একেবারে ধূমপান ছাড়ার পরীক্ষিত পদ্ধতি - ধূমপান ছাড়ার ১৯ টি উপায়
প্রিয় পাঠক আপনি কি ধূমপান ছাড়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন,তাহলে এই পোস্টে আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে ধূমপান ছাড়ার উপায়,ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় এবং ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা ও ধূমপান ছাড়ার পর করণীয় কি কি সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন তাহলে ধূমপান সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন ধূমপান ছাড়ার পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, ধূমপান ছাড়ার নতুন ঔষধ, ধূমপান ছাড়া ইসলামিক উপায় এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকার উপায়, সিগারেট ছাড়ার পর কাশি ও ধূমপান করলে কি হয়, ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি সেগুলো সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
সিগারেটের প্যাকেটের উপরে লেখা থাকে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান কোনভাবে আমাদের শরীরের জন্য উপকারিতা বয়ে নিয়ে আনে না। সবসময় তা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর দিকগুলো বয়ে নিয়ে আসে। যারা ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করে কিন্তু কিভাবে ছাড়বে বুঝতে পারেন না তাদের জন্য আজকে এই পোষ্টের মধ্যে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করা হবে।
এখানে এমন কিছু উপায় বলা হবে যেগুলো মেনে চললে খুব সহজেই আপনি ধূমপান থেকে বিরত থাকতে পারবেন।
ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা
যখন ধূমপান ছেড়ে দেওয়া হয় তখন আমাদের শরীরে অনেক রকমের উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। চলুন আমরা জানি ধূমপান ছাড়ার কারণে কি কি উপকারিতা আমরা পাবো
- ধূমপানের কারণে রক্তচাপ কখনো বেড়ে যায় আবার কখনো কমে যায় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান ছাড়ার কারণে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। আমাদের রক্তে যে অক্সিজেন চলে সেটার মাত্রাও স্বাভাবিক থাকে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেয় যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
- খাবারের প্রতি রুচি আসে এবং খাবার আগের তুলনায় অনেক বেশি সুস্বাদু অনুভব হয়।
- শরীরের রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটে এবং রক্তে কোন রকমের দূষিত পদার্থ মিশ্রিত হয় না।
- ধূমপানের কারণে হৃদরোগকে ঝুঁকি বেড়ে যায় আর ধূমপান ছেড়ে দিলে হৃদরোগের ঝুকি অনেকটাই কমে যায় এবং ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও অর্ধেক কমে যায়।
- শ্বাস প্রক্রিয়া সহজ হয় যার কারণে নিঃশ্বাস নেওয়া ভালোভাবে যায় এবং বুকের মধ্যে প্রশান্তি লাভ অনুভব হয়।
- কোন কিছুর ঘ্রাণ নেওয়ার শক্তি বেড়ে যায়। ধূমপান অবস্থায় স্বাভাবিকের তুলনায় ঘ্রাণ শক্তি অনেকটা কমে যায়। যখন আপনি ধূমপান ছেড়ে দিবেন তখন দেখবেন আপনার ঘ্রাণ শক্তি অনেক সুন্দর হয়েছে এবং বেড়ে গেছে।
- ধূমপান অবস্থায় নার্ভের কার্যক্ষমতা অনেকটাই কমে যায় যখন ধূমপান ছেড়ে দেওয়া হয় তখন নার্ভের কার্যক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যায়।
- গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা ধূমপান ছেড়ে দেয় তাদের শরীরের বিভিন্ন কোষে ১০ হাজার পর্যন্ত জিনগত পরিবর্তন হয়।
- ধূমপান ত্যাগ করলে শরীর অনেকটা সুস্থ হয় এবং কাজ করার শক্তিও অনেক বাড়ে।
