হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা- নিয়ম
প্রিয় পাঠক আপনি কি হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন,তাহলে পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও হাফ বয়েল ডিম খেলে কি হয় এবং হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন তাহলে হাফ বয়েল ডিম সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন ডিম হাফ বয়েল করতে কত সময় লাগে এবং ডিম হাফ বয়েল করার নিয়ম সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
ডিম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী আর যদি সেটা হাফ বয়েল ডিম হয় তাহলে তো আরো বেশি উপকারী। ডিম আমরা অনেকভাবে খেয়ে থাকি হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার স্বাদ এবং মজা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাঁচা ডিমের বা সিদ্ধ ডিমের তুলনায় হাফ বয়েল ডিমে ভিটামিন পুষ্টিগুণ বেশি থাকে এটি একটি সম্পূর্ণ মানুষের ভুল ধারণা।
আরো পড়ুন :: কাঁচা ডিম খাওয়ার নিয়ম এবং কাঁচা ডিমের উপকারিতা
অনেকে আছে যারা ঠিকমতো হাফ বয়েল ডিম করতে পারে না দেখা যায় ডিম একেবারে কাঁচা থেকে যায় নয়তো একেবারে সিদ্ধ হয়ে যায় যার ফলে হাফ বয়েল ডিমের স্বাদ এবং উপকার কোনটাই পাওয়া যায় না।
হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার উপকারিতা
হাফ বয়েল ডিমে অসংখ্য পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা লুকায়িত রয়েছে যেগুলোর প্রত্যেকটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী। চলুন এবার আমরা সেই উপকারিতা গুলো জানি
- হাফ বয়েল ডিমে কলিন থাকে যা ব্রেনের পাওয়ার বাড়াতে সাহায্য করে।
- হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে এবং বিভিন্ন রকমের হার্ট ব্লক হওয়া,হার্ট অ্যাটাক হওয়া এই সমস্যাগুলো থেকে নিরাপদ থাকা যায।
- এমন কিছু এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যেগুলো চোখের জন্য খুব ভালো। বিশেষ করে চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে ও রাতকানা এবং দূরে দেখতে না পাওয়ার সমস্যাগুলো দূর করে দেয়।
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভিটামিন বি৭ স্বাভাবিক রাখে।
- হাফ বয়েল ডিম খেলে শরীরে ভালো কোলেস্টেরল জমা হতে থাকে এবং খারাপ কোলেস্টেরল গুলো আস্তে আস্তে দূর করতে থাকে।
- হাফ বয়েল ডিম শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দূর করতে বেশ কার্যকারী।
- হাফ বয়েল ডিম খুব সহজে হজম হয় এবং খুব দ্রুত শরীরে ভিটামিনের প্রভাব ছড়িয়ে দিতে পারে।
হাফ বয়েল ডিম খাইলে এই সব উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়। হাফ বয়েল করার ক্ষেত্রে অবশ্যই যেটা পারফেক্ট সেরকম করার চেষ্টা করবেন। অতিরিক্ত কাঁচা করে রাখার ফলে বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে আবার একেবারেই বেশি সিদ্ধ করে নিবেন না।
হাফ বয়েল ডিম খেলে কি হয়
আমাদের অনেকের ধারণা হাফ বয়েল ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে এটা সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। পুষ্টিবিদদের মতে হাফ বয়েল ডিমের তুলনায় সম্পূর্ণ সিদ্ধ করা ডিমে পুষ্টি বেশি থাকে। হাফ বয়েল ডিমে উপকারিতা বেশি কিন্তু সিদ্ধ ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি হাফ বয়েল ডিম খাইলে কিছু পরিমাণে উপকার পাওয়া যায়।
