রেশম পোকার উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা-রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
প্রিয় পাঠক আপনি কি রেশম পোকার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে রেশম চাষের উপকারিতা এবং রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন এতে করে রেশন চাষ সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন রেশম চাষ কাকে বলে,রেশম পোকার জীবন চক্র,রেশম চাষের গুরুত্ব সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
রেশম আমাদের দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখে। রেশম চাষের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণে টাকা আয় করা হয়ে থাকে। রেশমের সুতা থেকে অনেক উন্নত মানের কাপড় পাঞ্জাবি এসব তৈরি করা হয়। যেগুলো বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে টাকা আয় করা যায়। রেশমের কাপড়ের চাহিদা বাংলাদেশেও অনেক। রেশম চাষ হয়ে থাকে এক ধরণের পোকার মাধ্যমে।
সেই পোকা থেকে সুতা উৎপন্ন হয় এবং সুতা থেকে কাপড় তৈরি করা হয়। এই পোস্টের মধ্যে রেশম দিয়ে কি করা সম্ভব এবং রেশম সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হবে।
রেশম চাষ কাকে বলে
রেশম যে বিজ্ঞান পদ্ধতিতে চাষ করা হয় সেই পদ্ধতিকে সেরিকালচার বলে। এটা ফলিত প্রাণিবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। রেশম চাষের ইংরেজি শব্দ হচ্ছে Sericulture.এই শব্দের আভিধানিক অর্থ Culture of Sericine যার অর্থ হচ্ছে সেরিসিন নামক এক ধরনের প্রোটিন লালন পালন করা। রেশম চাষ বলা হয় রেশম পোকাকে লালন পালন করার মাধ্যমে রেশম সুতা উৎপাদন করাকে।
রেশম সুতা মূলত এক ধরনের পোকাকে বিশেষ একটি গাছের পাতা খাওয়ানোর মাধ্যমে সেখান থেকে সুতা উৎপাদন করে পরবর্তীতে সেসব সুতা দিয়েই দামি দামি শাড়ি পাঞ্জাবি কুর্তি বিভিন্ন রকমের পোশাক তৈরি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মধ্যে রেশমের শহর বলা হয় রাজশাহীকে।
রাজশাহীতে রেশমের কাপড় তৈরি হয়ে থাকে পরবর্তীতে সেখান থেকে পুরো বাংলাদেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
রেশম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
রেশম চাষ থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় পরিমাণের একটি টাকা উপার্জন হয়ে থাকে এবং এতে বাংলাদেশ এর অর্থনীতিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের দিকে ঠিকমতো রেশন চাষ করতে পারলে তারা খুব সহজে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবে এবং তাদের সাথে আরও অনেকে কাজ করে তারাও নিজের অভাব অনটন দূর করতে পারবে।
রেশম চাষ করতে খরচ খুবই কম। আপনি অল্প পুঁজ নিয়ে রেশম ব্যবসা শুরু করতে পারবেন এবং এখান থেকে আপনি ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে আপনি রেশমের গুটি উৎপাদন করতে পারবেন। ১০০০০ টাকা ইনভেস্ট করলে সুতা বের করতে পারবেন। ২০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করার মাধ্যমে আপনি সেখান থেকে কাপড় বুনতে পারবেন।
পরবর্তীতে আপনি সেই কাপড় বিক্রি করার মাধ্যমে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন। রেশম চাষের ফলে নিজে স্বাবলম্বী হওয়া যায় এবং আশেপাশের দশটা মানুষকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখানো যায়। বাংলাদেশের অভাব অনটন দূর করার জন্য রেশম চাষের ভূমিকা অপরিসীম।
যমুনা চরঅঞ্চলের দিকে বর্তমানে মানুষ রেশন চাষের মাধ্যমে লাভবান হয়ে উঠছে এবং তাদের আর্থিক সমস্যার সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে। গ্রাম অঞ্চলের মানুষ যদি এভাবে রেশন চাষ শুরু করে তাহলে আস্তে আস্তে তাদের অভাব অনটন কেটে যাবে এবং বাংলাদেশের আর্থিক খাদে তারাও ভূমিকা রাখতে পারবে।
আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে রেশন চাষ করার মাধ্যমে কিভাবে অর্থনৈতিক সংকট দূর করা সম্ভব।
রেশম পোকার জীবন চক্র
রেশম পোকার মাধ্যমে সেখান থেকে সুতা তৈরি হয়। সুতা তৈরি হওয়ার আগে বেশ কিছু ধাপে ধাপে রয়েছে। রেশম পোকা নিজের মধ্যে সুতা উৎপাদন করে। চলুন এবার কিভাবে রেশম পোকা ধাপে ধাপে তার জীবন চক্র পরিবর্তন করে সুতাতে রূপান্তর করে সে সম্পর্কে জানুন
রেশম পোকা জীবনে চারটি চক্র থাকে-
- ডিম
- শূককীট
- মূককীট।
- সম্পূর্ণ পোকা। সেই পোকাকে মথ বলা হয়।
রেশম পোকা রাতের বেলা চলাফেরা করে থাকে। রেশম পোকার প্রধান খাবার হচ্ছে তুত গাছের পাতা। রেশম চাষ করার পূর্বে তুত গাছের চাষ করা হয়। তুত গাছ তিন ধরনের হয় সাদা তুত কালো তুত লাল তোত। রেশম পোকার পছন্দের তালিকায় সাদা তুত বেশি গ্রহণযোগ্য। তুত গাছের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তুত গাছ একবার লাগানোর ফলে সেটা আপনাকে ২০ থেকে ২৫ বছর পাতা দিবে।
- স্ত্রীলিঙ্গের মথ তুত গাছের পাতার উপরে চলাফেরা করার সময় সেখানে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ ডিম পারে। এরা ডিম পাড়ার সময় একদিন পুরো সময় জুড়ে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়া শেষে স্ত্রীলিঙ্গের মথ মারা যায়।
- ডিমের রং হাল্ক ফ্যাকাশে হলুদ হয়ে থাকে সাত থেকে। ৮ দিনের মধ্যে ডিমের গায়ে কালো দাগ পরে এবং ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে। যেসব বাচ্চা বের হয় তাকে শূককীট বলা হয়। শূককীটকেও পুল বলা হয়।
পূর্ণাঙ্গ শূককীট ২ ইঞ্চি লম্বা হয় এবং এরা তিন খন্ডে বিভক্ত হয়ে থাকে-
- মস্তক।
- বক্ষ।
- উদর।
- এরা প্রচুর পরিমাণে ক্ষুধার্ত হয় দিনের মধ্যে ১১ থেকে ১৩ বার তুত পাতা খায়। তারপরে ১৮ থেকে ২৪ ঘন্টা নিস্তেজ হয়ে থাকে।
- সে সময় তারা তাদের খোলস বদলায়। এভাবে শূককীট চারবার ফলস বদলায়। চারবার খোলস বদলানোর পরে এরা খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং মূককীটতে রূপ নেয়।
- মূককীটের ভিতরে এক ধরনের রস থাকে এই রস মুখের বাহিরে আসে এবং বাতাসের মাধ্যমে শক্ত হয়ে যায়। মূককীট একই সময়ে ৬০ থেকে ৬৫ বার মুখ থেকে রস বের করে এবং সেটি তাদের পুরা শরীরে ছেয়ে যায়।
- বাতাস লাগার সাথে সাথে সেগুলো শক্ত হয়ে খোলসের রূপ নেয়। এই খোলস কে মূককীট বলা হয় এবং রেশম পোকার পরিবর্তনকে Metamorphosis বলে।
- এরপর এরা আকারে ছোট হয় এবং দশ দিন একই অবস্থায় থাকে। এরপর এদের দেহ থেকে এক প্রকার রস বের হয়। সেই রস তাদের খোলসের কোণাকে আস্তে আস্তে গলিয়ে ফেলে।
- এরপরে তারা সেই গুটি থেকে বের হয়ে আসে। সেখান থেকে বের হওয়ার আসার পরে তারা তাদের সম্পূর্ণ জীবন পায়।
এভাবে রেশম পোকার জীবন বড় হয় এবং এভাবেই গুটি তৈরি হয়। পরবর্তীতে সেসব গুটি থেকে সুতা তৈরি হয়।
রেশম পোকার উপকারিতা
রেশম পোকা দিয়ে অনেক রকমের উপকৃত হওয়া যায় এবং এ চাষের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে। চলুন রেশম পোকা থেকে আরো কি কি উপকৃত হওয়া যায় সে সম্পর্কে জানি রেশম পোকা চাষ করে আপনি সেই পোকা বিক্রি করার মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আপনি চাইলে সেই পোকা থেকে সুতা উৎপন্ন করেও সেই সুতা বাজারে বিক্রি করতে পারবেন অথবা সেই সুতা থেকে কাপড় তৈরি করে সে কাপড় বিক্রি করতে পারবেন। রেশন পোকা শুধু পোকাও বিক্রি হয়। আবার এখান থেকে ডিম বের হলে সেই ডিমও বিক্রি করা হয়। রেশম পোকার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে সেখান থেকে সুতা উৎপাদন করার মাধ্যমে বিক্রি করে নিজের আর্থিক অসচ্ছলতা ঠিক করা যায়।
