বিট লবণ কিভাবে তৈরি হয়-বিট লবণের অপকারিতা-বিট লবণের দাম
প্রিয় পাঠক আপনি কি বিট লবণের উপকারিতা জানতে চাচ্ছেন,তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি পোষ্টের মধ্যে বিট লবণের উপকারিতা এবং বিট লবণের অপকারিতা ও বিট লবণের সংকেত সম্পর্কে আলোচনা করব।। আপনি পোস্টটি পড়তে থাকুন তাহলে বিট লবণ সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি পোষ্টের মধ্যে পাবেন বিট লবণ কিভাবে তৈরি হয় এবং বিট লবণের দাম সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোস্টের দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
বিট লবণ একটি খনিজ উপাদান। বিট লবণের মাধ্যমে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করা হয় এবং এই বিট লবণ দিয়ে আমরা আম পেয়ারা এবং বিভিন্ন রকমের ফল ভর্তা খেয়ে থাকি। বিট লবণ ছাড়া কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বিট লবণ আমাদের শরীরে জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী। আমরা বিট লবণ বাজারে কিনে থাকি।
আরো পড়ুন :: চানাচুর মসলা তৈরি- চানাচুর খেলে কি ওজন বাড়ে
এই পোস্টের মধ্যে আপনি কিভাবে বাড়িতে বিট লবণ বানাবেন এবং বিট লবণ সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন যাতে করে আপনি উপকৃত হতে পারেন।
বিট লবণ কিভাবে তৈরি হয়
বিট লবণ তৈরির জন্য কিছু বিশেষ পন্থা রয়েছে। সেসব পন্থাগুলো অবলম্বন করলে আপনি খুব সহজে বাড়িতে বিট লবণ বানাতে পারবেন। চলুন এবার আমরা সেই পদ্ধতি জানি
বাসায় যেভাবে বিট লবণ বানাতে হয়
বিট লবণ বানানোর জন্য প্রথমে আপনাকে আপনার প্রয়োজন মত লবণ একটি শুকনো প্যানে নিতে হবে এরপরে কিছু সময় ধরে নাড়াচাড়া করবেন যখন বিট লবণের কালার একটু ভিন্ন হবে তখন তাতে হালকা পরিমাণ মরিচের গুঁড়ো দিয়ে দিবেন। কিছুক্ষণ পরে যখন কালার ভিন্ন হতে শুরু হবে তারপরে আপনি সেখানে আপনার পরিমাণ মতো গোলমরিচের গুঁড়ো এবং জিরার গুঁড়ো দিয়ে দিবেন।
তারপর দুই থেকে তিন মিনিট এভাবে নাড়াচাড়া করবেন। ওই সময় চুলার হিট লো আঁচে রাখবেন। এভাবে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলে আপনার বিট লবণ তৈরি হয়ে যাবে। যদি আপনি আরো মিহি করতে চান সেক্ষেত্রে ব্লিন্ডারে মিহি করে নিবেন।
ফ্যাক্টরিতে যেভাবে বিট লবণ বানায়
প্রথমে সামুদ্রিক লবণ অথবা হিমালয় পাহাড়ের লবণ একটি মটকায় ভরে আগুনে ভালোভাবে গরম করতে দেয়। তারপর কিছুক্ষণ পরে তারা একটি বিশেষ ধরনের মসলা দিয়ে থাকে যেটা তারা নিজেরাই তৈরি করে। এরপর সে মটকা তারা আগুনের মধ্যে বা কয়লার মধ্যে ১২ ঘন্টা রেখে দেয়। তারপর সেখান থেকে বের করে আবার ঠান্ডা হতে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত রেখে দেয়।
ওই অবস্থায় সেগুলো একেবারে পাথরের মতো থাকে। তারপরে সেসব ফ্যাক্টরিতে নিয়ে গিয়ে মেশিনের সাহায্য ভালোভাবে গুঁড়ো করা হয়। এই পদ্ধতিতে বিট লবণ তৈরি করা হয়ে থাকে। বাজারে কয়েক রকমের বিট লবণ পাওয়া যায়। যেটা অরজিনাল খাঁটি বিট লবণ সেটার কালার একটু কালচে টাইপের বা বাদামী টাইপের হয়ে থাকে।
বিট লবণের উপকারিতা
বিট লবণের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। চলুন এবার আমরা সেই উপকারিতা গুলো জেনে নেই
