জন্য কেরাত বলে যথেষ্ট হবে। সুনানে ইবনে মাজাহ।

উভয় আয়াত এবং হাদিস দ্বারা বোঝা গেল ইমামের পিছনে কখনোই কেরাত পড়বে না। ইমামের কেরাত মুক্তাদির কেরাত হিসেবে যথেষ্ট হবে। মুক্তাদির জন্য ইমামের পিছনে শুধু কেরাত পড়ায় নিষেধ করা হয়েছে বাকি যে বিষয়গুলো রয়েছে যেমন তাকবীরে তাহরীমা বলা সানা পড়া। রুকু সেজদায় তাজবি পড়া। তাশাহুদ পড়া। দুরুদ শরীফ পড়া।


দুয়ায়ে মাসুরা পড়া। রুকু সেজদায় যাওয়া আসার সময় বলা প্রতিটি বিষয় মুক্তাদীও পড়বে। আশা করি আপনার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ইমামের পিছনে আপনি কেরাত পড়বেন নাকি কেরাত পড়বেন না। এখন থেকে নামাজে কোনভাবে আপনি ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা পাঠ করবেন না। সুরা ফাতেহা বাদে যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো আপনি পড়বেন

কিন্তু কখনোই সূরা ফাতেহা পড়বেন না। একজন ইমামকে নিযুক্ত করা হয় মুসল্লির আমির হিসেবে অর্থাৎ ইমাম সূরা ফাতেহা পাঠ করলেই মুক্তাদির পক্ষ থেকে পাঠ করলে সুরা ফাতেহা যথেষ্ট হয়ে যাবে।

ইমামের পিছনে মুক্তাদির করনীয়

একজন ইমামের পিছনে মুক্তাদির কিছু করণীয় কাজ থাকে। কিছু কাজ ইমামের করণীয় এবং কিছু কাজ মুক্তাদির করণীয়। মুক্তাদির করণীয় কাজ হচ্ছে ইমাম যখন তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাঁধবে এরপরে মুক্তাদী তাকবীরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধবে। এরপরে সানা পাঠ করবে। তারপর যখন ইমাম সুরা ফাতেহা পাঠ করা শুরু করবে তখন মুক্তাদির চুপচাপ শুনবে।

এরপর ইমামের সূরা ফাতিহা শেষ হয়ে গেলে মুক্তাদী আমিন বলবে। যখন মুক্তাদি রুকুতে যাবে তখন রুকুর যে তাসবীহ রয়েছে সেই তাজবীদ পাঠ করবে। রুকু থেকে উঠে যে দোয়া রয়েছে সেই দোয়া পড়বে। সেজদাতে গিয়ে সিজদার তাজবীদ পাঠ করবে। দুই সিজদার মাঝে বসে যে দোয়া পড়তে হয় সেই দোয়া পড়বে।

এভাবে নামাজ পড়ে যখন শেষ রাকাতে পৌঁছে যাবে তখন তাশাহুদ অর্থাৎ আত্তাহিয়াতু এবং দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়বে। তারপর ইমাম যখন সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করবে তখন মুক্তাদীও সালাম এর মাধ্যমে নামাজ শেষ করবে। যদি এক কথায় প্রকাশ করা হয় তাহলে ইমামের পিছনে একজন মুক্তাদের করণীয় হচ্ছে

সুরা ফাতেহা পড়া বাদে সবকিছু পড়া লাগবে। শুধু সুরা ফাতেহার সময় মুক্তাদির চুপচাপ সুরা ফাতেহা শুনবে।

ইমামতির শর্ত কয়টি - ইমামতির শর্ত কয়টি ও কি কি

ইমামতির জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যখন সেই শর্তগুলো কারো মধ্যে দেখা যাবে তখনই সে ইমাম হওয়ার দাবি রাখে। যদি সে শর্তগুলোর মধ্যে একটি শর্ত তার মধ্যে না থাকে তাহলে সে ইমাম হওয়ার দাবিদার না। কেউ ইমাম হওয়ার জন্য তার প্রথম শর্ত হচ্ছে অবশ্যই তাকে পুরুষ হতে হবে। কোন মহিলা কখনো ইমাম হওয়ার যোগ্য না।

