চানাচুর মসলা তৈরি- চানাচুর খেলে কি ওজন বাড়ে- ডায়াবেটিসে চানাচুর খাওয়া যাবে কি

প্রিয় পাঠক আপনি কি চানাচুর মসলা তৈরি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে চানাচুর মসলা তৈরি এবং চানাচুর তৈরির মেশিন কোথায় পাওয়া যায় ও বউ জামাই চানাচুর সম্পর্কে আলোচনা করব।
চানাচুর মসলা তৈরি
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন চানাচুর খেলে কি ওজন বাড়ে এবং ডায়াবেটিসে চানাচুর খাওয়া যাবে কি ও ডালমুট বানানোর রেসিপি সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোষ্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

চানাচুর আমাদের কমবেশি সবারই পছন্দ। চানাচুর মুখরোচক খাবার হওয়ার কারণে এটা সকলেই পছন্দ করে। শুধু চানাচুর খেতে অথবা চানাচুর মাখিয়ে বা মুড়ি এবং চানাচুর একসাথে মাখিয়ে খাওয়ার সাথে অন্য কোন খাবারের কখনোই তুলনা হয় না। চানাচুর আমরা সাধারণত দোকান থেকে কিনি খাই আবার অনেকে আছেন যারা নিজের বাসায় চানাচুর তৈরি করে।


চানাচুর যেমন ভাবে মুখরোচক খাবার তেমনিভাবে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। চানাচুর খাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি হয়।

চানাচুর খেলে কি ওজন বাড়ে

আমরা চানাচুর প্রায় দিনে খেয়ে থাকি। চানাচুর একটি মুখরোচক খাবার যার কারণে অনিচ্ছাকৃত সত্বেও হলেও খাওয়া হয়ে যায়। চানাচুর শরীরের জন্য কোন ভাবেই উপকারী নয়। শরীরের জন্য তা অনেক বেশি ক্ষতিকর। চানাচুরের প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে যার কারণে মোটা হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

যারা নিয়মিত ডায়েট করেন বা ওজন কমানোর জন্য চেষ্টা করেন তারা কখনোই চানাচুর খাবেন না। দ্রুত সময়ে ওজন বাড়ানোর প্রতিযোগিতা করার জন্য যদি কোন খাবার থাকে তাহলে তা হচ্ছে চানাচুর। কোন অবস্থাতে আপনি নিয়মিত বা অতিরিক্ত চানাচুর খাবেন না এতে করে খুব সহজে আপনার ওজন বৃদ্ধি হয়ে যাবে।

অতিরিক্ত বা নিয়মিত চানাচুর খাওয়ার কারণে অন্য খাবারের প্রতি রুটি হারিয়ে যায় যার কারণে শারীরিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। ওজন বৃদ্ধি হওয়া ছাড়াও চানাচুর খাওয়ার কারণে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। চানাচুর খেলে বুক জ্বালাপোড়া করা পেট ব্যথা বুক ব্যথা এই সমস্যাগুলো অতিরিক্ত হয়।

যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগেন তারা চানাচুর খেলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা আরো বেশি বেড়ে যাবে। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন চানাচুরকে একেবারেই না খাওয়ার আর যদি খান তাহলে একেবারে অল্প পরিমাণে খাওয়ার যাতে করে তা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর না হয়। কোনভাবেই চানাচুর নিয়মিত খাবেন না। হয়তো মাসে বা ১৫ দিনে একবার।

ডায়াবেটিসে চানাচুর খাওয়া যাবে কি

যেসব মানুষ ডাইবেটিসসে আক্রান্ত তাদের জন্য অনেক রকমের খাবার খাওয়া নিষেধ কারণ সেসব খাবার ডায়াবেটিসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিস অবস্থায় চানাচুর খাওয়া উচিত নয় কারণ চানাচুরের ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে যার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন বৃদ্ধির সমস্যা হতে পারে।