- বিট লবণ খাওয়ার ফলে আ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকটা কমে যায় এবং বুক জ্বালাপোড়া থেকে নিরাপদ থাকা যায়।
- যদি কখনো কারো বমি বমি ভাব হয় সেই ক্ষেত্রে সে কিছু পরিমাণ বিট লবণ খেয়ে নিলে বমি বমি ভাবের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- বিট লবণ ডায়াবেটিসের সমস্যা ধরে রাখতেও কার্যকরী। বিট লবণের মধ্যে এমন উপাদান থাকে যা কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- যাদের পেট খারাপের সমস্যা রয়েছে যেমন পেটে ঠিকমতো খাবার হজম হয় না তারা নিয়মিত বিট লবণ খাওয়ার ফলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- বিট লবণের ভিতরে থাকা খনিজ উপাদান গুলো এন্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবেও কাজ করে এবং আমাদের শরীরে যে সকল জীবাণু রয়েছে সেসব জীবাণুকে দূর করে দেয়।
- বিট লবণের মধ্যে সোডিয়াম রয়েছে যা আমাদের শরীরকে সতেজ রাখে।
- ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও বিট লবণ একটি কার্যকারী।
- উপাদান বিট লবণ খনিজ উপাদান হওয়ার কারণে শরীরের হাড় ক্ষয় হওয়া থেকে নিরাপদ রেখে হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে।
- আপনি খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করতেও খাবারের মধ্যে বিট লবণ ব্যবহার করতে পারবেন। এতে করে আপনার খাবারে আয়ডিনের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
- যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন গরম পানির সাথে বিট লবণ মিশিয়ে খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে যায়।
- প্রতিদিন সকালে গরম পানি এবং বিট লবণ একসাথে মিশিয়ে খাওয়ার ফলে শরীর সুস্থ থাকে।
- অনেক গবেষণা দেখা গেছে বিট লবণ মানসিক চাপ দূর করতেও সাহায্য করে।
- যাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় তারা গরম পানির সাথে বিট লবন মিশিয়ে পান করার ফলে তাদের শরীর আর্দ্রতা ভাব চলে আসবে এবং শুষ্কতা দূর হয়ে যাবে।
- যাদের ঠান্ডা কাশি বা গলা ব্যথার মত সমস্যা হয় তারা বিট লবণ এবং কুসুম গরম পানি একসাথে মিশিয়ে গড়গড়া করে করলেও এসব সমস্যাগুলো দূর হয়ে যায়।
এসব উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন নিয়মিত বিট লবণ খাওয়ার এবং তরকারিতে ব্যবহার করার তাহলে আপনার শরীরের জন্য উপকারী হবে।
বিট লবণের অপকারিতা
বিট লবণের কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে সে দিকগুলো আমাদের জানা জরুরী যাতে করে আমরা সেই ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি। চলুন তাহলে এবার সেসব দিকগুলো জানি
- অতিরিক্ত বিট লবণ খাওয়ার ফলে ঘাড়ের টিস্যুতে থাকা তরলের পরিমাণ বেড়ে যায় যার ফলে শ্বাসনালীর সমস্যা হয়।
- নিয়মিত অতিরিক্ত বিট লবণ খাওয়ার ফলে ভারতে ফ্লরাইট রোগে আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল।
- অতিরিক্ত বিট লবণ খাওয়ার ফলে আ্যাসিডিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে তখন বুক জ্বালাপোড়া করবে।
- যারা বদ হজমের সমস্যা দূর করার জন্য বিট লবণ খেয়ে থাকেন তারা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বদহজমের সমস্যা বেড়ে যাবে এবং পেটের মধ্যে অশান্তি শুরু হবে।