এজন্য এসব প্রকার উপকারিতা পাওয়ার জন্য এবং নিজের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল করার জন্য রেশন পোকা চাষ করা উচিত।
রেশম চাষের গুরুত্ব
রেশম চাষের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। রেশম চাষ করার মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হয়। গ্রাম অঞ্চলের আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে এবং নারীরাও তাদের কর্মস্থল তৈরি করতে পারে। অল্প পুঁজিতে ভালো পরিমানে ইনকাম করা সম্ভব হয়ে ওঠে।রেশম চাষ করার মাধ্যমে আপনি নিজে সচ্ছল হবেন এবং বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন।
রেশমের কাপড়কে বর্তমানে সবচেয়ে দামি কাপড় হিসেবে ধরা হয়। রেশমের কাপড় সুন্দর এবং নরম হওয়ায় মানুষের চাহিদা অনেক বেশি এজন্য রেশমের কাপড় বিক্রি করে ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করা সম্ভব হয়ে উঠে। আস্তে আস্তে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দূঅবস্থার উন্নতি হতে থাকবে।
বিশেষ করে যেসব মহিলাদের কর্মসংস্থা নেই অথবা বিধবা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে রেশন চাষ করে নিজের জীবিকা নির্বহন করা। বর্তমানে রেশন চাষ করার ফলে সরকার থেকে অনুমোদন পাওয়া যায় কারণ রেশম চাষের দিকে অপরিসীম গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই আমাদের চেষ্টা করা উচিত যাতে গ্রাম অঞ্চলের দিকে রেশন চাষ শুরু হয়।
মানুষ এখান থেকে নিজের কর্মস্থল তৈরি করতে পারে। বেকারত্ব দূর হয় এবং বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল হতে থাকে তাহলে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে।
রেশম চাষ এবং রেশম পোকা সম্পর্কে মানুষের প্রশ্নের উত্তর
১ প্রশ্ন রেশম চাষ কেন প্রয়োজন?
উত্তর
নিজে আর্থিক অবস্থা সচ্ছল করার জন্য এবং মানুষ যেন কর্মমুখি হয় এজন্য রেশম চাষের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
২ প্রশ্ন রেশম পোকার গুটিকে কি বলে?
উত্তর
রেশম পোকা যখন তাদের রস ছেড়ে দেওয়ার পরে শরীরে অবতরণ তৈরি হয় সেটাকে গুটি বলে এবং যে অবস্থায় রেশম পোকা থাকে সে অবস্থায়কে মূককীট বলে আর রেশম পোকার যে পরিবর্তন হয় সে পরিবর্তনকে Metamorphosis বলে।
৩ প্রশ্ন রেশম পোকার বিভিন্ন অংশ কি কি?
উত্তর
রেশম পোকার রেশম পোকার জীবন চারটি পর্যায়ে বিভক্ত ডিম শূককীট মূককীট পুঙ্গানো পোকা। আর রেশম পোকার শরীরের তিনটি অংশ রয়েছে মস্তক বক্ষ উদর।
৪ প্রশ্ন রেশম চাষের প্রধান কাজ কোনটি?
উত্তর রেশম চাষের প্রধান কাজ হচ্ছে রেশন পোকাকে ঠিকমতো লালন পালন করার মাধ্যমে সেখান থেকে সুতা সংগ্রহ করে সেই সুতা দিয়ে কাপড় পাঞ্জাবি এবং বিভিন্ন রকমের জামা বানানো।
৫ প্রশ্ন সেরি কালচার বলতে কি বুঝায়??
উত্তর
সেরিকালচার হচ্ছে ফলিত প্রাণী বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা রেশম চাষ করার যে পদ্ধতি রয়েছে সেদিকে সেরিকালচার বলে।
শেষ কথা
রেশম চাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এজন্য যদি আপনার সাধ্যের মধ্যে হয় তাহলে চেষ্টা করা রেশন চাষ করা। গ্রাম অঞ্চলের দিকে রেশন চাষ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা যাতে করে আর্থিক অবস্থা সচ্ছল হয় এবং অভাব অনটন থেকে মুক্তি লাভ করে।
আমার এই পোস্টটিতে আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও রেশম চাষের যেসব গুরুত্ব রয়েছে সেগুলো বুঝতে পারে।
সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url