বিদেশ থেকে পার্সেল আনার নিয়ম- যেসব পদ্ধতিতে বিদেশ থেকে পণ্য আনবেন
প্রিয় পাঠক আপনি কি বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন, তাহলে এ পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোস্টের মধ্যে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার নিয়ম এবং বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি পদ্ধতি সম্পর্কে বলবো।এছাড়াও আপনি এ পোস্টে পাবেন বিদেশ থেকে কি কি আনা যাবে, বিদেশ থেকে কিভাবে টাকা পাঠায়, বিদেশি পণ্য নিয়ে ব্যবসা করার উপায়। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
আমাদের দেশে আমদানি এবং রপ্তানির মাধ্যমে একটি বড় পরিমাণ আয় করে থাকে। আমদানি বলতে বোঝায় বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে এসে সেসব বাংলাদেশে বিক্রি করা আর রপ্তানি বলতে বুঝায় আমাদের দেশে তৈরি কিন্তু পণ্য বা ফসল অন্য দেশে বিক্রি করা। এই আমদানি এবং রপ্তানি করার জন্য কিছু নিয়ম-কানুনের প্রয়োজন হয় যেগুলো ছাড়া আপনি এই ধরনের ব্যবসা করতে পারবেন না। অনেকে জীবিকার তাগিদে বিদেশে যায়।
আরো পড়ুন :: সোনালী ব্যাংকে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়
সেখানে কাজ করে পরিবারের জন্য টাকা পাঠায়। প্রবাসীর মাধ্যমে বড় পরিমাণে একটা টাকা সরকারের ফান্ডে জমা হয়। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার পদ্ধতি আপনি যখন সম্পন্ন ভালোভাবে জানবেন তখন আপনি বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে ব্যবসা করে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন। এই পোস্টে বিদেশ থেকে আমদানি করার নিয়ম এবং পদ্ধতি বলার চেষ্টা করেছি।
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার নিয়ম
আপনি যেই কাজই করেন সেক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন থাকে। আপনি সেগুলো মেনে না চললে আপনি সে কাজ করতে পারবেন না তাই নিয়ম-কানুন জানা অনেক জরুরী।
- আপনি বিদেশ থেকে পূর্ণ আমদানি করার জন্য আপনার প্রথমে যে জিনিস লাগবে সেটা হচ্ছে আমদানি লাইসেন্স। লাইসেন্স অনেক ধরনের হয়ে থাকে তার মধ্যে একটি হচ্ছে আমদানি লাইসেন্স। আপনার আমদানি লাইসেন্স না করলে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে পারবেন না।
- ট্রেড লাইসেন্স লাগবে। ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনি যে ব্যবসাই করেন সে ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হয়। যেহেতু আমদানিও একটি ব্যবসা সেক্ষেত্রে আপনার ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন পরবে।
- টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পরবে।
- আপনি আমদানি ব্যবসা করার সচ্ছলতা আছে নাকি এজন্য ব্যাংক সচ্ছলতা সনদ প্রয়োজন পরবে, যাতে আপনি নিজেকে প্রমান করতে পারেন যে আপনার ব্যবসা করার মতো সামর্থ্য আছে।
- যেসব পণ্য আমাদের দেশে বৈধ আপনি সেগুলো পণ্য নিয়ে আসতে পারবেন। অবৈধ পণ্য নিয়ে আসার ফলে আপনাকে বিপদে পরতে হতে পারে এবং আপনার জেলও হতে পারে।
তাই সাবধান থাকবেন এবং অবৈধ পণ্য নিয়ে এসে ব্যবসা করা থেকে বিরত থাকবেন। আপনি এই বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার যেসব নিয়ম রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করলে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে ব্যবসা করতে পারবেন এবং আপনার কোন রকমের কোন সমস্যা হবে না।
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি পদ্ধতি - বিদেশ থেকে পার্সেল আনার নিয়ম
আপনি উপরের বিদেশ থেকে পণ্য কিভাবে আমদানি করবেন সেই সম্পর্কে জানলেন। আপনি নিয়ম জানার পরে আপনার জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে পদ্ধতি জানা। আপনি যে পদ্ধতিতে ব্যবসা শুরু করবেন বা আপনাকে শুরু করার জন্য কি কি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে এবার সেসব সম্পর্কে জানুন।
- সবার আগে আপনার কাজ হচ্ছে আপনি কি ধরনের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন সেটা ঠিক করা। পৃথিবীতে অনেক রকমের পণ্য রয়েছে কিছুর বৈধতা বাংলাদেশের রয়েছে আর কিছু বৈধতা বাংলাদেশে নেই। এজন্য আপনাকে আগে ঠিক করতে হবে আপনি কি ধরনের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন।