ডায়াবেটিস বৃদ্ধির সমস্যা ছাড়াও আরো বিভিন্ন রকমের সমস্যা যেমন বুক জ্বালাপোড়া গ্যাসের সমস্যা বুক ব্যথা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা এরকম আরো রোগ চানাচুর খাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস রোগের দেখা দিতে পারে। তাই যেসব মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রয়েছেন তারা যে কোন খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণ মতো খাবেন

এবং বিশেষ করে সবসময় চানাচুরকে এড়িয়ে চলবেন। যদি আপনার অতিরিক্ত মাত্রায় চানাচুর খেতে মন চায় তাহলে সামান্য পরিমাণ খাবেন। কখনোই নিয়মিত এবং অতিরিক্ত খাবেন না এতে করে তা আপনার ডায়াবেটিসের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর হবে এবং আপনাকে এই কারণে কষ্ট সহ্য করতে হবে।

বউ জামাই চানাচুর

বাংলাদেশের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী চানাচুর রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বউ জামাই চানাচুর। পুরান ঢাকায় একটা লোক প্রথমে নিজে একা এ চানাচুর বানিয়ে বিক্রি করতেন। এরপর তা আস্তে আস্তে প্রসিদ্ধ লাভ হতে হতে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে এই চানাচুর বাংলাদেশে তৈরি হয়।

বেশ কয়েক বছর হল এই চানাচুর একেবারে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে। এই চানাচুর খেতে স্বাদে এবং খেতে অনেক বেশি সুস্বাদু ছিল যার কারণে মানুষ বউ জামাই চানাচুর এর উপরে অনেক বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক রকমের চানাচুর পাওয়া যায় বিভিন্ন কোম্পানির রয়েছে সেগুলো তারা নিজেরা চানাচুর তৈরি করে।

আরেকটি চানাচুর আছে তা হচ্ছে রশিদ চানাচুর। এই চানাচুরও বাংলাদেশে অনেক প্রসিদ্ধ। খেতেও এ চানাচুর অন্য চানাচুরের তুলনায় অনেক বেশি সুস্বাদু। বউ জামাই চানাচুর বাংলাদেশ থেকে একেবারে হারিয়ে গেছে বললে হয়। চানাচুর ঠিকই হারিয়ে গিয়েছে কিন্তু মানুষের মনে এখনো আগের মতোই জায়গা করে নিয়ে রাখছে।

বউ জামাই চানাচুর যদি কখনো এই চানাচুর বাংলাদেশে আবার নতুন করে শুরু হয় আশা করা যায় মানুষ আবারও এই চানাচুর আগের মত গ্রহণ করবে।

চানাচুর তৈরির মেশিন কোথায় পাওয়া যায়

মেশিনের সাহায্যে চানাচুর বানিয়ে বিক্রি করলে খুব সহজে লাভবান হওয়া যায় কারণ মেশিনের সাহায্যে অতি দ্রুত সময়ে অনেক চানাচুর তৈরি করা যায় যার কারণে অনেক সময় বেঁচে যায়। চানাচুর বিভিন্ন রকম ভাবে বানানো যায়। যুগ উন্নত হওয়ার সাথে সাথে মানুষ নিজের সময়কে বাঁচাতে মেশিনের সাহায্যে চানাচুর তৈরি করে।

একটি মেশিনের সাহায্যে পাঁচ রকমের চানাচুর বানানো যায় চিকন মোটা মাঝারি এরকম বিভিন্ন ডিজাইনে আপনি একটি মেশিনের সাহায্যে চানাচুর বানাতে পারবেন। ফেসবুকে অনেক পেজ রয়েছে আপনি চাইলে সেখান থেকেও চানাচুর বানানো মেশিন কিনতে পারেন অথবা ঢাকার গাজীপুরে অনেক দোকান রয়েছে যেগুলোতে চানাচুর তৈরির মেশিন বিক্রি করে।