পুরুষ হওয়ার পরে অবশ্যই তাকে মুসলমান হতে হবে। মুসলমান ব্যতীত কোন অমুসলিম ইমাম হতে পারবে না। অবশ্যই তাকে বালেগ হতে হবে। নাবালেক ব্যক্তি ইমামতির যোগ্য না। নামাজে যতটুকু সূরা পাঠ করা জরুরী সেই পরিমাণ সূরা পাঠিয়ে তাকে সহীহ শুদ্ধ হতে হবে অর্থাৎ কেউ যদি শুদ্ধভাবে কোরআন শরীফ পড়তে না পারে তাহলে সে ইমামতির যোগ্য না।

অবশ্যই তাকে বিভিন্ন রকমের রোগ থেকে সুস্থ থাকতে হবে অর্থাৎ সে এমন রোগে আক্রান্ত যে তার দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই তাহলে সেই ইমামতি করতে পারবে না। পাগল মাতাল এবং বুদ্ধি কম এমন মানুষ ইমাম হওয়ার জন্য যোগ্য না। অবশ্যই তার পিতার পরিচয় থাকতে হবে। জারজ সন্তান কখনোই ইমাম হতে পারবে না।

অপারগতা থেকে মুক্ত হতে হবে অর্থাৎ নাক দিয়ে রক্ত বের হতে থাকা,পেশাব ঝরতে থাকা বা বায়ু বের হতে থাকা এরকম অপারগত থেকে মুক্ত থাকতে হবে। নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য যে শর্তগুলো মানা জরুরী অর্থাৎ নামাজের বাহিরে এবং ভিতরে যে ফরজগুলো রয়েছে সে ফরজ গুলো অবশ্যই মানতে হবে।

কেউ যদি সে ফরজ গুলোর মধ্যে একটি ফরজও বাদ দেয় তাহলে তার ইমামতি শুদ্ধ হবে না। কারো মধ্যে যদি এই শর্তগুলো পাওয়া যায় তাহলে সে ইমামতির যোগ্য আপনি নির্দ্বিধায় তার পিছনে নামাজ পড়তে পারবেন। এখন অনেক ক্ষেত্রে অনেকের মনে প্রশ্ন আসে ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি কে?

যদি কোন মহল্লার বাদশা বা তার নায়েব থাকে তাহলে সে সবচেয়ে বেশি যোগ্য। যদি কারো ঘরে জামাত হয় তাহলে সেই ঘরের মালিক ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য। যদি কোন মসজিদে জামাত হয় তাহলে মসজিদের ইমাম সর্বাধিক যোগ্য। এমন কোথাও জামাত হচ্ছে যেখানে মহল্লার ইমাম বা ঘরের মালিক বা বাদশার কেউ উপস্থিত নাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হকদার হবে যে শুদ্ধভাবে কোরআন শরীফ পাঠ করার সাথে সাথে নামাজ শুদ্ধ এবং অশুদ্ধ হওয়ার যেই জ্ঞান প্রয়োজন সেই জ্ঞানগুলো তার জানা।

যদি এমন কেউ না থাকে সেক্ষেত্রে সেখানে যে সহিহ শুদ্ধ ভাবে কোরআন শরীফ পড়তে পারবে সেই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দাবিদার।

বিদাতি ইমামের পিছনে সালাত

আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা বিদাত করতে অভ্যস্ত। বিদাত বলতে এমন কিছু বিষয়কে বলায় যেগুলোর ভিত্তি ইসলামে নেই এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম সেগুলো করার ব্যাপারে কখনো আদেশও করেন নাই। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে নিশ্চয়ই যারা বেদাত করবে তারা পথভ্রষ্ট এবং গোমরা।

কিছু বিদাত রয়েছে যেগুলো কুফর পর্যন্ত যায় না। যদি ইমাম এরকম বিদাততে লিপ্ত হয় তাহলে সে ইমামের পিছনে নামাজ পড়া যাবে। সে বিদআত গুলো হলো উচ্চস্বরে জিকির করা,মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে সাবিনা খানি পরা,ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা,মহানবী সাঃ কে নূরের সৃষ্টি হিসেবে মনে করা এরকম যেসব বেদআত রয়েছে এগুলো করলেও তার পিছনে নামাজ হবে

