রূপচর্চায় টক দইয়ের গুনাগুন - টক দই খাওয়ার উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আপনি কি টক দই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন,তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে টক দই খাওয়ার উপকারিতা - টক দই এর উপকারিতা এবং ওজন কমাতে টক দই এর উপকারিতা - ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম ও টক দই খাওয়ার নিয়ম - রাতে টক দই খেলে কি হয় সেসব সম্পর্কে আলোচনা করবো। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন তাহলে টক দই সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।
টক দই খাওয়ার উপকারিতা
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন টক দই এর ক্ষতিকর দিক - টক দই এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং চুলের যত্নে টক দই এর ব্যবহার - চুল পড়া রোধে টক দই ও টক দই দিয়ে রূপচর্চা - টক দই মুখে মাখার উপকারিতা সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

টক দই দুই রকমের হয় তার মধ্যে একটি হচ্ছে টক দই। আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে টক দই ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে খাবারের পরে টক দইয়ের উপকারিতা অনেক বেশি। এমনকি বিভিন্ন রকমের রূপচর্চা করার ক্ষেত্রেও টক দইয়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।


টক দইয়ে ভিটামিন ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম থাকে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী।

টক দই খাওয়ার নিয়ম - রাতে টক দই খেলে কি হয়

টক দই অনেকে অনেক ভাবে খেয়ে থাকে। বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে সেই নিয়ম গুলো অবলম্বন করে টক দই খাইলে উপকৃত বেশি হওয়া যায়।
  • টক দই খাওয়াকে প্রতিদিন অভ্যাসে পরিণত করবেন না। একদিন পর পরে বা সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খাবেন।
  • কখনোই শুধু টক দই খাবেন না। শুধু টক দই খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এজন্য অবশ্যই গুড় অথবা মধু মিশিয়ে খাবেন। এছাড়াও আপনি লবণ বা গোলমরিচের গুঁড়ো অথবা দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়েও খেতে পারেন।
  • রাতে কখনোই টক দই খাবেন না। রাতে টক দই খাওয়ার ফলে মিউকাসের জন্ম হয়। মিউকাস শরীরে বিভিন্ন রকমের সংক্রমনের মূল।
  • ফ্রিজ থেকে বের করে কখনওই টক দই খাবেন না এতে করে আপনার ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। কিছুক্ষন বাহিরে রাখবেন তারপর খাবেন। বাইরে রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই রোদে রাখবেন না। কোন ঠান্ডা স্থানে রেখে কিছুক্ষণ পরে খাবেন।
  • টক দয়ের সাথে চিনি মিশিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • কখনো বিরিয়ানি অথবা যেকোন গোস্ত রান্না করার সময় টক দই ব্যবহার করবেন না এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং শরীরে টক্সিন তৈরি করে। টক দই দিয়ে বিরানি অথবা গোস্ত রান্না করলে স্বাদ বেশি পাওয়া যায় কিন্তু তার শরীরের জন্য অনেক ক্ষতি করে। এজন্য অবশ্যই যে কোন ধরনের তরকারি রান্না করার ক্ষেত্রে টক দইকে এড়িয়ে চলবেন।
  • টক দই খাওয়া আপনার তখনই উচিত হবে যখন আপনার পেটে দুধ সহ্য করতে পারবেন না অর্থাৎ যাদের দুধে হজম শক্তি কম তারা টক দই খাবেন।
  • ঠান্ডা জড়িত সমস্যায় যারা ভুগছেন যেমন কাশি সর্দি জ্বর তারা টক দই থেকে দূরে থাকবেন।দই কখনো গরম করে খাবেন না অর্থাৎ একেবারে ঠান্ডা কোনোভাবেই চুলায় গরম করবেন না।
  • গরমকালে টক দই দিয়ে শরবত বানিয়ে খাইলেও শরীর থেকে ক্লান্তি ছাপ দূর হয় এবং একটি রিফ্রেশ ভাব আসে।
  • খাবার খাওয়ার পরে সামান্য পরিমাণ টক দই খাওয়া যেতে পারে এতে করে খাবার পেটে ভালোভাবে হজম হয়।
  • টক দই খাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে দুপুর বেলা। দুপুর বেলা খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন রকমের উপকারিতা পাওয়া যায়।
  • সকালের নাস্তায় সামান্য পরিমাণ টক দই রাখা যেতে পারে এতে করে শরীরে সারাদিন পরিশ্রম করার মত পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া যায়।
  • কখনোই টক দই এবং দুধ একসাথে মিক্স করে খাবেন না। এই দুইটি খাওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় আলাদা আলাদা করে খাবেন।
  • অনেকে আছে যারা টক দই এবং বিভিন্ন রকমের ফল একসাথে সালাত করে খান এটাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কখনোই ফল এবং টক দই একসাথে খাবেন না।
  • যারা ওজন কমানোর জন্য টক দই খাবেন তারা টক দইয়ের সাথে চিয়া সিট মিক্স করে নিবেন এটা খুব দ্রুত আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে এবং শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ পটাশিয়াম আয়রন ফাইবার টি এসিড ভিটামিন সি দিবে।
  • টক দই ও গ্রানোলা একসাথে মিক্স করেও আপনি খেতে পারেন। এটা অনেক স্বাস্থ্যকর। গ্রানোলা কেনার সময় অবশ্যই চিনি কম এরকম গ্রানোলা কিনবেন।
  • সকালে নাস্তায় সসের পরিবর্তে টক দই ব্যবহার করতে পারেন। শস শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এর পরিবর্তে টক দই খাওয়ার অভ্যাস করলে আপনি উপকৃত হতে পারবেন।
  • আপনি টক দই খাওয়ার সাথে কাজুবাদাম পেস্তা বাদাম এগুলো মিক্স করে খেতে পারেন তাহলে পুষ্টিগুণ আরো বেশি পাওয়া যাবে।
  • টক দই এবং ওটস একসাথে মিক্স করেও খাওয়া যেতে পারে এভাবে খাওয়ার ফলেও ওজন অনেকটা কমে যায়।
  • প্রতিদিন এক কাপ দই খাবেন এর বেশি কখনই খাবেন না।
টক দই খাওয়ার ক্ষেত্রে এসব নিয়ম অনুসরণ করে খাওয়া উচিত হবে তাহলে আপনি বেশি উপকৃত হতে পারবেন। অনেকে আছেন যারা রাতে টক দই খাওয়ার প্রতি আগ্রহী। ভুলেও এই কাজ করবেন না। রাতে টক দই খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে। হজম শক্তির সমস্যা এছাড়াও বিভিন্ন রকমের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের শুরু হয়ে থাকে।