- যখন আপনার বিট লবণ খাওয়ার মাত্রা বেড়ে যাবে তখন দাঁত এবং হাড়ের ক্ষয় হতে থাকবে।
বিট লবণের ক্ষতি এবং যে কোন খাবারের ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আপনি যখন অতিরিক্ত কোন কিছু খেতে শুরু করবেন সেগুলোই আপনার জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে।
বিট লবণের দাম
বিট লবণ বাজারে বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে। কেউ একটু বেশি দামে বিক্রি করে আবার কেউ একটু কম দামে বিক্রি করে। চলুন এবার আমরা সেসব বিট লবণের দাম গুলো জানি। আপনি চাইলে দারাজে থেকেও বিট লবণ কিনতে পারবেন।
- Bit Salt Powder Black Salt Bit Salt এই বিট লবণ প্রতি কেজি ২৩০ টাকা।
- Himalayan Natural Pink Rock Sal প্রতি কেজি ২৫০ টাকা।
- Fitfood - Himalayan Pink Salt এই বিট লবণ অনেক দামী। এটি ৯৫০ টাকা কেজি।
- হিমালয়ান জৈব গোলাপী লবণ। এই ধরনের বিট লবন ৪৫০ টাকা কেজি।
- Bit Salt Powder black salt এই বিট লবণের প্রতি কেজির দাম ৫০০ টাকা।
এছাড়াও আপনি বাজার থেকে কিনতে গেলে এমন কিছু বিট লবণ পাবেন যেগুলোর দাম এক কেজি ১৩০০ টাকা করে নিয়ে থাকে। হাফ কেজি সাড়ে ৬০ টাকা। সব সময় মনে রাখবেন অরিজিনাল বিট লবণ এর দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে কারণ এগুলো খাওয়ার ফলে উপকৃত হওয়া যায়। আপনি বাজারে এমন কিছু বিট লবণ পাবেন যেগুলোর দাম খুব কম এগুলো মূলত অরিজিনাল না।
বিট লবণের সংকেত
বিট লবণ মূলত এক প্রকার আগুনের চুল্লিতে শুষ্ক ভাজা খনিজ লবণ। এই লবণ হিমালয়ের আশেপাশের লবণাক্ত মাটি থেকে পাথর আকারে বের করা হয়। পরবর্তীতে প্রসেস করার মাধ্যমে বিট লবণ করা হয়। এটি একটি খনিজ উপাদান। বিট লবণ অবস্থায় বাদামী, গোলাপি থেকে গাঢ় বেগুনী কালারের হয়ে থাকে। বিট লবণের সংকেত মূলত দুইটি
- FeS
- H2S
বিট লবন সম্পর্কে মানুষের প্রশ্নের উত্তর
১ প্রশ্ন রক সল্ট এর দাম কত?
উত্তর
রক সল্ট ২৫০ গ্রাম ৮৫ টাকা। ইপসম সল্ট ২৫০ গ্রাম ৫৫০ টাকা এবং ৫০০ গ্রাম ১০৫০ টাকা।
২ প্রশ্ন প্রতিদিন কতটুকু কালো লবণ খাওয়া যায়?
উত্তর
ডাক্তাররা সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকে প্রতিদিন পাঁচ গ্রামের বেশি বিট লবণ খাওয়া উচিত নয়। এর বেশি খাওয়ার ফলে ক্ষতি হতে পারে।
৩ প্রশ্ন বিট লবণ খেলে কি ওজন কমে?
উত্তর
কাঁচা যে লবণগুলো আছে সেগুলো খাওয়ার ফলে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে কিন্তু আপনি যদি নিয়ম করে বিট লবণ খান সেক্ষেত্রে ওজন কমবে।
৪ প্রশ্ন খনিজ লবণ কি?
উত্তর
খনিজ লবণ মূলত একটি অজৈব এসিডের লবণ।
শেষ কথা
খনিজ উপাদান আমাদের শরীরের জন্য উপকারী আর বিট লবণ এর মধ্যে খনিজ উপাদান থাকে এজন্য চেষ্টা করবেন নিয়মের মধ্যে বিট লবণ খাওয়ার। অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন তাহলে আপনি উপকৃত হতে পারবেন।
আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শেয়ার করুন যাতে করে তারাও বিট লবণের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার তথ্য জানতে পারে।
সহকর্মীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url