কতটুকু পর্দা ফরজ ও কাদের সামনে- পর্দা করার উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আপনি কি কার সামনে পর্দা করা ফরজ সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন,তাহলে এই পোস্টটি আপনার। জন্য এই পোষ্টের মধ্যে আমরা আপনার কার সামনে পর্দা করা ফরজ এবং পর্দা করার উপকারিতা ও পর্দা সম্পর্কিত সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করব।আপনি ধৈর্য নিয়ে পড়তে থাকুন।কার সামনে পর্দা করা ফরজ

এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে জানতে পারবেন পর্দা করা ফরজ সম্পর্কে,পর্দা করার উপকারিতা, এসব সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য এই পোস্টের মধ্যে তুলে ধরা হচ্ছে তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন আমরা পোস্ট এর দিকে আগানো যাক।

ভূমিকা

পর্দা হচ্ছে মুসলমান নারীদের জন্য আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে একটি বিধান। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে পর্দাকে ফরজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং কার কার সামনে পর্দা করা ফরজ সেটাও বলেছেন।পর্দা করা যে নারীর জন্য কতটুকু নিরাপদ এবং কতটুকু উপকার সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন।পর্দার মাধ্যমে একজন নারী তার রূপ এবং পুরা শরীরকে এমন ভাবে ঢেকে রাখবে যাতে পরপুরুষ তার চেহারা বা তার শরীরের কোন অঙ্গ যেন দেখতে না পাই এবং বুঝতেও না পারে।

তার চেহারা কেমন বা তার শরীরের অঙ্গ গুলো কেমন।ইসলামে বোরখা হিজাব এগুলো পরিধানের মাধ্যমে পর্দা করা হয়ে থাকে।পর্দা করা নারীদের জন্য অনেক সম্মানের এবং মর্যাদার ইসলামের নারীকে রানী হিসেবে বলা হয়েছে।পর্দা শব্দটা মূলত ফার্সি শব্দ থেকে নেওয়া আর পর্দা শব্দের আরবি প্রতিশব্দ কে হিজাব হিসেবে ধরা হয় যার বাংলা হচ্ছে আবৃত থাকা ঢেকে রাখা এ জাতীয় যেসব আছে সেসব।


ইসলামী ভাষায় পর্দা বলা হয় নারী ও পুরুষের মধ্যে চারিত্রিক সম্পর্ক পবিত্র রাখার জন্য উভয়ের মাঝে যে আবরণ বা অন্তরায় রাখা হয় সেটাকেই পর্দা বলা হয় আবার কোন কোন জায়গায় বলা হয় নারীর সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখাকে পর্দা বলে।

পর্দা করা ফরজ

কোরআন হাদিসের অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা পর্দাকে ফরজ হিসেবে প্রমাণিত করা হয়েছে এবং সেটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ফরজ বিধান হিসেবে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের উপরে ফরজ করা হয়েছে।আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন "যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’। (সূরা আহযাব: ৫৩)।

নামাজ রোজা যেভাবে ফরজ করা হয়েছে এবং আমরা এসবকে যেভাবে অকাট্য ফরজ মনে করি তেমনিভাবে পর্দা কেউ আমাদেরকে অকাট্য ফরজ মনে করতে হবে। পর্দার বিধানকে হালকা ভাবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই কারণ অন্যান্য ফরজ বিধানের মত এটাও ফরজ।আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন "আল্লাহ এবং তার রাসূল কোনো বিষয়ের নির্দেশ দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা কোনো মু’মিন নারীর জন্য সে বিষয় অমান্য করার কোনো অধিকার থাকে না। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে অবশ্যই পথভ্রষ্ট।’ (সূরা আহযাব: ৩৬)।

মহিলার জন্য পর্দাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ফরজ করেছেন।পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তাআলা তার গুরুত্বতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব: ৫৯)।

পর্দা করার গুরুত্ব সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন বলেন হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। (তিরমিযী: ১১৭৩) আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন পর্দা কতখানি ফরজ এবং পর্দা গুরুত্ব কতটুকু।

