গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি এবং গোবর সার ব্যবহার
প্রিয় পাঠক আপনি কি গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি এবং গরুর গোবর দিয়ে গ্যাস তৈরি ও স্বপ্নে গরুর গোবর দেখলে কি হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
এছাড়াও আপনি এ পোষ্টের মধ্যে পাবেন গোবর সারের উপকারিতা ও গোবর সার ব্যবহার এবং গোবর সার তৈরির নিয়ম সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোষ্টের দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
গরুর প্রতিটি জিনিসই মানুষের জন্য উপকারী। গরু খাবার খাওয়ার পরে মলত্যাগ করে সেই মল মানুষের জন্য উপকারী। গরুর মলকে গোবর বলা হয়। জমিতে চাষাবাদের জন্য গোবর অনেক বেশি উপকারী। শুধু জমির জন্যই নয় যেসব পুকুরে মাছ চাষ করা হয় সেসব পুকুরের জন্য গোবর উপকারী।
বিশেষ করে এই গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি করলে সেই খাবার মাছেরা অনেক ভালো খায়।
গোবর সার তৈরির নিয়ম
গোবর সার জমির জন্য অনেক উপকারী। জমিতে গোবর সার ব্যবহার করলে চাষাবাদ অনেক ভালো হয় ও ফসলও অনেক বেশি উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের কৃষকের কাছে গোবর সার অতি পরিচিত। অধিকাংশ কৃষকই এই গোবর সার ব্যবহারের মাধ্যমে লাভবান হয়। গোবর শাক তৈরির জন্য প্রথমে আপনাকে বাড়ির আশেপাশে একটি গর্ত খনন করে নিতে হবে।
গর্ত খনন করা হয়ে গেলে গর্তকে ভালোভাবে গোবর দিয়ে লেপে দিবেন। এরপরে নিচে বালি এবং খড় বিছিয়ে দিবেন যাতে করে পানি চুষে নিতে পারে। এরপর সেখানে গোবর ফেলবেন। একেবারে সব গোবর ফেলবেন না। প্রতিদিন অল্প অল্প করে গোবর ফেলবেন। এভাবে যখন গর্ত ভরাট হয়ে যাবে তখন সেটাকে ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য ভালোভাবে ঢেকে দেন।
এরপর সেখানে পুকুরের তলার মিহি মাটি ভালোভাবে গুঁড়ো করে গোবরের সাথে মিশিয়ে দিন। আপনি যদি গোবর সারকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে চান তাহলে গোবর সারের সাথে টিএসপি যোগ করতে পারেন। টিএসপি এবং গোবর একসাথে হওয়ার কারণে অনেক বেশি উপকারী সার হবে। এভাবে কিছুদিন রেখে দিলেই গোবর সার তৈরি হয়ে যাবে।
গোবর সার তৈরি করার জন্য অবশ্যই আপনাকে ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে কারণ আপনার নজর রাখা জরুরী যে রোদের কারণে যেন গোবর সার শুকিয়ে না যায় এবং বৃষ্টির কারণে যেন ভিজে না যায়। তাই আপনি যেখানে গোবর সার তৈরি করবেন সেখানে টিনের চালা দিয়ে দিবেন এতে করে সার একেবারে নিরাপদ থাকবে।
আপনি এভাবে গোবর সার তৈরি করলে আপনার জমির জন্য এই সার অনেক কার্যকারী হবে।
গোবর সারের উপকারিতা
গোবর সার জমির জন্য অনেক বেশি উপকারী। কোন রকমের কেমিক্যাল ছাড়াই এই সার তৈরি করার কারণে তা আরো বেশি উপকারী হয়। গোবর সারকে জৈব সার বলা হয়। এ সার মাটিতে ব্যবহার করলে মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ তুলনামূলক বেড়ে যায় যা মাটির জন্য ভালো। গোবর সার মাটিতে ব্যবহার করলে মাটির পানি ধরনের ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়
