গ্রিন টি তৈরি নিয়ম- গ্রিন টি খাওয়ার অপকারিতা ও ত্বকের যত্নে ব্যবহার

প্রিয় পাঠক, আপনি কি গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোস্টে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম এবং গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা ও গ্রিন টি সম্পর্কে যাবতীয় সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করব। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন আশা করি গ্রিন টি সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন।
গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
এছাড়াও আপনি এই পোস্টের মধ্যে গ্রিন টি তৈরি করার নিয়ম,গ্রিন টি খাওয়ার অপকারিতা,গ্রিন টি দিয়ে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন সেসব আপনি জানতে পারবেন। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

আমরা দিনের যেকোনো সময় চা খেয়ে থাকি। হোক সেটা বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডায় বা ঘরে নিজে বানিয়ে। এসব ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত লাল চা খেয়ে থাকি। চা ক্লান্তি দূর করতে অনেক সাহায্য করে। চায়ের মধ্যেও কয়েক রকমের ভাগ রয়েছে লাল চা,দুধ চা, মাসালা চা,আরেকটা যেটা বিশেষ চা রয়েছে সেটাকে আমরা গ্রিন টি বলে থাকি। গ্রিন টি শুধু আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর করতে নয় বরং গ্রিন টি আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকারী।


যেটা আপনাকে ফিট রাখতে এবং ত্বকে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এজন্য যদি বাসায় চা খাওয়া হয় সেক্ষেত্রে গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করা। এছাড়াও গ্রীন টি তে অনেক উপকারিতা রয়েছে। এজন্য আমি আজকে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা এবং কিভাবে খাবেন এবং গ্রিন টি সম্পর্কে সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম

আমাদের জীবন চলার পথে আমরা যে জিনিসই খেয়ে থাকি। সব জিনিসের নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া উচিত। যাতে করে সেটা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হয় বরং নিয়ম মত না খাওয়ার কারণে আমাদের জন্য অনেক সময় সেই খাবার ক্ষতিকর হয়।
  • আমরা সাধারণ চা যেকোনো সময় খেয়ে থাকি। সকালে ঘুম থেকে উঠেও খেয়ে থাকি কিন্তু গ্রিন টি খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে আমরা খালি পেটে না খাই। খালি পেটে গ্রিন টি খাইলে সেটা হীতের বিপরীত হবে। এজন্য চেষ্টা করা ভরা পেটে বা দুই খাবারের মাঝে খাওয়া। এতে করে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হবে।
  • গ্রিন টি খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে সকালে নাস্তা করার পরে অথবা রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অথবা খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা আগে বা পরে। খাবার খাওয়ার শেষ করে সাথে সাথে এই গ্রিন টি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আপনার হজম প্রক্রিয়ার সমস্যা হতে পারে।
  • খুব গরম অবস্থায় গ্রিন টি খাবেন না। যেমন পানি ফুটন্ত পানি অথবা আপনি বাহির থেকে খুব গরম অবস্থায় এসেছেন এরকম সময় থেকে বিরত থাকুন।
  • গ্রিন টি এর সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আপনি উপকৃত হতে পারবেন না। আপনার একটু মিষ্টি খাওয়ার প্রয়োজন মনে হলে গ্রিন টি এর সাথে মধু মেশাবেন এতে করে আপনার উপকার হবে।
  • গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এর মানে এই না আপনি দিনে যত কাপ ইচ্ছা গ্রিন টি খাবেন। দিনের সর্বোচ্চ এক থেকে দুই কাপ খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এর বেশি খাইলে আপনার ঘুমের সমস্যা বা মাথাব্যথা সমস্যা হতে পারে।
  • আপনি বাজারে গ্রিন টি কিনতে গেলে দেখবেন কয়েক রকমের পাবেন এক্ষেত্রে কেনার সময় সাবধান থাকবেন আপনি ন্যাচারাল ফ্লেভার যেটা রয়েছে সেটা কিনবেন।
  • গ্রিন টি এর সঙ্গে লিকুইড দুধ বা গুঁড়া দুধ যেকোনো ধরনের মসলা অথবা লেবুর রস মিশানো থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আপনার উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে।

