আমের বিচি খাওয়ার নিয়ম - আমের বিচির পাউডার

প্রিয় পাঠক আপনি কি আমের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে আমের বিচির উপকারিতা এবং আমের বিচি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি পড়তে থাকুন তাহলে আমের বিচি সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন।
আমের বিচির উপকারিতা
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন আমের বিচি খেলে কি হয় এবং আমের বিচির পাউডার কিভাবে করে এবং দাম কত সে সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

আম আমাদের সকলেরই পছন্দের একটি ফল। আমরা আম খাওয়ার পরে সেসব বিচিকে ফেলে দেয়। আমরা অনেকে জানি না আমের বিচির মধ্যেও এমন কিছু উপকারিতা রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এবং এমন এমন গুনাগুন রয়েছে যেগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী।


আম বছরের একটি সময়ে পাওয়া যায় কিন্তু আপনি আমের বিচি গুঁড়ো করে রাখলে সারা বছরই এখান থেকে উপকৃত হতে পারবেন। এজন্য এই পোষ্টের মধ্যে আমের বিচির যাবতীয় গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে যাতে করে আপনি আপনার শরীরের জন্য আমের বিচিকে পুষ্টিগুণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

আমের বিচি খাওয়ার নিয়ম

আমের বিচি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। সেসব নিয়মকানুন মেনে চললে আপনি উপকৃত হতে পারবেন তাছাড়া আমের বিচি থেকে আপনি কোন রকমের উপকারিতা পাবেন না এজন্য আমাদের নিয়ম জানা অতি জরুরী। চলুন এবার আমরা সেই নিয়ম গুলো জানি
  • সকালে এবং রাতে গরম পানির সাথে মিশিয়ে আপনি আমের বিচির পাউডার খেতে পারবেন।
  • যদি আপনি চান মধুর সাথে এগুলো মিশিয়ে খাবেন তাহলে আরো বেশি উপকৃত হতে পারবেন।
  • প্রতিদিন দুই বেলা করে খাবেন এর বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • আমের বিচির গুঁড়ো খাওয়ার সর্বোচ্চ পরিমাণ হচ্ছে ৬ গ্রাম।প্রতিদিন ৬ গ্রামের বেশি খাবেন না। এর বেশি খালি আপনার জন্য ক্ষতিকর দিকগুলো বয়ে নিয়ে আনবে।
  • দুধ এবং আমের বিচির গুঁড়ো একসাথে করেও আপনি খেতে পারবেন। এই পদ্ধতি গ্রহণ করে পান করলে আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকারী হবে।
  • আমের বিচির গুঁড়ো এবং কালোজিরার গুঁড়ো ও মধু একসাথে করে সকাল বিকাল পান করতে পারবেন।
  • কখনো কোন সিরাপের সাথে আমের বিচির গুঁড়ো মিশিয়ে খাবেন না।
  • আমের বিচি আপনি পানি অথবা দুধ এই দুইটা সাথে মিশিয়ে খাবেন।
আপনি আমের বিচি খাওয়ার ক্ষেত্রে এই দিকগুলো লক্ষ্য করে এবং এই নিয়ম অনুসরণ করে খাবেন তাহলে আপনার উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অন্যথায় অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে।

