হাত পা জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির উপায়- কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে
প্রিয় পাঠক আপনাকে হাত পা জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির উপায় জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে হাত-পা জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির উপায় এবং হাত-পা জ্বালাপোড়া ঔষধ ও হাত পা জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করব।
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন হাত-পা জ্বালাপোড়া করে কেন এবং কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে ও রসুন এ হাত জ্বললে করণীয় কি সে সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়া পৌষ্টির দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াই হাত পা জ্বলতে থাকে এটি এক ধরনের রোগ। হাত-পা জলার কারণে বিশেষ করে শীতকালে অনেক সমস্যা সম্মুখীন হতে হয় হাত পা চলতে থাকার কারণে হাত পায়ে কোন কিছু দেওয়া যায় না। শীতকালে কম্বলের নিচে হাত পা রাখা অনেক কষ্টকর হয় হাত পা জ্বালাপোড়ার এই রোগটি অনেক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।
হাত পা জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির উপায়
কিছু উপায় রয়েছে সেসব উপায় গুলো অনুসরণ করলে হাত পা জ্বালাপোড়া থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। সে উপায়গুলো অনেক সহজ তাই চলুন এবার আমরা সেই উপায় গুলো জানি-
আরো পড়ুন :: সারা শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার এবং ওষুধ
- হাত-পা জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। একটি মানুষের দিন রাত মিলে তিন লিটার পানি পান করতে হয়। যখন এরচেয়ে কম পান করা হয় তখন শরীরে তাপ প্রদাহ বেড়ে যায় যার কারণে হাত-পা জ্বালাপোড়া করতে থাকে। তাই আপনাকে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- নিয়মিত গোসল করতে হবে। গোসল করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করা যাবে না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে গোসল করে নেওয়া সবচেয়ে ভালো হবে এতে করে রাতে আপনার হাত-পা জ্বালাপোড়া করবে না।
- টক জাতীয় যে ফলগুলো রয়েছে সেই ফলগুলো খেতে হবে। টক ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সেই ফল পানিতে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখবেন। এরপর সেই পানীয় খাবেন এবং টক ফল খাবেন তাহলে উপকৃত বেশি হতে পারবেন।
- প্রতিদিন ৫০ গ্রাম করে আঙ্গুর খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আঙ্গুর খাওয়ার কারণে শরীরের জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি হাত-পা জ্বালাপোড়াও কমে যায়।
- মশ্চারাইজার যে ক্রিমগুলো রয়েছে সেই ক্রিমগুলো ব্যবহার করতে হবে এতে করে ত্বক আদ্র থাকবে। বাহিরে বের হওয়ার পূর্বে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করে নিবেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে রোদে থাকা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
- আপনার যদি ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে তাহলে ডায়াবেটিস কমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে কারণ অনেক সময় রক্তে সুগারের লেভেল বেড়ে যাওয়ার কারণে হাত-পা জ্বালাপোড়া করে।
- হাত-পা জ্বালাপোড়া করার অন্যতম কারণ হচ্ছে মানসিক চাপ এজন্য আপনাকে সবসময় মানসিক চাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সবসময় ফ্রেশ মাইন্ডে থাকতে হবে। কখনোই নিজের উপরে মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।
- মেহেদি পাতার রস অথবা তেলাকুশ পাতার রস হাতে এবং পায়ে মাখতে হবে। এই দুই পাতা রস জ্বালাপোড়া কমাতে অনেক সাহায্য করে।
- সবুজ যেসব শাকসবজি রয়েছে সেই শাকসবজি গুলো প্রতিদিন খেতে হবে।
- সুষম খাবার বেশি বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- আদা চুষে খাওয়ার মাধ্যমেও হাত পা জ্বালাপোড়া দূর করা যায়। যদি সম্ভব হয় সেক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ কাঁচা হলুদ খেতে পারেন অথবা হলুদ হাতে এবং পায়ে ব্যবহার করলেও হাত পা জ্বালাপোড়া কমে।