গ্রিন টি তৈরি করার নিয়ম

গ্রিন টি খাওয়ার যেমন নিয়ম  রয়েছে তেমনিভাবে গ্রিন টি তৈরি করারও কিছু নিয়ম রয়েছে। সে নিয়ম অনুযায়ী গ্রিন টি বানালে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। চলুন এবার আমরা কিভাবে গ্রিন টি বানায় তা জেনে নেই।
গ্রিন টি দুইভাবে বানানো যায়
  1. এক হচ্ছে পাতা দিয়ে।
  2. দুই হচ্ছে ব্যাগ দিয়ে।
আমরা প্রথমে পাতা দিয়ে বানানোর পদ্ধতি জানব এরপরে ব্যাগ দিয়ে বানানো পদ্ধতি জানব।
  • পাতা দিয়ে বানানোর পদ্ধতি হচ্ছে আপনি এক কাপের জন্য এক চামচ পরিমাণ গ্রিন টি এর পাতা নেবেন। এরপর পানি গরম করতে দিবেন,পানি গরম করার ক্ষেত্রে খেয়ার রাখবেন পানি যেন ৮০ কিংবা ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয় অর্থাৎ পানি যখন ফুটতে শুরু করবে সে অবস্থাতে আপনি যদি গ্যাসে পানি গরম করে তাহলে গ্যাস বন্ধ করে দেবেন বা ওয়াটার হিটারে গরম করলে সেটা বন্ধ করে দেবেন। এবার সেই পাতা ছাকুনিতে নিবেন। এবার সেই গরম পানি আস্তে আস্তে ঢালবেন। আপনার গ্রিন টি তৈরি হয়ে গেছে। আপনি যদি চান সে ক্ষেত্রে মধু যোগ করতে পারেন তবে চিনি যোগ করা থেকে বিরত থাকুন।
চলুন এবার ব্যাগ দিয়ে কিভাবে তৈরি করে আমরা সেটা জেনে নেই।

  • ব্যাগ দিয়ে তৈরীর ক্ষেত্রে আপনি আগের মতোই পানি গরম করে নেবেন এবং সেখানে ব্যাগ দিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য নাড়াচাড়া করবেন এতে করে আপনার গ্রিন টি তৈরি হয়ে যাবে। আপনি আপনার দরকার অনুযায়ী মধু ব্যবহার করতে পারেন তবে চিনি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন।

গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা

গ্রিন টি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। আপনি এই উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনার গ্রিন টি খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। তাই চলুন এবার গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেই। অবশ্যই চেষ্টা করবেন উপরে বলার নিয়ম অনুযায়ী গ্রিন টি খাওয়ার এতে করে আপনি বেশি উপকৃত হতে পারবেন।
  • গ্রিন টি আপনার শরীরকে ফিট এবং সতেজ রাখতে সাহায্য করে কারণ গ্রিন টি এর মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে আপনার শরীর ঠিক এবং সতেজ থাকে।
  • এলার্জি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা নরমাল চা না খেয়ে গ্রিন টি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি এর্লাজির সমস্যা থেকে সমাধান পাবেন।
  • ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়,স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • গ্রিন টি এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে এবং আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে। এজন্য যারা মোটা, শরীর নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা গ্রিন টি খাওয়া শুরু করুন। এতে করে আপনার স্বাস্থ্য চিকন হতে শুরু করবে।
  • গ্রীন টি আপনার দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে। গ্রিন টি এর মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে আপনার মুখের ভেতর যেগুলো ব্যাকটেরিয়া রয়েছে সেগুলোকে বৃদ্ধি হতে দেয় না বরং সেসবকে মেরে ফেলে। এতে করে আপনার দাঁত ভালো থাকে। পাশাপাশি আপনার মুখে দুর্গন্ধ থাকলে সেসবও দূর করতে সাহায্য করে।

