পুদিনা পাতার গুরুত্বপূর্ণ ২৪ টি উপকারিতা - পুদিনা পাতার রেসিপি

প্রিয় পাঠক আপনি কি পুদিনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন,তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে পুদিনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা,পুদিনা পাতা কিভাবে খাব,পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা এবং পুদিনা পাতা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরেছি।
পুদিনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা,নিয়ম
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহার, পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা, পুদিনা পাতা সংরক্ষণের উপায়,চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা, পুদিনা পাতা দিয়ে ত্বকের যত্ন,পুদিনা পাতা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। আপনি পোস্টটি সম্পন্ন পড়তে থাকুন তাহলে আপনি সবকিছু জানতে পারবেন।

ভূমিকা

পুদিনা পাতায় এমন একটি পাতা যেটা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। পুদিনা পাতা ওষুধ হিসেবে, রান্নায়,ত্বকের যত্নে, চা খাওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়ে থাকে। আদিকাল থেকে এটা প্রচলন চলে আসছে এবং এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় পুদিনা পাতার মধ্যে কোন রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ভেজাল থাকে না।


পুদিনা পাতা আমাদের অসুখ দূর করার সাথে সাথে শরীরের জন্য বেশি উপকারী। নিচে পুদিনা পাতা সম্পর্কে সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো। আমি এই পোস্টের মধ্যে পুদিনা পাতার ১৫ টি বিষয় সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

পুদিনা পাতা কিভাবে খাব

পুদিনা পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম থাকে যেগুলো জানা জরুরী। আপনি নিয়ম অনুযায়ী খাওয়ার ফলে উপকৃত হতে পারবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকবেন।যেসব নিয়মে পুদিনা পাতা খাবেন সেসব নিচে তুলে ধরা হলো-
  • আপনি পুদিনা পাতা পানির মধ্যে গরম করে সেই পানি খেতে পারবেন যেমন ভাবে চা খান সেই রকম ভাবে। চায়ের পরিবর্তে পুদিনা পাতা দিয়ে গরম করা পানি খেতে পারেন।
  • আপনি পুদিনা পাতা স্যান্ডউইসের ভিতর দিয়েও খেতে পারেন এবং পুদিনা পাতা সালাদ হিসাবেও খেতে পারবেন। শসা টমেটো গাজর পুদিনা পাতা একসাথে করে একটি সালাদ তৈরি করুন এবং ভাতের সাথে খান এতে করে আপনার খাবারের রুচি বৃদ্ধি হবে।
  • রিফ্রেশ হওয়ার জন্য আপনি কয়েকটি পুদিনা পাতা নিয়ে সেগুলো ভালো করে থ্যাতা করুন এরপর সেখানে কয়েক টুকরা বরফ বা ঠান্ডা পানি যোগ করুন এবং কিছু পরিমাণ বিট লবণ দেন তারপরে সেটি পান করুন দেখবেন আপনার ভিতরে রিফ্রেশ ভাব কাজ করছে।
  • আপনি পুদিনা পাতা জুস করেও খেতে পারবেন। হালকা কিছু চিনি,পুদিনা পাতা,লেবুর রস এগুলো একসাথে করে ব্লিন্ডার করে নিবেন। জুস হিসেবে খাইলেও আপনার জন্য বেশ উপকারী হবে।
  • আপনি পুদিনা পাতা শুধু চিবিয়েও খেতে পারবেন। সবচেয়ে ভালো হয় শুধু চিবিয়ে রস খেয়ে নিলে। শুধু রস খাওয়ার ফলে আপনার কাশির সমস্যা ভালো হয়ে যাবে।
  • আপনি পুদিনা পাতা তরকারি রান্না করার সময়ও তরকারিতেও দিতে পারেন। এটা আপনার তরকারির স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করবে।
  • আপনি কোন রেসিপি গার্নিশ করার ক্ষেত্রেও পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারবেন এবং মুরগির মাংস ম্যারিনেট করার ক্ষেত্রেও পুদিনা পাতা বেশ উপকারী।
  • আপনি পুদিনা পাতা ভর্তা করেও খেতে পারবেন। ভর্তা করে খাওয়ার পরে আপনার খাবারের প্রতি রুচি বৃদ্ধি হবে।
আপনি এ পদ্ধতি গুলোর যেকোনো এক পদ্ধতিতে পুদিনা পাতা খেতে পারেন বা সবগুলো পদ্ধতিতেও খেতে পারেন। যেই পদ্ধতিতে খাবেন সেটাই আপনার জন্য উপকারী হবে।

পুদিনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা

পুদিনা পাতার এমন কিছু উপকারিতা রয়েছে যেগুলো আপনাকে আশ্চর্য করে দিবে এবং পুদিনা পাতার উপকারিতা অনেক। উপকারিতা গুলো তুলে ধরা হলো-
  • পুদিনা পাতা আপনার মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবে। পুদিনা পাতার ঘ্রাণ নিন দেখবেন আপনার মন সতেজ হয়ে গেছে এবং মানসিক চাপ কমে গেছে।
  • যাদের পেটে হজমের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত পুদিনা পাতার রস খাওয়ার চেষ্টা করুন। পুদিনা পাতার রস আপনার পেটের সমস্যা এবং হজমের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকরী।
  • আপনি যদি ওজন কমানো নিয়ে চিন্তিত হন সে ক্ষেত্রেও পুদিনা পাতা আপনার জন্য উপকারী বন্ধুর রূপ হিসেবে পাশে থাকবে। পুদিনা পাতা খাওয়ার ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ওজন কমতে সাহায্য করবে।
  • সর্দি কাশি সমস্যার জন্য পুদিনা পাতা বেশ উপকারী সর্দি,কাশি দূর করার জন্য নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন। শীতের ভাব পরার পর থেকে জ্বর কাছে সর্দি লেগে থাকে এজন্য শীতের শুরু থেকেই পুদিনা পাতা খাওয়া শুরু করুন।
  • যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত পুদিনা পাতা খান। পুদিনা পাতা আপনার রক্তচাপের সমস্যা দূর করে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
  • অনেক সময় আপনি বাহিরে গেলে আপনার ত্বক রোদে জ্বালাপোড়া করে এক্ষেত্রে আপনি অ্যালোভেরা এবং পুদিনা পাতার রস একসাথে মিশিয়ে চেহারায় ব্যবহার করুন। কিছুক্ষণ চেহারার উপরে দিয়ে রেখে দেন এতে করে আপনার জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যাবে।
  • পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে ক্ষমতা রাখে। অনেক বিজ্ঞানীর মতে পুদিনা পাতায় পরিলেল অ্যালকোহল যা ফাইতো নিউট্রিয়েন্টসের উপাদানগুলোর মধ্যে একটি।এই উপাদান ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হতে দেয় না।
  • আপনি পানিতে পুদিনা পাতার রস মিশিয়ে গোসল করার ফলে আপনার শরীরের দুর্গন্ধ ভাব দূর হয়ে যাবে এবং ঘামাচি ও এলার্জি হতে বেঁচে থাকবেন ।
  • আমাদের অনেক সময় বিভিন্নভাবে আঘাত লেগে যায়। হঠাৎ আঘাত লাগার ব্যাথা দূর করতে আপনি পুদিনা পাতা রস সেখানে লাগিয়ে দেন। এতে করে আপনার সেই ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
  • পুদিনা পাতা আপনার মাথা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে এক্ষেত্রে আপনি পুদিনা পাতা চায়ের সাথে মিশিয়ে খাবেন।
  • নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার ফলে আপনার বুকে কফ জমবে না এবং আপনি হাঁপানির যে সমস্যা রয়েছে সে সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।
  • আপনি ব্রাশ করার সময় টুথপেস্টের সাথে পুদিনা পাতার রস মিশিয়ে নিয়ে ব্রাশ করলে আপনার মুখের জীবাণু দূর হয়ে যাবে এবং দাঁত শক্ত হবে।
  • আপনি পুদিনা পাতার শরবত করে খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে যাবে এবং আপনি কাজ করার ক্ষেত্রে শরীরের শক্তি পাবেন।
  • যাদের ঘুমের সমস্যা হয়েছে তারা পুদিনা পাতার চিবিয়ে সেই রস খেতে পারেন এতে করে আপনার ঘুম ভালো হবে কারণ পুদিনা পাতায় কোন রকমের ক্যাফেইন থাকে না।
  • যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল বা খুব সহজে কোন কিছু ভুলে যান তারা পুদিনা পাতার রস খান এতে করে আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
  • চেষ্টা করবেন ছোট বাচ্চাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পুদিনা পাতার রস খাওয়ানো যাতে করে তাদের ব্রেন বৃদ্ধি হয়।
  • পুদিনা পাতার রসের মধ্যে এমন একটা উপাদান থাকে যেটা আপনার ফুসফুসের কার্যকারী ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
  • পুদিনা পাতা এবং মধু একসাথে খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে জমে থাকা ক্লেদ ঘাম হয়ে শরীর হয়ে বেরিয়ে আসে।
  • সকাল বেলা খালি পেটে মধু লবণ এবং পুদিনা পাতা বা পুদিনা পাতার রস খেলে কৃমি দূর হয়ে যায়।
  • আপনার যখন বমি বমি ভাব হবে তখন আপনি পুদিনা পাতার ঘ্রান নিন এতে করে আপনার বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে এবং মন ফ্রেশ হবে।
  • পাতলা পায়খানার সমস্যা দূর করতে পুদিনা পাতার রস উপকারী। পাতলা পায়খানা হলে আপনি কয়েকটি পুদিনা পাতা চিবিয়ে খান এতে করে আপনার পাতলা পায়খানার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • পুদিনা পাতা, শসা, গাজর একসাথে সালাদ করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। পুদিনা পাতার সালাদ খাইলে পেটের গ্যাস ভালো হয় এবং গ্যাসের সমস্যা হয় না।
  • যাদের পেশাবের সমস্যা রয়েছে এবং পেশাব করলে জ্বালাপোড়া করে তারা নিয়মিত পুদিনা পাতা লবণ এবং চিনি শরবত করে খান এতে করে আপনার পেশাবের জ্বালাপোড়া এবং হলুদ ভাব দূর হয়ে যাবে।
  • আমাদের আশেপাশে এমন অনেক জন আছে যাদের বুক ধরফর করে বিনা কারণেই। যাদের বুক ধরপর করে তারা পুদিনা পাতা খান এতে করে আপনার এই ধরপর ভাব কমে যাবে।

পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা

পুদিনা পাতা জুস করে খাওয়ার ফলেও আপনি বেশ উপকারী হতে পারবেন। পুদিনা পাতা জুস করে খাওয়ার ফলে কি কি উপকার হয় সেসব হচ্ছে
  • আপনি পুদিনা পাতা জুস খাওয়ার ফলে আপনার খিচুনি ভাব বা খিচনি সমস্যা যেগুলো থাকে সেগুলো ভালো হয়ে যাবে।
  • পুদিনা পাতার জুস খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে। পুদিনা পাতায় ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি থাকে,ভিটামিন ই থাকে।এসব মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
  • পুদিনা পাতার শরবত খাওয়ার ফলে রক্তের শূন্যতা দূর হয়। বিশেষ করে যেসব মহিলাদের রক্তের শূন্যতা সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত পুদিনা জুস খাওয়ার চেষ্টা করুন এতে করে আপনার রক্তে রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • যেসব মায়ের বুকে দুধ কম হয় তারাও নিয়মিত পুদিনা পাতার জুস খান। নবজাতক শিশুর মা এই জুস খাওয়ার ফলে তার বুকে দুধ বেশি হবে এবং শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারবে।
  • পেটের ব্যাথা এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যার জন্য এই জুস বেশ কার্যকারী।
  • বিশেষ করে যাদের মাসিকের সময় পেট ব্যথা বেশি হয় তারা মাসিকের সময় প্রতিদিন পুদিনা পাতার রস খান এতে করে আপনার সেই ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
  • যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা পুদিনা পাতার রস খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • পুদিনা পাতার জুস খাওয়ার ফলে আপনার ত্বকে তেল থাকবে না এবং ত্বকের মৃত কোষ থেকে নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করবে।
পুদিনা পাতার জুস করা যেহেতু সহজ এজন্য চেষ্টা করেন প্রতিদিন কিছু পরিমাণ হলেও পুদিনা পাতা জুস খাওয়ার এতে করে আপনার শরীর সুন্দর থাকবে।

পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা

পুদিনা পাতা অনেকভাবে খাওয়া যায় তার মধ্যে একটি হচ্ছে চায়ের সাথে। চায়ের সাথে খাওয়ার ফলেও আপনি অনেকগুলো উপকারিতা পাবেন সেগুলো নিচে বলা হল
  • পুদিনা পাতার চা খাওয়ার ফলে আপনার সর্দি,কাশি শ্বাসকষ্ট এগুলো খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।
  • পুদিনা পাতার চা খাওয়ার ফলে মাইগ্রেনের সমস্যা কমে যায়। যখন অতিরিক্ত মাইগ্রেনের ব্যথা উঠে তখন পুদিনা পাতার চা খাওয়ার চেষ্টা করুন এতে করে আপনার ব্যথা কমে যাবে।
  • যাদের শরীর হাত,পা ব্যথা হয় তারা নিয়মিত পুদিনা পাতার চা খাবেন। নিয়মিত পুদিনা পাতার চা খাওয়ার ফলে আপনার হাত-পায়ের ব্যথা এবং অন্য কোন ব্যথা থাকলে সেগুলো ভালো হয়ে যাবে।
  • পুদিনা পাতার চা খাওয়ার ফলে আপনার বিষন্নতা, মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন এগুলো কম হয়ে যাবে এবং আপনার মস্তিষ্ক উন্নত করতে সাহায্য করবে।
  • পুদিনা পাতার চা খাওয়ার ফলে আপনার মুখের ঘা এবং বিভিন্ন রকমের ইনফেকশনের সমস্যা যেগুলো রয়েছে সেগুলো দূর হয়ে যাবে এবং আপনার নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থাকলে সেটাও দূর হয়ে যাবে।
  • আপনি বাহিরে যাওয়ার আগে পুদিনা পাতার চা খেয়ে নিন এতে করে আপনাকে বাইরে রোদের তাপ থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে।

আপনি এসব উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য নিয়মিত পুদিনা পাতার চা খাওয়ার চেষ্টা করুন। পুদিনা পাতার চা আপনার শরীর,ত্বক,ব্রেন,মানসিকতা সবকিছুর জন্যই বেশ উপকারী।

রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহার

আপনি তরকারি রান্নার ক্ষেত্রেও পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারবেন এতে করে আপনার তরকারি সুস্বাদু এবং সুন্দর ঘ্রাণ বের হবে। চলুন এবার কিভাবে আপনি পুদিনা পাতা রান্নাই ব্যবহার করবেন সেই সম্পর্কে জানুন
  • আপনি পুদিনা পাতা ভর্তা করে খেতে পারেন। ভর্তা করে খাওয়ার ফলে আপনার খাবারের প্রতি রুচি বৃদ্ধি হবে।
  • আপনি পুদিনা পাতা দিয়ে মুরগির মাংস ম্যারিনেট করে রাখতে পারবেন। বিভিন্ন ডিস রান্নার শেষে আপনি সেগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য পুদিনা পাতা দিয়ে গার্নিশ করতে পারবেন।
  • ডাউল এবং বিভিন্ন তরকারিতে আপনি কয়েকটি করে পুদিনা পাতা দেন এতে করে আপনার তরকারি ঘ্রাণ সুন্দর বের হবে এবং খেতেও সুস্বাদু হবে।
  • আপনি তরকারিতে পুদিনা পাতার পরিবর্তে পুদিনা পাতার রস দিতে পারবেন এতে করে আপনার তরকারি স্বাদ এবং ঘ্রাণ বৃদ্ধি পাবে।
তাই খাবারের তালিকার মধ্যে এবং রান্নার তালিকার মধ্যে পুদিনা পাতা রাখুন যেটা আপনার রান্নার স্বাদ বাড়াতে বেশ সহায়ক হবে।