তাই অবশ্যই আপনার উচিত হবে এখন থেকে রাতে টক দই খাওয়া থেকে বিরত থাকা এবং এই পদ্ধতি পরিহার করে দুপুরে খাওয়া তাহলে আপনি উপকৃত হতে পারবেন।

ওজন কমাতে টক দই এর উপকারিতা - ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম

যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য টক দই সবচেয়ে সেরা সমাধান হবে।টক দইয়ের ফ্যাট একেবারে কম থাকে যার কারণে খুব দ্রুত ওজন কমে যায়। টক দই খুব দ্রুত এবং অতি সহজে ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি টক দইয়ের মাধ্যমে দ্রুত ওজন কমাতে চান তাহলে টক দই খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে সেই নিয়ম গুলো অনুসরণ করে খাইলে আপনি খুব সহজেই নিজের ওজন কমিয়ে ফেলতে পারবেন।

টকদই এবং মধু একসাথে মিক্স করে খাইলে খাওয়াও সহজ হয় এবং ওজনও খুব দ্রুত কমে যায়। চিয়া সিড এবং টক দই একসাথে করে সকালে নাস্তায় সময় খাইলে খুব দ্রুতই ওজন কমে যাবে। টকদের সাথে বিভিন্ন রকমের বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন এতে করে আপনার শরীরে পুষ্টি পাবে এবং ওজনও কমবে।

