কমপ্লেন খাওয়ার উপকারিতা ও বানানোর নিয়ম- বয়স দাম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
প্রিয় পাঠক আপনি কি কমপ্লেন খাওয়ার বয়স জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে কমপ্লেন খাওয়ার বয়স এবং কমপ্লেন খেলে কি লম্বা হওয়া যায় ও কমপ্লেন খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন কমপ্লেন খাওয়ার উপকারিতা এবং কমপ্লেন এর দাম কত, কমপ্লেন খেলে কি হয় ও কমপ্লেন বানানোর নিয়ম সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি করতে এবং উচ্চতা বৃদ্ধি করার জন্য অনেক রকমের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়। ছোটবেলায় বাচ্চাদের কমপ্লেন খাওয়ানোর পিছনেও এই দুইটি কারণে থাকে। কমপ্লেন বাচ্চার ওজন এবং উচ্চতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কমপ্লেন এমন কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় যেগুলো বাচ্চা শরীরে পুষ্টি যোগাতে সহায়তা করে।
কমপ্লেনের স্বাদ এতটাই সুস্বাদু যে বাচ্চারা নিজে থেকে খাওয়ার আগ্রহ করে যার কারণে তাদেরকে খাওয়ানোর জন্য জড়াজড়ি করা লাগেনা। কমপ্লেন ছোট বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
কমপ্লেন খাওয়ার বয়স কত
বাচ্চারা ছোট থাকা অবস্থায় তাদেরকে বিভিন্ন রকমের খাবার খাওয়ানো হয়। হরলিক্স বিভিন্ন রকমের দুধ ডিম ইত্যাদি। অনেকে আছে যারা তাদের বাচ্চাকে কমপ্লেন খাওয়ায়। কমপ্লেন একটি বাচ্চার শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কমপ্লেন এমন কিছু পুষ্টিকর খাদ্য এবং উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় যেগুলো বাচ্চার শরীরকে পুষ্টিকর করে তুলে।
কমপ্লেন খাওয়ানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন বয়স বা সময় নেই। যেকোনো বয়সের বাচ্চাদের এটি খাওয়ানো যায়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় বাচ্চার বয়স যখন চার থেকে পাঁচ বছর হবে তখন থেকে খাওয়াতে শুরু করলে। এতে করে সে পুষ্টিগুলো বাচ্চা শরীরের সাথে ভালোভাবে মিলে যাবে। যদি কোন বড় ছেলে অথবা মেয়ে কমপ্লেন খেতে চায় তারাও খেতে পারবে
অর্থাৎ পাঁচ বছর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রত্যেক বয়সের ব্যক্তি এই কমপ্লেন খেতে পারবে। যারা কমপ্লেন খাবে তাদের জন্যই তা উপকৃত হবে।
কমপ্লেন খেলে কি লম্বা হওয়া যায়
আমাদের প্রত্যেকের কাছে একটি কথা প্রচলিত আছে যে কমপ্লেন খেলে লম্বা হওয়া যায়। আসলেই কি এ কথার কোন ভিত্তি রয়েছে নাকি মানুষ নিজের অজান্তে এ কথা বলে। একটি মানুষ লম্বা হওয়া এবং লম্বা না হওয়া সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার জিনগত বিষয়ের উপরে। তার হরমোন কতটুকু তাকে বড় করবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার হরমোন এবং জিনের উপরে।
কমপ্লেন কোনোভাবেই একটি মানুষকে লম্বা করতে পারে না তবে হ্যাঁ কমপ্লেন হরমোন বৃদ্ধি হতে সাহায্য করে যার কারণে আশা করা যায় কমপ্লেন কিছুটা লম্বা করতে সাহায্য করে কিন্তু কমপ্লেন খাওয়ার কারণে যে মানুষ লম্বা হবে এ ধারণা কোনোভাবে নিশ্চিত নয়। আপনি আপনার বাচ্চাকে কমপ্লেন খাওয়ায় লম্বা করতে চাইলে খাওয়াতে পারেন।
এতে আপনার বাচ্চাকে হয়তো লম্বা হতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে তবে শুধু এক কমপ্লেনের উপরে নির্ভর হবেন না। আরো বিভিন্ন রকমের যে খাবারগুলো রয়েছে সেগুলো খাওয়াবেন তাহলে আরো ভালো কাজ করবে এবং আপনিও ভালো ফলাফল পাবেন।
কমপ্লেন খাওয়ার নিয়ম
