সকালে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা- কাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতা

প্রিয় পাঠক আপনি কি সকালে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে সকালে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম ও সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন তাহলে ছোলা সম্পর্কে সবকিছু বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কাঁচা ছোলার উপকারিতা
এছাড়াও আপনি এ পোষ্টের মধ্যে পাবেন কাঁচা ছোলা খাওয়ার পরিমাণ,কাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

আমরা অনেকে প্রতিদিন বাসায় সকালে কাঁচা ছোলা খেয়ে থাকি। কাঁচা ছোলার উপকারিতা অনেক। ছোলা একটি ডাল জাতীয় খাবার। অনেকে তা রান্না করেও খায় আবার বিভিন্ন রকম তরকারি হিসেবেও খেয়ে থাকে। অনেকে কাঁচাও খায় আবার মুড়ি মাখানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। পৃথিবীতে প্রতিটি দেশের ছোলা পাওয়া যায়।


বাংলাদেশে দেশী ছোলা বেশি চলে আর বাংলাদেশ ব্যতীত ভিন্ন দেশ গুলোতে কাবুলি ছোলা বেশি চলে। দেশি ছোলার রং সাধারণত একটু গাঢ় রংয়ের হয়ে থাকে আর কাবুলি ছোলা হালকা রঙের হয়।

সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার নিয়ম

আমরা যেহেতু অধিকাংশ জনই সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেয়ে থাকি এজন্য আমাদের সকালে কোন নিয়মে খেলে বেশি উপকৃত হওয়া যায় সেসব নিয়ম গুলো জানা জরুরী-
  • সকালে কাঁচা ছোলা খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি আগের রাত্রে ভিজিয়ে রাখবেন। এরপর সকালে উঠে আগে ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন।
  • অনেক সময় ধরে ভিজিয়ে রাখবেন না। অতিরিক্ত সময় ধরে ভিজিয়ে রাখার ফলে ছোলা থেকে একটি দুর্গন্ধ বের হতে থাকে।
  • আপনি যদি খালি পেটে এমনিতে ছোলা খেতে না পারেন সেক্ষেত্রে হালকা বিট লবণ বা মধু মিশিয়ে নিতে পারেন তাহলেও আপনি উপকৃত হতে পারবেন।
  • সকালে ছোলা খাওয়ার সময় আদার রস অথবা রসুনের রস বা যেকোন পুষ্টিকর ফলের রস একসাথে করেও খেতে পারেন। আপনি কাঁচা ছোলার পাশাপাশি কাঁচা ছোলা যেই পানিতে ভিজিয়ে রাখেন সেই পানিও খেতে পারেন।
  • আপনি যদি সকালে দৌড়াদৌড়ি করেন তাহলে দৌড়াদৌড়ির আগে কিছু পরিমাণ ছোলা খাবেন এবং দৌড়াদৌড়ির পরে কিছু পরিমাণ ছোলা খাবেন।
  • খালি পেটে ছোলা খাওয়ার ক্ষেত্রে খোসা ফেলবেন না।
আপনি এসব নিয়ম অনুসরণ করে সকালে খালি পেটে ছোলা খেলে উপকৃত হতে পারবেন। সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ায় ফলে বেশি উপকৃত হওয়া যায়।

কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম

কাঁচা ছোলা বা সিদ্ধ ছোলা যেকোনো ছোরা খাওয়ার ক্ষেত্রেই নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। নিয়মের বাহিরে আপনি ছোলা খাইলে কোন রকমের উপকৃত হতে পারবেন না। চলুন এবার আমরা কাঁচা ছোলা আপনি কোন পদ্ধতিতে খাবেন সেই সম্পর্কে জানি-
  • আপনি ছোলা চিবিয়েও খেতে পারবেন অথবা তরকারির মধ্যে দিয়ে রান্না করেও খেতে পারবেন।
  • অনেকে আছে যারা ছোলা দিয়ে দাউল তৈরি করে খেয়ে থাকে।
  • কাঁচা ছোলা বা সিদ্ধ করা ছোলা অথবা রান্না করা ছোলা যেকোন ধরনের ছোলা দিয়ে আপনি মুড়ি মাখিয়ে খেতে পারবেন।
  • যারা মোটা হতে চান এবং জিম করেন তারা কাঁচা ছোলা খাওয়ার অভ্যাস করবেন।
  • আপনার যদি কাঁচা ছোলা খেতে অভ্যস্ত না হন তাহলে হালকা কিছু লবণ এবং আদা বা অন্য মশলা দিয়ে সিদ্ধ করে খাবেন।
  • যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা কাঁচা ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং সিদ্ধ ছোলা খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
  • আপনি চাইলে কাঁচা ছোলা বিট লবণ,পেঁয়াজ মরিচ,শশা,টমেটো এগুলো দিয়ে মাখিয়েও খেতে পারবেন। এভাবে খাইলে আপনি এর মধ্যে কিছু পুদিনা পাতা যুক্ত করে নিবেন তাহলে বেশি উপকৃত হতে পারবেন।
  • আপনি কাঁচা ছোলা ব্লেন্ডার করে জুস করে খাওয়া মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন।
  • সবচেয়ে ভাল হয় আপনি চিবিয়ে ছোলা খাইলে এজন্য চেষ্টা করবেন সব সময় চিবিয়ে ছোলা খাওয়ার।
  • সকালে ছোলা খাওয়ার ফলে শরীরে এনার্জি বেশি আসে এবং সারাদিন কাজ করতে সুবিধা হয় এজন্য সকালে ছোলা খাওয়াই উত্তম।
  • আপনি চাইলে দিনের যেকোন সময় অল্প করে ছোলা খেতেও পারবেন এতে করে আপনার ক্লান্তি ভাব দূর হবে।
  • কাঁচা ছোলা খাওয়ার পরে কখনো কোন রকমের আচার খাবেন না। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে কোন ভাবে আচার খাবেন না চাই সেটা যেরকমেরই আচার হোক এতে করে আপনার ক্ষতি হবে।
  • কাঁচা ছোলা খাওয়ার পরে কখনো করলার জুস বা করোলা খাবেন না এতে করে আপনার জন্য ক্ষতি হবে।

আপনি কাঁচা ছোলা, সিদ্ধ ছোলা বা রান্না করা ছোলা খাওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে খাবেন। কখনো অতিরিক্ত খাবেন না তাহলে আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে আপনি যেকোনো ধরনের ছোলা খেলে উপকৃত হতে পারবেন।

সকালে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে বেশি উপকৃত হওয়া যায় এবং শরীরের জন্য অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হয়। চলুন এবার আমরা জানি সকালে কাঁচা ছোলা খেলে আপনি কি কি উপকারিতা পাবেন
  • সকালে ছোলা খাওয়ার ফলে আপনার রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখে যার ফলে হৃদরোগে ঝুঁকি কমে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা সকালে ছোলা খায় তাদের ৪৯% হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
  • সকালে ছোলা খাইলে রক্তের চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের এই সমস্যা দূর হয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।
  • ছোলার মধ্যে ফলিক এসিড থাকে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এজন্য সকালে আপনি ছোলা খেলে ক্যান্সারে ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে।
  • যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে চিবিয়ে ছোলা খাবেন কারণ ছোলা একটি আঁশযুক্ত খাদ্য। নিয়মিত চিবিয়ে খাওয়ার ফলে হজমের শক্তি বৃদ্ধি হবে।
  • যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তারাও নিয়মিত সকালে ছোলা খাবেন কারণ চিবিয়ে ছোলা খাওয়ার ফলে আপনার পেটের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • সকালে ছোলা খাওয়ার ফলে শরীরে এনার্জি বেশি আসে যা আপনাকে সারাদিন সতেজ রাখতে এবং কাজে মনোযোগী রাখতে সাহায্য করবে।
  • যাদের সকালে দুর্বলতা ভাব কাজ করে তারা নিয়মিত সকালে ছোলা খাবেন কারণ ছোলা প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে যা আপনার শরীরকে শক্তি যোগাবে।
  • ছোলার মধ্যে এক ধরনের ফ্যাট থাকে যা আপনার রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।
  • যাদের যৌন শক্তি কমে গেছে বা সহবাসের উপরে মন আসে না তারা প্রতিদিন সকালে ছোলা খাওয়ার ফলে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি হবে এবং যৌন সঙ্গমে সক্ষম হবে।
  • সকালে ছোলা খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করা চুষে নিতে সাহায্য করে এতে করে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং যাদের অতিরিক্ত ডায়াবেটিস আছে তাদের ডায়াবেটিস কমে আসে।
  • ছোলাতে মাঙ্গানিজ রয়েছে যা আপনার চেহারা থেকে বার্ধক্যের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
  • সকালে আপনি যদি ছোলা খান তাহলে আপনার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়বে। ছোলাতে আয়রন থাকে যা আপনার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াবে। সকালে খালি পেটে হওয়ায় তা দ্রুত কাজ করতে সক্ষম হয়।
তাই এসব উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য আপনার উচিত হবে প্রতিদিন সকালে কিছু পরিমাণ ছোলা খাওয়ার। যা আপনার শরীরের জন্য কার্যকারী হবে।

কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

ছোলা আমরা অনেকে অনেক ভাবে খেয়ে থাকি এবং বিভিন্ন সময়েও খায়। চলুন এবার আমরা জানি যেকোন সময় ছোলা খাইলে বা যেকোনো ভাবে ছোলা খাইলে কি কি উপকার পাওয়া যায় সেই উপকার গুলো
  • ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য ছোলা ভীষণ উপকারি তাই যারা ডাইবেটিসের রোগী আছেন তারা দিনের যেকোনো সময় অল্প পরিমাণ করে ছোলা খাবেন কারণ ছোলা আপনার রক্তে থাকা শর্করাকে দূর করে দেয়।
  • ছোলা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে আপনার খাদ্যনালীতে যদি কোন রকমের জীবাণু থাকে যেই জীবাণুগুলো ক্যান্সার হতে সাহায্য করে সেই জীবাণুগুলোকে দূর করে দেয়।
  • নিয়মিত ছোলা খাওয়ার ফলে পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
  • ছোলা পেটের সমস্যা এবং হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
  • যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা রয়েছে তারা কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর করার জন্য ছোলা অত্যন্ত কার্যকারী।
  • ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে যা আপনার শরীরকে শক্তিশালী করবে এবং হাড় গুলোকে মজবুত করবে।
  • যাদের মেরুদন্ডের ব্যথা বা মেরুদন্ড দুর্বল তারা নিয়মিত ছোলা খেলে তাদের মেরুদন্ডের দুর্বলতা এবং ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
  • ছোলা এবং আদা অথবা আদার রস একসাথে করে খেলে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের যতটুকু চাহিদা আসে চাহিদাটুকু পূরণ করে দেয়।
  • যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা ক্ষণে ক্ষণে অসুস্থ হন তারা নিয়মিত ছোলা খাওয়ার চেষ্টা করুন। নিয়মিত ছোলা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে।
  • যারা জিম করেন অথবা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন তাদের জন্য ছোলা অত্যন্ত জরুরী।
  • আপনি যদি ওজন কমানোর কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে অন্য পন্থা অবলম্বন না করে নিয়মিত ছোলা খাওয়ার পন্থা অবলম্বন করুন। এই উপায় আপনার ওজন দ্রুত কমাতে সাহায্য করবে।
  • ছোলাতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, আমিষ,ফ্যাট,ক্যালসিয়াম,ভিটামিন এ,মাইক্রগ্রাম ভিটামিন বি১,বি২,বি৬,ম্যাগনেসিয়াম,খনিজ লবণ, আয়রন,পটাশিয়াম,ফসফরাস এগুলো প্রত্যেকটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী।
  • যাদের মাথা অতিরিক্ত গরম হয় অথবা হাত বা গরম হয়ে জ্বালাপোড়া করে তারা নিয়মিত ছোলা খাওয়ার চেষ্টা করবেন। নিয়মিত ছোলা খাইলে আপনার এই জ্বালাপোড়া সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • যাদের খাবারের রুচি কম তারা ছোলা শসা টমেটো ধনেপাতা পেয়াজ মরিচ এগুলো একসাথে করে সালাত বানিয়ে খাওয়ার ফলে রুচি বৃদ্ধি হবে।
  • যেসব নাবালিকা মেয়েরা প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার খান তাদের হাইপারটেনশনের প্রবণতা কম হয়। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ফলে এসিড থাকে তাই ছোলা খেলে রক্তচাপ কমে গিয়ে রক্ত নিয়ন্ত্রণে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালের পরে তা হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
  • যাদের রক্তে এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা ছোলা খেলে ছোলার ফলিক এসিড রক্তের এলার্জির পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
  • রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার ফলে শরীরে দুর্বলতা ভাব কাজ করে এজন্য ইফতারিতে আপনি ছোলা খাইলে আপনার শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হবে এবং শরীর শক্তিশালী হবে।
  • যাদের এজমার সমস্যা রয়েছে তারা যদি নিয়মিত ছোলা খান তাহলে অ্যাজমার সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।
  • অনেকে আছে যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয় এজন্য বিভিন্ন রকমের ট্যাবলেট খেয়ে থাকে। ছোলা শরীরের আয়রনও বৃদ্ধি করতে এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে বেশ কার্যকরী।
  • গর্ভবতী মহিলাদের উচিত প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ হলেও ছোলা খাওয়ার কারণ ছোলাতে যে পরিমাণ ভিটামিন ক্যালসিয়াম প্রোটিন আয়রন রয়েছে সেগুলো একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য অনেক উপকারী এবং দরকারি।
  • গর্ভবতী অবস্থায় নিয়মিত ছোলা খাওয়ার ফলে শিশুর মস্তিষ্কে বিকাশ ঘটে এবং শিশুর মেরুদন্ড শক্তিশালী হয়।