- মন-মানসিকতা আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিষ্কার হয় এবং চিন্তা করার শক্তিও বৃদ্ধি হয়।
- যখন আপনি ধূমপান ছেড়ে দিবেন তখন স্টক করার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
- ধূমপানের সঙ্গে নিকোটিন আমাদের শরীরে প্রবেশ করে যার কারণে ঘুমের অনেক ব্যাঘাত ঘটে এবং রাতে ঘুমের সমস্যা হয়। ধূমপান ছেড়ে দিলে ঘুমের সমস্যা কমে যায় এবং ঘুম অনেক ভালো হয়।
যারা ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার জন্য চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা ধূমপান ছেড়ে দিলে এসব উপকারিতা গুলো পাবেন। ধূমপান বরাবরই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এজন্য চেষ্টা করবেন ধূমপান থেকে বিরত থাকার।
ধূমপান ছাড়ার পর করণীয়
মানুষ মূলত ধূমপান করে থাকে অনেক কারণে সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মানসিক চাপ কমানোর জন্য। যখন আপনি ধূমপান ছেড়ে দিবেন তারপর আপনার যে সময় মানসিক চাপ কাজ করবে তখন পুনরায় ধূমপানের দিকে আকৃষ্ট হবেন না। মানসিক চাপ কমানোর জন্য নতুন কোন পন্থা অবলম্বন করুন যেমন কারো সাথে গল্প করা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা যেভাবে সম্ভব হয় সেভাবে মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করবেন।
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। অনেক সময় দেখা যায় রাতে জেগে থাকার কারণে ধূমপানের প্রতি চাহিদা বেড়ে যায়। তাই উচিত হবে কাজ না থাকলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া এবং দিনেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো। ধূমপান ছাড়ার পরে মাসে একবার বা সপ্তাহে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন তাহলে আপনার শরীরের অবস্থা বোঝা যাবে।
প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট মডিটেশন চর্চা করবেন। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি শারীরিক ভাবেও সুস্থ থাকা যায়। শাক সবজি এবং ফলমূল খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিবেন। ফলমূলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক জরুরী। যখন ধূমপান করার প্রতি মন টানবে তখন ডাই ফ্রুটস যেগুলো রয়েছে যেমন বাদাম কিসমিস এগুলো খাবেন।
প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে কিছু সময় শরীর চর্চা করবেন। প্রতিচি মানুষের উচিত প্রতিদিন কিছু সময় করে শরীর চর্চা করার। ধূমপান ছাড়ার পরে এমন মানুষ থেকে দূরে থাকবেন বা এমন আড্ডা থেকে দূরে থাকবেন যারা আপনার পাশে বসে ধূমপান করে। সব সময় নিজেকে কোন না কোন কাজে ব্যস্ত রাখবেন।
যদি কোন কাজ না থাকে তাহলে বই পড়ার চেষ্টা করবেন এতে করে আপনার মনোযোগ ধূমপান থেকে দূরে থাকবে। যদি এসব কাজও আপনার দ্বারা সম্ভব না হয় তাহলে ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করবেন অথবা youtube এ ভিডিও দেখবেন। দোকানে বা আড্ডায় চা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এতে করে আপনার সিগারেট খাওয়ার প্রতি নেশা হতে পারে।
সব সময় চেষ্টা করবেন বাসায় চা খাওয়ার তাহলে আপনি ধূমপান থেকে বিরত থাকতে পারবেন। বেশি বেশি ইসলামিক নসিহত যেগুলো রয়েছে সেগুলো শোনার চেষ্টা করবেন। মনকে এইটা বলে বুঝ দিবেন যে ধূমপান আমার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমার শরীরকে ভালো রাখা অবশ্যই আমার দায়িত্ব।
আরো পড়ুন :: লবঙ্গ খাওয়ার ২০ টি চমৎকার উপকারিতা
ধূমপান ছাড়ার পরে আপনি নিয়মিত এই কাজগুলো করবেন তাহলে দেখবেন আপনার কখনো ধূমপানের প্রতি আর মনোযোগ যাবে না এবং আপনি এই মরণব্যাধি থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।
