যেসব ব্যাংক সবচেয়ে সুবিধা জনক - ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে

প্রিয় পাঠক আপনি কি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এ পোস্টে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে এবং ব্যাংক কাকে বলে ও কত প্রকার সে সম্পর্কে তুলে ধরব। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন এ সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন।
ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে
এছাড়াও আপনি সেভিংস একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে, ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে, ব্যাংকে টাকা রাখার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

আমরা আমাদের সম্পদ নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকে জমা রাখি এবং সেখান থেকে কিছু পরিমাণ মুনাফা লাভ করি।ব্যাংক আমাদের অতি প্রয়োজনীয় মাধ্যম। আমাদের আশেপাশে সবারই ব্যাংক থেকে সেবা নেওয়া হয় এবং ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা অনেক অনেক উপকৃত হতে পারব। আমরা অনেকে জানি না ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কোন কোন কাগজ লাগে এবং ব্যাংকে কত ধরনের একাউন্ট করা যায় বা ব্যাংকে কি কি কাজ যায়।


আমরা যদি এসব সম্পর্কে জানতে পারি তাহলে আমাদের জন্য ব্যাংক ব্যবহার করা আরো সুবিধা জনক হয়ে উঠবে। ব্যাংক এমন একটি মাধ্যম যেটা আমাদের জীবন চলার পথে আবশ্যক বলা চলে। এজন্য এ বিষয়ে আমাদের জানা অতি জরুরী। এজন্য আমি এই জরুরী বিষয় সম্পর্কে এ পোস্টের মধ্যে আলোচনা করব।

ব্যাংক কাকে বলে - ব্যাংক কত প্রকার

ব্যাংক এমন একটি আর্থিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে বলে যার প্রধান কাজ হচ্ছে জনগণের অব্যবহৃত এবং অতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহ করে তা প্রয়োজনীয় লোকদের মাঝে ঋণ হিসেবে দেওয়া। আবার আপনি ব্যাংক কাকে বলে বলতে গিয়ে এভাবেও বলতে পারেন যে ব্যাংক দ্বারা এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যার মূল কাজ হচ্ছে অর্থ সম্পদ জমা করে সেখান থেকে ঋণ দেওয়া এবং সেই অর্থ দ্বারা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা।এটা হচ্ছে মৌলিক ব্যাংক শব্দের সংজ্ঞা।

এবার চলুন আমরা জানি ব্যাংক কত প্রকার-ব্যাংক ৬ প্রকার।
  1. কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
  2. বাণিজ্যিক ব্যাংক।
  3. বিশেষায়িত ব্যাংক।
  4. রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক।
  5. জিন ব্যাংক।
  6. গ্রামীণ ব্যাংক।
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলা হয় এমন একটি ব্যাংক যার মাধ্যমে পুরা দেশের মুদ্রা,অর্থ সরবরাহ ও লাভ বা সুদের হার নির্ধারণ করা হয়। মোটকথা হচ্ছে সব ব্যাংকের কেন্দ্রবিন্দু ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে।
  • বাণিজ্যিক ব্যাংক বলা হয় লাভ অর্জনের উদ্দেশ্যে যেই ব্যাংক মানুষের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে এবং মানুষকে বিভিন্ন রকমের ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক মোট ৬ টি।
  • বিশেষায়িত ব্যাংক বলা হয় এমন ব্যাংক যারা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। যেমন কৃষি ব্যাংক।
  • যেসব ব্যাংক সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় সেসব ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্তা ব্যাংক বল। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ছয়টি।
  1. সোনালী ব্যাংক।
  2. জনতা ব্যাংক।
  3. অগ্রণী ব্যাংক।
  4. রূপালী ব্যাংক।
  5. বেসিক ব্যাংক বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড।
  6. কৃষি ব্যাংক।
  • জিন ব্যাংক বলা হয় যে জায়গায় এক বা একাধিক জাতের জেনেটিক উপাদান ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য দীর্ঘ বা স্বল্প মেয়াদের সংরক্ষণ করা হয় তাকে জিন ব্যাংক বলে।
  • গ্রামীণ ব্যাংক বলা হয় যে ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ মানুষকে দেয়। মুহাম্মদ ইউনুস ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং সেটা বৈধ ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৯৮৩ সালে। গ্রামীণ ব্যাংক বলতে বোঝায় মূলত যে ব্যাংক ভূমিহীন এবং দরিদ্র নারীদের পাঁচজন করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গঠনের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করে তাকে গ্রামীণ ব্যাংক বলা হয়।
এতক্ষণ আমরা ব্যাংক কাকে বলে এবং ব্যাংকের প্রকার সম্পর্কে জানলাম। চলুন এবার আমরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে - ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার

আপনি কোন একাউন্ট খুলতে গেলে সেক্ষেত্রে আপনার কিছু নিয়মের প্রয়োজন হয় তেমনিভাবে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে গেলেও কিছু নিয়মের প্রয়োজন লাগে তাই চলুন এবার আমরা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে প্রয়োজনীয় কি কি তথ্য এবং কাগজ লাগে সেসব সম্পর্কে জেনে নেয়।
  • ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য আপনার সর্বপ্রথম শর্ত হচ্ছে আপনাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • যার নামে একাউন্ট খোলা হবে তাকে একাউন্ট হোল্ডার বলা হয়।অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি লাগবে।
  • এরপর যার নামে একাউন্ট খুলবেন তার নতুন দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে এবং নমিনি সদস্য যে হবে তারও দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
  • আবেদন ফরম লাগবে। আপনি ব্যাংকে গিয়ে একটা আবেদন ফরম নিয়ে সেখানে আবেদন করবেন।
  • সেখানে তথ্য সবকিছু দিবেন তারপর আপনার উপরে বর্ণিত সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ জমা দিবেন।
  • আপনি যদি ব্যবসার নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চান তাহলে আপনার জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি লাগবে।
আমি যে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম বললাম এটা হচ্ছে প্রত্যেক ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে এই নিয়মগুলা লাগে।

সেভিংস একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে

ব্যাংক একাউন্টের মধ্যে অনেক রকমের ভাগ রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে সেভিংস একাউন্ট। সেভিংস একাউন্ট বলা হয় এমন অ্যাকাউন্ট যেখানে আপনি আপনার টাকা জমিয়ে রাখতে পারবেন অর্থাৎ আমরা যেটাকে ডিপোজিট করা বলি সেটাকে সেভিংস একাউন্ট বলা হয়।
সেভিংস ব্যাংক একাউন্টের অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে তা উল্লেখ করা হলো
  • আপনি আপনার ইচ্ছামত যেকোনো সময় টাকা তুলতে পারবেন এবং ইচ্ছামতো একাউন্টে আবার টাকা জমা করতে পারবেন।
  • আপনি কোথাও গিয়ে টাকা শেষ হলে সেখানে আপনার এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলতে পারবেন।
  •  আপনি ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
  • আপনি সে একাউন্ট দিয়ে লোন নিতে পারবেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের পরেও সুদ পারবের।
চলুন এবার আমরা সে একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানি।
  • সেভিংস একাউন্ট খুলতে আপনার পরিচয় জাতীয় পরিচয় পত্র লাগবে।
  • পাসপোর্ট,ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয় পত্র, আপনার ব্যক্তিগত কাগজ পাতি লাগবে এবং সাথে যুক্ত হবে বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, গ্যাসের বলি, এলআইসি বিল।

আপনি এগুলো ডকুমেন্ট দিয়ে আপনি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে

আমরা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যাওয়ার আগে আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগে সেটি হচ্ছে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে। চলুন এবার আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর জানি।
ব্যাংক একাউন্ট এর ক্ষেত্রে আপনি তিন ধরনের একাউন্ট খুলতে পারবেন।
  1. স্টুডেন্ট একাউন্ট।
  2. সেভিংস একাউন্ট।
  3. কারেন্ট একাউন্ট।
  • স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য আপনার সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়। এক্ষেত্রে আপনি সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে খুলতে পারবেন।
  • সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য আপনার একাউন্ট খোলার তুলনামূলক একটু বেশি লাগে। এজন্য আপনার ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জমা দিতে হবে। এই বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের বিভিন্ন নিয়ম থেকে থাকে।
  • কারেন্ট একাউন্ট কারেন্টের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিয়ম ভিন্ন। এক্ষেত্রে আপনি সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা আপনাকে জমা দিতে হবে আপনি এর বেশিও জমা দিতে পারেন।

ব্যাংকে টাকা রাখার নিয়ম - ব্যাংকে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায়

ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য আপনার প্রথম একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে এবং আপনাকে সেখানে ডিপোজিট করার জন্য একটি বই সংগ্রহ করতে হবে। আপনি ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিলে তারা আপনাকে একটি বই দিবে এবং সেখানে আপনাকে টাকা জমা দেওয়ার তারিখ কত টাকা জমা দিয়েছেন এবং স্বাক্ষর করে দিবে। এটা আপনার কাছে প্রমাণ হিসেবে থেকে যাবে। আপনি যখন টাকা তুলবেন তখনও এই বই দেখিয়ে তুলতে হবে।

আবার টাকা জমা দিতে গেলেও এ বই এর মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে এটাই হচ্ছে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের টাকা রাখার নিয়ম। এই উপায়টি সবচেয়ে সহজ উপায়,আপনার ব্যাংকে টাকা রাখার ক্ষেত্রে কোন রকমের কোন কষ্ট হবে না আপনি ব্যাংকে গিয়ে খুব সহজে টাকা রাখতে পারবেন।

শেষ কথা

ব্যাংক আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটি লেনদেন মাধ্যম। আপনি যদি একাউন্ট খুলতে চান এক্ষেত্রে আপনি ঠিক করে নিবেন আপনি কোন ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলবেন এবং কি কি সেবা নিতে চান এতে করে আপনার একাউন্ট খোলার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।আপনি চেষ্টা করবেন ব্যাংক থেকে কোন পরিমাণে সুদ না নেওয়ার কারণ সুদ সম্পন্ন হারাম।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু মহল এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করবেন যাতে করে ত্দেরও ব্যাংক একাউন্ট খুলতে সুবিধা হয় এবং কোন বিপতে না ভোগে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url