রাইস কুকারে চাল ও পানির অনুপাত- প্রেসার কুকারে ভাত রান্নার নিয়ম

প্রিয় পাঠক আপনি কি প্রেসার কুকারে ভাত রান্না করার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এ পোষ্টের মধ্যে প্রেসার কুকারে ভাত রান্না করার নিয়ম এবং রাইস কুকারে ভাত রান্না করার নিয়ম ও ভাত রান্না করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন তাহলে সকল পদ্ধতিতে ভাত রান্না করার সহজ উপায় গুলো জানতে পারবেন।
রাইস কুকারে চাল ও পানির অনুপাত
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন রাইস কুকারে কিভাবে ভাত রান্না করে এবং রাইস করে চালু পানির অনুপাত,বসা ভাত রান্না করার নিয়ম ও ভাত ঝরঝরে করার উপায় সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

বেঁচে থাকার জন্য বাঙালিরা যেসব খাবারগুলো বেশি খায় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভাত। ভাত ছাড়া বাঙালির কখনোই জীবন পার করা সম্ভব নয়। ভাত আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। ক্ষুধা নিবারণের জন্য ভাতের সাথে অন্য কিছুর তুলনা কখনোই কোনোভাবে সম্ভব নয়। ভাতের সাথে বাঙালির একটি আবেগের স্থান রয়েছে।

প্রেসার কুকারে ভাত রান্নার নিয়ম

অনেকে আছে যারা সময়ের স্বল্পতার কারণে প্রেসার কুকারে ভাত রান্না করে। প্রেসার কুকারে ভাত রান্না করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সতর্কতার সাথে ভাত রান্না করতে হবে তাছাড়া আপনার ভাত ঝরঝরা হবে না। অনেকটা আঠালো হয়ে যাবে এবং খেতেও ভালো লাগবে না। প্রেসার কুকারে ভাত রান্না করার জন্য আপনাকে অবশ্যই প্রথমে চাউলকে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে

এরপর আপনি যেই পরিমাণ চাউল রান্না করবেন তার দ্বিগুণ পানি দিবেন অর্থাৎ আপনি যদি দুই কাপ চাউল রান্না করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে চার কাপ পানি দিতে হবে। এবার পানি দিয়ে তার চুলার উপরে বসিয়ে দেন। যখন পানি হালকা গরম হয়ে যাবে তখন সেখানে ধুয়ে রাখা চাউল গুলো দেন। এরপর ঢাকনা লাগিয়ে দিয়ে চুলার তাপ একেবারে বেশি দিয়ে তা রান্না করতে থাকুন।

দুই সিটি উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দুই সিটি উঠার সাথে সাথে চুলা বন্ধ করে দিবেন এবং পেশার কুকারের ঢাকনা খুলে দিবেন। আপনি যদি সেই সময় ঢাকনা ঢেকে রাখেন তাহলে আপনার ভাত আঠালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরপর ভাত থেকে ভালোভাবে ভাতের মার ছেঁকে নিবেন। এরপর কিছুক্ষণ পেশার কুকারে রেখে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখবেন।

তারপর সেখান থেকে নামিয়ে কোন একটি পাত্রে রেখে দিলে দেখবেন আপনার ভাত একেবারে ঝরঝরে এবং খেতে অনেক সুস্বাদু হয়েছে। প্রেসার কুকারে রান্না করার ক্ষেত্রে কখনোই দুই সেটির উপরে রান্না করবেন না তাহলে ভাত একেবারে আঠালো হয়ে যাবে এবং তা খাওয়ার উপযুক্ত থাকবে না। দীর্ঘ সময় ধরে প্রেশার কুকারের মধ্যে ভাত রেখে দেবেন না।

দীর্ঘ সময় ধরে প্রেশার কুকারে ভাত রাখার কারণে সেই ভাত আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর হয় তাই। চেষ্টা করবেন ভাতের মার ছেকে ফেলার এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যে আপনি প্রেসার কুকার থেকে ভাত বের করে নিবেন।

রাইস কুকারে ভাত রান্নার নিয়ম

হাতে সময়ের অভাবে রাইস কুকারে ভাত রান্না করা হয়। এছাড়াও অনেক সময় অলসতার কারণেও মানুষ সহজতার জন্য রাইস কুকারে ভাত রান্না করে। আপনি যদি রাইস কুকারে ভাত রান্না করেন এবং সেখানে সঠিক পরিমাণে পানি দিতে না পারেন তাহলে আপনার ভাত হয়তো শক্ত হয়ে যাবে অথবা পানি বেশি হওয়ার কারণে আঠালো হয়ে যাবে।