ধূমপান ছাড়ার উপায়
যারা সিগারেট ছাড়তে চান কিন্তু পারছেন না তাদের জন্য কিছু উপায় রয়েছে। সেই উপায়গুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই ধূমপান থেকে বিরত থাকতে পারা সম্ভব।
- ধুমপান করার পরিবর্তে ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। যখন ধূমপানের প্রতি চাহিদা উঠবে তখন যেকোনো একটি ফল নিয়ে খেতে শুরু করবেন।
- আপনার যদি পছন্দের কোন চকলেট অথবা চুইংগাম থাকে সেটা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করেন।
- যেই সময় সিগারেট খেতে মন চাইবে তখন একটি লবঙ্গ নিয়ে চুষতে শুরু করুন। দেখবেন সিগারেটের উপর থেকে নেশা অনেকটা কেটে গেছে।
- কখনোই টং দোকান অথবা আড্ডায় বসে চা খাবেন না এতে করে আপনার অনিচ্ছাকৃতই সিগারেটের প্রতি টান আসবে এবং খাওয়া হয়ে যাবে। তাই সবসময় বাসায় অথবা একা একা চা খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- মদ পান করা থেকে বিরত থাকুন। মদের সাথে সিগারেট একটি সম্পৃক্ত বিষয় এজন্য যখন আপনার মদপান করা হয় তখন সিগারেটের উপর টান আসে এজন্য মদ পান করা থেকে বিরত থাকবেন।
- প্রচুর পরিমাণে ফলমূল এবং শাক সবজি খেতে থাকবেন। এগুলো খাওয়ার কারণে সিগারেটের প্রতি কম চাহিদা আসবে।
- সবসময় নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন। নিয়মিত যে রুটিন রয়েছে তা পরিবর্তন করে এমন ভাবে রুটিন তৈরি করবেন যেন আপনি কোন সময় ফাঁকা না থাকেন।
- নিজের মনোযোগকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন। যেই সময় আপনার ধূমপানের মন চাইবে তখন নিজের মনকে অন্যদিকে ঘুরে দিন যেমন ইউটিউবে ভিডিও দেখা অথবা বই পড়া বা যেকোন কাজ করার দিকে তাহলে দেখবেন অনেকটাই ইচ্ছা কেটে যাবে।
- এমন বন্ধুবান্ধব থেকে এড়িয়ে চলবেন যারা ধূমপান করে। তাদের সাথে থাকার কারণে আপনি কখনো ধূমপান ছাড়তে পারবেন না।
- এমন জায়গায় যাতায়াত করা থেকে বিরত থাকবেন যেখানে গেলে আপনি খুব সহজেই ধূমপান করতে পারবেন।
- প্রতিদিন শরীর চর্চা করবেন এবং যেই সময় ধূমপানের প্রতি ইচ্ছা জাগবে তখন বাহিরে বের হয়ে অথবা নিজের ঘরে হাঁটাহাঁটি করা শুরু করবেন।
- ঘরে কোন রকমের ধূমপান জাতীয় কিছু রাখবেন না এমনকি সিগারেটের প্যাকেটে,ম্যাচ,ছাইদানিরাখা থেকে বিরত থাকুন।
- মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে যে আমি কোন অবস্থাতেই ধূমপান করবো না ও নিজের মনকে বুঝতে হবে তা আমার শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- কমল যেসব পানীও রয়েছে সেগুলো খাওয়ার অভ্যাসও ছেড়ে দিবেন এবং এগুলোর পরিবর্তে ফলের রস খাবেন।
- সবাইকে জানিয়ে দিবেন আপনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন এতে করে কেউ আপনাকে দ্বিতীয়বার ধূমপান করার জন্য বলবে না।
- নিজেকে পুরস্কার দিবেন যেমন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করবেন এক সপ্তাহ ধূমপান করবেন না। যখন এক সপ্তাহ হয়ে যাবে তখন নিজেকে কোন একটা কিছু কিনে গিফট করবেন। এভাবে এক মাস তারপর দুই মাস তাহলে আপনার জন্য ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সহজ হবে।
- যখন ধূমপান করতে ইচ্ছা হবে তখন এমন কাউকে কল দেন যার সাথে আপনার মন খুলে কথা বলতে পারবেন। তার সাথে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলতে থাকুন দেখবেন ধূমপানের উপর থেকে আপনার ইচ্ছা হারিয়ে গেছে।
- এই চিন্তা থেকে দূরে থাকবেন যে এই বারই শেষ খাওয়া বা এই টানই শেষ টান যদি এমনটা ভাবেন তাহলে আপনি কখনো সিগারেট ছাড়তে পারবেন না।
