সব মাছ ধরার চার বানানোর পদ্ধতি এবং ওষুধ- নদীতে মাছ ধরার টোপ

প্রিয় পাঠক আপনি কি মাছ ধরার চার বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে মাছ ধরার চার বানানোর পদ্ধতি এবং বরশি দিয়ে মাছ ধরার খাদ্য ও রুই মাছের চার বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব।
মাছ ধরার চার বানানোর পদ্ধতি
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন রুই মাছ ধরার ওষুধ এবং নদীতে মাছ ধরার টোপ,সব মাছের চার ও মাছ ধরার ঔষধ দাম - মাছ ধরার মেডিসিন সম্পর্কে তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোষ্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

আমরা শখের বশে অথবা অনেক অনুষ্ঠানের জন্য পুকুরে বা নদীতে মাছ ধরি। এমন কিছু খাবার থাকে যেগুলো মাছের সামনে দিলে মাছ খুব সহজেই ধরা যায়। আপনি যদি মাছ ধরার চার বাদে অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করে মাছ ধরতে চান তাহলে আপনার সময় বেশি লাগবে। বিশেষ করে নদীতে মাছ ধরার জন্য অবশ্যই চারের প্রয়োজন হয়।


চার এবং ওষুধ মাছ ধরা অনেকটাই সহজ করে দেয়।

মাছ ধরার চার বানানোর পদ্ধতি

আপনি যদি মাছ ধরার সময় চার ব্যাবহার করেন তাহলে আপনি অনেক বেশি মাছ ধরতে পারবেন এবং মাছ ধরার জন্য সময় কম লাগবে। চার এমন একটি মাছের খাবার যা মাছ অনেক বেশি পছন্দ করে। বিভিন্ন রকম উপাদান দিয়ে এই চার বানানো হয় যার ফলে মাছ এই চারের প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট। মাছ ধরার চার বানানোর জন্য যেসব জিনিসের প্রয়োজন হয়
  • পোলাও চালের গুঁড়ো
  • একাঙ্গী
  • খোল
  • তেল
  • মিষ্টির গাদ। মিষ্টির গান বলা হয় মিষ্টি বানানোর পরে যে ঝোল থেকে যায় দোকানদাররা সে ঝোল অনেকদিন ধরে রেখে দেয় পরবর্তীতে তারা সেই ঝোল বিক্রি করে রেখে দেয়। সেই ঝোলকে মিষ্টির গান বলা হয়।
  • মেথির গুঁড়ো
  • বুসকি দানা
  • ঘরবুজ
  • শিশুর তেল
এসবগুলো উপাদান একসাথে করে মাখিয়ে নিলে মাছ মারার জন্য উপযুক্ত চার হয়ে যাবে। আরও একটি পদ্ধতি রয়েছে আপনি চাইলে সে পদ্ধতিতেও চার বানাতে পারবেন।
  • খোল ১ কেজি
  • একাঙ্গী ৩০০ গ্রাম
  • ঘোরবন্ধ ২০০ গ্রাম
  • তাম্বর ২৫০ গ্রাম
  • যীরখারা ১৫০ গ্রাম
  • জ্টামানসী ৫০ গ্রাম
  • আউফল ৩০০ গ্রাম
  • বুসকি দানা ১০০ গ্রাম
  • মাখন এর গাদ ৭৫০ গ্রাম
  • স্টার ফল ৭৫ গ্রাম
  • মিষ্টির গাদ ৫০০ গ্রাম
  • গাওয়া ঘি ৩৫০ গ্রাম
  • গমের ভুসি 250 গ্রাম
  • জয়ত্রী ২৫০ গ্রাম
  • জায়ফল এক পিস
এসবগুলো উপাদান প্রথমে গুঁড়ো করে নিবেন এরপরে একসাথে মিশাবেন তাহলে মাছের চার তৈরি হয়ে যাবে। এই চার আপনি কাচের বয়ানে রেখে ভালোভাবে ঢাকনাতে রোদ্দুরে রেখে দেবেন। আরো একটি পদ্ধতির রয়েছে সে পদ্ধতিতেও আপনি চার বানাতে পারবেন।
  • খাঁটি সরিষার খোল ১ কেজি
  • মদের মিয়া ৭০০ গ্রাম
  • একাঙ্গী ২৫০ গ্রাম
  • জয়ত্রী ২৫০ গ্রাম
  • ঘরবুজ ২০০ গ্রাম
  • মুরগির নাড়ি ভুঁড়ি ছোট ছোট করে কেটে
  • পচা নারিকেল দুইটি
  • পাউরুটি অথবা কেক
এসব উপাদান গুলো একসাথে মিশালে আপনার জন্য মাছ ধরার চার তৈরি হয়ে যাবে। এই তিন পদ্ধতির যেকোন এক পদ্ধতিতে চার বানালে আপনি মাছ ধরার সময় অনেক বেশি মাছ ধরতে পারবেন। এ পদ্ধতি গুলোতে চার বাড়ালে চার অনেক সুস্বাদু হয় যার কারণে মাছ খুব দ্রুত খায়।