- যে ব্যক্তি আপনাকে বিদেশ থেকে পণ্য পাঠাবে তাকে বিক্রেতা বা সাপ্লায়ার বলা হয়। আপনার দ্বিতীয় কাজ হবে সাপ্লায়ার কে খোঁজা যে আপনি কার মাধ্যমে পণ্য আমদানি করে ব্যবসা করবেন বা আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করতে চান তাহলে তার সাথেও যোগাযোগ করতে হবে।
- স্যাম্পল দেখে নিতে হবে। আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করার পরে আপনি যেসব পণ্য নিয়ে কাজ করবেন সেগুলোর ছবি বা ভিডিও তাদের থেকে নিয়ে আপনি দেখে নিবেন যে পণ্যগুলো আপনার মন মতো হয়েছে কিনা তাছাড়া আপনি ব্যবসা করার ক্ষেত্রে লস খাবেন।
- এরপর আপনি সাপ্লায়ার বা বিক্রেতার কাছে অর্ডার করলে সে আপনাকে ইন ভয়েসে পণ্যের যাবতীয় তথ্য যেমন পরিমাণ,মূল্য এবং কয় তারিখে সরবরাহ করছেন সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে।
- যখন আপনার সবকিছু অর্ডার করা হয়ে যাবে তখন বিক্রেতা আপনার কাছে আর্থিক নিরাপত্তা চাইবে। এটার পিছনে কারণ হচ্ছে যে আপনাকে বিদেশ থেকে পণ্য পাঠাবে আপনাকে সে কোনদিন দেখে নাও আপনাকে চিনেও না। এমনও হতে পারে আপনি পণ্য নেওয়ার পরে টাকা দিলেন না এজন্য সে আপনার থেকে আর্থিক নিরাপত্তা চাইবে এবং এটি আপনাকে দিতে হবে যাতে করে আপনি তাকে টাকা না দিলে সে পড়ে ব্যাংক থেকে তুলে নিতে পারে।
- আপনি এ কাগজ বানানোর পরে অর্থাৎ আর্থিক নিরাপত্তা কাগজ বানানোর পরে বিক্রেতার কাছে সেটা আপনাকে পাঠাতে হবে যাতে করে সে নিশ্চিত হতে পারে। আপনি আর্থিক নিরাপত্তার কাগজ পাঠালে বিক্রেতা তার পণ্য জাহাজে ট্রাকে বা বিমানে লোড করে তাকে যে রশিদপত্র দিবে আপনি তার থেকে সেই রশিদ নিবেন প্রমাণস্বরূপ রাখার জন্য।
- বিদেশ থেকে পাঠানো পণ্যগুলো বাংলাদেশে পৌঁছালে আপনি আপনার আমদানি লাইসেন্স, রশিদ এবং আপনার পরিচয় পত্র দিয়ে কাস্টমস অফিস থেকে সেগুলো পণ্য নিতে পারবেন এবং সেগুলো দিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন।
আপনি এসব পদ্ধতি ফলো করে কাজ করলে আপনি খুব সহজেই এগুলো করতে পারবেন।
বিদেশ থেকে কি কি আনা যাবে - আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকা
বিদেশ থেকে আপনি আমদানি করার ক্ষেত্রে বৈধ এবং অবৈধতা এই দুইটার বিষয় থাকে। যেগুলো পণ্য বৈধ সেগুলো আপনি আনতে পারবেন। চলুন এবার আমরা জানি আপনি কি কি জিনিস আনতে পারবেন। আপনি যখন বিদেশ থেকে কোন পণ্য আনবেন তখন আপনাকে সে কর দিতে হয়। যেটাকে শুল্ক বলে। আপনি যেসব পণ্য কর না দিয়ে ফ্রিতে আনতে পারবেন সেগুলো হচ্ছে
- দুইটি মোবাইল। ২ টার বেশি পারবেন না। ক্যাসেট, অডিও সিডি প্লেয়ার, ইউপিএফ সহ ল্যাপটপ, কম্পিউটার স্ক্যানার, কম্পিউটার প্রিন্টার, ফ্যাক্স মেশিন, ভিডিও ক্যামেরা, ইলেকট্রিক মাইক্রোওভেন, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার, সেলাই মেশিন, নিজের প্রয়োজনীয় স্পের্টস সরঞ্জাম এক কার্টুন সিগারেট,২১ ইঞ্চি বা ২৯ ইঞ্চি টেলিভিশন।
চলুন এবার যেগুলোতে কর দিতে হবে সেগুলো সম্পর্কে জানি।
- আপনি বিদেশ থেকে ফ্রিতে 100 গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার ও 200 গ্রাম রূপার অলংকার আনতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার কোন রকমের কর বা ভ্যাট প্রয়োজন পরবে না কিন্তু আপনি যখন এর বেশি আনতে চাইবেন তখন আপনাকে কর দিতে হবে। একজন যাত্রী বিদেশ থেকে আসার সময় ২৩৪ গ্রাম স্বর্ণ আনতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতি ১১.৬৬ গ্রাম স্বর্ণের উপরে ৩০০০ টাকা এবং একই পরিমাণ রূপা আনার ক্ষেত্রে অথ্যাৎ প্রতি ১১.৬৬ গ্রামের জন্য ছয় টাকা করে কর দিতে হবে।
- প্লাজমা, এলসিডি,সিএফসি প্রযুক্তির ৩০ থেকে ৩৫ ইঞ্চি পর্যন্ত কর দিতে হবে দশ হাজার টাকা, ৩৭ থেকে ৪২ ইঞ্চিতে বিশ হাজার টাকা, ৪৩ থেকে ৪৫ ইঞ্চি ৩৬ হাজার টাকা, ৪৭ থেকে ৫২ ইঞ্চিতে ৫০ হাজার টাকা, রিফ্রেজটর ও ডিপ ফ্রিজে কর ৫০০০ টাকা। এয়ার কুলার এবং এয়ারকন্ডিশনের ক্ষেত্রে উইন্ডো টাইপের ৭ হাজার টাকা। স্পিড টাইপে ১৫ হাজার টাকা ও স্পিড টাইপ সিটে ১৮ হাজার। বিটিইউ বেশি হলে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে।