আপনার বাচ্চাকে কমপ্লেন খাওয়ান বা যেই খাবারে খাওয়ান অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াতে হবে। নিয়মের বিপরীতে খাওয়ালে তা তার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে। কমপ্লেন খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াতে হবে। যদি আপনি নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ান তাহলে বদহজম গ্যাসটি এরকম সমস্যা হবে।
এমনকি বমি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই অবশ্যই আপনার বাচ্চাকে কমপ্লেন খাওয়াতে হলে নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে অথবা সন্ধ্যার সময় নাস্তার করার পরে তাদেরকে কমপ্লেন খেতে দেবেন। কখনোই সকালে নাস্তায় অথবা দুপুরের খাবারের পরে তাদেরকে কমপ্লেন খাওয়াবেন না।
পানি দিয়ে কমপ্লেন খাওয়ানোর চেয়ে দুধ দিয়ে কমপ্লেন খাওয়ালে আরো বেশি উপকৃত হওয়া যায়। তাই আপনার উচিত হবে আপনার বাচ্চাকে যদি কমপ্লেন খাওয়ান তাহলে এক গ্লাস দুধে দুই টেবিল চা চামচ পরিমাণ কমপ্লেন নিবেন। দুই টেবিল চামচ পরিমাণ কমপ্লেন বলতে ৩০ থেকে ৩২ গ্রাম নিতে হবে যার পরিমাপ দুই টেবিল চামচ পরিমাণ হয়।
এরপর চামচের সাহায্যে ভালোভাবে দুধ এবং কমপ্লেন একসাথে মিশিয়ে নিবেন। দুধ একেবারে ঠান্ডা নেওয়া যাবে না। দুধ এমন ভাবে গরম করবেন যেন তা কুসুম গরম হয়ে থাকে এবং বাচ্চা আরামে খেতে পারে। তারপর আপনার বাচ্চাকে আস্তে আস্তে খাওয়াবেন। খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কখনোই তাড়াহুড়া করবেন না। এতে করে তার গলায় কমপ্লেন গলায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যদি আপনার বাচ্চার গ্যাসের সমস্যা থাকে তাহলে কমপ্লেনের পরিমাণ আরো কমিয়ে দিবেন অর্থাৎ দুই চামচের স্থানে এক চামচ পরিমাণ নেবেন। অনেকজন আছে যারা তাদের বাচ্চাকে কমপ্লেন দিনে দুই থেকে তিনবার খাওয়ান এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল পদ্ধতি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদেরকে একবার খাওয়াবেন। এর বেশি কখনোই খাওয়াবেন না।
যদি আপনার বাচ্চা কোন খাবার খেতে না চায় তাহলে তাদেরকে দুইবার কমপ্লেন খেতে দিতে পারেন। দুইবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে তাদেরকে যে সময় নাস্তা খাওয়ান সেই সময় খাওয়াবেন। কখনোই তাদেরকে প্রধান খাবারের সময় খাওয়াবেন না যেমন দুপুরের খাবারের সময় অথবা সকালে খাবারের সময় বা রাত্রে খাবারের সময়।
আরো পড়ুন :: ওভালটিন খাওয়ার নিয়ম এবং বয়স ও উপকারিতা
এই তিন বেলা বাদে সন্ধ্যার পরে নাস্তার সময় এবং দুপুরের খাবার কিছুক্ষণ পরে অথবা সকালে নাস্তার পরে এবং দুপুরে খাবার খাওয়ার পূর্বে অর্থাৎ এই দুই সময়ের মাঝের সময়ে খেতে দেবেন। আপনি আপনার বাচ্চাকে কমপ্লেন খাওয়ালে এই নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াবেন তাহলে আপনার বাচ্চা উপকৃত হবে।
পরিমাণের দিক দিয়ে কখনোই এর বেশি খাওয়াবেন না তাহলে আপনার বাচ্চার জন্য তা ক্ষতিকর হবে।
কমপ্লেন খাওয়ার উপকারিতা - কমপ্লেন খেলে কি হয়
কমপ্লেন মূলত খাওয়া হয় উপকারের জন্য। ছোট বাচ্চাদের শরীর যাতে পুষ্টিতে ভরপুর হয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয় যার ফলশ্রুতিতে এই কমপ্লেন খাওয়ানো হয়। কমপ্ল্যান বাচ্চাদের শরীরের পুষ্টিগণের দিকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়। ৩২ টি উপাদান দিয়ে কমপ্লেন তৈরি করা হয় যার কারণে বাচ্চা এটা খেলে তাদের শরীর মজবুত হয়।