জিরা ভেজে টকদের সাথে মিশিয়ে খাবেন। এভাবে কয়েকদিন খাওয়ার মাধ্যমে দেখবেন আপনার ওজন কমতে শুরু করবে। ওজন কমানোর জন্য কখনোই প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমাণে টক দই খাবেন না। সর্বোচ্চ হলে এক কাপ টক দই খাবেন। এর বেশি খাওয়া আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে। টক দইয়ে ৬১ % ফ্যাটি এসিড এবং ২২% সামগ্রিক ওজন কমাতে পারে।

টক দই,পেঁয়াজ কুচি,কাঁচা মরিচ,কুচি চাট মসলা এগুলো একসাথে করেও মিশিয়ে খেতে পারেন। এই পদ্ধতিও আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।ওটস এবং টক দই একসাথে করে নিয়মিত সামান্য পরিমাণে খাবেন। ওটস এবং টক দই একসাথে খাইলেও আপনি ওজন কমানোর জন্য উপকৃত হতে পারবেন।


দারচিনি এবং টক দই একসাথে মিক্স করেও আপনি খেতে পারেন। দারচিনি এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী এবং টক দই মিক্স করে খাওয়ার কারণে খুব সহজেই ওজন কমে যাবে। মৌরি ভেজানো পানি আগে থেকেই ওজন কমাতে সাহায্য করে। টক দইয়ের সাথে আপনি মৌরী মিশিয়ে খেলেও আপনার ওজন কমবে এবং শরীরে বাড়তি যেসব মেদ রয়েছে সেগুলো ঝড়িয়ে ফেলবে।

টক দই খাওয়ার ফলে খিদে খিদে ভাব খুব কম হয় যার কারণে খাওয়ার প্রতি চাহিদাও কম থেকে এবং ওজন কমানো সহজ হয়।আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য টক দই খান সেক্ষেত্রে কখনোই টক দইয়ের সঙ্গে চিনি মিশ করবেন না। চিনি মিস করলে আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে এবং কোনোভাবেই ওজন কমবে না।

চিনির পরিবর্তে আপনি গুড় অথবা মধু গোলমরিচের গুঁড়ো এগুলো মিশাতে পারেন।গরমকালে দই এবং চিড়া একসাথে মিক্স করেও খেতে পারেন এভাবে খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা ভালো হওয়ার পাশাপাশি ওজনও কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি টক দই দ্বারা ওজন কমাতে চান তাহলে এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে টক দই খাবেন তাহলে আপনার ওজন খুব দ্রুত কমে যাবে।

ওজন কমাতে টক দই অনেক কার্যকারী তবে কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন না তাহলে আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে।

টক দই খেলে কি গ্যাস হয় - দই খেলে কি ঠান্ডা লাগে

যখন টক দই নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া হবে অথবা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হবে তখন গ্যাস হওয়ার পাশাপাশি আরও বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিবে। কখনোই পরোটার সঙ্গে টক দই খাবেন না এতে করে গ্যাসের সমস্যা,পেট খারাপের সমস্যা অথবা পেট ফোলার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন রকমের ফল যেমন আম স্ট্রবেরি কলা এগুলোর সঙ্গে কখনোই টক দই খাবেন না।

এগুলো খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি পেটে আরও রকমের সমস্যা হবে। টক দইয়ের সঙ্গে পেঁয়াজ খাওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে পেঁয়াজ খাবেন না। অতি সামান্য পরিমাণে পেঁয়াজ দিয়ে খাবেন তাছাড়া আপনার পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। মাছ মাংস এগুলো রান্নার সময় টক দই দিয়ে রান্না করবেন না।

মাছ-মাংস টক দই দিয়ে রান্না করলে গ্যাসের সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি আরো অনেক রকমের সমস্যা শরীরে দেখা দিবে। বিশেষ করে শরীরে ক্ষতিকর টক্সিন তৈরি হয়। আপনি যখন শুধু পরিমান মত টক দই খাবেন তখন তা আপনার গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে কিন্তু যখন ভিন্ন পন্থা এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন তখন তা আপনার জন্য গ্যাসের সমস্যা বয়ে নিয়ে আনবে।