হযরত উম্মে সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ও হযরত মাইমুনা রাযি. প্রিয় নবী ﷺ  এর নিকট অবস্থান করছিলাম, ইত্যবসরে হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম রাযি. (অন্ধ সাহাবী) এসে প্রিয় নবী ﷺ  এর দরবারে প্রবেশ করলেন। আর ঘটনাটি ছিল পর্দার ব্যাপারে আমরা আদিষ্ট হওয়ার পরের। যাক, তখন প্রিয় নবী ﷺ  আমাদেরকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করলেন: তোমরা তাঁর থেকে পর্দা কর। এতদশ্রবণে আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। তাছাড়া তিনি তো আমাদেরকে চিনতেও পারছেন না। তখন প্রিয় নবী ﷺ  ইরশাদ করলেন: তাহলে তোমরাও কি অন্ধ হয়ে গেলে? তোমরা কি (তাকে) দেখতে পাচ্ছনা? সূত্র: মুসনাদে আহমাদ, ৬/৩২৯(২৬৫৯৩) তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং (২৭৭৮) আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং (৪১১২) নাসাঈ শরীফ, (কুবরা) হাদীস নং (৯২৪১) সহীহে ইবনে হিব্বান, (৭/৪৩৯)

তামীম গোত্রের কয়েকজন নারী উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকট আগমন করল, যাদের পরনে ছিল পাতলা কাপড়। উম্মুল মুমিনীন তাদেরকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘তোমরা যদি মুমিন নারী হও তাহলে এ তো মুমিন নারীর পোশাক নয়। আর যদি মুমিন না হও তাহলে তা ব্যবহার করতে পার।’ (মাআলিমুস সুনান ৪/৩৭৬)

এক নববধুকে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকট আনা হল, যার পরনে ছিল রঙ্গিন কিবতী চাদর। তখন উম্মুল মুমিনীন রা. বললেন, ‘যে নারী এ রকম পোশাক পরিধান করে তার তো সূরা নূরের প্রতি ঈমান নেই।’ (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/২৪৪)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ অধিক লাজুক ও পর্দাশীল। তিনি লজ্জা ও পর্দাকে পছন্দ করেন। (আবু দাউদ, হাদীস : ৪০১২, ৪০১৩; সুনানে নাসাঈ ১/২০০; মুসনাদে আহমদ ৪/২২৪

আল্লাহ তাআলা পিতা আদম ও হওয়া আ.-এর প্রতি পর্দার নেয়ামতকে বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন-

اِنَّ لَكَ اَلَّا تَجُوْعَ فِیْهَا وَ لَا تَعْرٰی

(তরজমা) তোমার জন্য এ-ই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্তও হবে না এবং নগ্নও হবে না।-সূরা ত্বহা (২০) : ১১৮)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন-

یٰبَنِیْۤ اٰدَمَ قَدْ اَنْزَلْنَا عَلَیْكُمْ لِبَاسًا یُّوَارِیْ سَوْاٰتِكُمْ وَ رِیْشًا ؕ وَ لِبَاسُ التَّقْوٰی ۙ ذٰلِكَ خَیْرٌ

(তরজমা) হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশ-ভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার পরিচ্ছদ এটাই সর্বোৎকৃষ্ট।- সূরা আ’রাফ (৭) : ২৬)

পর্দা করার উপকারিতা

প্রতিটি পুরুষ চাই যে সে মেয়েদের সৌন্দর্য দেখে মজা উপভোগ করবে।বিজ্ঞানের মতে যখন কোন পুরুষ কোন একজন মেয়েকে প্রথম অবস্থায় দেখে তার পরে সেও সে মেয়েকে উলঙ্গ অবস্থায় চিন্তা করে।একটা মহিলার শুধুমাত্র তার স্বামীর জন্য সংরক্ষিত থাকা উচিত।তার সৌন্দর্য রূপ যা কিছু আছে সব কিছু শুধু তার স্বামীর জন্যই থাকবে।বিয়ের আগ পর্যন্ত সে তার সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখবে এবং তার যাবতীয় সবকিছু স্বামীর জন্য হেফাজত করবে ও কাদের সামনে পর্দা করা ফরজ সেসব জেনে তার সামনে পর্দা করা ।