পুদিনা পাতা সংরক্ষণের উপায়

আমরা বাড়িতে পুদিনা পাতার গাছ লাগিয়ে থাকি এবং অনেক সময় দেখা যায় যে পুদিনা পাতার গাছ নষ্ট হয়ে যায় অথবা আমরা পুদিনা পাতা ফ্রিজে রাখে সে ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যায় এজন্য আপনি কিভাবে পুদিনা পাতা সংরক্ষণ করবেন তা বলা হলো-
  • আপনি পুদিনা পাতা নিয়ে সেখান থেকে গোড়া কিছু তাকে কেটে ফেলুন এরপর একটি পাত্রের মধ্যে পানি নিয়ে গোড়াগুলো চুবিয়ে রাখুন এতে করে পুদিনা পাতা বেশ কয়েকদিন তাজা থাকবে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন একই পানি যেন বেশিদিন পাত্রে না রাখা হয়। কয়েকদিন পর পরে চেঞ্জ করবেন।
  • টাওয়াল নিয়ে সেখানে পুদিনা পাতাগুলো ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিন এর পরে আলতো পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেন।তারপর ফ্রিজে রেখে দেন। এই পদ্ধতিতে আপনার পুদিনা পাতা ভালো থাকবে।
  • আপনি চাইলে পুদিনা পাতা বরফের সাথে মিশিয়েও রাখতে পারেন অথবা বরফ করার পাত্রে রেখে সেখানে পানি দিয়ে রাখতে পারেন এতে বরফ হয়ে থাকবে এবং নষ্ট হবে না।
  • পুদিনা পাতা সংরক্ষণ করার আগে আপনাকে অবশ্যই ভালো ভালো পাতা নিতে হবে এবং মরা পাতাগুলো ফেলে দিতে হবে তাছাড়া মরা পাতার কারণে ভালো তাও নষ্ট হয়ে যাবে।
আপনি প্রথমে পুদিনা পাতা ডাল থেকে ছাড়িয়ে নেবেন এরপর একটি বাটিতে নিচে টিস্যু রাখবেন তারপর সেই পাতাগুলো সেই বাটিতে রাখবেন আর রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল করবেন যেন পাতায় বিন্দুমাত্র পানি না থাকে। এরপর পাতা রাখা হলে তার উপরে আরেকটি টিস্যু দিয়ে ঢেকে দেন এরপর বাটির ঢাকনা লাগিয়ে দেন। এতে করে সেসব পুদিনা পাতা ১৫ থেকে ২০ দিন ভালো থাকবে।
  • আপনি পুদিনা পাতা রোদে শুকিয়ে সেগুলো গুঁড়ো করেও রাখতে পারেন এটা আপনি মুড়ি মাখানো বা তরকারিতেও ব্যবহার করতে পারবেন।
আপনি পুদিনা পাতা কয়েক পদ্ধতিতে টপ আকারে চাষ করতে পারেন অথবা বিজ আকারেও মাটিতে পুঁতে চাষ করতে পারবেন তবে অবশ্যই আপনাকে পুদিনা পাতা চাষ করার ক্ষেত্রে গাছের প্রতি যত্নবান হতে হবে গাছ খুব তাড়াতাড়ি মরে যাবে। পুদিনা পাতার বেশ কিছু জাত রয়েছে সেগুলোর নাম হচ্ছে
  • আপেল পুদিনা।
  • পায়না আপেল পুদিনা।
  • রেড পুদিনা।
  • অরেঞ্জ পুদিনা।
  • চকলেট পুদিনা।
  • ব্যাসিল পুদিনা।
  • লেভেন্ডার পুদিনা।

আপনি এসব ধরনের জাত আপনি টপ বা কাটিং পদ্ধতিতেও চাষ করতে পারবেন। আপনি এসব পদ্ধতিতে পুদিনা পাতা সংরক্ষণ করলে অনেকদিন যাবত পুদিনা পাতা সংরক্ষণ করে রেখে খেতে পারবেন।

চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা

পুদিনা পাতা আপনার চুলের জন্য বেশি উপকারী।এটা আপনার চুলকে নতুন ভাবে গজাতে সাহায্য করবে এবং চুলের গোড়া মজবুত করবে। আপনি প্রতিদিন পুদিনা পাতার রস বা পুদিনা পাতা তেল ব্যবহার করার কারণে আপনার মাথার খুশকি কমে যাবে এবং চুল ঘন হবে।
  • আপনি তাজা পুদিনা পাতা,দই, মধু,জলপাই তেল এগুলো একসাথে করে ব্লেন্ডার করে নেবেন। এরপর সেগুলো মাথায় এবং চুলে দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিবেন। এরপর ধুয়ে ফেলবেন এতে করে আপনার চুল পড়া কমবে এবং আপনি যদি আপনার চুল বৃদ্ধি করতে চান সেক্ষেত্রে এগুলোর সাথে লেভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে নিন এতে করে আপনার চুল বৃদ্ধি হব।
  • আপনি পুদিনা পাতা বা পুদিনা পাতার তেল শ্যাম্পু এবং নারিকেল তেল একসাথে করে মাথায় ব্যবহার করলে আপনার চুল সিল্কি হবে এবং দেখতে সুন্দর লাগব।
  • আপনার চুলে যদি উকুন হয় এক্ষেত্রে আপনি পুদিনা গাছের শেকর ব্লেন্ডার করে সেসব পেস্ট চুলে এবং মাথায় দিয়ে রাখুন এতে করে আপনার উকুন ভালো হয়ে যাবে। এভাবে সপ্তাহে দুইবার করলে আপনার উকুন একেবারে চলে যাবে।
পুদিনা পাতা, ডিমের সাদা অংশ এবং পেঁয়াজ একসাথে ব্লেন্ডার করে এরপর মাথায় দিয়ে রাখুন। চুলের আগা থেকে গুড়া সব জায়গায় দিবেন। এভাবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট দিয়ে রাখার পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে মাথায় এবং চুলে পুদিনা পাতা দেয়ার ফলে আপনার চুলের গোড়া শক্ত হবে, চুল সিল্কি হবে,চুল পড়া বন্ধ হবে।