স্বাভাবিক অসুস্থ অবস্থায় টক দই খেলে কখনোই ঠান্ডা লাগে না। টক দই খেলে তখনই ঠান্ডা লাগে যখন আপনি ঠান্ডা জড়িত সমস্যায় ভুগছেন যেমন জ্বর সর্দি কাশি এরকম ঠান্ডা জনিত সমস্যার সময়ে অবশ্যই টক দইকে এড়িয়ে চলবেন তাছাড়া আপনার ঠান্ডা লাগা আরো বেশি বেড়ে যাবে। রাতে টক দই খাওয়া থেকেও বিরত থাকবেন।

অনেক সময় রাতে টক দই খাওয়ার কারণে ঠান্ডা লেগে যায়। এছাড়া কখনো টক দই খাইলে ঠান্ডা লাগার মত কোন সমস্যা দেখা দেয় না।

টক দই খাওয়ার উপকারিতা - টক দই এর উপকারিতা

টক দই খাইলে আমাদের শরীরে অনেক রকমের উপকারিতা প্রবেশ করে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী। টক দই থেকে এমন এমন উপকারিতা পাওয়া যায় যা আপনি কোনদিন কল্পনাও করেননি। চলুন এবার আমরা সেই উপকারিতা গুলো জানি

  • শরীরে রোগ সৃষ্টি করে এমন জীবাণুর বিরুদ্ধে টক দই লড়াই করার ক্ষমতা রাখে যার কারণে আমাদের শরীরে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।
  • টক দই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • টক দইয়ের মধ্যে রয়েছে জিংক ম্যাগনেসিয়াম সেলোনিয়াম পটাশিয়াম যার প্রত্যেকটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী। এছাড়াও টক দই রয়েছে ক্যালসিয়াম প্রোটিন ভিটামিন বি১২ বি ২।
  • ওজন কমাতে টক দইয়ের বিকল্প আর কোন কিছু হতে পারে না। টক দই খুব সহজেই ওজন কমিয়ে দেয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরায় রাখে।
  • টক দইয়ে থাকা ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় গঠন করার পাশাপাশি হাড়কে শক্ত করে।
  • পেটের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করতেও টক দই বেশ কার্যকারী।
  • পেট ফোলা এবং ডায়রিয়া দূর করার পাশাপাশি পেটে ব্যথা এরকম আরো বিভিন্ন পেটের সমস্যা দূর করতে পারে।
  • যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা টক দই খাওয়ার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমেরিকার এক হার্ট গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন বা একদিন পরপর কিছু করে টক দই খাওয়ার ফলে রক্তচাপে ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
  • যাদের মাড়ির সমস্যা রয়েছে এবং দাঁতে পোকা লাগা অথবা দাঁত দুর্বল রয়েছে তারা টক দই খাওয়ার ফলে এই সমস্যাগুলো ভালো হয়ে যায় এবং দাঁড় শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি দাঁতের রক্ত পড়া এবং বিভিন্ন সমস্যা ভালো হয়ে যায়।
  • টক দই কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
  • টক দই রূপচর্চার কাজে এবং চুলের যত্নের কাজেও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। রূপচর্চা এবং চুলের যত্নেও টক দই অনেক ভালো ফলাফল দেয়।
  • যাদের দুধ সহ্য হয় না বা হজম শক্তির জন্য সমস্যা হয় তারা টক দই খেতে পারেন। এটি আপনার পেটকে ভালো রাখার পাশাপাশি দ্রুত হজম হবে।
  • টক দই শরীরে ক্ষতিকর টক্সিনকে জমতে দেয় না যার কারণে শরীর সুস্থ থাকে এবং বার্ধক্য রোধ করতে সহযোগিতা করে।
  • অনেকে আছে যাদের দুধ খাইলে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা দুধে এলার্জি রয়েছে তারা নিশ্চিন্তে টক দই খেতে পারেন। টক দই আপনার কোন রকমের এলার্জির সমস্যা করবে না।
  • টক দই খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এটি সবচেয়ে ভালো খাবার। এটা খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে না।
  • গরমকালে টক দই খাইলে শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ক্লান্ত অবস্থায় টক দইয়ের শরবত খাওয়ার ফলে শরীর থেকে ক্লান্তি ভাব অনেকটা কমে যায় এবং মস্তিষ্ক সতেজ থাকে।
এইসব উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী টক দই খেতে হবে তাহলে আপনি এসব উপকারিতা গুলো পাবেন। এই প্রত্যেকটি উপকারিতা গুলোই আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি জরুরী। তাই চেষ্টা করবেন সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন টক দই খাওয়ার।