কমপ্লেন হরমোনে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে যার কারণে বাচ্চাদের লম্বা হতেও সাহায্য করে। এছাড়াও কমপ্লেনে রয়েছে ভিটামিন ভিটামিন এ,ভিটামিন সি,ভিটামিন ই,আইরন,প্রোটিন,মিনারেল, এসবগুলো একটি শিশুর শরীরের জন্য জরুরি এবং শিশুর শরীর বিকাশে সাহায্য করে। আপনার বাচ্চাকে যদি কমপ্লেন খাওয়াতে চান তাহলে অবশ্যই খাওয়াতে পারেন।
এতে আপনার বাচ্চা শরীরের জন্যই ভালো তবে একটি বিষয় মনে রাখার জরুরী কমপ্লেনকে কখনোই বাচ্চার প্রধান খাবার বানাবেন না। কমপ্লেনকে নাস্তার খাবার হিসেবে রাখবেন এবং কমপ্লেনের পাশাপাশি আরো পুষ্টিকর যেসব ফলমূল এবং খাবার রয়েছে সেগুলো খাওয়াবেন। সেগুলো আপনার বাচ্চাদের শরীরের জন্য কমপ্লেনের তুলনায় আরো বেশি উপকারী।
কমপ্লেন এবং দুধ একসাথে খাওয়াবেন তাহলে আপনার বাচ্চা উপকৃত হবে। অনেক বাচ্চা আছে যারা গরুর দুধ অথবা প্যাকেজের দুধ খেতে চায় না তাদেরকে কমপ্লেন মিশিয়ে খাওয়ালে খুব সহজে আপনি খাওয়ায় দিতে পারবেন। কমপ্লেনের উপকারিতা পেতে দুই চামচের বেশি কখনোই খাওয়াবেন না। অতিরিক্ত খাওয়ালে আপনার বাচ্চা কোনভাবে উপকৃত হতে পারবেন না।
কমপ্লেন এর দাম কত
কমপ্ল্যান বিভিন্ন ওজনের পাওয়া যায়। ওজনের দিকে হিসাব করে কমপ্ল্যানের দাম ধরা হয়। কমপ্লেন কয়েকটি ফ্লেভারে হিসেবেও পাওয়া যায়।
- কমপ্লেন চকলেট জার ৫০০ গ্রাম ৫৩০ টাকা।
- কমপ্লেন চকলেট ৩৫০ গ্রাম ৪০০ টাকা।
- কমপ্লেন ক্রিমি ক্লাসিক ৩৫০ গ্রাম ৪৮০ টাকা।
- কমপ্লেন ক্রিমি ক্লাসিক ৫০০ গ্রাম ৬৫০ টাকা।
এই দুইটি ফ্লেভারের এবং ওজনের কমপ্লেন পাওয়া যায়। আপনি কেনার আগে অবশ্যই ভালোভাবে মেয়াদ দেখে নিবেন এবং দামটাও ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। আপনি চাইলে যেকোন কনফেকশনের দোকানে অথবা ফার্মেসি থেকে বা অনলাইন থেকেও কিনতে পারেন। আপনার যেভাবে সুবিধা হয় আপনি সেভাবে কিনে নেবেন।
তবে কেনার আগে অবশ্যই মেয়াদ এবং দাম ভালোভাবে দেখে নেবেন তাহলেই হবে।
কমপ্লেন বানানোর নিয়ম
কমপ্লেন এমনভাবে বানানো উচিত যাতে করে বাচ্চা খুব আরামে এবং আগ্রহ সহকারে খায়। অনেক রকমের খাবার আছে যেগুলো বাচ্চারা খেতে চায় না যার কারণে জড়াজড়ি করা লাগে কিন্তু কমপ্লেন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা অনেক সুস্বাদু হওয়ার কারণে বাচ্চারা আগ্রহ নিয়ে খায়। আপনার কাজ শুধু তা সঠিক নিয়মে বানানো।
পানি এবং দুধ দুইটি দিয়েই কমপ্লেন বানানো যায় তবে দুধ দিয়ে বানালে বাচ্চারা খুব ভালো খায় এবং পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যায়। দুধ অথবা পানি নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই কুসুম গরম পানি নিতে হবে। অতিরিক্ত গরম পানি নিলে বাচ্চারা খেতে পারবে না আর ঠান্ডা পানি নিলে সেখানে কমপ্লেন ভালোভাবে মিশবে না। যার কারণে দুধ বা পানি যেথায় নেন অবশ্যই তা কুসুম গরম হতে হবে।
এরপর দুই চা চামচ পরিমাণ কমপ্লেন নিয়ে ভালোভাবে দুধ অথবা পানির সাথে মিক্স করবেন। তাহলেই কমপ্লেন বানানো হয়ে যাবে। বাচ্চার যদি গ্যাসের সমস্যা থাকে তাহলে এক চামচ পরিমাণ দিবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একবার খাওয়াবেন তাহলেই তা যথেষ্ট,। যদি সম্ভব হয় তাহলে সেখানে ছোট ছোট বাদাম কুচি করে দিয়ে দিবেন তাহলে বাচ্চার জন্য আরো উপকারী হবে।
শেষ কথা
বাচ্চাকে কমপ্লেন খাওয়ানোর আগে সবচেয়ে ভালো হয় ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিলে তা আপনার বাচ্চার জন্য আরো ভালো হবে। যদি ডাক্তার বাচ্চা শরীরের অবস্থা দেখে খাওয়াতে বলে তাহলে খাওয়াবেন নতুবা কমপ্লেনকে এড়িয়ে চলবেন।
আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও তাদের বাচ্চাকে কমপ্লেন খাওয়ানোর বিষয়ে সব কিছু জানতে পারে।
ধন্যবাদ 🖤