এইসব উপকারিতা পাওয়ার জন্য আপনার উচিত হবে দিনের যেকোন সময় কিছু পরিমাণ হলেও ছোলা খাওয়ার অথবা দিনে কয়েকবার অল্প অল্প করে ছোলা খাওয়ার এতে করে আপনি অনেক রকমের উপকৃত হতে পারবেন এবং আপনি অনেক ধরনের রোগ থেকে নিরাপদ থাকবেন।

কাঁচা ছোলা খাওয়ার পরিমাণ

যেকোন খাবারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হয় তাছাড়া পেটের বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে বা শরীরের মধ্যেও বিভিন্ন রোগ তৈরি হতে পারে। ছোলা খাওয়ার পরিমাণ হচ্ছে প্রতিদিন চেষ্টা করবেন ২০ থেকে ২৫ গ্রাম ছোলা খাওয়ার। এর বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। যদি আপনার অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম খেতে পারবেন।

এর বেশি কখনই খাবেন না। রমজান মাসে এই পরিমাণের চেয়ে আরেকটু কম ছোলা খাওয়ার চেষ্টা করবেন কারণ সারাদিন না খেয়ে থাকা হয় এজন্য অন্য সময়কার তুলনায় খাওয়ার ফলে পেটে সমস্যা হতে পারে।

ছোলাতে যা যা থাকে

১০০ গ্রাম ছলায় আমিষ থাকে ১৮ গ্রাম। আমিষ শরীরের মাংসের অভাব দূর করতে সাহায্য করে। কার্বোহাইড্রেট থাকে ৬৫ গ্রাম। ফ্যাট থাকে ৫ গ্রাম। ক্যালসিয়াম থেকে ২০০ মিলিগ্রাম। ভিটামিন এ থাকে ১৯২ মাইক্রগ্রাম। এছাড়াও পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম,আয়রন,ফসফরাস,ভিটামিন বি, বি১,বি২,বি ৬ থাকে এজন্য এই পরিমাণ এর উপরে খাবেন না।

সব সময় নির্দিষ্ট যে একটি পরিমাণ রয়েছে সেই পরিমাণে ছোলা খাবেন তাহলে আপনি উপকৃত হতে পারবেন অন্যথায় আপনার নিজের ক্ষতি আপনি নিজেই টেনে নিয়ে আনবেন।

