টিনের ঘর ঠান্ডা রাখার উপায়- টিনের ঘরে গরম কমানোর উপায়

প্রিয় পাঠক আপনি কি টিনের ঘর ঠান্ডা রাখার উপায় জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোস্টের মধ্যে টিনের ঘর ঠান্ডা রাখার উপায় এবং ছাদের রুমের গরম কমানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।
টিনের ঘর ঠান্ডা রাখার উপায়
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন রান্নাঘর ঠান্ডা রাখার উপায় এবং টপ ফ্লোর ঠান্ডা রাখার উপায় ও ঘর ঠান্ডা রাখার যন্ত্র সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

গরম কালে বাইরের আবহাওয়া সহ ঘর অনেক বেশি গরম থাকে। সারা দিনের কাজ শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন ঘরে এসে আরাম করার জন্য বিছানায় মাথা দেওয়া হয় তখন যদি নিজের ঘর গরম হয়ে থাকে তাহলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা সম্ভব হয় না। শীতল ঠান্ডা ঘর গরমকালে আমাদের মন কেউ শীতল করে দিতে পারে।


ঘর ঠান্ডা করার অনেক যন্ত্র পাওয়া যায় এবং যন্ত্র ছাড়াও অনেক রকমের নিজের আয়ত্ত উপায়ও রয়েছে। গরমকালে ঘর যদি কোন কারণে ঠান্ডা না থাকে তাহলে সবচেয়ে বিরক্তকর পরিস্থিতি শুরু হয়।

রান্নাঘর ঠান্ডা রাখার উপায়

আগুনের সামনে রান্না করা এমনিতেই কষ্টকর তার উপরে যদি সেটা গরমকালে হয় তাহলে তা আরো বেশি কষ্টকর। উপর থেকে প্রাকৃতিক গরম এবং রান্নাঘরে আগুনের গরম দুইটা মিলে অবস্থা একেবারে নাজেহাল হয়ে যায়। রান্নাঘর ঠান্ডা রাখারও কিছু উপায় রয়েছে সেই উপায়গুলো প্রয়োগ করলে রান্নাঘর ঠান্ডা হয়ে থাকবে।

রান্নাঘর সব সময় পরিষ্কার রাখবেন। বিশেষ করে জানালার আশেপাশে পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে করে বাহির থেকে বাতাস ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। চেষ্টা করবেন রান্নাঘরের জানালা একটু বড় রাখার যাতে করে গরমকালে সে পাশ দিয়ে বাতাস আসে। রান্নাঘরে যত কম সম্ভব হয় আগুন ব্যবহার করবেন। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ব্যাবহার করবেন। অকারণ রান্নাঘরের আগুন জ্বালিয়ে রাখবেন না।

রান্নাঘরে এগজস্ট ফ্যান ব্যবহার করবেন। এ ফ্যান রান্নাঘর থেকে গরম বাতাস বাহিরে নিয়ে চলে যায়। রান্নাঘর কখনো অতিরিক্ত মাত্রায় গ্যাস করে রাখবেন না অর্থাৎ দরজা-জানলা বন্ধ করে কারণ রান্নাঘর অতিরিক্ত সময় ধরে গ্যাস করে রাখলে সেখানে গরম লাগা শুরু হবে। কখনো গরম কালে একসাথে দুইটি চুলায় রান্না করবেন না।

যখন আপনি দুইটি চুলায় একসাথে রান্না করবেন তখন তাপমাত্রা বেশি হবে। শীতকালে একসাথে দুইটি চুলায় রান্না করা যেতে পারে কিন্তু গরমকালে সবসময় একটি চুলাতে রান্না করবেন তাহলে আপনার রান্নাঘরের তাপমাত্রা কম থাকবে। গরমকালে কখনো দুপুরে রান্না করবেন না। সবসময় চেষ্টা করবেন সকালে বা বিকেলের দিকে রান্না করার।

কারণ দুপুরে অতিরিক্ত গরম থাকার কারণে আপনি যদি সেই সময় রান্না করেন তাহলে গরমের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। এমন আসবাবপত্র ব্যবহার করে রান্না করবেন যেগুলোতে কম সময় লাগে অর্থাৎ পেশার কুকারে রান্না করতে হবে কারণ প্রেশার কুকার রান্না করতে কম সময়ের আগে এবং আপনার রান্নাঘরও কম গরম হবে।

দিনের বেলায় রান্নাঘরে বৈদ্যুতিক বাতি একেবারেই চালু করবেন না। আপনি চালু করলে বাল্বের আলোতে তাপমাত্রা আরো বেড়ে যাবে। ওভেন ব্যবহার করা থেকে এড়িয়ে চলুন কারণ ওভেনে অতিরিক্ত মাত্রায় গরম বাতাস বের করে যা আপনার রান্নাঘরকে আরো বেশি গরম করে তুলবে। রান্নাঘরের অতিরিক্ত সময় দিবেন না