- পূর্বে যদি এমন হয় আপনি ধূমপান ছাড়ার ইচ্ছা করার পরও ছাড়তে পারেন নাই তাহলে আপনি সেই বিষয়কে চিহ্নিত করে রাখবেন যাতে করে সেই বিষয়ে সামনে আসলে আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন।
আপনি এসব উপায় অনুসরণ করলে খুব সহজে ধূমপান ছেড়ে দিতে পারবেন। যদি এগুলো উপায় আপনার কাজ না হয় তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে কোন ওষুধ অথবা স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন যা আপনাকে ধূমপান করা থেকে বিরত রাখবে।
ধূমপান ছাড়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পৃথিবীর যেকোন অভ্যাসই যখন ছেড়ে দেওয়া হয় তার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আমাদের শরীরে এবং ব্যবহারে প্রকাশ পেয়ে থাকে। তেমনিভাবে যখন ধূমপান ছেড়ে দেওয়া হবে তখন আমাদের শরীরে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কিছু সময় ধরে রয়ে যায় যেমন তিন চার সপ্তাহ বা দেড় মাস পর্যন্ত।
ধূমপান ছাড়ার পরে মাথা ব্যাথার পরিমান অনেকটা বেড়ে যায় এবং এই ব্যথা কিছুদিন যাবত রয়ে যাবে। মেজাজ অনেকটা খিটখিতে থাকে যার কারণে ভালো কোন বিষয়ে আপনার কাছে বিরক্ত কর মনে হবে। খুব সহজে সবার সাথে মিশতে পারবেন না। নিজের ব্যবহার অনেকটাই অনিচ্ছাকৃত খারাপ হয়ে যাবে। বিনা কারণে বমি বমি ভাব হবে এবং অনেক সময় বমি হয়ে যাবে।
এটি কোন রোগের কারণে নয় বরং ধূমপান ছাড়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় এটি। প্রচন্ড পরিমাণে ক্ষুধা লাগা শুরু হবে। খাবারের প্রতি চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যাবে। এমনও হবে দিনে 6 থেকে সাত বার খাওয়া হয়ে যাবে। মানসিক চাপ বেশি হবে এবং হতাশায় বেড়ে যাবে এজন্য আপনার উচিত হবে মানসিক চাপ কমানোর অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করা অথবা কোন এক বন্ধুর সাথে খোলামেলাভাবে কথা বলা।
নিজের ভিতরে আতঙ্ক ভাব কাজ করবে মনে হবে এই বুঝি কিছু একটা হলো বা এরকম জাতীয়। এতে করে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নিজের ভিতরে অস্থিরতা ভাব কাজ করবে। কোন কিছুতেই মনোযোগ বসানো সহজ হবে না। অনেক সময় দেখা গিয়েছে ধূমপান ছাড়ার কারণে ওজন বেড়ে যায় অথবা অনেক সময় ওজন কমে যায়।
শারীরিক ভাবে নিজেকে অসুস্থ মনে হতে পারে। ধূমপান ছাড়ার পরে মনে হবে আবার ধূমপান করি এই সময় নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করবেন। ধূমপান ত্যাগ করলে শরীরে এসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এতে করে ভয় পাওয়া বা ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নাই। এগুলো ক্ষণিকের জন্য এই সময় গুলো পার হয়ে গেলে দেখবেন আপনার শরীরে অনেক উপকারিতা প্রবেশ করছে।
এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো সাময়িক সময়ের জন্য এজন্য এই সময় নিজেকে স্থির রাখবেন।
ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায়
এমন কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলেও আপনি ধূমপান থেকে বিরত থাকতে পারবেন। আমাদের প্রত্যেকের বাসাতে লবঙ্গ থাকে। অধিকাংশ সময় লবঙ্গ চুষতে থাকবেন তাহলে আপনার ধূমপানের প্রতি নেশা কেটে যাবে। আদা চিবিয়ে খাবেন অথবা চুষতে থাকবেন। লাল চা অথবা আদা চা খেতে পারেন।
মৌরি অথবা জাউন গুড়ো করে খেতে পারেন অথবা সেগুলো দানা অবস্থাতেই চিবিয়েও খাবেন। ব্ল্যাক সল্ট,মৌরি যাওনের গুঁড়ো এবং লেবুর রস একসাথে করে শরবত বানিয়েও আপনি খেতে পারবেন। যখন ধূমপানের প্রতি ইচ্ছা জাগ্রত হবে তখন এভাবে শরবত বানিয়ে খাবেন। বাড়ির মধ্যে থাকলে নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখবেন।
