পুকুরের পানি সবুজ হয় কেন- পুকুরের পানিতে আয়রন দূর করার উপায়

প্রিয় পাঠক আপনি কি পুকুরের পানি সবুজ হয় কেন সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে পুকুরের পানি সবুজ হয় কেন এবং পুকুরের পানি সবুজ করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন তাহলে পুকুরের পানি সবুজ সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন।
পুকুরের পানি সবুজ হয় কেন
এছাড়াও আপনি এই পোস্টের মধ্যে পাবেন পুকুরের পানি কালো হয় কেন এবং পুকুরের পানিতে আয়রন এই সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

গ্রামাঞ্চলের দিকে নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক কাজের জন্য পুকুর ব্যবহার হয়। বিশেষ করে গোসল করা কাপড়চোপড় ধোয়া থালাবাসন মাজা এসব কাজের জন্য পুকুরের গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রাম বাংলার অনেকগুলো ঐতিহ্য মধ্যে একটি ঐতিহ্য হচ্ছে পুকুর। পুকুরের পানি যদি পরিষ্কার না থাকে তাহলে সেই পুকুরে কোন কাজ করাই সম্ভব হয়ে উঠবে না।


পুকুরের পানিকে সব সময় সবুজ রাখার মাধ্যমে পানিকে পরিষ্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক সময় অনেক কারণে পুকুরের পানি কালো হয়ে যায়।

পুকুরের পানি সবুজ করার উপায়

পানিকে সবুজ রাখা অনেক জরুরী। যখন পানি ঠিকমতো সবুজ থাকবে না তখন সে পানি ব্যবহারের যোগ্য হিসেবে ধরা হয় না। সবুজ পানিতে মাছ ভালো হয় এবং সবুজ প্রাণের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষ নিজের প্রয়োজনীয় কাজ পূরণ কর। অনেক সময় অনেক কারণে পানির রং সবুজ থেকে ভিন্ন কালার হয়ে যায় যার ফলে পুকুরের মালিক চিন্তায় পড়ে যায়।

পুকুরের পানি সবুজ করার কয়েকটি উপায় রয়েছে। আপনি সেই উপায়গুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই আপনার পুকুরের পানি সবুজ করে ফেলতে পারবেন। গোবর,খোল এবং ডিআইপি এই তিনটি উপাদান একসাথে করে ভালোভাবে মিক্স করে নিবেন। পুকুরের জমির সীমানার উপরে নির্ভর করে এই তিনটি উপাদানের পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়।

এক বিঘা পুকুরের জন্য ১০ কেজি গোবর। তিন কেজি এবং দুই কেজি জিআইপি নিবেন। প্রথমে খোল ৭ থেকে ৮ দিন ভালোভাবে পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। এরপর খেয়াল করবেন খোলের মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবে খাবার তৈরি হয়ে গেছে। তখনই তিনটি উপাদান একসাথে পানির সাহায্যে ভালোভাবে মিক্স করে নিবেন।

এই তিনটি উপাদান একসাথে মিক্স করে একদিন রেখে দিবেন। এরপরে পুকুরে ছিটিয়ে দিবেন। আপনি আরেক পদ্ধতিতেও পুকুরের পানি সবুজ করতে পারবেন। এজন্য আপনার প্রয়োজন হবে গোবর সার প্রতি শতাংশের জন্য ছয় থেকে সাত কেজি। হাঁস মুরগির বিষ্ঠা প্রতি শতাংশের জন্য এক থেকে দুই কেজি এবং কম্পোস্ট প্রতি শতাংশের জন্য ৮থেকে ১০ কেজি।

ইউরিয়া সার প্রতি শতাংশের জন্য ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম এবং টিএসপি প্রতি শতাংশের জন্য ৫০ থেকে ৭৫ গ্রাম। এ পাঁচটি উপাদান একসাথে করে প্রথমে পানি দিয়ে মিক্স করে নিবেন। এরপর যে সময় ঠিকভাবে রোদ পুকুরে পড়বে তখন পুকুরে চারিপাশে এই মিকচার ছিটিয়ে দিবেন। আপনি চাইলে পানি দিয়ে মিক্স না করেও শুধু সবগুলো সার একসাথে করেও ছিটিয়ে দিতে পারেন।

তবে পানি দিয়ে মিক্স করে চিতালে বেশি উপকৃত হওয়া যায়। যে সময় পুকুরে পানি থাকবে সেই সময় আপনি এ পদ্ধতিতে ব্যবহার করবেন। পুকুর শুকনো থাকা অবস্থায় এ পদ্ধতি কার্যকারী না। পুকুর শুকনো থাকা অবস্থায় শুধু জৈব যেসব স্যার রয়েছে অর্থাৎ গোবর সার ও কম্পোস্ট এই তিনটি উপাদান একসাথে করে শুকনো পুকুরে ব্যবহার করতে পারেন।