চুলের যত্নে টক দই এর ব্যবহার - চুল পড়া রোধে টক দই

টক দই শুধু শরীরের জন্য উপকারী নয় বরং চুলের যত্নে টক দই অনেক কার্যকরী। চুলে টক দই ব্যবহার করলে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং খুশকিও দূর হয়। এছাড়াও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়াও রোধ করে।
  • টক দই,এলোভেরা,অলিভ অয়েল এবং মধু একসাথে মিক্স করে গোসলের আগে চুলের ব্যবহার করবেন। এভাবে কিছুক্ষণ দেখে দেওয়ার পরে গোসলের সময় শ্যাম্পু করে নিবেন। এরকম সপ্তাহে এক থেকে দুইবার করলে আপনার মাথা থেকে খুশকি দূর হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
  • যাদের চুলে ঘনত্ব একেবারেই কম তারা চুলে টক দই ব্যবহার করলে ঘনত্ব বাড়ে এবং চুলের গোড়া শক্ত হয়। মাথার ত্বক থেকে বিভিন্ন রকমের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
  • টক দই এবং দুধ একসাথে মিক্স করে চুলে দিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করবেন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলবেন। এই পদ্ধতিও সপ্তাহে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
  • শুধু এলোভেরা এবং টক দই একসাথে করে মাথায় ব্যবহার করলে চুলের আদ্রতা দীর্ঘ সময় ধরে বজায় থাকে।
  • টক দই এবং নারিকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট দিয়ে রাখবেন। এরপরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলবেন। এই পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে আপনার চুলের রুক্ষতা দূর হবে।
  • মেথির গুঁড়ো এবং টক দই একসাথে করে পেস্ট তৈরি করবেন। তারপর হাতের তালু দিয়ে মাথার চুলে এবং মাথার ত্বকে মাখাবেন। এভাবে দুই ঘন্টার মত রাখার পরে শ্যাম্পু করবেন তাহলে আপনার চুল পড়ার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
  • টক দই এবং বাদাম তেল একসাথে মিক্স করে ব্যবহার করার ফলেও চুলের খুশকি দূর হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে টক দই ও বাদামের তেলের পেস্ট ৩০ মিনিট মাথায় দিয়ে রাখতে হবে।
  • নিম পাতা,জবা ফুল,টক দই এবং কমলার রস একসাথে পেস্ট বানিয়েও আপনি চুলে ব্যবহার করতে পারবেন। এভাবে ব্যবহার করলে চুল অনেক বেশি সিল্কি হয় এবং দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।
  • মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগাতে এবং ঠান্ডা রাখতে টক দই,অলিভ অয়েল,ডিম,ঘৃতকুমারী তেল, তুলসী পাতা,কারি পাতা একসাথে বেটে চুল এবং মাথার তালুতে ব্যবহার করবেন। এই পদ্ধতি মাথা ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি চুলের জন্য পুষ্টিকর।
  • কলা পিসে টক দইয়ের সাথে মিক্স করেও আপনি চুলে ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ৪০ মিনিট তুলে রাখতে হবে এরপরে শ্যাম্পু করার মাধ্যমে ধুয়ে ফেলবেন।
  • ক্যাস্টর অয়েল এবং টক দই একসাথে মিশিয়ে নিয়ে চুলে লাগাবেন তারপর ৩০ মিনিট এভাবে রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।