যেকোনো কাজে ব্যস্ত থাকবেন অথবা বাসার মানুষের সাথে আড্ডা দিবেন। বাসা থেকে ধূমপানের যে সামগ্রীগুলো রয়েছে যেমন ছাইদানি ম্যাচ গ্যাস লাইট সিগারেটের প্যাকেট এগুলো সব কিছু ফেলে দিয়ে আসবেন। টক জাতীয় যে ফলগুলো রয়েছে বিশেষ করে আমলকি এই ফলগুলো খাবেন অথবা এগুলো দিয়ে শরবত বানিয়ে খাবেন।
মধু আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখার জন্য মধুও সাহায্য করে। দারুচিনি চুষতে থাকবেন অথবা পিষে গুড়ো করেও খেতে পারেন। গ্রিন টি পান করতে অভ্যস্ত হন। গ্রিন টি পান করলে অনেকটাই ধূমপানের প্রতি আকৃষ্টতা কমে যায়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অথবা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ বা ই সমৃদ্ধ যে ক্যাপসুল গুলা রয়েছে সেগুলো খাবেন।
আঙ্গুর অথবা আঙ্গুরের রস খেতে শুরু করবেন। এছাড়াও ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিবেন এবং মাংস জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। সারারাত ওটস ভিজিয়ে রেখে পরের দিন তা ১০-১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে খাবেন এতে করে শরীর থেকে নিকোটিন বের হওয়ার পাশাপাশি সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাও অনেক কমতে থাকে।
যখন সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা হবে তখন মরিচের গুঁড়ো বড় এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করে নিবেন এতে করে আপনার সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা একেবারেই চলে যাবে। এই বিষয়টা হাস্যকর মনে হলেও অনেক বেশি কার্যকারী। দিনের মধ্যে দুই থেকে তিনবার মুলোর রস খাবেন। যদি শুধু মুলার রস খেতে না পারেন তাহলে মূলরসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিবেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন। যখনই সিগারেটের প্রতি ইচ্ছা জাগবে তখনই পানি পান করতে শুরু করবেন অথবা ঘরের মধ্যে হাঁটাচলা করা শুরু করে দিবেন দেখবেন আপনার মনোযোগ সিগারেট থেকে সরে গেছে। আপনি এসব ঘরোয়া উপায়ে অনুসরণ করলে সিগারেট ছেড়ে দিতে পারবেন।
এরপরও যদি আপনার ধূমপানের প্রতি চাহিদা বাড়তে থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন অথবা উপরে যেসব আরো উপায় বলা হয়েছে সেগুলো অনুসরণ করবেন তাহলে আপনি ধূমপান করা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন।
ধূমপান ছাড়ার নতুন ঔষধ
ধূমপান ছাড়ার যেমন উপায় রয়েছে তেমনি ভাবে কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো সেবন করলে ধূমপান করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায়। ধূমপান থেকে বিরত থাকার জন্য কখনোই নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া উচিত নয় বরং আপনার উচিত হবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার মাধ্যমে ওষুধ সেবন করা। এছাড়াও অনেক রকমের স্প্রে পাওয়া যায় যেগুলোর মাধ্যমেও ধূমপান করা থেকে নিজেকে আটকে রাখা যায়।
স্প্রে হোক অথবা ওষুধ আপনি যেটা গ্রহণ করতে চান আপনার উচিত হবে আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা এবং নিজের অবস্থা বলার যদি ডাক্তার আপনাকে ওষুধ দেয় তাহলে আপনার ওষুধ সেবন করা উচিত হবে। অন্যথায় তা হিতের বিপরীত হয়ে দাঁড়াবে। প্রথমে আপনার উচিত হবে যেসব উপায় রয়েছে সেই উপায়গুলো অনুসরণ করা তাহলে আপনার জন্য ভালো হবে
এবং আপনি ধূমপান করা থেকেও নিজেকে আটকে রাখতে পারবেন। ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন যেই বিষয় তা হচ্ছে মনোবল শক্তি। যখন আপনার মনোভাব শক্তি শক্তিশালী হবে তখন আপনি খুব সহজেই ধূমপান ছেড়ে দিতে পারবেন। এতে করে আপনার কোন রকমের ওষুধ অথবা স্প্রে সেবন করার প্রয়োজন হবে না।