আমের বিচির উপকারিতা

আমের বিচিতে এমন কিছু পুষ্টিগণ এবং ভিটামিন রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আমের বিচি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে এমন এমন উপকার হবে যা আপনার কল্পনার বাহিরে। চলুন এবার সেই উপকারিতা গুলো জানি
  • আমের বিচি রক্তের কোলেস্টরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে যার ফলে ক্যান্সার হ্রদরোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশঙ্কা মুক্ত থাকা যায়।
  • ডায়রিয়া ভালো করতে আমের বিচি অনেক কার্যকরী।
  • যারা ওজন কমানো নিয়ে চিন্তিত তারা নিয়মিত আমের বিচির গুঁড়ো খেতে থাকুন তাহলে আপনার আস্তে আস্তে চর্বি গলে চিকন হতে শুরু করবেন।
  • আপনি চাইলে আমের গুড়ো চুলে ব্যবহার করার মাধ্যমে চুল পরা বন্ধ করতেও পারবেন। চুল পড়া বন্ধ করতে আমের বিচির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপনার মাথায় যদি খুশকির পরিমাণ বেশি থাকে সেক্ষেত্রে আপনি আমের আঁচির গুঁড়ো এবং পানি একসাথে মিক্স করে তা মাথায় ব্যবহার করলে খুশকি তাড়াতাড়ি কমে যায়।
  • আমের বিচি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে এর ফলে ডায়বেটিকস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • আমের আটিতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ফলেদ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
  • যাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা রয়েছে এবং হজম শক্তি কম তারা নিয়মিত আমের গুড়ো খাওয়ার ফলে এসব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • যাদের মাড়িতে শিরশিরির সমস্যা রয়েছে যেমন ঠান্ডা কোন খাবার খেলে মাড়িতে ধরে। আমের বিচি এই সমস্যাও দূর করতে কার্যকরী। এক্ষেত্রে আপনি আমের বিচির গুড়ো করে মারিতে ব্যবহার করবেন এবং পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন তাহলে সমস্যা চলে যাবে।
  • যাদের পেটে বিভিন্ন রকমের সমস্যা রয়েছে যেমন আমাশয়, কোষ্ঠকাঠিন্য এই সমস্যাগুলো দূর করতে আপনি আমের বিচির গুড়ো পানি দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও আমের বিচি শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
  • পিপড়া,মৌমাছি এবং অন্যান্য পোকামাকড় কামড়ানোর পরে যদি সেই স্থান ফুলে যায় অথবা জ্বালাপোড়া করে তাহলে আপনি আমের বিচির গুঁড়ো ব্যবহার করলে সেখানকার ব্যথা কিছু সময়ের জন্য দূর করতে পারবেন।
  • যাদের ত্বক শুষ্ক তারা সরিষার তেল এবং আমের বিচি বা নারিকেতের এবং আমের বিচি একসাথে করে ব্যবহার করার ফলেও শুষ্কতা দূর হয়ে ত্বকে আদ্রতা ভাব আসবে।

এসব উপকারিতা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন আমের বিচি ফেলে না দিয়ে সেগুলোকে সংগ্রহ করে গুড়ো করে ব্যবহার করার। আপনি চাইলে আমের বিচি শুধু কামড় দিয়েও খেতে পারবেন তাহলে উপকৃত হতে পারবেন।

আমের আঁটির ঔষধি গুনাগুন

আমের বিচিতে এমন কিছু গুনাগুন রয়েছে যেগুলো ঔষধি গুনাগুন হিসেবে কাজ করে। চলুন এবার আমরা সেই ওষুধি গুনাগুন গুলো জানি আমের আঁটি খাওয়ার ফলে ক্যান্সার,ডায়রিয়া, ডাইবেটিস,হৃদরোগ এই সমস্যাগুলো থেকে বেঁচে থাকা যায়।এছাড়াও চুলের খুশকি দূর করা,ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে,ওজন কমাতে।

দাঁতের শিরসিরি ভাব দূর করতে,শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আমের আঁটির ভূমিকা অনেক। আমের বিচি এসব উপকারিতা দেয় এজন্যে আমের বিচিকে ওষুধি গুণাগুণ হিসেবে ধরা হয়।বিশেষ করে আমার বিচি খাওয়ার ফলে শারীরিক মিলনে সক্ষম হয়ে উঠে। যাদের শারীরিক সম্পর্কের দুর্বলতা রয়েছে তারা নিয়মিত আমের বিচির গুঁড়ো খাওয়ার ফলে তাদের অক্ষমতা দূর হয়ে যাবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত থাকতে পারবে।