বিপরীতে হাফ বয়েল ডিমের মধ্যে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ব্যাকটেরিয়া এতটাই ক্ষতিকর যে ব্যাকটেরিয়া থেকে জ্বর বমি ডায়রিয়া এই সমস্যাগুলো হতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া ৬ ঘন্টা থেকে ৬ দিনের মধ্যে শরীরে প্রভাব ফেলতে শুরু করে এবং ৪-৫ দিন পরে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
শুধু মাঝখানে আপনার ডায়রিয়া জ্বর আরো বিভিন্ন রকমের সমস্যা হয়। কাঁচা ডিমের তুলনায় হাফ বয়েল ডিম থেকে শরীরে পুষ্টিগুণ সংগ্রহ করা সহজ হয় যেহেতু হাফ বয়েল কাঁচা যে একটু বেশি সিদ্ধ হয়ে থাকে যার ফলে খুব সহজেই খাওয়া যায় এবং হজম শক্তিও ভালো হয়। সিদ্ধ ডিম থেকে শরীরে প্রোটিন সংগ্রহের পরিমাণ থাকে ৯০% আর কাঁচা ডিমে থাকে ৫০%
সুতরাং হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার ফলে সিদ্ধ ডিমের তুলনায় একটু কম প্রোটিন সংগ্রহ করতে পারবে। হাফ বয়েল ডিম খাওয়া কাঁচা ডিমের তুলো খাওয়ার চেয়ে অনেক উত্তম। যদি সম্ভব হয় তাহলে সম্পূর্ণ সিদ্ধ করে দিবে খাওয়ার চেষ্টা করবেন অথবা হাফ বয়েল ডিম খাইলে তা হালকা পরিমাণে হাফ বয়েল রাখবেন একেবারে কাঁচা কাঁচা মত রাখবেন না।
ডিম হাফ বয়েল করতে কত সময় লাগে
হাফ বল ডিম করার ক্ষেত্রে অনেকেই বুঝতে পারে না কত মিনিট রাখতে হবে বা কত সময় ধরে করলে একেবারে পারফেক্ট হাফ বয়েল ডিম করা যায়। এক্ষেত্রে অনেকেই পারফেক্ট হাফ বয়েল ডিম করতে পারে না যার ফলে হাফ বয়েল ডিমের যে একটি স্বাদ রয়েছে বা মজা রয়েছে সেই মজা উপভোগ করতে পারে না।
চুলায় পানি দেয়ার পর থেকে যখন হালকা পানি গরম হবে ওই সময় সেখানে ডিম দিন। এরপরে ঘড়ি দেখে ৬ থেকে ৭ মিনিট সিদ্ধ করুন তারপর আগুন বন্ধ করে দিয়ে এক থেকে দুই মিনিট রেখে দেন. তারপরে নামায় নিবেন তাহলে আপনার একেবারে পারফেক্ট হাফ বয়েল ডিম হয়ে যাবে। এর বেশি সময় সিদ্ধ করতে গেলে আপনার ডিম সম্পূর্ণ সিদ্ধ হয়ে যাবে তখন হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার মজা পাবেন না।
এজন্য অবশ্যই ৬ থেকে ৭ মিনিটের বেশি কখনো সিদ্ধ করবেন না বা এর কমও সিদ্ধ করবেন না তাহলে আপনার দিন কাঁচা রয়ে যাবে।
ডিম হাফ বয়েল করার নিয়ম
হাফ বয়েল ডিম করার ক্ষেত্রে আপনি যদি সম্পূর্ণ নিয়ম অনুসরণ করে ডিম সিদ্ধ করেন তাহলে একেবারে পারফেক্ট হাফ বয়েল ডিম বানাতে পারবেন। নিচে নিয়ম বলা হলো
- একটি পাত্রে পানি নিবেন পানির পরিমাণ এতটুকু হবে যাতে ডিম পাতিলের মধ্যে ডিম সম্পন্ন ডুবে থাকতে পারে।
- এরপরে চুলায় দিয়ে পানি গরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন পানি গরম হলে সেখানে আপনি যে কয়টি ডিম সিদ্ধ করবেন সে কয়টি ডিম দিয়ে দেন।
- এরপরে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিবেন তারপর ৬ থেকে ৭ মিনিট ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করবেন।
- সিদ্ধ হয়ে গেলে আগুন বন্ধ করে দিয়ে এক মিনিট চুলার উপর রেখে দিবেন।
- তারপরে ঠাণ্ডা পানিতে আরেক মিনিট ডুবিয়ে রাখবেন তাহলে আপনার একেবারে পারফেক্ট হাফ বয়েল ডিম হয়ে যাবে।
