পোড়া জায়গায় কি লাগানো উচিত - পোড়া ক্ষত ভালো করার উপায়

প্রিয় পাঠক আপনি কি পোড়া ক্ষত শুকানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোস্টের মধ্যে পোড়া ক্ষত শুকানোর উপায় ও ফোসকা ফেটে গেলে করণীয় ও পুড়ে গেলে কি কি করনীয় সেসব সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন আশা করি আপনি পোড়া ক্ষত সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে পারবে।
পোড়া ক্ষত শুকানোর উপায়
এছাড়াও আপনি এই পোস্টের মধ্যে পাবেন পোড়া জায়গায় কি লাগানো উচিত,তেলের পোড়া দাগ দূর করা উপায়, আগুনে পোড়া রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

আমাদের অনেক সময় রান্না করার ক্ষেত্রে হাত পুড়ে যায়। কারো তেলের মাধ্যমে অথবা আরো আগুনের মাধ্যমে। পুড়ে যাওয়া বিষয়টা অনেক যন্ত্রণাদায়ক। অনেক ক্ষেত্রে সাবধান থাকার পরও পুড়ে যায়। কারো কারো পুড়ে যাওয়ার পরে দাগ থেকে যায়, আবার কারো কারো অনেক ক্ষেত্রে ভালো হয়ে যায়। যে সময় পুড়ে যায় সে সময় প্রচুর পরিমাণে যন্ত্রণা হয়। সেই যন্ত্রণা দূর করার জন্য কি কর্তব্য আমরা সেটা অনেকে জানি না।


এক্ষেত্রে আমাদের আশেপাশে এমন কিছু রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে পোড়া ক্ষত শুকানো যায়। এজন্য এই পোস্টের মধ্যে কিভাবে আপনি ক্ষত স্থানকে সহজে ভালো করতে পারবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

পোড়া জায়গায় কি লাগানো উচিত

আমাদের পুড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা বুঝতে পারি না সেই জায়গায় কি লাগালে খুব তাড়াতাড়ি তার যন্ত্রণা এবং শুকাবে। নিচে সেই উপায় গুলো বর্ণনা করা হয়েছে যেগুলো উপায় মানলে পোড়া ক্ষত শুকানো সহজ হবে।
  • আপনার পুড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আপনি প্রথমে সেখানে ঠাণ্ডা পরিষ্কার পানি দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার জ্বালাপোড়া কম হবে। 
  • পুড়ে যাওয়া স্থানে টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। টুথপেষ্ট ব্যবহার করলে পোড়ার জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা কমে যায়।
  • সেই স্থানটি অর্থাৎ আপনার পুড়ে যাওয়ার স্থানে স্যাভলন বা ডেটল পানি দিয়ে সুন্দর করে ধুয়ে নিবেন।
  • ক্ষতস্থানের উপরে একটি কাপড় ভিজিয়ে সেটা কিছুক্ষণ সময় পর্যন্ত জড়িয়ে রাখুন। এতে করে আপনার জ্বালাপোড়া,যন্ত্রণা কম হবে।
  • পুড়ে গেলে আপনার সেই জায়গায় ফোসকা পড়ে যায় আপনি সবসময় খেয়াল রাখবেন সে ফোসকা যেন কোনভাবে না ফেটে যায় এবং নিজে থেকেও ফাটাবেন না।
  • অনেকে পোড়া স্থানে মাখন ব্যবহার করে যাতে করে তাড়াতাড়ি সেরে যায় এটা সম্পূর্ণ একটি ভুল পদ্ধতি। পোড়া স্থানে মাখন ব্যবহার করবেন না।
  • আমাদের সমাজে অনেকে বলে যে পোড়া স্থানে ডিমের সাদা অংশ লাগালে তা সহজে ভালো হয়ে যায় এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এটা করা থেকে বিরত থাকবেন। আপনি সাদা অংশ লাগানোর ফলে সেই জায়গায় ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
  • ঠান্ডা পানি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এত বেশি পরিমাণে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না যেটা আপনার ক্ষত স্থান শুকানোর জন্য প্রতিবন্ধ হয়।