কেউ যদি দেড় মাস ঠিকমতো আমের বিচির গুড়ো খায় তাহলে সে কখনো স্ত্রীর সামনে নত হবে না বরং তার যৌন ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে যাবে। আপনি আমের বিচি নিয়মিত খাওয়ার ফলে এসব ঔষুধি গুনাগুন নিজের শরীরের মধ্যে পাবেন এবং নিজের শরীরকে তরতাজা থাকবে এবং বিভিন্ন রকমের অসুখ বালাই হতে মুক্ত থাকবেন।

আমের বিচির পাউডার

আপনি বাজারে আমের বিচির থেকে যে পাউডার হয় সেগুলো কিনতে পারবেন অথবা আপনি চাইলে বাড়িতেও বানাতে পারবেন। চলুন এবার জানি কিভাবে আমের বিচি থেকে পাউডার বানাই। প্রথমে আপনাকে আমের বিচি রোদে শুকাতে দিতে হবে। শুকিয়ে গেলে উপর থেকে শক্ত যে খোসা রয়েছে সে খোশাকে ফেলে দিতে হবে।

এরপরে ভিতরে একটি নরম বিচি পাবেন সেটা শরীরে এক ধরনের বিশেষ কালো চামড়া থাকে সে চামড়াকে ফেলে দিবেন। তারপরে একটি ব্লেন্ডারের সাহায্যে গুড়ো করে নিবেন তাহলে আপনার আমের বিচির পাউডার হয়ে যাবে। আপনি যদি চান সেক্ষেত্রে কিছু পরিমাণ বিট লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন এটা আপনার টেস্ট আরো বৃদ্ধি করবে।

তারপরে একটি বয়ামে ভালোভাবে ভরে রাখলে সারা বছর সংরক্ষণ করে খেতে পারবেন। এই আমের বিচির গুঁড়ো আপনি খাবারের পরে খেলে তা হজমের কাজে দিবে।

আমের বিচি খেলে কি হয়

আমের বিচি এমন একটি জিনিস যেটা খাওয়ার ফলে শরীরে বেশ উপকার হয়। আমের বিচিকে আমরা সাধারণত ফেলে দিয়ে থাকি। কখনো ভাবি না যে আমের বিচি থেকে এমন এমন উপকারিতা হতে পারে। আমের বিচি আপনার লাখ টাকার সমস্যা দূর করে দিতে সক্ষম। আমের বিচিতে এমন এমন ভিটামিন রয়েছে যেগুলো ডায়রিয়া,আমশয়,কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা,হজমের সমস্যা দূর করে দিতে পারে।

যাদের চুল পরার সমস্যা রয়েছে বা খুশকির সমস্যা রয়েছে তাদের চুল পরা বন্ধ করতে এবং খুশকির সমস্যা দূর করতেও আমের বিচি বেশ কার্যকারী। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে এবং ডাইবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমের বিচি বেশ উপকারী। আমের বিচি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে যার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।


আমের বিচি রক্তের কোলেস্টরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে যার ফলে আপনি মারাত্মক ব্যাধি ক্যান্সার,হৃদরোগ এগুলো থেকে মুক্ত থাকবেন। তাই আমের বিচিকে অবহেলা না করে আমের মৌসুমে কিছু পরিমাণ বিচি থেকে গুঁড়ো করে সেগুলো সংগ্রহ করুন এবং নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন তাহলে আপনি এই উপকারগুলো পাবেন।

শেষ কথা

এই পোষ্টের মধ্যে আমের বিচির যাবতীয় উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। আপনার উচিত হবে নিয়মিত আমের বিচির গুঁড়ো খাওয়া। আপনি বাজারে কিনতে গেলে সাড়ে আটশ টাকা কেজি নিবে গুড়ো। এরচেয়ে ভাল আপনি বাসায় খুব সহজে এগুলো বানায় সংরক্ষণ করে সারা বছর ধরে খাবেন এতে করে আপনার শরীরের জন্য বেশ উপকার হবে।

আমার এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও আমের বিচির উপকারগুলো জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url