শুকনো পুকুরে ছিটানোর ক্ষেত্রে পানি দিয়ে মিক্স করবেন না। শুধু সার একসাথে করে ছিটিয়ে দেবেন। আপনি এই দুই পদ্ধতির মধ্যে যে কোন এক পদ্ধতির অবলম্বন করলে আপনার পুকুরের পানি মাছ চাষের জন্য সবুজ করে তুলতে পারবেন। অবশ্যই পরিমাণ মতো সব উপাদান নিবেন। কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে নিবেন না।

পুকুরের পানি সবুজ হয় কেন

পুকুরের মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে পুকুরে তিন স্তরের পানির থাকে। এক স্তর হচ্ছে পানি সম্পূর্ণ সবুজ অবস্থায় থাকে এবং দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে পানি লালচে অবস্থায় থাকে। লালচে অবস্থা ওই সময়ে থাকে যখন পুকুরে সূর্যের আলো পড়ে। সূর্যের আলো কমে যাওয়ার সাথে সাথে পুকুর থেকে লালচে ভাব দূর হয়ে যায় এবং

তৃতীয় স্তর হচ্ছে আয়রন জনিত স্তর। এ অবস্থায় পুকুরের পানি সর্বদা লালচে বা বাদামি থাকে। কোন পুকুরে মাছ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হচ্ছে সবুজ স্তরের পানি। সবুজ স্তরের পানি বলতে মধ্যম সবুজ হতে হবে। যখন তা গাঢ় সবুজে পরিণত হবে তখন পুকুরের মাছের জন্য তা ক্ষতিকর হবে। প্রাকৃতিক খাদ্যের কারণে পুকুরের পানি সবুজ দেখায়।

যখন তা দূষিত হয়ে যায় তখন তা গাঢ় সবুজ আকার ধারণ করে। যখন আপনি আপনার পুকুরে অতিরিক্ত মাত্রায় খাদ্য বা সার প্রয়োগ করতে থাকবেন তখন তার সবুজ আকার ধারণ করে মোটা স্তরে পরিণত হবে। এই অবস্থা পুকুরের পানি এবং মাছের জন্য ক্ষতিকর। যখন পুকুরে অতিরিক্ত মাত্রায় শ্যাওলা হয়ে যায় তখনও পানির রং গাড়ো সবুজ হতে শুরু করে।


এজন্য কখনোই পুকুরে শ্যাওলা রাখা যাবে । যখন পুকুরে অতিরিক্ত মাত্রায় শ্যাওলার কারণে পানি গাঢ় সবুজ হয়ে যাবে তখন রাত্রে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসবে যার কারণে শেষ রাতের দিকে মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। এভাবে মাছ অনেকক্ষণ পানিতে ভেসে থাকলে মাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এজন্য অবশ্যই আপনার পুকুরকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যাতে পুকুরে ঠিকভাবে অক্সিজেন থাকে। যখনই দেখবেন আপনার পুকুরের পানি গাঢ় সবুজ হয়ে গেছে তখন আপনি সে গাঢ় সবুজ ভাব দূর করতে ব্যবস্থা নিবেন তাহলে আপনার পুকুর এবং পুকুরের মাছ নিরাপদে থাকবে।

পুকুরের পানি কালো হয় কেন

আপনি খেয়াল করলে দেখবেন আপনার আশেপাশের অনেক পুকুরের পানির কালো হয়ে গেছে। কালো পানি মাছ চাষের জন্য অথবা মানুষের ব্যবহারের জন্য কোন কারণেই উপযুক্ত নয়। এসব পানি অতিরিক্ত মাত্রায় ঘোলাতে এবং ময়লাযুক্ত থাকার কারণে কালো হয়ে যায়। আপনি যদি আপনার পুকুরের দীর্ঘ সময় ধরে যত্ন না নেন

এবং একাধারে ফেলে রাখেন তাহলে সে পুকুরের পানি আস্তে আস্তে দূষিত হয়ে কালো হয়ে যাবে। যদি পুকুরের আশেপাশে কোন গাছ থাকে তাহলে সেই গাছে থেকে পাতা পানিতে পড়ে পানি কালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। ইউক্লিপটাস নামক একটি গাছ রয়েছে এ গাছের পাতা যদি পানিতে পড়ে তাহলে পানি একেবারে কালো হয়ে যায়।