ধূমপান ছাড়ার ইসলামিক উপায়
ইসলামে নেশাকে হারাম বলা হয়েছে। এরপরও অনেক সময় অনেক কারণে ধূমপান সেবন হয়ে যায়। আপনি যদি ধূমপান সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার প্রথমে যেই কাজ তা হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। যখন আপনি নিয়মিত নামাজ পড়তে থাকবেন তখন আপনার মনের ভিতরে একটি পরিবর্তন কাজ করবে
তখন আস্তে আস্তে দেখা যাবে আপনি খুব সহজেই ধূমপান ছেড়ে দিতে পারবেন। অনেকে আছে যাদের সন্ধ্যার সময় অথবা বিকেলে বা সন্ধ্যার কিছু পরে ধূমপান করার অভ্যাস এই সময় যদি আপনি নামাজের দিকে যান তাহলে ধূমপান করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন। ভালো ভালো বক্তার যেসব ওয়াজ রয়েছে সেগুলো শুনতে থাকবেন
এবং আস্তে আস্তে চেষ্টা করবেন সম্পূর্ণ ইসলাম অনুযায়ী চলার। ওয়াজ শোনার পাশাপাশি যেসব ভিডিওতে ধূমপানের ক্ষতিকর যেসব দিক রয়েছে সেগুলো বর্ণনা করা হয় এবং ধূমপান করলে কি কি শাস্তি পেতে হবে সেগুলো বর্ণনা করা হয় সেগুলো শুনবেন। তাহলে আপনার মনের ভিতরে একটি ভয় কাজ করবে এবং আপনি ধূমপানকে ছেড়ে দিতে পারবেন।
আরো পড়ুন :: ডাবের পানির বিশেষ ২৫ টি উপকারিতা
যখন আপনি ইসলাম মেনে চলবেন অথবা নিজেকে ধার্মিক হিসেবে গড়ে তুলবেন এমনিতেই আপনি ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন। অপচয় করা কখনোই উচিত নয়। অপচয় করলেও শাস্তি পেতে হবে। সিগারেট খাওয়া সম্পূর্ণ একটি অপচয় এজন্য আপনার মনে ভয় রাখতে হবে যে আপনি অপচয় করছেন এজন্য আপনাকে অপচয় করার শাস্তি পেতে হবে।
সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন রোজা থাকার চেষ্টা করবেন। একটা জিনিস খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন রমজান মাসে অনেকে আছে যারা একমাস পর্যন্ত নিজেকে সিগারেট খাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে। যখন আপনি সপ্তাহে দুই তিন দিন রোজা রাখবেন তখন আপনার সিগারেটের মাত্রা অনেক কমে যাবে। আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করতে হবে এবং প্রতি নামাজের পরে দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এই ফিতনা থেকে বিরত রাখে।
ধূমপান থেকে বিরত থাকার উপায়
ধূমপান যারা ছাড়তে চান তাদের জন্য প্রথমে যেই বিষয়ে জরুরী তা হচ্ছে নিজের মনোভাব শক্তি। আপনি যখন মনোবল শক্ত করবেন তখন এমনিতে ধূমপান ছেড়ে দিতে পারবেন। চকলেট অথবা চুইংগাম সব সময় চাবাতে থাকবেন। নেশা জাতীয় যেসব দ্রব্য রয়েছে যেমন মদ গাজা এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন। বই পড়া শুরু করুন অথবা ইউটিউবে ভিডিও দেখতে থাকবেন। মানসিক চাপ আসলে কারো সাথে কল দিয়ে সবকিছু শেয়ার করবেন। যখন সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা হবে তখন কারো সাথে আড্ডা দিবেন অথবা নিজেকে কোন কাজে ব্যস্ত করে নিবেন। প্রতিদিন ব্যায়াম করবেন।
ফল এবং শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে শুরু করবেন। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবেন। কখনোই দেরিতে ঘুমাবেন না। মাঝেমধ্যে নিজেকে কিছু গিফট করবেন। কোমল পানীয় খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। এমন মানুষ থেকে দূরে থাকবেন যারা সিগারেটের প্রতি আসক্ত। বাহিরে যেকোনো দোকানে অথবা কোন আড্ডায় চা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
এমন রাস্তায় দিকে যাবেন না যেদিকে গেলে আপনার সিগারেট খাওয়ার চাহিদা বেড়ে যায়। এমন চিন্তা ভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন যে চিন্তাভাবনার কারণে আপনার ধূমপানের প্রয়োজন হয়। লবঙ্গ অথবা আদা জিরা কালোজিরা মৌরি ধনিয়া এগুলো চুষবেন অথবা চাপাবেন। মধু পানি দিয়ে একসাথে মিশিয়ে খাবেন অথবা মধু দিয়ে চা বানিয়েও খেতে পারেন।