অর্থাৎ আপনার যেসব সবজি বা খাবার কাটার দরকার পড়ে তা বাহিরে কেটে নিবেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে আগের দিন রাত্রে কেটে রাখলে আরো ভালো। আপনি এইসব উপায় অবলক্ষণ করলে আপনার রান্নাঘর ঠান্ডা রাখতে পারবেন। রান্নাঘরকে ঠান্ডা রাখা অতি জরুরি তাছাড়া দেখা যাবে রান্না করতে গিয়ে আপনার নিজের প্রেসার বেড়ে গিয়ে অন্য সমস্যা হতে পারে।

ঘর ঠান্ডা রাখার যন্ত্র

কিছু যন্ত্র রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমেও ঘরবাড়ি ঠান্ডা রাখা যায়। ঘরবাড়ি ঠান্ডা রাখার প্রথম যে যন্ত্র রয়েছে তা হচ্ছে ফ্যান। এই যন্ত্র কম বেশি সবার বাসাতেই থাকে। তারপরও অনেক সময় গরম কমাতে সক্ষম হয় না। ঘর ঠান্ডা রাখতে সবচেয়ে বেশি যে যন্ত্র সক্ষম তা হচ্ছে এসি। এসি কেনার সামর্থ সবার থাকে না যার জন্য খুব কম সংখ্যক মানুষের বাসাতেই এই যন্ত্র রয়েছে।

আরেকটি যন্ত্র রয়েছে তার নাম হচ্ছে এয়ার কুলার। এই যন্ত্র অনেকের বাসায় রয়েছে। এই যন্ত্রের দাম মধ্যম অবস্থায় হওয়ার কারণে অনেকে কিনে ঘর ঠান্ডা করতে পারে। কিছু এয়ার কুলার থাকে যেগুলো কারেন্টের মাধ্যমে চলে আর কিছু এয়ার কুলার থাকে যেগুলো কারেন্ট এবং চার্জ উভয় তার মাধ্যমে চলে অর্থাৎ বিদ্যুৎ না থাকলেও আপনি সেসব এয়ার কুলার ব্যবহার করতে পারবেন।


আপনার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তাহলে আপনি যন্ত্র ক্রয় করার মাধ্যমেও রুম ঠান্ডা করতে পারবেন। ফ্যান ব্যতীত অন্য যেসব যন্ত্র রয়েছে সেগুলো অনেক সময় অনেকের জন্য শারীরিকভাবে ক্ষতিকর। অনেকে আছে যারা এসির বাতাস সহ্য করতে পারে না যার কারণে এলাকার সমস্যা বা ঠান্ডা লাগার মত সমস্যা বেড়ে যায়।

আবার অনেকে আছে যারা এয়ার কুলারের বাতাস সহ্য করতে পারে না তাই আপনার পরিবারের যদি কারো এমন সমস্যা থাকে তাহলে সে সমস্যাগুলো আগে সমাধান করে তারপরেই রুম ঠান্ডা করার যন্ত্র কিনবেন।

টিনের ঘর ঠান্ডা রাখার উপায়

গ্রামাঞ্চলে অনেক টিনের বাসা রয়েছে। গরমকালে সরাসরি সূর্যের আলো টিনে লাগার কারণে গরমের তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায়। আপনি টিনের বাড়ি করার আগে চেষ্টা করবেন বাড়ির আশেপাশে গাছ লাগানোর। গাছ থাকার কারণে আপনার বাড়ি অনেক শীতল থাকবে। ছায়া শীতল জায়গায় টিনের বাড়ি করতে হবে তাহলে গরম স্বাভাবিকের তুলনায় কম লাগবে।

টিনের বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জানালা রাখতে হবে। আপনি জানালা রাখার কারণে সেসব দিয়ে বাতাস প্রবেশ করবে এবং আপনার ঘরকে শীতল করে তুলবে। টিনের বাড়িতে গরম কালে সিলিং ফ্যানের পরিবর্তে টেবিল ফ্যান ব্যবহার করুন কারণ ঘর তিন গরম থাকার কারণে সিলিং ফ্যানের বাতাসের সাহায্যে গরম নিচে নামবে

আর যদি টেবিল ফ্যান ব্যবহার করেন তাহলে আপনার শরীর এবং আশেপাশে থেকে গরম দূর হয়ে যাবে। এক ধরনের ফোম রয়েছে যেগুলো টিনের নিচ দিয়ে দিলে গরমের তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যায় কারণ এই ফোম তাপমাত্রা চুষে নিতে পারে। এইসব উপায় অবলম্বন করলে টিনের বাসা বাড়ি থেকে গরমের তাপমাত্রা দূর করা সম্ভব হয়।

যদিও সম্পূর্ণ তাপমাত্রা দূর করা সম্ভব হবে না তারপরও অনেকটাই তাপমাত্রা আপনি এসব উপায় অবলম্বন করা মাধ্যমে দূর করতে পারবেন।

ছাদের রুমের গরম কমানোর উপায়

গরমকালে ঘর এমনিতে গরম থাকে তার ওপরে যদি সেটা ছাদের উপরের ঘর হয় তাহলে তো আরো বেশি গরম। ছাদের উপরের ঘরকে চিলেকোঠা বলা হয়। গরমকালে চিলেকোঠা সবচেয়ে বেশি গরম থাকে। চিলেকোঠা ঠান্ডা করার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম যে কাজ করতে হবে আপনার চিলেকোঠার উপরে কিছু গাছ লাগিয়ে নেবেন।