পর্দা করার কারণে তার সৌন্দর্য রক্ষা হয় এবং সে অনেক ধরনের অন্যায় কাজ এবং অন্যায় প্রস্তাব থেকে রক্ষিত থাকে।আমাদের সমাজে যেসব মেয়েরা পর্দা করে তাদেরকে অনেক সম্মানের চোখে দেখা হয় মানুষ তাদেরকে দুহাত ভরে সম্মান করে।আপনি যখন পর্দা করবেন তখন আপনাকে ইসলাম থেকে সম্মান দেওয়া হবে এবং মানুষ আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণের সম্মান করবে এবং আপনি সকল ধরনের ইভটিজিং এবং এ ধরনের যত কাজ আছে এসব থেকে আপনি রক্ষা পাবেন।

আপনি একজন বেপর্দা মহিলা এবং পর্দা করে এমন মহিলাকে দেখলে আপনি উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বাস্তব প্রমাণ পেয়ে যাবেন।

পর্দা না করার ক্ষতি ও অপকারিতা

পর্দা ফরজ ইবাদত। কোন মহিলা যদি পর্দা না করে তাহলে সে আল্লাহ তায়ালার হুকুমকে অমান্য করল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আদেশ মানলো না। বলা হয়েছে যে যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং রাসূলের হুকুম মানে না সে নিজেই নিজের ক্ষতি করল।রাসুল্লাহ হাদীস শরীফে বলেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে সে লোক নয় যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করে। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে আমার (সুন্নাতের) আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে আমার নাফারমানী করবে (যেমন- পর্দার ফরজ বিধান লঙ্ঘণ করবে) সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে।’ (বুখারি)

বর্তমান সমাজে মেয়েরা এমন পোশাক আশাক করে বাইরে বের হয় যা উলঙ্গ সমানে আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছে যেসব মেয়েরা উলঙ্গ ধরনের পোশাক পড়ে বের হয় তার উপরে আল্লাহ তায়ালার গজব নাযিল হোক। পর্দা না করার কারণে বেহায়াপনা নির্লজ্জতা অপকর্ম বেহায়াপনা এসব দিন দিন বাড়তেই আছে।

বেপর্দা নারীদের অসম্মানের চোখে দেখা হয়।আর এভাবে বেপর্দা ভরার কারণে এখান থেকে পাপের শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ইভটিজিং ধর্ষণ এরকম আরো ঘটনা আমাদের সমাজে ঘটতেই আছে।যেসব নারী পর্দা ছাড়া আছে তাদেরকে নিকৃষ্ট নারী হিসেবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখ্যায়িত করেছেন এই সম্পর্কে তিনি বলেন তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচে নিকৃষ্ট তারাই যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (বায়হাকী: ১৩২৫৬)।

আশা করা যায় আপনি বুঝতে পেরেছেন পর্দা না করার জন্য কি কি বিষয়ে সম্মুখীন হতে হবে।

কার সামনে পর্দা করা ফরজ

ইসলামে যে ১৪ জন পুরুষকে একটা মহিলার জন্য মাহরাম হিসেবে ধরা হয়েছে তারা বাদে সকল পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে। যদি সহজ ভাবে বলা যায় তাহলে হচ্ছে যাদেরকে বিয়ে করা জায়েজ তাদের সামনে পর্দা করবে আর যাদেরকে বিয়ে করা জায়েজ নাই তাদের সামনে করবে না। একজন পুরুষের জন্যও এই পরিমাণই পর্দা ফরজ।

বাবা,চাচা,মামা,শ্বশুর,দুধ-সম্পর্কীয় বাবা, আপন ভাই,দাদা,নানা,নাতী,দুধ-সম্পর্কীয় ভাই,ছেলে,ভাই এর ছেলে,বোনের ছেল,মেয়ের জামাই। এই ১৪ জন বাদে কারো সাথে দেখা করা জায়েজ নাই।

খালু, ফুফা, দুলাভাই, ভাসুর, দেবর, চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, ফুফা শ্বশুর, ছেলে কাজিন এরকম আরো যত আত্মীয়-স্বজন বা পাড়া-প্রতিবেশী আছে তাদের কারো সাথেই দেখা করা ইসলামে বৈধতা দেয়নি।