কিন্তু যখন সে বিদআতের মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে কুফর পর্যায়ে চলে যাবে তখন তার পিছনে নামাজ কোনোভাবেই শুদ্ধ হবে না। যদি আপনি এমন এলাকায় বাস করেন যেখানে বিদআত করে এমন মানুষ ছাড়াও সহিহ শুদ্ধ আলেম রয়েছে তাহলে অবশ্যই আপনাকে সহীহ শুদ্ধ আলমের পিছনে নামাজ পড়তে হবে।

আর যদি এমন এলাকায় থাকেন যেখানে শুধু একজন ইমাম রয়েছেন এবং সে বিদআত তাহলে আপনাকে সে বিদআতের পিছনে নামাজ পড়তে হবে কারণ একাকী নামাজ পড়াচ্ছে জামাতে নামাজ পড়ার সওয়াব বেশি। ওই ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার পূর্বে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নেবেন যে তার বেদাত কুফর পর্যন্ত পৌঁছাইছে কিনা।

দাড়ি কাটা ইমামের পিছনে নামাজ

এমন কিছু ইমাম রয়েছে যারা দাড়ি কাটে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এক মুষ্টি সমপরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কেউ যদি দাড়ি কাটে অথবা ক্লিন সেভ করে তাহলে সে হারাম কাজ করছে। যখন তার দাড়ি এক মুষ্টির বেশি হবে তখন সে ছোট করতে পারে কিন্তু এক মুষ্টি হবার পূর্বে ছোট করা কোনভাবে জায়েজ নাই। এটি হচ্ছে কবিরা গুনাহ।

যে ব্যক্তি দাড়ি কাটে তাকে ফাসেক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফাসেক ব্যক্তির ইমাম হওয়া এবং তার পিছনে নামাজ পড়া উভয়টা মাকরূহে তাহরীমী। যদি কোন মহল্লায় এক মুষ্টি সমপরিমাণ দাড়িওয়ালা ব্যক্তি সহিহ শুদ্ধভাবে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করতে পারে তাহলে ফাসেক ব্যক্তির ইমামতি করার কোন অধিকার নেই।

যদি সে সহিহ শুদ্ধ ভাবে কোরআন শরীফ পড়তে পারে তারপরও তার ইমামতি করার অধিকার নেই। আর যদি ওই গ্রামে এমন কোন ব্যক্তি না থাকে তাহলে দাড়ি কাটতে এমন ফাসে ইমামের পিছনে নামাজ পড়া জায়েজ আছে। ইমাম নিয়োগ করার পূর্বে অবশ্যই আপনি তার দাড়ি এক মুষ্টি সমপরিমাণ দেখে নেবেন অন্যথায় আপনি ফাসেক ব্যক্তির পিছনে নামাজ পড়বেন

যা শরীয়তের দৃষ্টিতে মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি এমন ইমাম নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে চেষ্টা করবেন যত দ্রুত সম্ভব এরকম ইমামকে পরিবর্তন করে পরহেজগার ইমাম নিয়োগ দেওয়ার এতে করে আপনার নামাজ সম্পূর্ণ সহহি শুদ্ধ হবে।

একজন ইমামের বৈশিষ্ট্য

ইমাম হচ্ছে জাতির কর্ণধার। একজন ইমামের বৈশিষ্ট্য সবসময় সবার চেয়ে ভিন্ন এবং শ্রেষ্ঠ হওয়া উচিত। যদি ইমামের বৈশিষ্ট্যই সুন্দর এবং সেরা না হয় তাহলে মুসল্লিদের বৈশিষ্ট্য কোনোভাবেই সুন্দর হবে না। একজন ইমামের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য যা হতে হবে তা হচ্ছে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক থাকতে হবে।

