যেভাবে শীতকালে ও গরমকালে নবজাতক শিশুর যত্ন নিতে হয়

প্রিয় পাঠক আপনি কি শিশুর যত্ন কিভাবে নিতে হয় সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোস্টের মধ্যে শিশুর যত্ন কিভাবে নিতে হয় ও শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নিতে হয় এবং শিশুর প্রত্যেকটি বিষয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন আশা করি আপনি সবকিছু জানতে পারবেন।
শিশুর যত্ন কিভাবে নিতে হয়
এছাড়াও আপনি এ পোস্টের মধ্যে পাবেন শিশু কিভাবে মেধাবী হবে, শিশুদের খাওয়ানোর কৌশল, শীতে শিশুর প্রসাধনী এসব সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

একটি শিশু ১০ মাস ১০ দিন পরে পৃথিবীতে জন্ম নেয়। সে যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন তাকে এমন ভাবে রাখা হয় যেন তার কোন অযত্ন বা ক্ষতি না হয়। যখন সে পৃথিবীতে আসে তখন সে একটি নতুন পরিবেশে, আবহাওয়াতে আসে তখন তার যত্ন খুব ভালোভাবে নিয়ে নেওয়া জরুরি। তাছাড়া তার বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পার। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ত্বক নষ্ট হয়ে যাবে কারণ তাদের ত্বক একেবারে নরম ও পাতলা হয়ে থাকে।


এজন্য আপনার জানা জরুরী যে ছোট বাচ্চার যত্ন কিভাবে নিতে হয় তাছাড়া ঠিক মতো তাদের যত্ন না নিতে পারলে তাদের ত্বক নষ্ট হবে এবং তারা বিভিন্ন রকমের অসুস্থ হতে পারে।

শিশুর যত্ন কিভাবে নিতে হয়

আপনি যখন একটি শিশুকে জন্ম দিবেন তখন আপনার জন্য জরুরী যে আপনি ঠিকমতো তার যত্ন নিবেন। যদি আপনি ঠিক ভাবে তার যত না নিতে পারেন সেক্ষেত্রে শিশু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • শিশুকে যে পোশাক পরাবেন তখন তাতে সবসময় কোমল জাতীয় পোশাক পরাবেন। তবে সতর্ক থাকবেন সেটা যেন উলের না হয় কারণ উলের লোমে এলার্জি থাকে। তাকে এমন ধরনের পোশাক পরাবেন যেন সেটা তার শরীরের কোনরকম শক্তভাবে আঘাত না করে।
  • আপনি যখন তাকে গোসল করাবেন তাকে ঠান্ডা বা গরম পানিতে গোসল করে না বরং কুসুম কুসুম যে পানি রয়েছে সে পানিতে গোসল করাবেন। এতে করে তার চামড়া সহজে নিতে পারবে। তাছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করালে জ্বর, সর্দি আর গরম পানিতে গোসল করে ত্বকের সমস্যা হতে পারে।
  • আপনি সব সময় চেষ্টা করবেন তাকে উষ্ণ রাখার কারণ তারা গর্ভে থাকাকালীন উষ্ণ অবস্থায় থাকে। পৃথিবীতে আসার পর উষ্ণ পরিবেশ না পেলে তাদের সমস্যা হয়।
  • তাকে প্রতি ঘন্টায় বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াবেন। তার আগে দোকান থেকে কেনা দুধ খাওয়াবেন না। এতে করে শিশুর শরীরের জন্য ক্ষতিকর কারণ হবে।
  • প্রতিদিন নবজাত শিশুকে 20 থেকে 30 মিনিট সকালের রোদে রাখবেন। কারণ শিশুদের জন্মের পর সবারই জন্ডিস কমবেশি হয়ে থাকে। যেটা ২-৩ সপ্তাহ পরে এমনিতেই চলে যায় চলে। জন্ডিস ঠিক হবার পিছনের কারণ হচ্ছে তাকে প্রতিদিন রোদ খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চা হবার পরের দিন চেষ্টা করবেন তার শরীর কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছায় দেওয়ার এতে করে তার ত্বকের জন্য খুব উপকারী হবে।
  • শিশুর বয়স দেড় মাস হলে তাকে নিয়মিত টিকা দেয়া শুরু করবেন। তাকে দশটি টিকা দিতে হবে। টিকা অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
  • শিশুর ত্বক এবং মানুষের ত্বক এমনিতে অনেক সফট হয়ে থাকে। শিশুদের ত্বক আরো বেশি সফট হয়। আপনি যদি ঠিকমতো তাদের ত্বকের যত্ন না নেন সে ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে।

শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন

শিশুদের যত্ন কিভাবে নিতে হয় এটা জানার পাশাপাশি তাদের ত্বকের যত্ন কিভাবে নিতে হয় এটাও জানা জরুরী-
  • ঘন ঘন তেল এবং লোশন ব্যবহার করাবেন তাদের ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে লোশন এবং তেল খুব উপযোগী। এজন্য চেষ্টা করবেন অধিকাংশ সময় তাদের মাখিয়ে রাখা।১৫ দিন হবার আগে এগুলো না ব্যবহার করানোই ভালো।
  • তাদের গোসল করানোর সময় সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড়দের সাবান ব্যবহার করা যাবে না। বড়রা ব্যবহার করে এমন সাবান তাদের জন্য ক্ষতিকর। বাজারে শিশুদের জন্য অনেক রকমের সাবান পাওয়া যায় সেগুলো কিনে নিয়ে আসবেন। যদি একবার অ্যালার্জি দেখা দেয় তখন আর সেই সাবান ব্যবহার করবেন না।
  • তাদেরকে যখন পোশাক পরাবেন আরামদায়ক পোশাক পরান এটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য এবং ত্বকের জন্য খুব উপকারী।
  • তাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াবেন।
  • গ্লিসারিন যুক্ত সাবান তাদের জন্য খুব উপকারী।
  • তাদের চোখ নাক পরিষ্কার করে দেওয়ার সময় নরম কাপড় ব্যবহার করবে অথবা তুলা ব্যবহার করবে। এমন কিছু ব্যবহার করবেন না যেটা তাদের ত্বকে আঘাত করতে পারে।
  • তারা হাগু করলে নরম কাপড় পরিষ্কার করে দিয়ে মুছে দিবেন শক্ত কোন কাপড় দিয়ে সে জায়গা মুছে দিবেন না। এতে করে তাদের চামড়া উঠে যেতে পারে।