বরশি দিয়ে মাছ ধরার খাদ্য

বরশি দিয়ে মাছ ধরার জন্য অবশ্যই খাদ্যকে সুন্দরভাবে তৈরি করতে হবে। যদি মাছ ধরার খাবার সঠিক পদ্ধতি তৈরি করতে না পারেন তাহলে আপনি কোনভাবেই বরশিতে মাছ ধরতে পারবেন না। বরশিতে মাছ ধরার খাবার বানানোর পদ্ধতি হচ্ছে প্রথমে পাউরুটি নিতে হবে। স্লাইস পাউরুটি হলে সবচেয়ে ভালো হয়।

এরপর পাউরুটি থেকে লাল যে সব অংশ রয়েছে সেগুলোকে হাতের সাহায্যে আলাদা করে ফেলতে হবে। মাছের খাবার বানানোর জন্য পাউরুটির শুধু সাদা অংশই ব্যবহার করতে হবে। লাল অংশ কোনোভাবেই রাখা যাবে না। লাল অংশ পাউরুটি থেকে আলাদা করা হয়ে গেলে সাদা অংশ ভালোভাবে ঝুড়ি করে নেবে অর্থাৎ সেগুলোকে একেবারে মিহি করে আটার মত করে নিতে হবে।

এরপর সেখানে সামান্য পরিমাণ ঘি মিশাতে হবে। ঘি মিশানোর কারণে খাবার থেকে ঘ্রাণ অনেক ভালো হয় এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু হবে যার কারণে মাছ খুব তাড়াতাড়ি খাবে। ঘি মিশানো হয়ে গেলে সেখানে সামান্য পরিমাণ পানির সাহায্যে তা আস্তে আস্তে মাখাবেন। পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো একসাথে বেশি পানি দিবে না।


এতে করে খাদ্য পারফেক্ট তৈরি হবে না। আস্তে আস্তে পানি দিয়ে সেটাকে খামিরার মত তৈরি করে নিতে হবে। খাদ্য বানানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে খাদ্যের মধ্যে কোন রকমের গুটি গুটি ভাব না থাকে। খাদ্য যেন একেবারে মিহি এবং মসৃণ হয় এই দিকে নজর রাখা অবশ্যই জরুরী। এভাবে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলে বরশি দিয়ে মাছ ধরার খাদ্য তৈরি হয়ে যাবে।

আপনি চাইলে এর সাথে পিপড়ার ডিমও ব্যবহার করতে পারেন। পিঁপড়ার ডিম প্রত্যেক মাছের অনেক প্রিয়। আপনি এই পদ্ধতিতে খাবার বানালে খুব সহজেই বরশি দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন।