- পানি এবং আপেল সিডার ভিনেগার একসাথে করে সেখানে হাত-পা চুবিয়ে রাখার মাধ্যমেও জ্বালাপোড়া দূর করা যায়। এ উপায়তে অনেক বেশি কার্যকরী।
এসব উপায় গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি উপায় আর যদি সম্ভব হয় তাহলে সব উপায়গুলো মেনে চললেই আপনার হাত-পা জ্বলা খুব দ্রুত ভালো হয়ে যাবে। হাত-পা জ্বালাপোড়া নিয়ে চিন্তিত না হয়ে এই উপায়গুলো অবলম্বন করুন দেখবেন আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।
হাত পা জ্বালাপোড়া ঔষধ
হাত-পা জ্বালাপোড়া করলে ওষুধ খাওয়ার পূর্বে যেসব উপায়গুলো বলা হলো সে উপায়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন তাহলে আপনার হাত-পা অনেক টা জ্বালাপোড়া কমে যাবে। এই উপায় গুলো মানার পরও যদি আপনার হাত-পা জ্বালা না কমে সেক্ষেত্রে ভিটামিন ক্যাপসুল যেগুলো রয়েছে অর্থাৎ ভিটামিন বি ১২ এবং ভিটামিন বি১ ও ভিটামিন বি৬
এসব ক্যাপসুল খাইলেও হাত-পা জ্বালাপোড়া কমে যায়। অনেক সময় ভিটামিনের অভাবেও শরীরে জ্বালাপোড়া করে এক্ষেত্রে এই ওষুধগুলো খাইলে খুব দ্রুত হাত পা জ্বালা ভালো হয়ে যায়। যদি ভিটামিনের অভাবেও হাত-পা জ্বালাপোড়া না করে তাহলে এই ওষুধগুলো খাইলে আপনার শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।
এরপরও যদি আপনার হাত জ্বালোপোড়া না কমে সেক্ষেত্রে আপনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। অনেক সময় বিভিন্ন রোগের কারণে হাত-পা জ্বালাপোড়া করে তাই আপনার উচিত হবে যদি এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা এবং ডাক্তার যে পরামর্শ দেয় সেই মোতাবেক চলায় তাহলে আপনার হাত পা জ্বালাপোড়া সমস্যা ভালো হয়ে যাবে।
হাত পা জ্বালা পোড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা
আমাদের বাসা বাড়ি এমন কিছু উপাদান থাকে যেগুলোর মাধ্যমে অনেক বেশি উপকৃত হওয়া যায়। তেমনি ভাবে বাসায় এমন কিছু জিনিস রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে হাত-পায়ে জ্বালাপোড়াও দূর করা সম্ভব হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রতিদিন পানি খেতে হবে। পরিমাণ মতো পানি পান করলে শরীরের তাপ প্রদাহ কমে যাবে এবং হাত-পা জ্বালাপোড়া কখনোই করবে না।
আদা এবং কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এগুলো খাওয়ার কারণে হাত পা জ্বালাপোড়া কমতে থাকে। সবুজ যেসব শাকসবজি রয়েছে সেই শাক সবজি গুলো নিয়মিত খেতে হবে। গোসল করার ক্ষেত্রে অবশ্যই গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন না। সবসময় চেষ্টা করবেন ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার।
মশ্চেরাইজার যেসব ক্রিমগুলো রয়েছে সেই ক্রিম গুলা নিয়মিত দুইবার করে ব্যবহার করতে হবে। শরীরে যদি চুলকানি থাকে সেক্ষেত্রে চুলকানি ভালো করে নিতে হবে। মেহেদী পাতার রস হাতে এবং পায়ে নিয়মিত একবার করে ব্যবহার করবেন। নিজেকে সবসময় মানসিক চিন্তা থেকে দূরে রাখতে হবে কোনভাবেই নিজেকে ডিপ্রেশনে ফেলা যাবে না।
অতিরিক্ত হাত-পা জ্বলতে থাকলে ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত পা মাসাজ করবেন। যদি বরফের টুকরো থাকে তাহলে বরফের টুকরো দিয়েও মাসাজ করতে পারেন। মাছের তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এই তেল বাত ব্যথার সমস্যা দূর করার পাশাপাশি জ্বালাপোড়া সমস্যাও দূর করতে পারে।
এই সব ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চললেই আপনার হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া ভালো হয়ে যাবে। এসব উপায় গুলো মেনে চলা খুবই সহজ এজন্য চেষ্টা করবেন উপায় গুলো সঠিকভাবে মেনে চলার।
কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে
অনেক সময় শরীরে ভিটামিনের অভাবের কারণে ও হাত-পা জ্বালাপোড়া করে। হাত-পা জ্বালাপোড়ার অনেক গুলো কারণ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দেওয়া। শরীরে যখন ভিটামিন বি ১২ এর অভাব দেখা দেয় তখন শরীর এবং হাত-পা জ্বালাপোড়া করতে থাকে। এই ভিটামিনের অভাবে শুধু হাত পা জ্বালা পুড়ায় নয় শরীর আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে
এজন্য এই ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন বি৬ শরীরে এই ভিটামিনের পরিমাণ কম হলেও হাত-পা জ্বালাপোড়া করতে থাকে। শরীরের যখন ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দেয় তখন হাত-পা জ্বালাপোড়া শুরু করতে থাকে। ভিটামিন ডি হচ্ছে আমাদের শরীরের জন্য ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে হাড় দুর্বল হয় এবং হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া করে।
যখন আপনার শরীর জ্বালাপোড়া করতে থাকবে তখন এই ভিটামিন ওষুধ গুলা খাবেন তাহলে দেখবেন আপনার শরীরে জ্বালাপোড়া অনেকটা কমে যাবে। এইসব ওষুধ খাওয়ার পরেও যদি আপনার জ্বালাপোড়া না কমে সেক্ষেত্রে আপনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন এবং ডাক্তার যে ওষুধগুলো দেয় সেগুলো খাবেন তাহলে আশা করা যায় আপনার হাত-পা জ্বালাপোড়া ভালো হয়ে যাবে।
হাত পা জ্বালা পোড়া করে কেন
হাত পা জ্বালাপোড়া করার পিছনে কিছু কারণ থাকে এই কারণগুলো আমাদের জানা অতি জরুরী। এ কারণগুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেই আর হাত-পা জ্বালাপোড়া করবে না। যখন আপনার মানসিক চিন্তা অনেক বেশি হয়ে যাবে নিজেকে ডিপ্রেশনের আঁধারে আস্তে আস্তে তুলিয়ে ফেলবেন তখন আপনার হাত পায়ে জ্বালাপোড়া অনেক বেশি বেড়ে যাবে।
মদ এবং ধূমপান অতিমাত্রায় করার কারণে। শরিলে ঠিকমতো মশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার না করার কারণে শরীর শুষ্ক হয়ে যায় এবং সেখান থেকে হাত-পা জ্বালাপোড়া করে। যাদের শরীরে চুলকানি রয়েছে অনেক সময় চুলকানির কারণেও হাত-পা জ্বালাপোড়া করতে থাকে। শরীরের ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে হাত পায়ের কার্যক্ষমতা কমে যায় ও জ্বালাপোড়া করে।
যখন শরীরে তাপ প্রদাহ স্বাভাবিকের মাত্রায় বেশি হবে তখন শরীরে জ্বালাপোড়া করবে। কিডনির সমস্যা দেখা দিলে অথবা কেমোথেরাপিয়ে নেওয়ার কারণে অনেক সময় হাত-পা জ্বালাপোড়া করে। অতিরিক্ত সময় আগুনের পাশে রান্না করার কারণে এবং রোদে দীর্ঘ সময় যাতায়াতের কারণে ও হাত-পা জ্বালাপোড়া করে।
গোসল করার ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি ব্যবহার করলে শরীরের ত্বক আস্তে আস্তে শুষ্ক হতে থাকে যার কারণে হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া তৈরি হয়। পানি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয় তখন হাত-পা জ্বালাপোড়া করতে শুরু করে। সুষম জাতীয় খাবার এবং সবুজ শাক সবজির খাওয়ার পরিমাণ যত কমতে থাকবে হাত পায়ে জ্বালাপোড়া তত বেশি বাড়তে থাকবে।
এসব কারণগোলা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেই আপনার কখনো হাত পা জ্বালাপোড়া হবে না। সবসময় চেষ্টা করবেন এ কারণগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখার তাহলে দেখবেন আপনার হাত পায়ের জ্বালাপোড়া পাশাপাশি পুরো শরীর জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন।
রসুনে হাত জ্বললে করণীয়
অনেক সময় রসুন বাটার পরেও হাত জ্বালাপোড়া করে সেক্ষেত্রে আপনি হাতে মশ্চারাইজার ক্রিম বা পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন। ফ্রিজে যদি বরফের টুকরা থাকে সেক্ষেত্রে বরফের টুকরা নিয়ে হাতে দলাদলিও করতে পারেন। ঠান্ডা দুধের মধ্যে রাখলেও এ জ্বালাপোড়া থেকে হাতকে সেরে তোলা যায়।
ঠান্ডা পানিতে কিছুক্ষণ হাত ডুবিয়ে রাখলেই আপনার হাত স্বাভাবিক হয়ে যাবে এখন থেকে রসুন বাটার পরে যদি আপনার হাত জ্বালাপোড়া করে তাহলে আপনি এই উপায় গুলো অনুসরণ করবেন দেখবেন আপনার হাত জ্বালাপোড়া নিমিষেই ভালো হয়ে গেছে।
শেষ কথা
হাত জ্বালাপোড়া একটি বিরক্তকর রোগ। আপনার জন্য ভালো হবে যত দ্রুত সম্ভব যেসব উপায়গুলো রয়েছে সেই সব উপায় গুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে হাত পায়ের জ্বালাপোড়াকে ভালো করে ফেলা। তাহলে আপনি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে নিজেকে তুলে নিয়ে আসতে পারবেন।
আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও তাদের হাত-পা জ্বালাপোড়া করলে উপকৃত হতে পারে।
সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url