এবং ভিটামিন ও হরমোন এর দ্বারা গাছের বৃদ্ধি খুব তাড়াতাড়ি হয়। গাছকে যথেষ্ট পরিমাণে নাইট্রোজেন যোগান দিতে পারে যার জন্য গাছ খুব তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার পাশাপাশি খুব তাড়াতাড়ি ফল দেয়। মাটিতে অনেক ধরনের জীবাণু থাকে। গোবর সার সেসব জীবাণুকে মেরে ফেলতে পারে যার জন্য গাছ এবং মাটি নিরাপদ থাকে।
গাছের জন্য যতটুকু পুষ্টি প্রয়োজন সেই পরিমাণ পুষ্টি বৃদ্ধি করতে পারে। গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেক বেশি সহায়তা করে। অনেক সময় দেখা যায় গাছ খুব তাড়াতাড়ি মারা যায়। গাছের এই মারা যাওয়া রোধ করতেও সাহায্য করে গোবর সার। গোবর সার এটেল মাটিকে দোআঁশ মাটির মতো করে তুলতে পারে যার কারণে ফসল উৎপাদনের জন্য অনেক বেশি উপযোগী হয়।
গোবর সার মাটিতে সাত থেকে আট মাস পর্যন্ত প্রভাব রাখতে পারে যার কারণে এক চাষের পরে পরবর্তী চাষেও এ সার কাজে দেয়। কোন কৃষক যদি তার জমিতে গোবর সার ব্যবহার করে তাহলে সে এইসব উপকারিতা গুলো পাবে। এ প্রতিটি উপকারিতায় একটি জমির জন্য অনেক বেশি জরুরী তাই আপনি আপনার জমিতে চাষাবাদ করার পূর্বে
চেষ্টা করবেন গোবর সার প্রয়োগ করার এতে করে আপনার জমি এবং ফসলের জন্যই ভালো হবে।
গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি
গোবর দিয়ে খুব কম খরচেই মাছের খাবার তৈরি করা যায় এবং এই খাবার মাছের স্বাস্থ্য বৃদ্ধির জন্য খুব ভালো কাজ করে। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ পুকুরে খামারিরা মাছের অনেক রকমের খাদ্য ব্যবহার করার পাশাপাশি গোবর দিয়ে খাদ্য তৈরি করে পুকুরে দেয়। গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি গর্ত খুড়ে নিতে হবে।
এরপর সে গর্তে গোবর রাখতে হবে ১০ মন গোবর দিয়ে খাদ্য তৈরির জন্য আপনার প্রয়োজন পড়বে ১০ মণ গবর ১০ মন কচুরিপানা এক মন খোল ১০ কেজি টিএসপি এবং পাঁচ কেজি ইউরিয়া সার। গর্তে প্রথমে পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চি সমপরিমাণ গোবর দিবেন। তারপর সেখানে খৈল দিবেন এবং টি এস পি ও ইউরিয়া সারের একসাথে মিক্স করে দেড় কেজি সমপরিমাণ তার উপরে ছিটিয়ে দিবেন।
এরপর ছয় ইঞ্চি পরিমাণ কচুরি পানা দিবেন। তারপরে আবার সেখানে গোবর দেবেন। তারপরে খোল দিবেন তারপরে স্যার এবং তারপরে কচুরিপানা। এভাবে সবকিছু ভালোভাবে দেয়ার পরে দেখবেন গর্ত ভরাট হয়ে গেছে। মাছের খাদ্য হেফাজত করার জন্য আপনাকে অবশ্যই টিনের চালা উপরে দিয়ে দিতে হবে কারণ বৃষ্টিতে ভিজে গেলে তা কোনভাবে মাছের খাদ্য তৈরি হবে না।
এভাবে ১০-১৫ দিন রেখে দেয়ার পরে দেখবেন উপরে অনেকটা ফুলে গেছে। তখন কোন শক্ত বা ধারালো কিছু সাহায্যে দুই তিন হাত পর পরে ছিদ্র করে দিবেন কারণ সেখানে গ্যাস তৈরি হয়। যদি আপনি এই অবস্থায় পুকুরে দেন তাহলে তা মাছের জন্য ক্ষতিকর হবে। কয়েক হাত পরপর ছিদ্র করে দেয়ার কারণে ভিতর থেকে যেসব বিষাক্ত গ্যাস রয়েছে সেই গ্যাসগুলো বের হয়ে যাবে।
এরপর আরো ১৫ দিন অব্দি রেখে দিলেই মাছের খাদ্য তৈরি হয়ে যাবে। অর্থাৎ গোবর এবং বিভিন্ন উপাদান দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি করতে সবমিলিয়ে একমাস সময় লাগে। এ পদ্ধতি বাদেও আপনি আরেকটি পদ্ধতিতে মাছের খাদ্য তৈরি করতে পারেন। সে পদ্ধতি হচ্ছে গরুর কাঁচা গোবর এবং খোল একসাথে মিক্স করেও কিছুদিন রেখে দিয়ে