পর্দা না করার ভয়াবহতা

পর্দা না করা সম্পর্কে রসুল সাল্লাম হাদিস শরীফের বারবার সতর্ক করেছেন এবং ভয়াবহ আজাবের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।যেসব মেয়েরা পর্দা করবে না তাদেরকে মৃত্যুর পরে সেসব অঙ্গে আগুন দিয়ে ছাপ বসিয়ে দেওয়া হবে।

পর্দা না করার বিষয় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “নারীরা হচ্ছে চাদর এবং যদি সে গৃহের বাইরে যায় তবে শয়তান খুশি হয় (তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে বলে)। সে (নারী) আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না যতটা সে গৃহে থেকে করতে পারতো।” [ইবনে হিব্বান ও ইবনে আবী খুযাইমাহ, আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন, সিলসিলা আস সহীহাহ ২৬৮৮]

আরেক হাদিসে তিনি বলেন দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামী হবে।
(১) যারা গরুর লেজ সদৃশ বেত দ্বারা মানুষকে প্রহার করে এবং (২) যে সব নারী এত পাতলা পোশাক পরিধান করে যে তার ভেতর দিয়ে শরীরের অংশ দেখা যায় এবং উটের কুঁজের মতন কেশ বিন্যাস করবে। এ নারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, যা বহুদূর থেকে পাওয়া যায়।” [সহীহ মুসলিম ২১২৭,মুসনাদে আহমাদ, :৮৬৬৫]। পর্দা না করা সম্পর্কে হাদিস শরীফে আরো অনেক হাদিস রয়েছে।

রাসুল (ﷺ)বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষের উপর জান্নাত হারাম অর্থাৎ এই ৩ শ্রেণীর মানুষ কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রথম শ্রেণী হলো- যারা কোনো প্রকার নেশাদারদ্রব্য পান বা গ্রহণ করে। দ্বিতীয় শ্রেণী হলো- যে বা যারা পিতা-মাতারঅবাধ্য, এই শ্রেণীভূক্ত মানুষরাও জান্নাতে যাবে না।  তৃতীয় শ্রেণী হলো-দাইউস। ঐ দাইউস ব্যক্তি যে তার পরিবারে পর্দা প্রথা চালু রাখেনি। পরিবারের সদ্যসের মাঝে বেপর্দা ছিলো, বেহায়াপনা ছিলো কিন্তু সে বাধা প্রদান করেনি। পরিবারের কর্তা হিসেবে বেপর্দা-বেহায়াপনা বন্ধ না করার জন্য এই শাস্তি পাবে সে। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯]

হাদীস শরীফে এসেছে, ‘‘প্রত্যেক চোখ যিনা করে। আর কোন নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন মজলিশের পাশ দিয়ে যায় তাহলে সেও নযরের যিনা বা সরাসরি যিনার প্রতি প্রলব্ধুকারী হিসেবে গণ্য হবে।
(জামে তিরমিযী, হাদীস:২৭৮৬)

রাসুল(সঃ) ইরশাদ করেন, খবরদার তোমার বেগানা স্ত্রীলোকের ঘরে প্রবেশ করো না। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাসা করেন ইয়া রাসুলুল্লাহ(সঃ) স্বামীর ভাইদের (ভাসুর, দেবর, বেয়াই ইত্যাদি) সম্পর্কে কি নির্দেশ? রাসুল(সঃ) ইরশাদ করেন তারা তো স্ত্রীর জন্য মৃত্যুতুল্য। অর্থাৎ মহাবিপদতুল্য।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ হোক সেই সব নারীদের উপর, যারা দেহাঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে এবং যারা করায়, এবং সেসব উপর, যারা ভ্রু চেঁছে সরু (প্লাক) করে, যারা সৌন্দর্য মানসে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।

আপনি মিশকাত শরীফ খুঁজলে এবং বুখারী খুজলে অনেক হাদিস পাবেন আমি এখানে দুইটা হাদিস তুলে ধরলাম।