পোড়া ক্ষত শুকানোর ঘরোয়া পদ্ধতি

আমাদের ঘরে এমন কিছু সামগ্রী রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার পোড়া ক্ষত শুকানোর পদ্ধতিসমূহ পেয়ে যাবেন। চলুন এবার কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনার পোড়া স্থান শুকাবেন সে সম্পর্কে জানুন।
  • আপনার ঘরে যদি ল্যাভেন্ডার অয়েল থাকে সেটি ব্যবহার করতে পারেন। লেভেন্ডার অয়েল আপনার ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। যেখানে পুড়ে গেছে সেই আশেপাশে দুই থেকে তিন ফোটা লেভেন্ডার অয়েল মেখে নিন এতে করে আপনার ব্যথা কমে যাবে।
  • ঘরে যদি সরিষা বিজ থাকে তাহলে আপনি সরিষা বিজ ভালোভাবে বেটে নিয়ে আপনার ক্ষত স্থানে দিয়ে রাখুন। এতে করে আপনার ক্ষত চামড়া ঠিক থাকবে।
  • আপনার ক্ষতস্থানে আপনি অ্যালোভেরা ব্যবহার করবেন। এতে করে আপনার ক্ষত স্থানে ব্যাকটেরিয়া জীবাণু এগুলো জমতে পারবে না।
  • আপনার ঘরে যদি মধু থাকে আপনি সেই মধু পোড়া স্থানে দিবেন এতে করে আপনার জ্বালাপোড়া কমবে এবং খুব সহজে আপনার ক্ষতস্থান ভালো হবে।
  • আপনি চা খাওয়ার পরে টি ব্যাগ থেকে পাতিগুলো বের করে আপনার ক্ষতস্থানে দিয়ে রাখুন। এটা আপনার পোড়া ক্ষত শুকানোর জন্য খুব কার্যকারী উপায় হিসেবে কাজ করবে।
  • কোন স্থান পুড়ে যাওয়ার কারণে সেখানকার কোষগুলো মরে যায়। আপনি নারিকেল তেল ব্যবহার করবেন সেই স্থানে। নারিকেল তেল ব্যবহার করার কারণে নতুন করে কোষ জন্ম নিতে সাহায্য করবে।
  • আপনার বাসায় যদি ভিনেগার থাকে সেক্ষেত্রে কিছু পরিমাণ ভিনেগার এবং পানি একসাথে মিশিয়ে তা আপনার ক্ষত স্থানে দিনে কয়েকবার দিবেন। এত করে আপনার ক্ষতস্থান খুব সহজে ভালো হয়ে যাবে।
  • লবণ পানি একসাথে করে আপনার ক্ষতস্থানে দিবেন এতে করে আপনার ক্ষতস্থান খুব তাড়াতাড়ি শুকাবে এবং আপনার ক্ষত স্থান খুব তাড়াতাড়ি ভালো করবে।
পোড়া ক্ষত ঘরোয়া সামগ্রী যেসব রয়েছে এসব উপায় মানলে আপনি খুব সহজে আপনার ক্ষতস্থান সারাতে পারবেন।

ফোসকা ফেটে গেলে করণীয়

পোড়ার সাথে সাথে ফোসকা পরে যায়। অনেক সময় অখেয়ালে ফোসকা ফেটে যায় তখন আমরা বুঝতে পারি না যে আমাদের এখন করনীয় কি।
  • আপনার ফোসকা পরলে সেখানে লবন পানি ব্যবহার করুন। লবন পানি ব্যবহার করার কারণে ফোসক খুব সহজে ভালো হয়ে যাবে।
  • পেট্রোলিয়াম জেলি যেগুলো রয়েছে সেগুলো আপনার ফোসকা দূর করতে অত্যান্ত কাজে দিবে। আপনি আপনার ফোসকা পরা স্থানে পেট্রোলিয়াম জেলি মাখিয়ে রেখে দেবেন এবং সতর্ক থাকবেন সেটা যেন মুছে না যায়।
  • ফোসকা যাওয়ার ফেটে যাওয়ার সাথে সাথে আপনি সেখানে স্যাভলন বা এ জাতীয় ক্রিম লাগিয়ে নিবেন।। এতে করে আর আপনার কোন রকম সমস্যা হবে না এবং ভালোভাবে সেই জায়গা মুছে নিবেন।
  • অনেক সময় জুতা পরার কারণে ফোসকা পরে এজন্য আপনি জুতা পরার আগে সেখানে নারিকেল তেল ভালো মতো ছিটিয়ে এতে করে আপনার পায়ে আর ফোসকা পরবে না।
  • নারিকেল তেল, এলোভেরা মধু এগুলো যেমন পোড়া ক্ষত শুকানোর ক্ষেত্রে কাজে দেয় তেমনিভাবে ফোসকা দূর করার ক্ষেত্রেও কাজে দেয়।
 