রাইস কুকারে ভাত রান্না করা একেবারে সহজ কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সেখানে পানির পরিমাণ একেবারে পারফেক্ট দিতে হবে। প্রথমে চাউলকে ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। এরপরে রাইস কুকারের মধ্যে আপনি সেই পরিমাণ পানি দিবেন যেই পরিমাণ চাউল নিয়েছেন তার চেয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ আপনি যদি এক কাপ চাউল রান্না করেন

তাহলে আপনাকে সব সময় দুই কাপ পানি দিতে হবে। এভাবে আপনি দুই কাপ চাউল রান্না করলে আপনাকে চার কাপ পানি দিতে হবে। তিন কাপ চাউল রান্না করলে আপনাকে ছয় কাপ পানি দিতে হবে। এভাবে পানি দেয়ার পরে আপনি রাইস কুকারে তার কারেন্ট দিয়ে কারেন্টের সুইচ অন করে দিবেন।


রাইস কুকারের দুইটা আলো রয়েছে একটি হচ্ছে লাল এবং আরেকটি হচ্ছে হলুদ। লাল আলো দ্বারা বোঝানো হয় ভাত রান্না হচ্ছে এবং যখন ভাত হয়ে যায় তখন হলুদ আলো জ্বলে উঠে। কারেন্টের সুইচ দেওয়ার পরে আপনারা কুকারে যদি হলুদ আলো জলে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি সুইচটাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে লাল আলো করে দেবেন।

তাহলে আপনার ভাত রান্না শুরু হয়ে যাবে। এরপর যখন ভাত রান্না হয়ে যাবে তখন সেখানে একা একাই হলুদ আলো জ্বলে উঠবে। তখন আপনি কারেন্টের সুইচ বন্ধ করে দেবেন। রান্না হওয়ার পরে ভাত কিছুক্ষণ রেখে দেবেন তাহলে আপনার ভাত একেবারে ঝরঝরে ও সুন্দর হয়ে যাবে।

রাইস কুকারে চাল ও পানির অনুপাত

রাইস কুকারে ভাত রান্না করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি যে বিষয় তা হচ্ছে পানির পরিমাণ একেবারে সঠিক দেওয়া। আপনি যদি পানির পরিমাণ সঠিক দিতে না পারেন তাহলে আপনার ভাত কখনো একেবারে ঝরঝরে অথবা সুস্বাদু হবে না। যদি পানির পরিমাণ কম হয়ে যায় তাহলে ভাত শক্ত থেকে যাবে আর যদি পানির পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তাহলে ভাত আঠালো হয়ে যাবে।

এজন্য আপনাকে রাইস কুকারে ভাত রান্না করার জন্য অবশ্যই পানির পরিমাণ সঠিকভাবে দিতে হবে। আমরা অধিকাংশ মানুষ এ কাজটা সবসময় ভুল করে থাকি। রাইস কুকারে পানি এবং চালের অনুপাত হচ্ছে আপনি যেই পরিমাণ চাউল দিবেন তার দ্বিগুণ পানি দিতে হবে। রাইস কুকারের সাথে একটি কাপ দেয় যেই কাপে চাউল পরিমাপ করা হয়।

আপনি যদি ওই কাপের দুই কাপ চাউল রান্না করেন তাহলে আপনাকে সেই কাপের চার কাপ পানি ব্যবহার করতে হবে। অথবা আপনার যদি অন্য কোন ছোট পাত্রে চাউল পরিমাপ করে রান্না করতে চান তাহলে আপনি যেই পাত্রে চাউল পরিমাপ করবেন সেই পাত্রের দ্বিগুণ পানি ব্যবহার করতে হবে অর্থাৎ আপনি যদি অন্য কোন পাত্রের

তিন কাপ চাউল রান্না করেন তাহলে আপনাকে সেই পাত্রের ছয় কাপ পানি দিতে হবে। কখনোই পরিমাপ করা ছাড়া নিজের মন মত পানি দিবেন না। এতে করে আপনার ভাত ঠিকভাবে হবে না। সবসময় যে পরিমাপ রয়েছে সেই অনুপাতে পানি দিবেন। এতে করে আপনার ভাত অনেক ঝরঝরে হবে এবং খেতেও সুস্বাদু হবে।

ভাত রান্নার নিয়ম

চুলায় ভাত রান্না করার জন্য আলাদা নিয়ম রয়েছে। রাইস কুকারের ভাত রান্না করা অথবা পেশার কুকারে ভাত রান্না করার নিয়মের সাথে চুলায় ভাত রান্না করার নিয়ম সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথমে ভালোভাবে চাউল ধুয়ে নিবেন। এরপর যে পাত্রে ভাত রান্না করবেন সে পাত্রে চাউলের তুলনায় দ্বিগুন পানি দিবেন অর্থাৎ আপনি যদি 250 গ্রাম চাউল রান্না করেন তাহলে আপনাকে ৫০০ গ্রাম পানি দিতে হবে।