কাদের সামনে পর্দা করতে হবে না

১৪ ধরনের পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে না সেই ১৪ জন পুরুষের বর্ণনা নিচে উল্লেখ করা হলো।
  1. নিজের জন্মদাতা বাবা
  2. দুধ বাবা অর্থাত দুধ মায়ের স্বামী
  3. নিজের আপন চাচাদের সাথে
  4. যে আপন মামাদের সাথে
  5. নিজের শশুরের সাথে
  6. দাদার সাথে
  7. নানার সাথে
  8. আপন ভাইয়ের সাথে
  9. নিজের দুধ ভাইয়ের সাথে
  10. নিজের নাতিদের সাথে
  11. নিজের ছেলেদের সাথে
  12. আপন ভাতিজাদের সাথে
  13. আপন ভাগিনাদের সাথে
  14. নিজের মেয়ের জামাইয়ের সাথে।
আল্লাহ তাআলার বাণী-

وَ لَا یُبْدِیْنَ زِیْنَتَهُنَّ اِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اٰبَآىِٕهِنَّ اَوْ اٰبَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اَبْنَآىِٕهِنَّ اَوْ اَبْنَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِیْۤ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِیْۤ اَخَوٰتِهِنَّ اَوْ نِسَآىِٕهِنَّ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُهُنَّ اَوِ التّٰبِعِیْنَ غَیْرِ اُولِی الْاِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفْلِ الَّذِیْنَ لَمْ یَظْهَرُوْا عَلٰی عَوْرٰتِ النِّسَآءِ

(তরজমা) তারা যেন নিজেদের আভরণ প্রকাশ না করে তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যারা যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত অন্য কারো নিকট। (সূরা নূর (২৪) : ৩১)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

حُرِّمَتْ عَلَیْكُمْ اُمَّهٰتُكُمْ وَ بَنٰتُكُمْ وَ اَخَوٰتُكُمْ وَ عَمّٰتُكُمْ وَ خٰلٰتُكُمْ وَ بَنٰتُ الْاَخِ وَ بَنٰتُ الْاُخْتِ

(তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, কন্যা, ভগ্নী, ফুফু, খালা, ভ্রাতুষ্পুত্রী, ভাগ্নী। ... (সূরা নিসা (৪) : ২৩)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

حُرِّمَتْ عَلَیْكُمْ اُمَّهٰتُكُمْ وَ بَنٰتُكُمْ وَ اَخَوٰتُكُمْ وَ عَمّٰتُكُمْ وَ خٰلٰتُكُمْ وَ بَنٰتُ الْاَخِ وَ بَنٰتُ الْاُخْتِ وَ اُمَّهٰتُكُمُ الّٰتِیْۤ اَرْضَعْنَكُمْ

(তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা ... দুধ-মা, দুধ বোন। ... (সূরা নিসা : (৪) : ২৩)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

حُرِّمَتْ عَلَیْكُمْ اُمَّهٰتُكُمْ وَ بَنٰتُكُمْ وَ اَخَوٰتُكُمْ وَ عَمّٰتُكُمْ وَ خٰلٰتُكُمْ وَ بَنٰتُ الْاَخِ وَ بَنٰتُ الْاُخْتِ وَ اُمَّهٰتُكُمُ الّٰتِیْۤ اَرْضَعْنَكُمْ وَ اَخَوٰتُكُمْ مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَ اُمَّهٰتُ نِسَآىِٕكُمْ وَ رَبَآىِٕبُكُمُ الّٰتِیْ فِیْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآىِٕكُمُ الّٰتِیْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّ ؗ فَاِنْ لَّمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ

(তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, ... শাশুড়ি ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের সাথে সংগত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে।... (সূরা নিসা : ২৩)


আপনাকে অবশ্যই এই ১৪ জন পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে তাছাড়া আপনি গুনাগার হবেন তেমনিভাবে এগুলোর বিপরীতে যেগুলো মেয়ে রয়েছে সেগুলোর সাথে ছেলেরা দেখা করতে পারবে এর বাইরে পারবে না।