আপনি যদি চুলের যত্নে টক দই ব্যবহার করতে চান তাহলে উপরে যে পদ্ধতিগুলো বলা হলো সেগুলোর মধ্যে একটি পদ্ধতিতে ব্যবহার করবেন। তাহলে আপনি আপনার চুলের জন্য ভালো ফলাফল পাবেন এবং আপনার চুল আগের তুলনায় অনেক বেশি সুন্দর হবে ও যেগুলো সমস্যা রয়েছে সেই সমস্যা গুলো ভালো হয়ে যাবে।

টক দই দিয়ে রূপচর্চা - টক দই মুখে মাখার উপকারিতা

রূপচর্চার জন্য টক দই অতুলনীয়। রূপচর্চা করার ক্ষেত্রে টক দইয়ের জুড়ি মেয়েরা ভার। টক টক দই ব্যবহার করলে প্রাকৃতিক ময়শ্চার হিসেবেও ত্বকের উপরে কাজ করে।
  • চেহারা থেকে রোদে পোড়া ভাব দূর করতে টক দই,চন্দনগুলো এবং মুসুরের ডাল একসাথে পেস্ট বানিয়ে ত্বকে ব্যবহার করবেন। এভাবে একমাস ব্যবহার করলে আপনার চেহারা থেকে রোদে পোড়া দাগ দূর হয়ে যাবে। বেশি পুষ্টির জন্য আপনি এসবের সাথে মধুও ব্যবহার করতে পারেন।
  • বেসন,টক দই এবং কাঁচা হলুদ একসাথে পেস্ট করে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা হয়।
  • স্ট্রবেরি এবং টক দই একসাথে ব্লেন্ড করে মুখে ব্যবহার করতে পারবেন এভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের দাগ দূর হয় এবং বলিরেখাও কমে যায়।
  • শুধু টক দই চেহারায় ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়।
  • টক দই এবং লেবুর রস একসাথে করে চেহারায় ব্যবহার করবেন। এরপর দুই তিন মিনিট চেহারা ঘষেঘষি করবেন তাহলে আপনার ত্বক একেবারে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
  • টক দই লেবুর রস এবং চিনি একসাথে ভালোভাবে মিক্স করে মুখে মাসাজ করবেন। কিছুক্ষণ মাসাজ করার পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
  • টক দই ও সামান্য পরিমাণ কফি পাউডার একসাথে করে চেহারায় দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিবেন এরপর ধুয়ে ফেলবেন।
  • টক দই,নারিকেল তেল,গ্লিসারিন এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল একসাথে পেস্ট বানিয়ে পুরা মুখে এবং গলায় ভালোভাবে মাসাজ করবেন এভাবে ব্যবহার করলে চেহারায় পুষ্টি সমৃদ্ধ হয় এবং ময়লা দূর হয়ে উজ্জ্বল ভাব আসে।
  • টক দই এবং শুধু মধু একসাথে মিক্স করে ব্যবহার করলে চেহারার উজ্জ্বলতা অনেক বাড়ে। এক্ষেত্রে আপনাকে চেহারার উপরে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিয়ে তারপরে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • শসার রস এবং টক দই একসাথে ভালোভাবে ঘন করে মিশিয়ে নিবেন এরপরে চেহারায় ঘাড়ে ব্যবহার করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে সপ্তাহে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে ও ত্বক তরতাজা ও সতেজ হয়।
  • যাদের ত্বক একেবারে তৈলাক্ত কোনভাবে তৈলাক্ত ভাব দূর করতে পারেন না তারা টক দই এবং গোলাপজল একসাথে মিক্স করে ব্যবহার করবেন। এই পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে আপনার চেহারা থেকে তৈলাক্ত ভাব চিরতরে চলে যাবে এবং চেহারা চিরদিনের জন্য ফ্রেশ হয়ে যাবে।
  • টমেটো এবং টক দই একসাথে ব্লেন্ড করে চেহারায় হাতে এবং ঘাড়ে ব্যবহার করবেন তাহলে আপনার চেহারা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রোদে পুরা ভাব দূর হবে এবং ময়লা দূর হয়ে উজ্জ্বল হয়ে যাবে।
  • আপনি যদি চেহারা থেকে ব্রণ দূর করতে চান সেক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য পরিমাণ টক দই ব্রণের উপরে দিয়ে ঘুমিয়ে যাবেন এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে আপনার চেহারা থেকে ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
টক দই ত্বকের জন্য অনেক উপকারি। আপনি যদি সেই উপকারিতা গুলো পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে উপরে যেভাবে বলা হলো সেসব পদ্ধতিতে টক দই দিয়ে রূপচর্চা করতে হবে তাহলে আপনার জন্য উপকারী হবে।