এরপর যখন তা নিয়ে কিছুটা গরম হয়ে যাবে তখন সেখানে ধুয়ে রাখা চাউল গুলো দিয়ে দিবেন। তারপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখবেন। ঢাকনা দিয়ে ঢাকার ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন ভাবে থাকবেন যাতে বাতিল থেকে কোন রকমের ধোয়া বাহিরে বের হতে না পারে। এভাবে 12 থেকে 15 মিনিট ঢেকে রাখার পরে ঢাকনা তুলে হালকা ভাবে নাড়াচাড়া করে দেবেন।

এরপর তা আবার ঢেকে দেবেন। কিছুক্ষণ ঢেকে রাখার পরে দেখবেন আপনার ভাত হয়ে গেছে। ভাত হওয়ার পরে কখনোই সঙ্গে সঙ্গে তা পাতিল থেকে আলাদা করে নেবেন না। আবার ঢাকনা দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে পাতিলে রেখে দেবেন। পাতিলে ১০-১২ মিনিট থাকলে আপনার ভাত একেবারে ঝরঝরে ও সুন্দর হয়ে যাবে।

আর যদি আপনি বাতিল থেকে তৎক্ষণাৎ নামিয়ে নেন তাহলে ভাত একেবারে ঝড়ঝরে ও খেতে সুস্বাদু হবে না। আমি যে পদ্ধতি বললাম এ পদ্ধতিতে আপনাকে ভাতের মার ছেঁকে নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আর আপনি যদি ভাতের মার ছেঁকে ভাত রান্না করতে চান তাহলে পানির পরিমাণ আপনাকে আরো বেশি দিতে হবে

এবং কিছুক্ষণ রান্না করার পরে সেখান থেকে কয়েক দানা চাউল উঠিয়ে দেখবেন তা ভাত হয়েছে কি না। যদি ভাত হয়ে যায় তাহলে ভাতের মার ছেঁকে নেওয়ার পরে কিছুক্ষন ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখলে আপনার ভাত হয়ে যাবে।

ভাত ঝরঝরে করার উপায়

অনেক সময় ঠিক ভাবে ভাত রান্না করার পরেও ভাত আঠালো হয়ে যায়। ভাত আঠালো হলে তা খেতে একেবারেই সুস্বাদু হয় না। আঠালো ভাত ঝড়ঝরে করার কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। আঠালো ভাত প্লেটে ভালোভাবে ছড়িয়ে দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ফ্রিজে রেখে দেবেন। এরপর খাওয়ার সময় আবার গরম করে নেবেন দেখবেন আপনার আঠালো ভাত ঝরঝরে হয়ে গেছে।


ওভেনে চার পাঁচ মিনিটের জন্য ১৮০° সেন্টিগ্রেটে গরম করলেও ভাতের আঠালো ভাব দূর হয়ে যায়। আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে রাইস কুকারে অথবা পাত্রে ভাত রান্না করার সময় যদি তা অতিরিক্ত সিদ্ধ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আপনি ভাত তৎক্ষণাৎ নামিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভাত ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন এরপরে আরেকটি পাত্রে নিয়ে

অল্প তাপে কিছুক্ষণ চুলায় রেখে দেবেন দেখবেন আপনার ভাত ঝরঝরে হয়ে গেছে। আঠালো অথবা গলে যাওয়া ভাতের মধ্যে আপনি কয়েক টুকরো পাউরুটি রেখে দিয়ে তা ভালোভাবে ঢেকে রাখুন। কিছুক্ষণ পরে ঢাকনা তুলে সেই ভাত পরিবেশন করে খেতে পারবেন। পাউরুটির টুকরো আঠালো ভাত থেকে রস চুষে নিতে অনেক বেশি কার্যকরী।

শেষ কথা

ভাত রান্না খুবই সহজ। আপনি যদি উপায় গুলো ঠিকভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন আপনার ভাত রান্না করা একেবারে সহজ হয়ে যাবে এবং আপনার ভাত খুব ঝড়ঝড়ে এবং সুস্বাদু হবে। ভাত রান্না করার ক্ষেত্রে কখনোই তাড়াহুড়া করবেন না এতে করে আপনার ভাত ঝরঝরে হবে না।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও ভাত রান্না করার ক্ষেত্রে একেবারে সুন্দরভাবে ভাত রান্না করতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url