এই জিনিসগুলো ব্যবহার করলেও আপনার ফোসকা এবং ক্ষত স্থান খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।

তেলের পোড়া দাগ দূর করা উপায়

বাসা বাড়িতে যেসব মহিলারা রান্না করে তাদের সবচেয়ে বেশি পুড়ে তেলের কারণে। তেলের পোড়া দাগ থেকে যায়। সেই দাগ দূর করার উপায় এবার জেনে নিন
  • কলার খোসা আপনার দাগের স্থানে রেখে দেন এতে করে আপনার দাগ খুব সহজে দূর হয়ে যাবে। আপনি চাইলে সেটা পিষে ব্যবহার করতে পারেন।
  • এলোভেরা বা এলোভেরা জেল ও আপনার পুরা স্থানের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। এলোভেরা এমন একটি জিনিস যেটা সবকিছুতে এটার উপকারিতা রয়েছে।
  • আলু এবং আলুর রস পোড়া দাগে ব্যবহার করতে পারেন। আলুতে এমন একটি উপাদান রয়েছে যেটা আপনার দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।
  • ঘরে যদি টমেটো থাকে আপনি নিয়মিত সে জায়গায় টমেটো ব্যবহার করুন। টমেটোতে পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম,ভিটামিন ডি থাকে যেসব খুব সহজে আপনার দাগ দূর করবে।
  • মেথি পিষে আপনার সেই পোড়া জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার পুরা দাগ দূর হয়ে যাবে। আপনি মেথি ব্যবহার করার আগে সেসব সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন।
  • নারকেল তেল এবং লেবুর রস একসাথে ব্যবহার করলেও পোড়া দাগ দূর হয়ে যায়।
পোড়া ক্ষত কিভাবে শুকাবেন এবং দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে উপরে সব কিছু বলা হলো। আপনি এই নিয়মগুলা মেনে চললে আপনি খুব সহজে পোড়া ক্ষত শুকাবে এবং দাগ দূর হয়ে যাবে।

আগুনে পোড়া রোগীর খাবার

পুড়ে যাওয়ার পরে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক থাকা জরুরী কারণ খাবারের মাধ্যমে ক্ষত খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে সাহায্য করবে। এজন্য চলুন এবার পুড়ে যাওয়ার পরে কি কি খাবার খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানুন।
  • স্যালাইন এবং লিকুইড জাতীয় যেসব জিনিস রয়েছে যেমন নারিকেলের পানি, জুস এগুলো বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এই দুটি উপায় তাদের জন্য যেসব শিশুর ১০% পুড়ে গেছে এবং এসব প্রাপ্তবয়স্কর ১৫% পুড়ে গেছে।
  • তাকে লবণ পানি খাওয়াবেন।
  • পুড়ে যাওয়া ব্যক্তিকে ভিটামিন ডি আছে এরকম খাবার খাওয়াতে হবে।
  • এমন কিছু খাওয়াবেন যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি এবং প্রোটিন রয়েছে।
  • তাকে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। প্রতিদিন লেবু এবং কমলা এজাতীয় ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়াবেন।
  • ঘি খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। ঘি খাওয়ানোর ফলে খুব তাড়াতাড়ি পুরার ক্ষত দূর হয়ে যায়।
আপনি এ খাবারগুলো রোগীকে খাওয়ালে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।

শেষ কথা

পুড়ে যাওয়া বিষয় অত্যন্ত কষ্টকর। পুড়ে যাওয়ার আগে আপনি সতর্ক হতে শিখুন। সর্তক ভাবে কাজ করারও পরও পুড়ে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে পোড়া ক্ষত শুকানোর  উপায় গুলো লক্ষ্য করলে আপনার পোড়া স্থান খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে। যদি বেশি পড়ে যায় সে ক্ষেত্রে আপনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন এবং চিকিৎসা নিবেন এতে করে আপনার পোড়া ক্ষত খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়দের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও পুড়ে গেলে খুব সহজে সে যন্ত্রনা থেকে রেহাই পায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url