বা তৎক্ষণাৎ পুকুরে ব্যবহার করতে পারবেন। এটাও এক ধরনের মাছের খাবার।
গোবর সার ব্যবহার
গোবর সার চাষাবাদ জমির জন্য অনেক উপকারী। এই সার তৈরি করতে খরচ কম হয় এবং জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে উপকারিতা পাওয়া যায়। জমির ফলন বৃদ্ধি করতে পারে এই সার। জমির পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। গাছ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গাছের পর্যাপ্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন যোগায়।
এ সার জৈব সার হওয়ার কারণে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ধরে রাখতে সক্ষম এবং বাড়িয়ে দেয় যা একটি জমির জন্য অনেক উপকারে। এ সার জমিতে অনেকদিন পর্যন্ত প্রভাব রাখতে পারে যার কারণে আপনি একসাথে এই স্যারের মাধ্যমে দুই চাষ করতে পারবেন। জমিতে যত রকমের ক্ষতিকর জীবাণু থাকে সে জীবাণুগুলো কেউ মেরে ফেলতে পারে।
আপনি জমিতে চাষাবাদ করার পূর্বে এ সার কিছুদিন আগে ভালোভাবে পুরা জমিতে ছিটিয়ে দিবেন তাহলে আপনার জমির জন্য উপকারী হয়ে যাবে। ছিটিয়ে দেওয়ার কয়েকদিন পরে গাছ লাগাবেন তাহলে সে গাছ ভালো ফল দিবে।
স্বপ্নে গরুর গোবর দেখলে কি হয়
একজন মানুষ স্বপ্নে অনেক কিছু দেখে। স্বপ্ন কখনো নিজের আয়ত্তে থাকে না। অনেক সময় স্বপ্নের মধ্যে মানুষ গোবর দেখে ফেলে যার ফলে সে চিন্তিত হয়ে যায় যে আসলে গোবর দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে। চলুন এবার আমরা জানি। কেউ যদি স্বপ্নে দেখে সে গোবর দিয়ে ঘুরতে বানাচ্ছে তাহলে তাকে ইশারা দেয়া হয় যে তার ভাগ্য খুব তাড়াতাড়ি উন্নত হবে এবং সে চারিদিকে থেকে লাভবান হবে।
কেউ যদি স্বপ্নে দেখে সে গোবরের উপরে শুয়ে আছে তাহলে তাকে এই ইশারা দেয়া হয় সে খুব তাড়াতাড়ি অসুস্থ হবে। কেউ যদি স্বপ্ন দেখে তার পা গোবরের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে তাহলে এটি একটি খারাপ লক্ষণ। অচিরেই তার জন্য খারাপ কিছু ঘটবে। আপনি যদি দেখেন গোবরের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন তাহলে এর দ্বারা বোঝানো হয় আপনি টাকা পয়সা বেশি অপচয় করবেন।
তাই টাকা পয়সা খরচ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। অপচয় করা শয়তানের কাজ। এখন থেকে যদি আপনি গোবর জাতীয় কোন স্বপ্ন দেখেন তাহলে এ ব্যাখ্যা গুলোর মধ্যে যে কোন একটি ধারণা করবেন। স্বপ্নের প্রতিটি ব্যাখ্যায সত্য হয় না। স্বপ্ন দেখে কখনোই কাউকে বলা উচিত নয় এজন্য চেষ্টা করবেন নিজের স্বপ্ন সবসময় নিজের মধ্যে রাখার।
শেষ কথা
গোবর অনেক প্রয়োজনীয় একটি। জিনিস যারা চাষাবাদ করেন তারা চেষ্টা করবেন নিজের জমিতে গোবর সার ব্যবহার করার। যারা খামারি আছেন তারা এ গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি করতে পারবেন এতে করে আপনার খরচ কম হবে এবং আপনি লাভবান বেশি হবেন।
আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারা তাদের জমি বা পুকুরে গোবর ব্যবহার করার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে।
সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url