গ্রিন টি খাওয়ার অপকারিতা

আপনি যদি খাবার নিয়ম অনুযায়ী না খান অথবা ভিন্ন কোন পন্থা অবলম্বন করেন সেক্ষেত্রে আপনার জন্য সেই খাবার অপকারিতা বয়ে নিয়ে আনবে। এজন্য চলুন এবার নিয়ম অনুযায়ী গ্রিন টি না খাইলে যেসব অপকারিতা হতে পারে সেসব সম্পর্কে জেনে নেই।
  • সব সময় চেষ্টা করবেন এক থেকে দুই কাপ ছাড়া দিনের গ্রিন টি খাওয়ার। অতিরিক্ত গ্রীন টি খাওয়া আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে।
  • খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার কারণে আপনার বদহজম অথবা মাথার ব্যথা ও এ জাতীয় সমস্যা হতে পারে। কারণ গ্রিন টি এর মধ্যে কিছু পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে।
  • যাদের আলসার রয়েছে তারা গ্রিন টি এবং সকালে গ্রিন টি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। তাছাড়া আপনার আলসারের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত গ্রীন টি এবং খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার জন্য আপনার রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এজন্য সতর্ক থাকবেন।

গ্রিন টি এর অপকারিতা চেয়ে উপকারিতা বেশি। অপকারিতা থেকে বাঁচার জন্য আপনি দুইটি বিষয়ের লক্ষ রাখবেন এক অতিরিক্ত না খাওয়া এবং দই খালি পেটে না খাওয়া। এই দুইটা পন্থা অবলম্বন করলে আপনি গ্রীন টির অপকারিতা থেকে বেঁচে থাকবেন। আমি উপরে কিভাবে গ্রিন টি খাবেন সেই নিয়ম বলে দিয়েছি। আপনি সেটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন তাহলে আপনি সব অপকারিতা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।

গ্রিন টি দিয়ে ত্বকের যত্ন

নিয়ম অনুযায়ী গ্রিন টি খাইলে এটা যেমন শরীরের জন্য উপকারি তেমনি আপনি নিয়ম অনুযায়ী ত্বকে ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের জন্য উপকারি।তাই চলুন এবার গ্রিন টি দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করবেন সে সম্পর্কে জেনে নেই।
  • চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে। আপনার গ্রিন টি ব্যবহারের পরে যেটা থেকে যায় সেটা কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করার পরে চোখের নিচে দিয়ে রাখুন এতে করে আপনার চোখের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।
  • আপনি সেই পাতাগুলো এবং মধু একসাথে মিশিয়ে ফেসম্যাক হিসেবে ব্যবহার করতেও পারেন। এটার নিয়ম হচ্ছে আপনি বেসন বা বেকিং সোডা,মধু এবং সেসব ভেজা পাতি রয়েছে সেসব একসাথে করে মুখের উপর দিয়ে রাখুন। এতে করে আপনার চেহারার উজ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
  • চুলের জন্য গ্রিন টি অনেক কার্যকারী। আপনি গ্রিন টি দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার চুলের পুষ্টিগুণ বাড়বে।
  • আপনার চামড়ায় যদি মেছতার দাগ বা চামচ ভাজ পরে যায় এক্ষেত্রেও আপনি গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার মেমতার দাগ এবং চামড়ার ভাঁজ দূর হয়ে যাবে।

শেষ কথা

গ্রিন টি তে অনেক উপকারিতা রয়েছে। আপনি নিয়মিত গ্রীন টি খাওয়ার চেষ্টা করুন।গ্রিন টি তে যেসব উপকারিতা রয়েছে সেসব উপকারিতা পাওয়ার জন্য  নিয়ম যেসব রয়েছে সেই নিয়ম অনুযায়ী গ্রিন টি খেতে হবে। এতে আপনি পরিপূর্ণ উপকৃত হতে পারবেন। চেহারাতে ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও আপনি নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।

আমার এই পোস্ট আপনার ভালো লাগলে বা এই পোস্ট থেকে উপকৃত হলে আপনি আপনার বন্ধুমহল এবং আত্মীয়স্বজনদের সাথে শেয়ার করুন। যাতে করে তারাও গ্রিন টি খেয়ে উপকৃত হতে পারে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url