সবসময় মানুষকে সৎ কাজে আদেশ করতে হবে। অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য বাধা প্রদান করতে হবে এবং সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব মানুষকে খারাপ কাজ থেকে ফিরে আনার জন্য বোঝাতে হবে এবং ভালো কাজ করানোর চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমল করতে হবে। কখনোই মানুষের মন রক্ষা করার জন্য অথবা মন জয় করার জন্য কোন আমল করা হবে না।

সবসময় আল্লাহকে ভয় করে চলতে হবে এবং যেসব বিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে সেগুলো মেনে চলতে হবে। কোরআন হাদিস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে এবং মানুষকে মাসলা মাসায়েল বলার সময় সঠিকটি বলতে হবে। সমাজকে কিভাবে সুন্দর করা যায় এবং মানুষ কিভাবে দিনের পথে আসে সে সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে।

যদি ইমাম বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হয় তাহলে অনেক ভালো। যদি বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী নাও হয় তারপরও তাকে সহীহ শুদ্ধ ভাবে বাংলা সম্পর্কে গুছিয়ে বলতে পারদর্শী হতে হবে। তার চরিত্র সুন্দর হতে হবে এবং সুন্দর মনের অধিকারী হতে হবে। অবশ্যই তাকে ধৈর্যশীল হতে হবে কারণ একজন ইমামকে অনেক কিছু সম্মুখীন হতে হবে

যদি সে ধৈর্যশীল না হয় তাহলে কোনোভাবেই সে পরিস্থিতি মানিয়া উঠতে পারবে না। সঠিকভাবে কোরআন শরীফ পড়তে জানতে হবে। যদি সহীহ শুদ্ধভাবে কেউ কোরআন শরীফ পড়তে না পারে তাহলে তার পিছনে নামাজ হবে না। সব সময় পরিপাটি এবং সুন্দর থাকতে হবে যাতে করে মানুষ তার দিকে আকৃষ্ট হয় এবং তার সাথে মিশতে পছন্দ করে।

কখনোই মানুষের প্রতি দীর্ঘ আশা করা যাবে না। সবসময় অল্পে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সুন্দর ভাবে বক্তৃতা দিতে জানতে হবে কারণ বক্তৃতার মাধ্যমে মানুষের মন জয় করা সম্ভব এজন্য অবশ্যই কথা বলার সময় সুন্দরভাবে কথা বলতে জানতে হবে। নিজের দায়িত্বের প্রতি অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে এবং নিজের যেসব কাজগুলো রয়েছে সে কাজগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে হবে।


অবশ্যই তাকে পরিশ্রমী হতে হবে। যদি কোন ইমাম অলস হয় সেক্ষেত্রে মানুষ তার প্রতি উদাসীন হয়ে যাবে এবং তার প্রতি কখনোই ভালো ধারণা রাখবে না। সামাজিক যেসব কাজগুলো রয়েছে সেগুলোতে যতটুকু সম্ভব ভূমিকা রাখতে হবে। সবসময় সৎ থাকতে হবে কখনোই কারো সাথে কোন রকম ঝামেলা করা যাবে না এবং কোন দায়িত্ব দিলে সে দায়িত্ব সম্পূর্ণ সুন্দরভাবে পালন করতে হবে।

একজন ইমাম হওয়ার জন্য অবশ্যই তার মধ্যে এইসব বৈশিষ্ট্যগুলা থাকা জরুরী কারণ ইমামের থেকে মানুষ অনেক কিছু আশা করে এবং শিখতে চাই। যদি ইমামের ভিতরে এই বৈশিষ্ট্য গুলো না থাকে তাহলে মানুষ কখনো ইমামের প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারবে না। যখন মানুষ ইমামের প্রতি সন্তুষ্ট হবে তখন সে ইমামের থেকে ভালো কিছু শিখতে পারবে এবং খুব দ্রুত ধর্মের পথে আসবে।

শেষ কথা

নামাজ সহিহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইমামের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি জরুরী এজন্য আপনার উচিত হবে ইমাম নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই তাকে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা। ইমামকে সম্মান দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে যথার্থ সম্মান দিতে হবে। কখনোই তার সাথে কোন রকম খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীর সাথে শেয়ার করুন যাতে করে তারা ইমাম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url