এতে করে সূর্যের আলো গাছের উপরে পড়বে এবং আপনার ঘর তুলনামূলক কম গরম হবে। আরো একটা উপায় রয়েছে তা হচ্ছে চিলেকোঠার ছাদে পানি দিয়ে রাখবেন এতে করে পানি গরম হতে থাকবে। আপনার ঘর ঠান্ডা থাকবে যদি সম্ভব হয় তাহলে সালার বস্তা ভিজিয়ে তা আপনার চিলেকোঠার উপরে দিয়ে রাখতে পারেন এতে করেও আপনার ঘর শীতল থাকবে।

এক ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে যেগুলো ছাদে ব্যবহার করলে তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যায়। আপনি চাইলে এই কেমিক্যাল ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার ছাদের ঘর থেকে গরম দূর করতে পারবেন। ছাদের ঘরে সিলিং ফ্যান ব্যবহার করার চেয়ে টেবিল ফ্যান ব্যবহার করলে রুম বেশি শীতল থাকে। ছাদের ঘর যেহেতু অনেক উপরে হয়

তাই আপনি আপনার রুমের জানলা খুলে রাখবেন এতে করে শীতল বাতাস আপনার রুমে প্রবেশ করবে। যারা ছাদের ঘরে থাকেন তারা তাদের ঘর থেকে গরম ভাব দূর করতে চাইলে এই উপায়গুলো অবলম্বন করতে পারেন। ছাদের ঘর তুলনামূলক বেশি গরম হয় যার জন্য আপনি এসবগুলো উপায়ে অবলম্বন করলে খুব তাড়াতাড়ি আশা করা যায় আপনার ছাদের ঘর শীতল হবে।

টপ ফ্লোর ঠান্ডা রাখার উপায়

যারা নিচ ফ্লোরে থাকে তাদের ঘর অনেক বেশি ঠান্ডা থাকে আর যারা টপ ফ্লোরে থাকে তাদের ঘর তত বেশি গরম থাকে। টপ ফ্লোর ঠান্ডা করার কিছু উপায় রয়েছে। ছাদে সুন্দর বাগান তৈরি করার চেষ্টা করুন তাহলে আপনার টপ ফ্লোর অনেকটা শীতল থাকবে কারণ বাগান সূর্যের আলো থেকে আপনার ফ্লোরকে রক্ষা করবে যার কারণে গরম অনুভব হবে।

এক ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে যেগুলো ছাদের উপরে রঙের পরিবর্তে ব্যবহার করলে গরমের তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যায়। আপনার যদি সম্ভব হয় তাহলে আপনি সাদ সবসময় ভিজিয়ে রাখবেন তাহলে আপনার টপ ফ্লোর ঠান্ডা থাকবে। রুমের জানলা খুলে রাখতে হবে যাতে করে বাইরে থেকে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।

রুমে এলইডি বাল্ব ব্যবহার করবেন এছাড়া অন্য কোন ব্যবহার করবেন না। এলইডি রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। ঘরের ফ্যান ব্যবহার করতে হবে যদি আপনি ফ্যান ব্যাবহার করেন আপনার ঘর অনেকে ঠান্ডা থাকবে। আপনার সামর্থ্য থাকলে চেষ্টা করবেন এয়ার কুলার কিনে ব্যবহার করার। এয়ারকুলার আপনার রুমকে ঠান্ডা রাখতে অনেকটাই সাহায্য করবে।


বিছানায় সুতির চাদর ব্যবহার করবেন তাহলে আপনার বিছানা কম গরম হবে। টেবিল ফ্যান ব্যবহার করার সময় তার সামনে কিছু পরিমাণ বরফের টুকরো রেখে দিবেন এতে করে বাতাসে বরফের টুকরার মাধ্যমে ঘরকে ঠান্ডা করতে পারবে। রুমে ল্যাপটপ কম্পিউটার এসব অন করে রাখবেন না। ফোনে চার্জ দিতে যতটুকু সময় প্রয়োজন সেই সময়টুকুই সুইচ অন রাখবেন এরপরে অফ করে দেবেন।

এসব উপায় অবলম্বন করলে আপনি টপ ফ্লোরের গরম কমাতে পারবেন। টপ ফ্লোর সবচেয়ে বেশি গরম থাকে এজন্য চেষ্টা করবেন এই উপায় গুলো অবলম্বন করার।

শেষ কথা

গরমকালে ঘর গরম থাকবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু অনেক সময় অতিরিক্ত মাত্রায় গরম হয়ে যায় যার কারণে ছোট বাচ্চা বা বৃদ্ধ লোকদের থাকা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। তাই যে সব উপায়ে রয়েছে ঘর ঠান্ডা করার সেই উপায়গুলো অবলম্বন করবেন তাহলে ছোট বাচ্চা বৃদ্ধ মানুষ এবং সুস্থ সবল মানুষেরাও ভালো থাকবে।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও গরম কালে তাদের নিজেদের ঘর ঠান্ডা রাখতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url