পর্দা কত প্রকার ও নারীর পর্দা কতটুকু

আমরা উপরে বলেছি কাদের সামনে পর্দা করা ফরজ এবার বলব পর্দা কত প্রকার এবং নারীর পর্দা কতটুকু। একজন নারীর জন্য পর্দা ৩ প্রকার-
  1. ঘরে থাকা অবস্থায় পর্দা।ঘরে থাকা অবস্থাতেও এমন ভাবে থাকবে যে যেন শরীরের কোন অংশ তার ছেলেরা বা নাতিরা বুঝতে না পারে।সুন্দর করে পুরা শরীরে ওড়না দিয়ে রাখবে।
  2. ঘরের বাহিরে পর্দা।একজন নারী ঘরের বাহিরে যখন যাবে সে এমনভাবে যাবে যাতে তার শরীরের কোন অঙ্গ দেখা না যায়। পুরা শরীর বোরখা এবং হিজাব দিয়ে ঢেকে রাখবে এটাই মূল পর্দা।
  3. বৃদ্ধা অবস্থায় পর্দা।একজন মহিলার হায়েজ(পিরিয়ড) বন্ধ হবার পরে পর্দা বিধান শেষ হয়ে যায়।সেসময় সে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করলেই হবে।
  • নামাজের ক্ষেত্রে মেয়েরা শুধু হাতে কব্জি পায়ের কব্জি বের করে রাখতে হবে।চুল তিনভাগের এক ভাগের বেশি বের হতে পারবে না আর মেয়েদের আওয়াজও পর্দার অন্তর্ভুক্ত সুতরাং কোন মেয়ে নামাজে জোর সূরা পড়লো আর কোন বেমাহরাম পুরুষ শুনতে পাইলে নামাজ ভেঙে যাবে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নারী হল সতর তথা আবৃত থাকার বস্ত্ত। নিশ্চয়ই সে যখন ঘর থেকে  বের হয় তখন শয়তান তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। আর সে যখন গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করে তখন সে আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে।-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে। (সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮)

কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী বলেন, নারীর জন্য বোরকা দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত রাখা ফরয। তবে হজ্বের সময়টুকু এর ব্যতিক্রম। কেননা, এই সময় তারা ওড়নাটা চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিবে, চেহারার সাথে মিলিয়ে রাখবে না। পরপুরুষ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে এবং পুরুষরাও তাদের থেকে দূরে থাকবে। (আরিযাতুল আহওয়াযী ৪/৫৬)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত কাপড় ঝুলিয়ে রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের ঝুল  কীভাবে রাখবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মে সালামা বললেন, এতে তো তাদের পা অনাবৃত থাকবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশি নয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪১১৭; জামে তিরমিযী ৪/২২৩; সুনানে নাসাঈ ৮/২০৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১১/৮২

উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা.ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন। এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও। আমরা বললাম, তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না?! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না?-সুনানে আবু দাউদ ৪/৩৬১, হাদীস : ৪১১২; জামে তিরমিযী ৫/১০২, হাদীস : ২৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৬; শরহুল মুসলিম, নববী ১০/৯৭; ফাতহুল বারী ৯/২৪৮

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ، وَالمَرْأَةُ إِذَا اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ بِالمَجْلِسِ فَهِيَ كَذَا وَكَذَا» يَعْنِي زَانِيَةً
“প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায় তাহলে সে এক বেশ্যা।” এমন কি এই অবস্থায় নামাযের জন্য যেতেও নিষিদ্ধ। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যায়, সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোনো নামায কবুল হবে না”।

আবু হুরায়ররা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মহান আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়।

শেষ কথা

উপরে পর্দা বিষয়ে যতকিছু জানা দরকার সবকিছু তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি বুঝতে পারছেন।পর্দা ফরজ বিধান সুতরাং মানার চেষ্টা করা জরুরি।যদি কোন মেয়ে পর্দা না করে তাহলে তার বাবা ভাই স্বামীকেও কৈফিয়ত দিতে হবে সুতরাং নিজের মা বোন মেয়েকে পর্দা করার জন্য বলতে হবে।

আমার পোস্ট দ্বারা যদি আপনার উপকার হয় তাহলে পোস্টটা আপনার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুমহলে শেয়ার করবেন।আল্লাহ আপনার ভালো করুক।আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url