শিশু কিভাবে মেধাবী হবে

শিশুদের যত্ন এমনভাবে নেওয়া যাতে করে তারা মেধাবী হতে পারে এ বিষয়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া।
  • বাচ্চাদের জন্য প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার রান্না করা।
  • সপ্তাহে মাছ মাংস ডিম খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
  • তাকে বিভিন্ন রকমের ডাল এগুলো খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
  • ছয় মাস পর্যন্ত তাদেরকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াবেন। এতে করে তাদের শরীর এবং মেধা উন্নত হবে।
  • তাদেরকে কখনো জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। না এতে করে তাদের সমস্যা হবে।
  • মিল্কশেক খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। খেজুর,দুধ,বাদাম এগুলো একসাথে করে ব্লেন্ডার করে সেই জুস খাওয়ানোর চেষ্টা করেন।
  • কলা খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম,ফাইবার,ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি থাকে যেটা তাদের ওজন বৃদ্ধি করতে এবং মেধা বিকাশের সাহায্য করবে।

শিশুদের খাওয়ানোর কৌশল

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুকে খাওয়ানোর সময় তারা খেতে চায় না এ ক্ষেত্রে অনেক জোরাজোরি করা হয়।জোরাজোরি করে খাওয়ানো তাদের জন্য ক্ষতিকর। তাদেরকে খাওয়ানোর কিছু পদ্ধতি রয়েছে পদ্ধতিগুলা অবলম্বন করলে খুব সহজে আপনি তাদেরকে খাওয়াতে পারবেন খাওয়াতে পারবেন।
  • তাদেরকে রংবেরঙের খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন এতে করে তারা খাওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে।
  • তাদেরকে অনেক বেশি করে খেলাধুলা করার সুযোগ দিন। বেশি করে খেলাধুলা করলে তাদের ক্ষুদা লাগবে এতে করে তারা নিজেরাই খাবে।
  • বাচ্চাদের খাওয়ানোর সাথে সাথে নিজেরাও খান এতে করে বাচ্চারও খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে।
  • সুস্বাদু খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। খাবার সুস্বাদু হলে তারা আগ্রহ হয়ে খাবে।
  • বাচ্চাদের কখনো এক রকমের খাবার খাওয়াবেন না।প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন রকমের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এতে করে তারা খুব সহজে খাবার খাবে।
  • মাছ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের মাছের আইটেম করে নিতে পারেন এতে করে তাদের অরুচি আসবেনা।
  • শিশুরা যদি ভাত খেতে না চাই সেক্ষেত্রে তাদেরকে ফ্রাইড রাইস বা রুটি খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
  •  বাচ্চাদের খাবার খাওয়ানোর সময় তাদের সাথে গল্প করুন এবং সময় নিয়ে খাওয়ান এতে করে তারা সম্পূর্ণ খাবার খেয়ে নেবে।

শিশুদের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি জানার সাথে সাথে তাদের কোন খাবার কিভাবে খাওয়াতে হয় সে পদ্ধতি জানা জরুরী।

শীতে শিশুর প্রসাধনী

শীত আসার সাথে সাথে শিশুদের অসুস্থতা বেড়ে যায় এজন্য শীত আসার আগেই তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এজন্য এবার শীতে কি কি প্রসাধনে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জানুন-
  • তাদের মাথায় সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করবেন।
  • বেবি লোশন ব্যবহার করাবেন। শীতে শরীর, ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় বেবি লোশন ব্যবহার করার ফলে তাদের শরীরের ত্বক শুষ্ক হবে না।
  • তাদেরকে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানোর চেষ্টা করুন যাতে করে যাতে করে শরীরে ময়লা জমে থাকতে না পারে। ময়লা জমে থাকার কারণে চুলকানি হতে পারে।
  • শীতকালে বাচ্চাদেরকে প্রতিদিন গোসল করাবেন না এতে করে তাদের অসুস্থ হতে পারে। একদিন পরপর গোসল করার চেষ্টা করবেন।
  • প্রতিদিন শীতের সকালে রোদ খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন এতে করে তারা সুরক্ষিত থাকবে।
  • আপনি তাদেরকে সবসময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন তবে রাতে শোয়ানোর আগে হাত পায়ের মোজা খুলে দেবেন তাছাড়া অতিরিক্ত গরম লাগার ফলে অনেক ক্ষতি হতে পারে।
  • শীতের সকালে খুব তাড়াতাড়ি তাদেরকে বের করবেন না এত করে ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

শেষ কথা

শিশুরা অনেক কোমল হয় এজন্য তাদের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে অনেক গুরুত্বশীল  তাছাড়া তাদের অনেক রকমের সমস্যা হতে পারে। আপনি সবসময় তাদেরকে চোখে চোখে রাখবেন এবং যত্ন নিবেন। আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারা উপকৃত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url