এছাড়াও যেগুলো পণ্য আছে যেমন পিঁয়াজ, পোশাক বা যা যা আছে এগুলো আনতে গেলে সেগুলোর উপর একটি ধার্যকৃত কর থাকে। আপনি সেই কর দিয়ে পণ্যগুলো নিয়ে আনতে পারবেন তবে অবশ্যই সেটা বৈধ হতে হবে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির যেগুলা নিয়ম রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কর দেওয়া। আমি উপরে কি কি পণ্যের জন্য কর দিতে হয় সেসব সম্পর্কে বলেছি। আপনি সেগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন।
বিদেশ থেকে কিভাবে টাকা পাঠায়
প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার পাশাপাশি বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর উপায়ও খুব সহজ হয়ে গেছে। এবার নিচে বলা হবে আপনি কিভাবে বিদেশ থেকে টাকা বাংলাদেশে পাঠাবেন।
- আপনি তিনটি উপায়ে খুব সহজে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে পারবেন। ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। আপনি একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে নেন এবং বিদেশ থেকে খুব সহজেই আপনি বাংলাদেশে সেই একাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারবেন। এতে করে আপনার কোন কষ্ট এবং কোন সমস্যা হবে না।
আরো পড়ুন :: ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে এবং নিয়ম
- বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে মানুষ বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়। আপনি এই উপায়ের মাধ্যমে খুব সহজেই টাকা পাঠাতে পারবেন এক্ষেত্রে আপনি যার কাছে টাকা পাঠাবেন সে ঘরে বসেই টাকা পেয়ে যাবে।
- আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে সরকার অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ। আপনি বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে সে এক্সচেঞ্জ দিয়ে আপনি সেখান থেকে টাকা তুলে নিতে পারবেন।
আমি এই তিন পদ্ধতি বললাম যাতে করে আপনি কোন রকমের ঝামেলায় না পরেন। এছাড়াও এখন কিছু নির্ভরযোগ্য অ্যাপ তৈরি হয়েছে আপনি চাইলে সেগুলোর মাধ্যমেও বিদেশ থেকে টাকা আদান প্রদান করতে পারেন।
বিদেশি পণ্য নিয়ে ব্যবসা - আমদানি রপ্তানি লাইসেন্স ফরম
বর্তমান সময়ে আপনি চাইলে বিদেশি পণ্য নিয়েও ব্যবসা করতে পারে এতে করে আপনার লাভ বেশি হবে। চলুন এবার আপনি বিদেশী পণ্য নিয়ে কিভাবে ব্যবসা করবেন সে সম্পর্কে জানুন
- আপনি বিদেশ থেকে যেসব পণ্য বাংলাদেশে বৈধতা রয়েছে সেগুলো আমদানি করার মাধ্যমে ব্যবসা করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার যেসব নিয়ম রয়েছে সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া আপনাকে সমস্যায় পরতে হবে।
- বর্তমানে মানুষ বিদেশে যাওয়ার প্রতি টান বেশি এজন্য আপনি বিদেশী ভাষার স্কুল খুলেও সেখান থেকে ইনকাম করতে পারেন।
- আপনি বিদেশি পণ্য মাধ্যমে অনলাইনে স্টোর খোলার মাধ্যমে ইনকাম করতে পারেন। এটাকে এফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। আপনি এটা করার মাধ্যমে ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
- আপনি বিদেশে ইন্টারন্যাশনাল হোটেল করার মাধ্যমেও ভালো পরিমাণে ইনকাম করতে পারবেন।
আমি উপরে বলেছি আপনি কিভাবে বিদেশি পণ্য আনবেন এবং কি কি পণ্য আনতে পারবেন। আপনি সেগুলো পণ্য এনেও ব্যবসা করতে পারবেন।
শেষ কথা
বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রতি মানুষের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এবং বিদেশে যাওয়ার প্রতিও মানুষের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। যদি আপনার সামর্থ্য থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি বিদেশ থেকে আমদানি করার ব্যবসা করতে পারেন। অবৈধ কখনো কোনো কিছু করার চেষ্টা করবেন না তাছাড়া আপনি সমস্যায় পরবেন।
আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু মহল এবং আত্মীয় স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারা উপকৃত হতে পারে।
সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url