আপনি সেখানে যোগাযোগ করার মাধ্যমেও তাদের থেকে চানাচুর তৈরি করার মেশিন কিনতে পারবেন। মেশিন তাদের কেনা উচিত যারা চানাচুর দিয়ে ব্যবসা করতে চাই বা রাস্তায় চানাচুর তৎক্ষণাৎ তৈরি করে বিক্রি করতে চাই এতে করে তার জন্য মেশিনের সাহায্যে চানাচুর বানানো অনেক সহজ হবে।

চানাচুর মসলা তৈরি

চানাচুরের মসলা খেতে যত সুস্বাদু হবে চানাচুর খেতে তত বেশি সুস্বাদু হবে। চানাচুরে যেই মসলা ব্যবহার করা হয় সে মসলা একটি পদ্ধতিতে বানানো হয়। সে পদ্ধতিতে মসলা বানালে আপনি বাসাতে চানাচুর করলেও তা খেতে অনেক বেশি সুস্বাদু হবে।
  • শুকনা মরিচের গুঁড়ো
  • কারি পাতা গুঁড়ো
  • গোল মরিচ গুঁড়ো
  • তেজপাতের গুঁড়ো
  • এলাচ গুঁড়ো
  • আদা গুঁড়ো
  • জোয়ান গুড়ো
  • জয়ফুল গুড়ো
  • আমচুর গুড়ো
  • ধনিয়া গুঁড়ো
  • জিরা গুড়ো
  • লবঙ্গ গুঁড়ো
এই সবগুলো উপাদান একসাথে করে মিক্স করলে একটি সুস্বাদু এবং সুঘ্রাণ সম্পন্ন চানাচুরের মসলা হয়ে যাবে। আপনি চাইলে এসব উপাদান আস্ত অবস্থায় কিনে নিয়ে এসে বাসায় ভেজে তারপরে গুড়ো করতে পারেন বা দোকান থেকে এসবের গুড়ো নিয়ে এসেও বানাতে পারেন আপনার যেভাবে সুবিধা হয় আপনি সেভাবেই করবেন।

এসবগুলো উপাদান একসাথে হয়ে চানাচুর মাখালে চানাচুর খেতে অনেক বেশি সুস্বাদু হয় এবং এখানে এমন কিছু উপাদানের জন্য তা আরো বেশি সুঘ্রাণ সম্পন্ন হয়। আরো এক পদ্ধতিতে আপনি চানাচুরের মসলা বানাতে পারবেন। সেই ভাবে বানানোর জন্য প্রয়োজন হবে টেস্টিং সল্ট,সাইট্রিক এসিড ,গোলমরিচের গুঁড়ো,শুকনো মরিচের গুঁড়ো,জিরা গুঁড়ো এবং চটপটি মসলা।

এই উপাদান গুলো একসাথে করে চানাচুরের সাথে মিক্স করে দিলেই খেতে অনেক সুস্বাদু লাগবে। আপনি দুই পদ্ধতি যেকোনো এক পদ্ধতিতে চানাচুরের মসলা করলে খেতে তার সুস্বাদু হবে। বিশেষ করে উপরে যে পদ্ধতি বলা হয়েছে সেই পদ্ধতিতে করলে আরো বেশি সুস্বাদ হবে। যদিও সেই পদ্ধতিতে মসলা বানাতে বেশ কিছু উপাদানের প্রয়োজন হয়।


যদি আপনার সম্ভব হয় তাহলে সে পদ্ধতিতে বানাবেন তাহলে তা আপনার কাছে আরো বেশি ভালো লাগবে খেতে।

শেষ কথা

চানাচুর একটি মুখরোচক খাবার তাই লোভে পড়ে কখনো বেশি খেয়ে নেবেন না এতে করে আপনি বিভিন্ন রকম সমস্যায় ভুগবেন। যদি বাসায় চানাচুর বানান তাহলে অল্প করে বানাবেন যাতে একবার খেয়ে শেষ হয়ে যায় এবং কখনো চানাচুর নিয়মিত খাবেন না।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও চানাচুর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url