আপনি এ পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে চুলের জন্য পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে চুলের জন্য উপকারী হবে এবং আপনার চুল সুন্দর হবে তবে অবশ্যই চেষ্টা করবেন সপ্তাহে একবার থেকে দুইবার, এর বেশি দিবেন না।

পুদিনা পাতা দিয়ে ত্বকের যত্ন

পুদিনা পাতা এমন একটি পাতা যেতে আপনার অসুস্থতা দূর করার সাথে সাথে আপনার ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এবং ত্বকের যত্ন নিতেও সাহায্য করবে। চলুন এবার কিভাবে আপনি পুদিনা পাতা দিয়ে যত্ন নিবেন সে সম্পর্কে জানুন
  • গোলাপ জল,পুদিনা পাতা,আমলকি,বাঁধাকপি ও শশা এসবের নির্যাস একসাথে করে মুখে দিয়ে রাখুন এতে করে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হবে।
  • ব্রণ দূর করতে এবং ত্বকে যদি আপনার তেল ভাব থাকে সেক্ষেত্রে পুদিনা পাতা বেটে মুখে ব্যবহার করুন এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দেন এরপর ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনার মুখে ব্রণ ভালো হয়ে যাবে।
  • অনেক সময় ব্রণ ভালো হওয়ার পরেও মুখে ব্রণের দাগ থেকে যায় এক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে পুদিনা পাতার রস ব্রণের দাগের জায়গায় লাগিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে যান। এরপর সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার ব্রণের দাগ দূর হয়ে যাবে।
  • পুদিনা পাতায় অ্যান্টিঅক্সাইড থাকার কারণে এটা আপনার চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতেও সাহায্য করবে। এজন্য পুদিনা পাতা পেস্ট করে বা পুদিনা পাতার রস চোখের নিচে দিয়ে রাখুন তাহলে আপনার চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
  • আপনার ত্বকের যদি কোথাও ক্ষত হয়ে যায় বা কেটে ছিড়ে যায় সে ক্ষেত্রে আপনি সেই জায়গায় পুদিনা পাতার রস ব্যবহার করুন এতে করে আপনার ক্ষতও খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। যদি সে জায়গায় জ্বালাপোড়া করে তাহলে জ্বালাপোড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
  • পুদিনা পাতা আপনার ত্বককে আর্দ্র ও কোমল রাখতে সাহায্য করবে এবং তাকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতেও পুদিনা পাতা বেশ কার্যকারী।
আপনি পুদিনা পাতা ফেসপ্যাক হিসেবে ভালো ফল পাওয়ার জন্য নিচে কয়েকটি পদ্ধতি বলা হলো-
  • শশা,পুদিনা পাতা,মধু এগুলো একসাথে করে ব্লেন্ডার করে মুখে মাখুন এবং ২০ মিনিট রেখে দিন তারপর ধুয়ে ফেলুন।
  • পুদিনা পাতার রস এবং কলা একসাথে করে তা ভালোভাবে বেটে মুখে ব্যবহার করুন এভাবে সপ্তাহে এক দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
  • পুদিনা পাতা এবং লেবুর রস একসাথে ভালোভাবে বেটে পেস্ট করে নিবেন এবং আপনার মুখের ব্রণের জায়গা বা মেস্তার জায়গায় ব্যবহার করবেন।
  • কিছু পরিমাণ মুলতানি মাটি,পুদিনা পাতা এবং মধু,টক দই একসাথে ব্লেন্ডার করে মুখের উপরে ২০ থেকে ২৫ মিনিট দিয়ে রাখুন এরপর ঠান্ডা পানি ফেলে দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আপনি এভাবে ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের জন্য বেশ উপকারী হবে এবং খুব দ্রুত কাজ করবে।