রুই মাছের চার বানানোর পদ্ধতি

রুই মাছ বাঙালির অনেক প্রিয়। মাছ ধরার সময়ের অধিকাংশ ক্ষেত্রে রুই মাছ ধরা হয়। রুই মাছ ধরা জন্য চার বানানোর পদ্ধতি রয়েছে। আপনি সেই পদ্ধতিতে চার বানালে রুই মাছ অনেক ভাল খাবে এবং আপনি খুব সহজে ধরতে পারবেন। প্রথমে আপনাকে গমের ভুষি নিতে হবে অর্থাৎ যেই ভুসি গরু খায়। এটাকে অনেকে গমের সাল বলে।

এরপর আপনাকে নিতে হবে খোল। প্রথমে খোল চুলায় হালকা আছে ভেজে নিবেন। এরপরে হাতের সাহায্যে গুঁড়ো করে গমের ভুষির সাথে মিশিয়ে দিবেন। একাঙ্গী গুঁড়ো করে সেগুলোর সাথে মিশিয়ে দিবেন। খোল এবং ভাত একসাথে করে দুই দিন কোন পাত্রে খোল এবং ভাত রেখে দিবে যাতে সেটা নষ্ট হয়ে সেখান থেকে গন্ধ বের হয়।

দুই দিন হয়ে গেলে সেগুলো নিয়ে একসাথে মিক্স করবেন। এরপর চিনি অথবা মিষ্টির ঝোল যেকোনো একটি সেগুলোর সাথে মিশিয়ে দিবেন। এরপর পোলায় চাউলের গুঁড়ো সেগুলোর সাথে মিশাতে হবে। সবগুলো উপাদান একসাথে ভালোভাবে মেশালেই রুই মাছ ধরার চার তৈরি হয়ে যাবে। এ চারটি অনেক বেশি দুর্গন্ধ হয় যা মাছের অনেক বেশি পছন্দের।

এজন্য আপনি যদি রুই মাছ ধরার চিন্তা করেন তাহলে এরকম ভাবে চার বানিয়ে নিবেন। রুই মাছ ধরার টোপ বানানোর নিয়ম হচ্ছে পাউরুটি প্রথমে ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিবেন এরপর সেখানে পিপড়ার ডিম মিশাবেন এবং পোলাও চালের গুঁড়ো ও বিস্কিটের গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে পানির সাহায্যে ভালোভাবে কিছুক্ষণ মাখিয়ে নিলেই রুই মাছ ধরার টোপ তৈরি হয়ে যাবে।

এই দুইটি জিনিস বানালে আপনি খুব তাড়াতাড়ি অনেক বেশি রুই মাছ ধরতে পারবেন।

রুই মাছ ধরার ঔষধ

রুই মাছ ধরার জন্য আপনি চারের পাশাপাশি ওষুধও ব্যবহার করতে পারেন। ওষুধ ব্যবহার করেও রুই মাছ ধরা সম্ভব। এ ওষুধগুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে যেগুলো মাছ খেতে আগ্রহী হয়।
  • Fish Banana
  • Big Fish
  • Fishing Powder
এই তিনটির মধ্যে যে কোন একটি ওষুধ ব্যবহার করলে আপনি খুব সহজে রুই মাছ ধরতে পারবেন। বড়শিতে টোপ দেওয়ার সময় টোপের সাথে এই ওষুধগুলো মিক্স করে দেবেন। এ ওষুধগুলো অনেক বেশি সুঘ্রাণযুক্ত যার কারণে মাছ খুব তাড়াতাড়ি খায়।

নদীতে মাছ ধরার টোপ

অনেক সময় শখের বসে নদীতে মাছ মারতে যাওয়া হয়। নদীতে মাছ ধরা অনেক কঠিন। বিষয় নদীতে মাছ ধরার জন্য যদি টোপ সঠিকভাবে না বানান তাহলে মাছ কোনভাবেই খাবে না। নদীতে মাছ ধরার জন্য টোপ বানানোর পদ্ধতি হচ্ছে সরিষার খোল প্রথমে ভালোভাবে চুলায় ভেজে নিতে হবে। এরপর একেবারে মিহি করে পিষে নিতে হবে।