ফলের রস পান করবেন। সবাইকে জানিয়ে দিবেন যে আপনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন। এমন বস্তু নিজের কাছ থেকে দূরে রাখবেন যেগুলোর প্রতি বৃষ্টি পড়লে ধূমপানের প্রতি চাহিদা বাড়ে যেমন ছাইদানি ম্যাচ গ্যাস লাইট সিগারেটের প্যাকেট। গ্রিন টি পান করবেন। যখন ধূমপানের প্রতি মন টানবে তখন হাটাহাটি করতে শুরু করবেন।
যেসব উপায় বলা হলো এগুলো মেনে চললে আপনি ধূমপান থেকে চিরতরে বিরত থাকতে পারবেন এবং কখনোই আপনার ধূমপানের প্রতি মন টানবে না।
ধূমপান করলে কি হয় - ধূমপানের ক্ষতিকর দিক
ধূমপান এমন একটি জিনিস যা তার প্যাকেটদের উপরে লেখা থাকে যে এটি ক্ষতির কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ধূমপানের অভ্যাস থাকলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমনকি হার্ট অকেজও হয়ে যায়। ধোয়া ব্রেনে গিয়ে স্টক হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ধূমপান করলে রক্তনালীতে একজুমা জমা হয় যার কারণে হৃদপিনদের পেশীতে যতখানি অক্সিজেন প্রয়োজন ততটুকু অক্সিজেন পায় না।
ফুসফুসের অনেক ক্ষতি হয়। ফুসফুস থেকে তা আস্তে আস্তে ক্যান্সারের রোগ ধারণ করে। যাদের হাঁপানি অথবা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তারা ধূমপান করলে হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্ট দ্রুতই বেড়ে যাবে। অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা ধূমপান করে বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের বাচ্চা হয় না। এমনকি ধূমপানের ফলে বাচ্চা সঠিকভাবে পৃথিবীতে আসে না এবং বিভিন্ন অঙ্গ ভিন্ন রকম হয়ে যায়।
আস্তে আস্তে চোখের দৃষ্টি কমে যেতে থাকে এবং চোখে বিভিন্ন রকমের সমস্যা তৈরি হয় যেমন সানি পরা,দূরে দূরের কিছু দেখতে না পাওয়া,রাতে কম দেখা। ধূমপান করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ডায়াবেটিস আরো বেশি হয়ে যায়। ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্ষতি করে না বরং পেটেরও ক্ষতি করে এবং পুরো শরীরের জন্যই তা ক্ষতিকর।
ধূমপান নিয়মিত করতে থাকলে আস্তে আস্তে শরীরকে দুর্বল করে দেয় এবং কাজ করার শক্তি অনেকটা কমে যায়। কিডনির কার্যক্ষমতা আস্তে আস্তে কমতে থাকে এবং কিডনির রক্ত প্রণালীর ক্ষতি হয়। সিগারেট নিকোটিন থাকে যা মাথার ব্রেনের উপরে প্রভাব ফেলে এর ফলে রাত্রে ঠিকভাবে ঘুম হয় না এবং মাথা ব্যথা করে।
আস্তে আস্তে মাথার চুল পড়ে যেতে থাকে এবং অল্প বয়সেই চুল পেকে যায়। ধুমপান যৌন ক্ষমতার উপরে প্রভাব ফেলে যার ফলে আস্তে আস্তে যৌন ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। ধূমপান করলে বাজে গন্ধ বের হয়। অনেক সময় দেখা যায় ধূমপানের বাজে গন্ধের কারণে অনেক বন্ধু আমাদের থেকে দূরে সরে যায়। ধূমপান একটি সম্পন্ন অপচয়।
নিয়মিত দেখা যায় ধূমপানের পিছনে অনেকটা খরচ হয় যা আমাদের জন্য আর্থিকভাবে ক্ষতিকর। এই সব ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য আপনার উচিত হবে কখনোই ধূমপান না করা। আপনি যত বেশি ধুমপান করবেন তত বেশি আপনার জন্য এবং আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
শেষ কথা
ধূমপান কখনোই আমাদের জন্য উপকারী নয়। সবসময়ই ধূমপান আমাদের শরীরের জন্য এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিকর। তাই আপনার উচিত ধুমপান এখনই ছেড়ে দেওয়া ।আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে।
সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url