কাঁচা ছোলা খাওয়ার অপকারিতা

ছোলা অনেক উপকারী একটি খাবার। উপকারের পাশাপাশি ছোলাতেও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যেগুলো জানা আমাদের জন্য জরুরী তাহলে আমরা সেই ক্ষতিগুলো দিক থেকে বেঁচে থাকতে পারবো। চলুন এবার আমরা সেই ক্ষতিগুলো দিক জানি
  • কখনো কৌটাজাত ছোলা কিনে খাবেন না কারণ এখানে রসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
  • যাদের বমি বমি ভাবের সমস্যা রয়েছে অথবা কাঁচা সোলার ঘ্রাণ সহ্য করতে পারেন না তারা ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে বা ছোলা খাওয়ার ফলে মোটা হয়ে যাচ্ছেন তারা ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে বা রক্ত ডায়ালাইসিস করার প্রয়োজন হয় তারা কখনোই কোনোভাবে ছোলা খাবেন না।
  • ছোলা যেমনভাবে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে তেমনি যাদের একেবারে হজম শক্তি কম যে কোন ভারি খাবার সহ্য করতে পারেন না তারা ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • কাঁচা ছোলা কখনো ভেজে খাবেন না। কাঁচা ছোলা ভেজে খাওয়ার ফলে আপনার রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে।
  • অনেকে আছে যারা অতিরিক্ত মসলা বা তেল ব্যবহার করে ছোলা রান্না করে থাকে এভাবে রান্না করা থেকে বিরত থাকুন এভাবে খাওয়ার ফলে আপনার কোন উপকার বয়ে নিয়ে আনবে না বরং ক্ষতিকর দিকগুলো বয়ে নিয়ে আনবে।
  • অতিরিক্ত সময় ভিজিয়ে রাখা ছোলা খাবেন না। এই ছোলা খাওয়ার ফলে আপনার পেটে সমস্যা হতে পারে।
  • ডায়রিয়া অবস্থায় কোনোভাবে ছোলা খাবেন না কারণ তখন আপনার পেটে হজম করতে না পারে তাহলে ডায়রিয়ার সমস্যা বেড়ে যাবে।
  • কখনোই অতিরিক্ত ছোলা খাবেন না। অতিরিক্ত ছোলা খাওয়ার ফলে আপনার যেকোন রকমের সমস্যা হতে পারে।

তাই ছোলার ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকতে জন্য নিয়ম মাফিক ছোলা খাবেন এবং উপরে যেসব সমস্যার জন্য ছোলা খেতে মানা করা হলো সেসব সমস্যা হলে খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

ছোলা সম্পর্কে মানুষের প্রশ্নের উত্তর

১ প্রশ্ন ওজন কমাতে দিনে কতটুকু ছোলা খাওয়া যাবে?

উত্তর

আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য ছোলা খেতে চান তাহলে আপনি প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ গ্রাম ছোলা খাবেন তাহলে আপনার ওজন কমবে। এর বেশি খাওয়ার ফলে আপনার হিতের বিপরীত হতে পারে।

২ প্রশ্ন কাঁচা ছোলায় কি কি ভিটামিন থাকে?

উত্তর

কাঁচা ছোলার ভিটামিন এ ভিটামিন,বিটামিন সি,ভিটামিন বি১,বি২,বি৬ থাকে এছাড়াও পটাশিয়াম,মাঙ্গানিজ আইরন, কার্বোহাইড্রেট থাকে যেগুলো প্রত্যেকটি আমাদের শরীরের জন্য বেশ প্রয়োজনীয় এবং উপকারী।

৩ প্রশ্ন ছোলার পানি খাওয়া কি ভালো?

উত্তর

ছোলা ভিজিয়ে রাখার ফলে ছোলা থেকে যে রসগুলো বের হয় তা সেই পানিতে মিশে থাকে এজন্য আপনি সেই পানি খাওয়ার ফলেও উপকৃত হতে পারবেন এবং আপনার শরীরে এনার্জি ধরে রাখার জন্য এই পানি বেশ উপকারী। এজন্য সেই পানিগুলো ফেলে না দিয়ে ছোলা খাওয়ার সাথে সাথে সেসব পানিও খাবেন।

৪ প্রশ্ন ছোলা কি মাংসের বিকল্প?

উত্তর

সোলায় আমিষ থাকে তাই আপনার শরীরের যদি মাংসের অভাব থাকে সেক্ষেত্রে ছোলা আপনার শরীরের মাংসের অভাব পূরণ করতে পারবে এবং এছাড়াও আইরন থাকে যা মাংসের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।

শেষ কথা

ছোলা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। তাই আমাদের চেষ্টা করা উচিত প্রতিদিন অল্প পরিমাণে হলেও কাঁচা ছোলা বা যেকোনো ভাবে ছোলা খাওয়ার। এতে করে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে এবং আমরা বিভিন্ন রকমের সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে পারবো।

আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও ছোলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে ছোলা খাওয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url