যখন পুকুরে দীর্ঘ সময় ধরে কালো পানি থাকে তখন তা আস্তে আস্তে বন্ধ হতে শুরু করে এই পানি আরো বেশি ক্ষতিকর। যেসব পুকুরে ঠিকভাবে রোদের আলো পড়ে না সেসব পুকুরের পানীয় আস্তে আস্তে কালো হতে থাকে। পুকুরের পানি কালো হলে সেই পানি থেকে কালো ভাব দূর করার একটি সহজ উপায় রয়েছে সে উপায়টি হচ্ছে

যে কোন কলার গাছ এক হাত সমপরিমাণ খন্ড খন্ড করে পুকুরের ছিটিয়ে রাখবেন। দেখবেন সেই কলা গাছগুলো পুকুর থেকে কালো ভাব বা ময়লা আবর্জনার যে কালো রস রয়েছে সেগুলো চুষে নেবে। এভাবে কিছুদিন এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনার পুকুর থেকে কালচে ভাব একেবারে চলে যাবে।

পুকুরের পানিতে আয়রন

পুকুরের পানিতে আয়রন এটি একটি পরিচিত সমস্যা। পুকুরের পানিতে আয়রন হলে পানি লালচে বা বাদামি কালারের হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে পুকুরের পানিতে আয়রন থাকা পুকুরের পানি এবং মাছ উভয়ের জন্যই তা ক্ষতিকর। যখন আপনি আপনার পুকুরের পানিতে আয়রন লক্ষ্য করবেন তখন আপনাকে চেষ্টা করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব হয়

পুকুরের পানি থেকে আয়রন দূর করার। যেসব পুকুরে মাসে একবার বা ঘন ঘন লবণ এবং চুন দেয়া হয় সেইসব পুকুরের পানিতে আয়রন হওয়া সম্ভব না একেবারেই কম। পুকুরের পানি থেকে আয়রন দূর করতে প্রতি শতাংশের জন্য ২০০ গ্রাম চুন এবং ২০০গ্রাম লবণের প্রয়োজন হয়। পানিতে আয়রনের সমস্যা হলে মাছের বৃদ্ধি অনেকটা কমে যায় এবং মাছ ঠিকভাবে উৎপাদন হতে পারে না।

এক ধরনের লালচে ভাব থাকে যা সূর্যের আলোর কারণে পুকুরে প্রকাশিত হয়। যখন সূর্যের আলো ডুবে যায় তখন সে লালচে ভাব দূর হয়ে যায় কিন্তু আয়রনের লালচে ভাব সূর্যের আলো হোক বা আলো না হোক উভয় অবস্থাতেই তা রয়ে যায়। ঘাস আছে এমন নালা দিয়ে পানি সরবরাহ করে এক পুকুর থেকে আরেক পুকুরে দিলে আয়রনের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়।


বাশ বা পাটের রশি দিয়ে পুকুরের চারিকণা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিলে আয়রন তুলে ফেলা সম্ভব। পুকুরের প্রতি শতাংশের জন্য পঞ্চাশ গ্রাম করে ফিটকিরি ব্যবহার করলেও আয়রন দূর করা সম্ভব হয়। আপনি যখন পুকুরের শুরুতে আয়রন হতে দেখবেন তখন থেকে সতর্ক হবেন এবং চেষ্টা করবেন কখনো পুকুরকে ময়লা করে না রাখার।

আপনি যত পুকুর ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভর্তি করে রাখবেন আপনার পুকুর আস্তে আস্তে তত নষ্ট হতে থাকবে এজন্য আয়রনের ভাব দেখা দিলেই আয়রন দূর করার ব্যবস্থা করবেন তাহলে আপনার পুকুর একেবারে নিরাপদ থাকবে।

শেষ কথা

একটি পুকুরকে সুন্দর রাখতে হলে অবশ্যই পুকুরে ঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। যখন আপনি পুকুরের দিকে ঠিকভাবে নজর দিবেন না এবং পরিচর্যা করবেন না তখন তা আস্তে আস্তে ময়লা হতে থাকবে এবং সেখান থেকে পুকুরের পানি গাঢ় সবুজ ও আয়রন ভর্তি হয়ে যাবে। তাই আপনাকে অবশ্যই আপনার পুকুর ভালো রাখার জন্য পরিচর্যা করতে হবে।

আমার এই পোস্টটি ভাল লাগলে আপনি আপনার সেই সব বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন যারা পুকুর চাষ করে যাতে করে তারা সবকিছু জেনে উপকৃত হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url