টক দই এর ক্ষতিকর দিক - টক দই এর উপকারিতা ও অপকারিতা

টক দই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তেমনিভাবে যখন টক দই খাওয়ার মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে যাবে তখন শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিবে। যারা ওজন কমানোর জন্য টক দই খান তারা যখন অতিরিক্ত পরিমাণে টক দই খেতে শুরু করবেন তখন আপনার ওজন বাড়ার পরিবর্তে ওজন বৃদ্ধি হতে শুরু করবে।

অতিরিক্ত মাত্রায় টক দই খেলে হাঁটুর ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি শরীরের হাড়গুলোর ঘনত্ব আস্তে আস্তে কমতে থাকে। ঠান্ডা সর্দি জনিত সমস্যার সময়ে যেমন ঠান্ডা কাশি জ্বর সর্দি এরকম অসুস্থ অবস্থায় কখনোই খাবেন না। এমন অবস্থায় টক দই খেলে আপনার অসুস্থতা আরও বেশি বেড়ে যাবে। যারা পেট ফাঁপা বা হজম শক্তির জন্য টক দই খান তারা অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনার পেটে ডায়রিয়া বদহজম এবং পেট ফাঁপা সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত টক দই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন একদিন পরপর বা সপ্তাহে দুই দিন খাবেন। নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরে রোগ সৃষ্টি হতে থাকে। টক দই কখনোই গরম করে খাবেন না। গরম করলে যেসব গুনাগুন রয়েছে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

রাতে টক দই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন রাতে টক দই খেলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ঠান্ডা অবস্থায় কখনোই টক দই খাবেন না। ফ্রিজ থেকে বের করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে দিয়ে তারপরে খাবেন তাছাড়া আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে এবং ঠান্ডা জনিত যে রোগগুলো রয়েছে সেগুলো হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

ডায়াবেটিসের রোগীরা কখনোই অতিরিক্ত মাত্রায় খেতে যাবেন না। এর ফলে আপনার ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা অনেকটাই রয়েছে। যাদের হাঁপানি শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তারা কখনোই শীতকালে টক দই খাবেন না এর ফলে আপনার হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা প্রবল হয়। যদি কারো টক দই এ এলার্জি সমস্যা থাকে তাহলে তারা টক দই কে এড়িয়ে চলবেন।


এগুলোই হচ্ছে টক দইয়ের ক্ষতিকর দিক। আপনি যেকোন খাবার যখন অতিরিক্ত পরিমাণে খেতে থাকবেন তা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর দিকগুলো বয়ে নিয়ে আনবে এজন্য অবশ্যই টক দইয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য আপনার উচিত হবে নিয়ম অনুযায়ী এবং পরিমাণ মতো টক দই খাওয়া তাহলে আপনি উপকৃত হতে পারবেন এবং ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।

শেষ কথা

টক দইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে। উপকারি দিকগুলো অনেক বেশি। ক্ষতিকর দিকগুলা সেভাবে নেই তাই উচিত হবে আপনার সম্ভব হলে টক দই খাওয়া এতে করে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। খাওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং নিয়ম অনুপাতে খাবেন।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারা টক দইয়ের যাবতীয় উপকারিতা এবং গুনাগুন সম্পর্কে অব্যাহত হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url