পুদিনা পাতা খাওয়ার অপকারিতা

পুদিনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এতে ক্ষতিকর দিক বয়ে নিয়ে আনে। এবার চলুন-
  • পুদিনা পাতার কি কি ক্ষতিকর দিক রয়েছে সেসব সম্পর্কে জানুন অতিরিক্ত পুদিনা পাতা খাওয়ার ফলে আপনার রক্তের শর্করা কমিয়ে দিতে পারে এতে করে আপনার জন্য বিপদজনক হবে।
  • আপনি কোন ওষুধের সাথে পুদিনা পাতা বা পুদিনা পাতার রস মিশিয়ে খাবেন না। এটা আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
  • যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা পুদিনা পাতা মাথায় ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন এবং শরীরের কোথাও ব্যথা হলে সেখানেও ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন। যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা ব্যবহার করার ফলে তাদের এলার্জি বেড়ে যেতে পারে।
  • শিশুদের পুদিনা পাতা খাওয়ানোর আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন কারণ তাদের খাওয়ানোর পরে জ্বালাপোড়া বা বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
  • গর্ভবতী অবস্থায় পুদিনা পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। গর্ভবতী অবস্থায় পুদিনা পাতা খাওয়ার ফলে নিজের জন্য এবং বাচ্চা উভয়ের জন্য সমস্যা হতে পারে।
  • আপনার যদি আ্যাসিড রিফ্রেক্স আক্রান্ত সমস্যা থাকে তাহলে পুদিনা পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ পুদিনা পাতা খাওয়ার পরে আপনার অনেক পরিমাণে ক্ষতি হতে পারে। পুদিনা পাতা হজমের জন্য উপকারী কিন্তু এসিডের জন্য ক্ষতিকারি।
অবশ্যই চেষ্টা করবেন অতিরিক্ত পুদিনা পাতা না খাওয়ার। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনার বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে।

পুদিনা পাতার সম্পর্কে মানুষের প্রশ্নের উত্তর FAQs

১ প্রশ্ন পুদিনা পাতা দিয়ে কি কি করা যায়?

উত্তর

আপনি পুদিনা পাতা জ্বর সর্দি কাশি ভালো করার জন্য,রূপচর্চা করার জন্য,চুলের যত্ন নেয়ার জন্য এবং রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।

২ প্রশ্ন পুদিনা পাতা মুখে দিলে কি হয়?

উত্তর

আপনি যদি রূপচর্চার জন্য পাতা ব্যবহার করে থাকেন এক্ষেত্রে আপনার চেহারা সুন্দর হবে। ব্রণ ভালো হয়ে যাবে। চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। চেহারা উজ্জ্বল হবে। আপনি যদি চিবিয়ে খান এক্ষেত্রে আপনার মুখের ঘা দূর হয়ে যাবে এবং বিভিন্ন ইনফেকশন থাকলে সেগুলো দূর হয়ে যাবে। দাঁত শক্ত হবে শ্বাস প্রশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।

৩ প্রশ্ন পুদিনা চা কি দাঁত ও মাড়ির জন্য ভালো?

উত্তর

পুদিনা পাতা চা খাওয়ার ফলে আপনার দাঁত শক্ত হয় এবং মাড়ি মজবুত হয় এছাড়াও আপনার যদি মাড়িতে ঘা থাকে সেই ঘা ভালো হয়ে যায়।

৪ প্রশ্ন টাটকা পুদিনা কি ক্ষতিকর?

উত্তর

টাটকা পুদিনা ক্ষতিকর নয় বরং এটি আরো বেশি উপকারী এবং কার্যকরী। এজন্য চেষ্টা করবেন সবসময় টাটকা পুদিনা পাতা খাওয়ার।

৫ পুদিনা পাতার ছবি
পুদিনা পাতার ছবি

পুদিনা পাতার ছবি

পুদিনা পাতার ছবি

শেষ কথা

পুদিনা পাতা আমাদের জন্য উপকারী একটি প্রাকৃতিক উদ্ভিদ। এজন্য সবসময় চেষ্টা করবেন কিছু পরিমাণ হলেও প্রতিদিন পুদিনা পাতা খাওয়ার এতে করে আপনি সুস্থ থাকবেন এবং উপকৃত হতে পারবেন। অবশ্যই অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারা উপকৃত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url