- আপনি যদি সিদ্ধ করার সময় সামান্য পরিমাণে লবন দেন তাহলে আরো ভালো সিদ্ধ হবে।
- হাফ বয়েল ডিম বলতে বোঝায় উপরে সাদা অংশ সম্পূর্ণ সিদ্ধ হবে এবং ভেতরের কুসুম ৬০% সিদ্ধ হবে।
আরেকটি জরুরী বিষয় হচ্ছে ফ্রিজ থেকে বের করে কখনোই গরম পানিতে সিদ্ধ করার জন্য ডিম দিবেন না এতে করে ডিম ফেটে যেতে পারে। ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে কিছুক্ষণ বাহিরে রাখার পরে সিদ্ধ করতে দিবেন।
হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার অপকারিতা
হাফ বয়েল ডিম খেলে অনেক রকমের ক্ষতি হতে পারে তাই আমাদের জানা জরুরি হাফ বয়েল ডিম খেলে কি কি ক্ষতি
- হাফ বয়েল ডিম পেটে ঠিকমতো হজম না হলে ডায়রিয়া আরো বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে।
- যাদের হজম শক্তি কম তারা কোনভাবেই হাফ বয়েল বা কাঁচা ডিম খাবেন না।
- হাফ বয়েল ডিমে জীবাণু থাকতে পারে সেগুলো বিষ প্রক্রিয়ার মত কাজ করে।
- সিদ্ধ ডিমের তুলনায় হাফ বয়েল ডিম বা কাঁচা ডিমে প্রোটিন কম থাকে।
- হাফ বয়েল ডিমের সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে যা বমি ডায়রিয়া জ্বর টাইফয়েড এরকম সমস্যার সম্মুখীন করে থাকে।
- হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা হতে পারে বা যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা হাফ বয়েল ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
- অতিরিক্ত এবং নিয়মিত হাফ বয়েল ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে। ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সিদ্ধ ডিম খাওয়ায় উত্তম।
হাফ বয়েল ডিম সম্পর্কে মানুষের প্রশ্নের উত্তর
১ প্রশ্ন হাফ বয়েল নাকি সিদ্ধ ডিম কোনটা ভালো?
উত্তর
হাফ বয়েল ডিমের তুলনায় সিদ্ধ ডিমের পুষ্টি বেশি থাকে এবং হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার ফলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কারণ হাফ বয়েল এবং কাঁচা ডিমে ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু থাকে কিন্তু সিদ্ধ ডিমে সেসব থাকে না।
২ প্রশ্ন ডিম রান্না করলে কি পুষ্টি নষ্ট হয়?
উত্তর
ডিম রান্না করার কারণে কিছু পরিমাণ পুষ্টিগুণ ডিম থেকে হারিয়ে যায়। এজন্য উচিত হবে সিদ্ধ করার পরে খেয়ে নেওয়া বা তরকারির সাথে রান্না করলে একেবারে শেষে ডিম দেওয়া।
৩ প্রশ্ন ডিমের সাদা অংশে কি প্রোটিন থাকে?
উত্তর
কুসুমের তুলনায় ডিমের সাদা অংশে বেশি পরিমাণে প্রোটিন থাকে এবং ডিমের কুসুমে কলেস্টোরল থাকে কিন্তু ডিমের সাদা অংশে তা থাকে না।
৪ প্রশ্ন দিনে তিনটি ডিম খাওয়া যাবে কি?
উত্তর
একজন মানুষ দিনে কয়টা ডিম খাবে তা নির্ভর করে মানুষের শারীরিক অবস্থার উপরে। একজন সুস্থ মানুষ দিনে সর্বোচ্চ তিনটি ডিম খেতে পারবে এর বেশি খাওয়া উচিত হবে না।
শেষ কথা
হাফ বয়েল ডিম অন্য ডিমের তুলনায় মজাদার কিন্তু পুষ্টিগুনের দিক দিয়ে সিদ্ধ ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। এজন্য উচিত হবে খুব কম সময় হাফ বয়েল ডিম খাওয়া এবং অধিকাংশ সময় সিদ্ধ ডিম খাওয়া। আমার পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও হাফ বয়েল ডিমের যাবতীয় তথ্য জানতে পারে।
সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url