তারপরে ভাত নিতে হবে। ভাত নিয়ে সে ভাতকে ভালোভাবে ভর্তা করে নিতে হবে। এরপর গুড়ো খোল এবং ভাত একসাথে ভালোভাবে মাখিয়ে নিলে নদীতে মাছ ধরার টোপ হয়ে যাবে। অনেক বছর আগে থেকে এ পদ্ধতিতে মানুষ টোব্বা নিয়ে নদীতে মাছ ধরে আসছে। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে আপনি শুধু দেশি চিংড়ি ব্যবহার করেও নদী থেকে মাছ ধরতে পারবেন।

যেসব দেশি চিংড়ি রয়েছে সেগুলো ছোট ছোট করে টোপা করে কেটে নিবেন। বরশিতে আপনি সেই চিংড়ি লাগিয়ে নদীতে ফেলে মাছ ধরতে পারবেন। আরো একটি পদ্ধতি রয়েছে আপনি চাইলে সে পদ্ধতিতেও নদীতে মাছ ধরার জন্য টোপ বানাতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন পড়বে পাউরুটি এবং পিঁপড়ার ডিম ও মাছের ডুবানো ফিড।

প্রথমে পাউরুটি ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিবেন। এরপর সেগুলোর সাথে পিপড়ার ডিম দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিবেন। এরপর সেখানে মাছের ফিড দিবেন। তিনটে জিনিস একত্র করে কিছুক্ষণ ভালোভাবে চটকিয়ে মাখিয়ে নিবেন। এরপর কিছু সময় রেখে দিলেই ফিড আস্তে আস্তে নরম হতে থাকবে। এই টোপ অনেক আঠালো হয়।


নদীতে অনেক স্রোত থাকে যার জন্য এই টোপ ভালো কাজে দিবে। এই তিন পদ্ধতির যেকোনো এক পদ্ধতিতে টোপ বানালে আপনি নদী থেকে মাছ ধরতে পারবেন। নদীতে মাছ ধরার জন্য সবচেয়ে জরুরী যে বিষয়টা হচ্ছে ধৈর্যশীল হওয়া। ধৈর্যশীল না হলে আপনি কখনোই নদীতে মাছ মারতে পারবেন না এবং দ্বিতীয়তে যে বিষয়ে তা হচ্ছে ভালোভাবে টপ বানানো।

আমি উপরে যে তিন পদ্ধতি বললাম সে পদ্ধতি গুলোর মধ্যে আপনি যদি একটি পদ্ধতিতে বানান তাহলে আপনার টোপ শতভাগ ভালো হবে বলে আশা করা যায়।

মাছ ধরার ঔষধ দাম - মাছ ধরার মেডিসিন

ওষুধ ব্যবহার করেও মাছ ধরা যায়। কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো মাছ ধরার জন্য তৈরি করা হয় এ ওষুধগুলো এতটাই মিষ্টি ঘ্রাণযুক্ত যে মাছ ঘ্রান পেলে খুব দ্রুত ছুটে আসে।
  • Fish Tanger
  • Fish Banana
  • Big Fish
  • Fish Powder
  • DMPT
  • Fishing Trakle and Baits
এই ওষুধগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি ওষুধ ব্যবহার করলে আপনি খুব সহজে মাছ ধরতে পারবেন। এই ওষুধগুলো হয়তো চারার সাথে অথবা টোপের সাথে পরিমাণ মতো মিক্স করে দিলেই অথবা স্প্রে করে দিলেই কাজ হয়ে যাবে। দেখবেন আপনি খুব সহজে মাছ শিকার করতে পারছেন।

শেষ কথা

মাছ মারা একটি শখের এবং আনন্দের বিষয়। মাছ মারার জন্য আপনাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। কখনোই তাড়াহুড়া করে মাছ ধরা যায় না। মাছ ধরার জন্য অবশ্যই আপনি চার এবং টপ ভালোভাবে বানাবেন তাহলে আপনি খুব সহজে মাছ ধরতে পারবেন।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও কখনো মাছ মারার ইচ্ছা করলে টোপ এবং চারা বানানোর পদ্ধতি জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url